চারদিক-রংপুর পুলিশ লাইন স্কুলের ২৫ বছর by নাজমুল হোসেন
দোস্ত, কেমন আছিস? কত দিন পর দেখা! মনে আছে তুই একদিন কালো জুতা পরে এসেছিলি আর শহীদ স্যারের বেত্রাঘাত! আচ্ছা, এখন কোথায় আছিস, মোবাইল নম্বর বল। দেখ, আমাদের স্কুল এখন কত্ত বড়! এই স্কুলমাঠেই কত দিন ক্রিকেট খেলেছি! জানিস, এবার আমাদের কলেজের ছাত্রী সারা দেশে মেডিকেলে থার্ড হয়েছে!’
অনুষ্ঠান সেই ২৮ জানুয়ারি। কিন্তু এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে ভিড় জমেছে সাবেক শিক্ষার্থীদের। প্রতিদিন ছোটখাটো আড্ডায় উঠে আসছে এমনই সব হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি। সবাই ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছে ২৮ জানুয়ারির। ওই দিন রংপুর পুলিশ লাইন স্কুলের রজতজয়ন্তী! ক্যাম্পাসে বসবে মহা মিলনমেলা।
মেলা আসলে একরকম শুরু হয়েই গেছে। একদল স্বপ্নবান এককাট্টা হয়ে কথার ফুলঝুরি নিয়ে বসছে সেই সতীর্থ মেলায়। ফেলে আসা শৈশব-কৈশোরের স্মৃতির পসরা নিয়ে স্কুল ও কলেজের পুরোনো শিক্ষার্থীরা মিলছেন একই সুতোয়, সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে এক কাতারে শামিল হওয়ার নিমন্ত্রণে।
শহীদ স্যারের কড়া শাসন, এস্তানুল হক স্যারের ইংরেজি ক্লাস কিংবা আনাম স্যারের বাংলা ভজন—টুকরো টুকরো স্মৃতি ভেসে আসে মানসপটে। নরেন স্যারের সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ, প্রফুল্ল স্যারের মুচকি হাসি এবং ইয়াকুব স্যারের ধর্মীয় শিক্ষায় আলোকিত হতো অসংখ্য কিশোর মন। প্রয়াত জিতেন্দ্রনাথ স্যারের অনুপস্থিতি সবাইকে ব্যথিত করে। প্রাইমারি স্কুলের প্রিয়মুখ শরীফা ম্যাডাম, বিউটি ম্যাডাম, রেখা ম্যাডাম, হাসি ম্যাডাম। স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীর অনেকেই জনক-জননী হওয়ার পর উপলব্ধি করেছে শৈশবে ম্যাডামদের কত জ্বালিয়েছে! কিন্তু মুখ বুজে সয়ে পরম মমতায় আগলে রাখতেন আমাদের জননীতুল্য শিক্ষিকারা। মনের অজান্তেই স্যালুট দিই তাঁদের।
স্মৃতিময় শৈশবের সোনালি সময়গুলো কেটেছে এই স্কুলের ক্লাসরুমে-করিডরে-মাঠে। ক্লাস ওয়ান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছেন এমন সৌভাগ্যবানদের কাতারে অনেকেই শামিল। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পদার্পণ। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন বন্ধুরা। সোমা ম্যাডামের জীববিজ্ঞান ক্লাসে সহজবোধ্য পাঠদান, কিবরিয়া স্যারের ইংরেজি-বিষয়ক আলোচনায় মজে থাকা, মোত্তালেব স্যারের ভূগোল, জেসমিন ম্যাডামের অর্থনীতি, বাবর স্যারের ক্লাসের স্মৃতি অমলিন থাকবে অনন্তকাল।
যাত্রা খুব বেশি দীর্ঘ নয়, তবু নতুনত্বের আবাহন। সারা দেশে পুলিশের স্কুলগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। যেখানে কিছুটা সময় ব্যয় করলেই পুলিশ-সম্পর্কিত নেতিবাচক ধারণা পাল্টে যাবে। পুলিশের তত্ত্বাবধানে ব্যতিক্রমী শিক্ষায়তনটিতে তৈরি করা হয় স্বশিক্ষিত মানুষ।
রংপুর জেলা পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের সন্তানদের শিক্ষাদানের জন্য স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালে। উদ্যোক্তা তৎকালীন পুলিশ সুপার মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী। শিক্ষানুরাগী এই পুলিশ কর্মকর্তার উদ্যোগে হাইস্কুল হিসেবে যাত্রা শুরুর প্রথম দিকেই সফলতা পায় স্কুলটি। ১৯৮৯ সালে এসএসসি প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজশাহী বোর্ডে মেধাতালিকায় প্রথম হয়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া শুরু হয়। কলেজের সাফল্য ঈর্ষণীয়।
স্কুলের সামনে বিশাল সবুজ খেলার মাঠ। পাশেই ঐতিহাসিক কালেক্টরেট মাঠ, মনোরম উদ্যান, চিত্তাকর্ষক চিড়িয়াখানা, মনোহর শিশুপার্ক ও গৌরবদীপ্ত স্টেডিয়াম দিয়ে পরিবেষ্টিত আর দখিনা বায়ুর পরশে আন্দোলিত দেবদারু বুকে ধারণ করে সদর্পে দাঁড়িয়ে এই অনুপম শিক্ষায়তনটি।
সারা দেশে পুলিশ নিয়ন্ত্রণাধীন স্কুলের মধ্যে ব্যতিক্রম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল ও কলেজ। সুশৃঙ্খল শিক্ষাপদ্ধতি ও নিয়মানুবর্তিতায় এই বিদ্যায়তনটি এখন উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম। কঠোর নিয়মকানুন আছে বটে, কিন্তু নেই বেত্রাঘাত পদ্ধতি। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য রয়েছে ডিজিটাল আইডি কার্ড সিস্টেম। স্বয়ংক্রিয় মেশিনে কার্ড ঘষে ঢুকতে হয় স্কুল কম্পাউন্ডে। জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণাধীন স্কুলটির মেয়েরা ইভ টিজিংয়ের শিকার হয় না। কারণ স্কুলের আশপাশে কোনো রোমিও দেখামাত্রই আটক। সময়ের পরিক্রমায় বদলে গেছে স্কুলটি। এখন নতুন সাজে, নতুন রূপে। বর্তমান পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর স্কুলকে ঢেলে সাজিয়েছেন। স্কুলটির কল্যাণে পুলিশ সম্পর্কে রংপুরবাসীর ধারণা বদলে যাচ্ছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ ও রংপুর পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে দুই দিনের রজতজয়ন্তী উৎসব। মহা মিলনমেলায় সার্বিক আয়োজন জানতে যোগাযোগ করতে হবে ০১৭১২৯১২২৬০ ও ০১৭১২৮৯৫০৩৫ নম্বরে।
যাত্রা শুরুর পর বিদ্যায়তনটি আজ অনেক পরিণত। এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত শিক্ষার্থীরা দেশের সর্বত্রই কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে যাচ্ছে। স্কুল ও কলেজের অ্যালামনাইদের আসন্ন মহা মিলনমেলা হোক প্রাণের উৎসব।
মেলা আসলে একরকম শুরু হয়েই গেছে। একদল স্বপ্নবান এককাট্টা হয়ে কথার ফুলঝুরি নিয়ে বসছে সেই সতীর্থ মেলায়। ফেলে আসা শৈশব-কৈশোরের স্মৃতির পসরা নিয়ে স্কুল ও কলেজের পুরোনো শিক্ষার্থীরা মিলছেন একই সুতোয়, সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে এক কাতারে শামিল হওয়ার নিমন্ত্রণে।
শহীদ স্যারের কড়া শাসন, এস্তানুল হক স্যারের ইংরেজি ক্লাস কিংবা আনাম স্যারের বাংলা ভজন—টুকরো টুকরো স্মৃতি ভেসে আসে মানসপটে। নরেন স্যারের সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ, প্রফুল্ল স্যারের মুচকি হাসি এবং ইয়াকুব স্যারের ধর্মীয় শিক্ষায় আলোকিত হতো অসংখ্য কিশোর মন। প্রয়াত জিতেন্দ্রনাথ স্যারের অনুপস্থিতি সবাইকে ব্যথিত করে। প্রাইমারি স্কুলের প্রিয়মুখ শরীফা ম্যাডাম, বিউটি ম্যাডাম, রেখা ম্যাডাম, হাসি ম্যাডাম। স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীর অনেকেই জনক-জননী হওয়ার পর উপলব্ধি করেছে শৈশবে ম্যাডামদের কত জ্বালিয়েছে! কিন্তু মুখ বুজে সয়ে পরম মমতায় আগলে রাখতেন আমাদের জননীতুল্য শিক্ষিকারা। মনের অজান্তেই স্যালুট দিই তাঁদের।
স্মৃতিময় শৈশবের সোনালি সময়গুলো কেটেছে এই স্কুলের ক্লাসরুমে-করিডরে-মাঠে। ক্লাস ওয়ান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছেন এমন সৌভাগ্যবানদের কাতারে অনেকেই শামিল। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পদার্পণ। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন বন্ধুরা। সোমা ম্যাডামের জীববিজ্ঞান ক্লাসে সহজবোধ্য পাঠদান, কিবরিয়া স্যারের ইংরেজি-বিষয়ক আলোচনায় মজে থাকা, মোত্তালেব স্যারের ভূগোল, জেসমিন ম্যাডামের অর্থনীতি, বাবর স্যারের ক্লাসের স্মৃতি অমলিন থাকবে অনন্তকাল।
যাত্রা খুব বেশি দীর্ঘ নয়, তবু নতুনত্বের আবাহন। সারা দেশে পুলিশের স্কুলগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। যেখানে কিছুটা সময় ব্যয় করলেই পুলিশ-সম্পর্কিত নেতিবাচক ধারণা পাল্টে যাবে। পুলিশের তত্ত্বাবধানে ব্যতিক্রমী শিক্ষায়তনটিতে তৈরি করা হয় স্বশিক্ষিত মানুষ।
রংপুর জেলা পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের সন্তানদের শিক্ষাদানের জন্য স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালে। উদ্যোক্তা তৎকালীন পুলিশ সুপার মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী। শিক্ষানুরাগী এই পুলিশ কর্মকর্তার উদ্যোগে হাইস্কুল হিসেবে যাত্রা শুরুর প্রথম দিকেই সফলতা পায় স্কুলটি। ১৯৮৯ সালে এসএসসি প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজশাহী বোর্ডে মেধাতালিকায় প্রথম হয়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া শুরু হয়। কলেজের সাফল্য ঈর্ষণীয়।
স্কুলের সামনে বিশাল সবুজ খেলার মাঠ। পাশেই ঐতিহাসিক কালেক্টরেট মাঠ, মনোরম উদ্যান, চিত্তাকর্ষক চিড়িয়াখানা, মনোহর শিশুপার্ক ও গৌরবদীপ্ত স্টেডিয়াম দিয়ে পরিবেষ্টিত আর দখিনা বায়ুর পরশে আন্দোলিত দেবদারু বুকে ধারণ করে সদর্পে দাঁড়িয়ে এই অনুপম শিক্ষায়তনটি।
সারা দেশে পুলিশ নিয়ন্ত্রণাধীন স্কুলের মধ্যে ব্যতিক্রম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল ও কলেজ। সুশৃঙ্খল শিক্ষাপদ্ধতি ও নিয়মানুবর্তিতায় এই বিদ্যায়তনটি এখন উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম। কঠোর নিয়মকানুন আছে বটে, কিন্তু নেই বেত্রাঘাত পদ্ধতি। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য রয়েছে ডিজিটাল আইডি কার্ড সিস্টেম। স্বয়ংক্রিয় মেশিনে কার্ড ঘষে ঢুকতে হয় স্কুল কম্পাউন্ডে। জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণাধীন স্কুলটির মেয়েরা ইভ টিজিংয়ের শিকার হয় না। কারণ স্কুলের আশপাশে কোনো রোমিও দেখামাত্রই আটক। সময়ের পরিক্রমায় বদলে গেছে স্কুলটি। এখন নতুন সাজে, নতুন রূপে। বর্তমান পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর স্কুলকে ঢেলে সাজিয়েছেন। স্কুলটির কল্যাণে পুলিশ সম্পর্কে রংপুরবাসীর ধারণা বদলে যাচ্ছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ ও রংপুর পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে দুই দিনের রজতজয়ন্তী উৎসব। মহা মিলনমেলায় সার্বিক আয়োজন জানতে যোগাযোগ করতে হবে ০১৭১২৯১২২৬০ ও ০১৭১২৮৯৫০৩৫ নম্বরে।
যাত্রা শুরুর পর বিদ্যায়তনটি আজ অনেক পরিণত। এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত শিক্ষার্থীরা দেশের সর্বত্রই কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে যাচ্ছে। স্কুল ও কলেজের অ্যালামনাইদের আসন্ন মহা মিলনমেলা হোক প্রাণের উৎসব।
No comments