অর্থনীতি-জনতুষ্টি বনাম দুর্ভোগের বাজেট by জাফর আহমেদ চৌধুরী
যে বাজেট পেয়ে জনগণ তুষ্ট হয় আমরা তাকে ‘জনতুষ্টির বাজেট বলি। আবার যে বাজেট মানুষের কল্যাণ দিতে পারে না তা গণবিরোধী বা দুর্ভোগের বাজেট। সম্প্রতি সিলেটে এক প্রাকবাজেট আলোচনা সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিরাজমান অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন,
‘জনতুষ্টির’ দিকে খেয়াল রাখতে হয় বিধায় বাজেট প্রণয়নে কিছুটা এদিক-সেদিক হয়। জনতুষ্টি যদি লক্ষ হয় তাহলে যৌক্তিক কিছু ব্যত্যয় গ্রহণযোগ্য। কিন্তু বিগত তিন অর্থবছরে প্রায় চার লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে জনগণ কি তুষ্ট হতে পেরেছে? দ্রব্যমূল্য কি মানুষের সাধ্যের মধ্যে? বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ না পেয়ে মানুষ কি সুখে আছে? বৃদ্ধ, এতিম ও প্রতিবন্ধীরা কি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে? প্রায় ৮০ লাখ সক্ষম ব্যক্তির কি বেকারত্ব দূর হয়েছে? রাজধানীসহ সারা দেশে বিদ্যমান রাস্তাগুলো কি ভালো অবস্থায় আছে? হাসপাতালগুলোতে সাধারণ মানুষ কি চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে? প্রশ্নগুলোর জবাব যদি ‘না’ হয়, তাহলে বিগত তিন অর্থবছরের বাজেট দ্বারা জনগণ তুষ্ট হতে পারেনি।
আসলে জনতুষ্টির দিকে খেয়াল রেখেই গণতান্ত্রিক সরকারকে বাজেট প্রণয়ন করতে হয়। বাংলাদেশের জনতুষ্টি অর্জন করতে হয়। আর জনতুষ্টি অর্জন করতে হলে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। মানুষকে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি দিতে হবে। কর্মসংস্থান করতে হবে। চিকিৎসাসেবা দিতে হবে, দিতে হবে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা। বাজেটে বিষয়গুলোর সুরাহা বা দিকনির্দেশনা থাকতে হবে।
অর্থমন্ত্রীর ১০ শতাংশ নয়, যদি ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি অনুমান করি এবং প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭ শতাংশ ধরি, তাহলে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার হওয়া উচিত ন্যূনতম এক লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান অবস্থায় তৎপর হলে এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ সম্ভব। এনবিআর পারে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা আহরণ করতে। দক্ষতা ও সততার সঙ্গে কাজ করলে, সিপিডির হিসাবমতে, ওভার-ইনভয়েস ও আন্ডার-ইনভয়েসের কর ফাঁকি দূর করে অতিরিক্ত ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আয় করা যায়। একইভাবে পাঁচ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে বার্ষিক টার্নওভারসম্পন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরের (টিন) আওতায় আনলে টিনধারীর সংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটি। বছরে প্রতি টিনধারী থেকে দুই হাজার টাকা প্রত্যক্ষ কর নিলে দুই হাজার কোটি টাকা আহরণ সম্ভব। প্রাডো, পাজেরো, বিএমডব্লিউসহ দামি গাড়ি ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বছরে প্রত্যক্ষ কর ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া যায়। তিন কাঠার ওপর শহরে যারা জমির মালিক তাদের থেকে বছরে প্রতি কাঠায় এক হাজার টাকা করে প্রপার্টি ট্যাক্স নেওয়া যায়। আরও অনেক ক্ষেত্র আছে। কর প্রশাসনকে ১ মে ২০১২ থেকেই কাজে লাগিয়ে দিন।
এখন জানতে চাইবেন ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজেটঘাটতি সম্পর্কে। বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সাহায্য পাইপলাইনে আছে। সাড়ে ৩ হাজার বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার যোগ্যতা দেখালে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির ঝামেলা চুকে যায়। সুদের হার বাড়িয়ে দিলে সঞ্চয়পত্র ও ঋণের মাধ্যমে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকা অর্জন সম্ভব। বছরের শেষে এসে তো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কাটছাঁট করবেন।
পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমালে অর্থমন্ত্রীর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন না, এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। শিল্পকারখানা স্থাপন ও ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হবে।
অর্থমন্ত্রী গত ২২ এপ্রিল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। বাজেটের আকার হবে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এডিপির আকার হবে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেটে তিনি উচ্চাভিলাষী হতে চান। মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংকঋণ তাঁর কাছে প্রধান দুটি সমস্যা। ৫৪ হাজার কোটি টাকার এডিপি সত্যিই উচ্চাভিলাষী। নতুন নতুন প্রকল্প না নিয়ে তিনি এটাকে আরও যৌক্তিক করতে পারেন। রাজধানীসহ সারা দেশে অধিকাংশ রাস্তাঘাটের যে বেহাল অবস্থা তা নিরসনে এডিপি বরাদ্দ রাখতে পারেন। কর প্রশাসনকে দক্ষ করে এবং উপরোল্লিখিত করের নতুন ক্ষেত্রগুলো থেকে আয় বাড়িয়ে ব্যাংকঋণ পরিহার করতে পারেন। মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ-রসুনের সহজলভ্যতা, কর্মসৃজন এবং টাকা ছাপানোর সহজ পদ্ধতি পরিহার করার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা পরবর্তী অর্থবছরে রোধ করতে হবে। তাহলে সমস্যাগুলোর প্রকটতা কমে যাবে।
২০১২-১৩ অর্থবছরে বাজেট প্রণয়ন জ্ঞানদীপ্ত হলে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি করা যাবে। বিদ্যুতের ব্যাপারে ২০০৮ সালের তুলনায় ক্যাপাসিটি বেড়েছে, কিন্তু উৎপাদন বাড়েনি। ২০০৮ সালের মতো উৎপাদন সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার ২০০ মেগাওয়াটে ঘুরপাক খাচ্ছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে এ বিষয়ে যে নয়টি প্রকল্প সমাপ্তির জন্য আছে সেগুলো ডিসেম্বর ২০১২-এর মধ্যে সমাপ্ত করলে এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এগুলোকে গ্যাস সরবরাহ করুন। রেন্টাল পাওয়ার স্টেশনগুলো চালু রাখার কোনো যুক্তি নেই। অযথা বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে অপচয় করা ঠিক নয়। এর জবাবদিহি আছে। গ্যাসের ব্যাপারে এডিপিতে রাখা মোবারকপুর, কাপাসিয়া, সেমুতাং, সুন্দলপুর, শ্রীকাইল ইত্যাদি জায়গার কূপ খননের প্রকল্পগুলো সমাপ্ত করুন। বর্তমানে গ্যাসফিল্ডগুলোর উন্নয়ন ও গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করুন। উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় এলপি গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ ২৫ হাজার টন থেকে এক লাখ টনে উন্নীত করার। এভাবে শুধু শিল্প খাতে নয়, গৃহস্থালি কাজেও গ্যাস সরবরাহ সম্ভব। মানুষ দুই বার্নারের চুলার জন্য ৬০০ টাকা দিতে প্রস্তুত আছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে ঢাকা মহানগরে আরও ৫০ কোটি ব্যারেল বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ সম্ভব।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে কার্যকর তত্ত্বাবধান প্রয়োজন। বাজেটে ২০১১-১২-এর চেয়ে ২ থেকে ৩ শতাংশ বরাদ্দ এ দুটি খাতে বাড়ানোর সুযোগ আছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, দায়মুক্তি আইন রহিতকরণ এবং মানবাধিকার কমিশনকে অধিক বরাদ্দ ও জনবল দিয়ে শক্তিশালী করার মধ্যে নিহিত আছে নাগরিকের নিরাপদ জীবন। এতিম, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বাজেটে আড়াই শতাংশ বরাদ্দের সুযোগ আছে। বাজেট কৌশলের মাধ্যমে পল্লি খাত, নগর ইনফলম্যাল খাত, রপ্তানি খাত ও সামাজিক খাতে ৬০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে।
আলোচিত বিষয়গুলো ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হলে সেটি অনেকাংশে ‘জনতুষ্টির বাজেট’ হবে।
জাফর আহমেদ চৌধুরী: অর্থনীতিবিদ ও সাবেক পরিকল্পনাসচিব।
আসলে জনতুষ্টির দিকে খেয়াল রেখেই গণতান্ত্রিক সরকারকে বাজেট প্রণয়ন করতে হয়। বাংলাদেশের জনতুষ্টি অর্জন করতে হয়। আর জনতুষ্টি অর্জন করতে হলে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। মানুষকে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি দিতে হবে। কর্মসংস্থান করতে হবে। চিকিৎসাসেবা দিতে হবে, দিতে হবে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা। বাজেটে বিষয়গুলোর সুরাহা বা দিকনির্দেশনা থাকতে হবে।
অর্থমন্ত্রীর ১০ শতাংশ নয়, যদি ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি অনুমান করি এবং প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭ শতাংশ ধরি, তাহলে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার হওয়া উচিত ন্যূনতম এক লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান অবস্থায় তৎপর হলে এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ সম্ভব। এনবিআর পারে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা আহরণ করতে। দক্ষতা ও সততার সঙ্গে কাজ করলে, সিপিডির হিসাবমতে, ওভার-ইনভয়েস ও আন্ডার-ইনভয়েসের কর ফাঁকি দূর করে অতিরিক্ত ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আয় করা যায়। একইভাবে পাঁচ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে বার্ষিক টার্নওভারসম্পন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরের (টিন) আওতায় আনলে টিনধারীর সংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটি। বছরে প্রতি টিনধারী থেকে দুই হাজার টাকা প্রত্যক্ষ কর নিলে দুই হাজার কোটি টাকা আহরণ সম্ভব। প্রাডো, পাজেরো, বিএমডব্লিউসহ দামি গাড়ি ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বছরে প্রত্যক্ষ কর ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া যায়। তিন কাঠার ওপর শহরে যারা জমির মালিক তাদের থেকে বছরে প্রতি কাঠায় এক হাজার টাকা করে প্রপার্টি ট্যাক্স নেওয়া যায়। আরও অনেক ক্ষেত্র আছে। কর প্রশাসনকে ১ মে ২০১২ থেকেই কাজে লাগিয়ে দিন।
এখন জানতে চাইবেন ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজেটঘাটতি সম্পর্কে। বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সাহায্য পাইপলাইনে আছে। সাড়ে ৩ হাজার বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার যোগ্যতা দেখালে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির ঝামেলা চুকে যায়। সুদের হার বাড়িয়ে দিলে সঞ্চয়পত্র ও ঋণের মাধ্যমে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকা অর্জন সম্ভব। বছরের শেষে এসে তো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কাটছাঁট করবেন।
পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমালে অর্থমন্ত্রীর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন না, এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। শিল্পকারখানা স্থাপন ও ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হবে।
অর্থমন্ত্রী গত ২২ এপ্রিল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। বাজেটের আকার হবে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এডিপির আকার হবে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেটে তিনি উচ্চাভিলাষী হতে চান। মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংকঋণ তাঁর কাছে প্রধান দুটি সমস্যা। ৫৪ হাজার কোটি টাকার এডিপি সত্যিই উচ্চাভিলাষী। নতুন নতুন প্রকল্প না নিয়ে তিনি এটাকে আরও যৌক্তিক করতে পারেন। রাজধানীসহ সারা দেশে অধিকাংশ রাস্তাঘাটের যে বেহাল অবস্থা তা নিরসনে এডিপি বরাদ্দ রাখতে পারেন। কর প্রশাসনকে দক্ষ করে এবং উপরোল্লিখিত করের নতুন ক্ষেত্রগুলো থেকে আয় বাড়িয়ে ব্যাংকঋণ পরিহার করতে পারেন। মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ-রসুনের সহজলভ্যতা, কর্মসৃজন এবং টাকা ছাপানোর সহজ পদ্ধতি পরিহার করার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা পরবর্তী অর্থবছরে রোধ করতে হবে। তাহলে সমস্যাগুলোর প্রকটতা কমে যাবে।
২০১২-১৩ অর্থবছরে বাজেট প্রণয়ন জ্ঞানদীপ্ত হলে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি করা যাবে। বিদ্যুতের ব্যাপারে ২০০৮ সালের তুলনায় ক্যাপাসিটি বেড়েছে, কিন্তু উৎপাদন বাড়েনি। ২০০৮ সালের মতো উৎপাদন সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার ২০০ মেগাওয়াটে ঘুরপাক খাচ্ছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে এ বিষয়ে যে নয়টি প্রকল্প সমাপ্তির জন্য আছে সেগুলো ডিসেম্বর ২০১২-এর মধ্যে সমাপ্ত করলে এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এগুলোকে গ্যাস সরবরাহ করুন। রেন্টাল পাওয়ার স্টেশনগুলো চালু রাখার কোনো যুক্তি নেই। অযথা বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে অপচয় করা ঠিক নয়। এর জবাবদিহি আছে। গ্যাসের ব্যাপারে এডিপিতে রাখা মোবারকপুর, কাপাসিয়া, সেমুতাং, সুন্দলপুর, শ্রীকাইল ইত্যাদি জায়গার কূপ খননের প্রকল্পগুলো সমাপ্ত করুন। বর্তমানে গ্যাসফিল্ডগুলোর উন্নয়ন ও গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করুন। উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় এলপি গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ ২৫ হাজার টন থেকে এক লাখ টনে উন্নীত করার। এভাবে শুধু শিল্প খাতে নয়, গৃহস্থালি কাজেও গ্যাস সরবরাহ সম্ভব। মানুষ দুই বার্নারের চুলার জন্য ৬০০ টাকা দিতে প্রস্তুত আছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে ঢাকা মহানগরে আরও ৫০ কোটি ব্যারেল বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ সম্ভব।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে কার্যকর তত্ত্বাবধান প্রয়োজন। বাজেটে ২০১১-১২-এর চেয়ে ২ থেকে ৩ শতাংশ বরাদ্দ এ দুটি খাতে বাড়ানোর সুযোগ আছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, দায়মুক্তি আইন রহিতকরণ এবং মানবাধিকার কমিশনকে অধিক বরাদ্দ ও জনবল দিয়ে শক্তিশালী করার মধ্যে নিহিত আছে নাগরিকের নিরাপদ জীবন। এতিম, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বাজেটে আড়াই শতাংশ বরাদ্দের সুযোগ আছে। বাজেট কৌশলের মাধ্যমে পল্লি খাত, নগর ইনফলম্যাল খাত, রপ্তানি খাত ও সামাজিক খাতে ৬০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে।
আলোচিত বিষয়গুলো ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হলে সেটি অনেকাংশে ‘জনতুষ্টির বাজেট’ হবে।
জাফর আহমেদ চৌধুরী: অর্থনীতিবিদ ও সাবেক পরিকল্পনাসচিব।
No comments