বিশেষ সাক্ষাৎকার : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন-রাজনীতিবিদদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবমাননাকর

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশনের ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মহসীন হাবিব


কালের কণ্ঠ : আপনাদের কমিশনে তিনজনের মধ্যে যথেষ্ট সমন্বয় ছিল বলেই আপনারা বলেছেন। তার পরও কেন বলা হয় যে কমিশনারদের মধ্যে মতৈক্য ছিল না?
ব্রি. সাখাওয়াত : একটা বিষয় হলো, আমরা তিনজন তিন সেক্টরের লোক। আমরা যখন কমিশনের দায়িত্ব নিয়েছি, তখন একটি ভাঙাচোরা কমিশন ছিল। অনেক বিষয় নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। তিনজনের মধ্যে মতবিরোধ থাকবে না তা নয়। কারণ আমরা তিনজনই স্বতন্ত্র সত্তার মানুষ। যেহেতু আমরা কেউ কারো অধীনে চাকরি করিনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও একজন কমিশনার। কমিশনার হিসেবে কোনো বিষয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে, আমাদেরও ছিল। কিন্তু আমরা আলোচনা করে ঠিক করে নিয়েছি। মাঝেমধ্যে প্রথম দিকে উত্তপ্ত কথাবার্তা হয়েছে। তা একান্তই নিজেদের মধ্যে।
কালের কণ্ঠ : সেগুলো কি নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা সংক্রান্ত?
সাখাওয়াত : নীতিমালা সংক্রান্ত বিষয় একটি জায়গায় হয়েছে। সেটা ছিল সচিবালয়ের দায়িত্ব সংক্রান্ত। আমাদের দুজনের কথা ছিল, যে সচিবালয় প্রধান কমিশনারের নিচে নয়, সচিবালয় থাকবে কমিশনের নিচে। কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সচিবালয়ের দৈনন্দিন কাজ চালাবার জন্য দায়িত্ব দেবে, যাতে বাকি যে কমিশনাররা আছেন তাঁদের সঙ্গে সচিবালয়ের একটি যোগসূত্র থাকবে। এ বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে আমাদের একটি তফাত তৈরি হয়েছিল। সেটা তখনো ছিল, এখনো আছে এবং তিনি এটা ভালো করে জানেন। আমিও তাঁকে একটি চিঠি দিয়েছি। ছহুল সাহেবও একটি চিঠি দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, এটা তো হয়ে গেছে, তার পরও যদি করেন আমার কোনো আপত্তি নেই। তখন আমরা হাসান আরিফ সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। এটা আমাদের জন্য নয়, এটা ছিল ভবিষ্যতের জন্য। যদিও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ডে টু ডে সিটিং ছাড়া বাকি বিষয়ে আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিলেও আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। তার পরও নীতিমালা করা হয়েছে, সেখানে সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আইনের মধ্যে বিষয়টি এখনো রয়ে গেছে। সেখানে আমাদের এখনো আপত্তি রয়ে গেছে। কারণ এখন যে পাঁচজন রয়েছেন, তাঁদের চারজনের কিন্তু বেস নেই, শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়া। যেটা শুনেছি, যাঁরা যান তাঁরা শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গেই কথা বলেন। কিন্তু আমাদের বেলায় সেটা হয়নি।
কালের কণ্ঠ : নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় নির্বাচন করার জন্য কতটা উপযোগী বলে আপনি মনে করেন? আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বর্তমান নির্বাচন কমিশন দিয়ে কি তা সম্ভব?
সাখাওয়াত : দেখুন, আমি বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে এখনো কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।
কালের কণ্ঠ : আমি আইনি কাঠামোর কথা জানতে চাইছি।
সাখাওয়াত : আচ্ছা, আইনি কাঠামো আমরা যেটা করে দিয়ে এসেছি সেটা যথেষ্ট। কিন্তু এখানে একটা 'কিন্তু' আছে। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, ভালো কিছু বিষয় সংযোজন করতে হবে। যেমন এখানে প্রশ্ন হলো, কোন সরকারের অধীনে নির্বাচনটি হবে? আমরা ধরে নিই বর্তমানে যে সংবিধান আছে, ১২৩ ধারায় যা বলা আছে, সেই ধারা মোতাবেক নির্বাচন করতে যত আইনের পরিবর্তন বা সংশোধন আনা হোক না কেন তা কঠিন। অত্যন্ত কঠিন হবে যদি একটি সরকার পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে বসে থাকে এবং সংসদ যদি ভেঙে না দেওয়া হয়। কারণ সংসদ সদস্যরা তখনো ক্ষমতায় থেকে যাচ্ছেন। সুতরাং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ অবস্থায় নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয় কথা হলো, বিভিন্ন দেশে যেটা হয়, সেখানে যেমন একটি ইনটারিম সরকার গঠিত হয়। পুরো ক্যাবিনেট ডিসলভ হওয়ার পর একটি ইনটারিম গভর্নমেন্ট গঠিত হয়। সব গণতান্ত্রিক দেশেই তাই আছে। ব্রিটেনে তো পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়, তারপর প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করার পর তাঁকে বলা হয় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে। সে ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম খুবই সীমিত থাকে। ভারতে ওই অন্তর্বর্তীকালে কোনো অ্যাকশন নেওয়ার আগে নির্বাচন কমিশনকে জানায়। কমিশন যদি দেখে যে এই কাজে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না, কেবল তখনই কোনো কাজের অনুমতি দেয়। তারা জানে, ওই ক্যাবিনেট মোটামুটি ইলেকশন কমিশনের কাছে একটি জবাবদিহিতার মধ্যে থাকে। যেটা স্টাডি করে আমি ওই প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমাদের দেশে সব মন্ত্রণালয় থাকতে হবে, সেটা আমি মনে করি না। অন্তত চারটি প্রধান মন্ত্রণালয়কে ওই পিরিয়ডে কোনো কাজ করার সময় অন্তত নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক পত্রপত্রিকা বলে নির্বাচন কমিশন কর্তৃত্ব চায়। আসলে কর্তৃত্ব নয়, পরামর্শের কথা বলা হয়েছে। মনে করুন কথার কথা, একটি ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেটি উদ্বোধন করতে চান। বিষয়টি ইলেকশন কমিশনের কাছে পাঠাতে হবে। এখন ওই কাজে তিনি কোনো রাজনৈতিক অ্যাডভানটেজ পাচ্ছেন কি না সেই বিবেচনা তিনি করবেন? যেমন চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা যখন চলছিল, তখন কর্ণফুলী ব্রিজটি উদ্বোধনের কথা ছিল। আমাকে কেউ বলেনি। আমি পত্রিকায় পড়লাম, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করতে যাবেন। এখন আইনে বলে মন্ত্রী বা সমপর্যায়ের কোনো ব্যক্তি ওই নির্বাচনী এলাকার ভেতর যেতে পারবেন না। তখন আমরা বললাম, প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তাঁকে অনুরোধ করেন_তিনি যেন না যান।
কালের কণ্ঠ : নির্বাচন কমিশন যদি ওই সময় কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়, তারপর দেখা যেতে পারে নির্বাচনে বিজয়ী দল ক্ষমতায় এসেই ওই নির্বাচন কমিশনের শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্তটি পাল্টে দিল। এ সম্পর্কে আপনাদের কোনো নির্দেশনা বা পরামর্শ আছে?
সাখাওয়াত : না, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। আমাদের দেশে এর বিরুদ্ধে আপনি কিছু করতে পারবেন না। এটা তাহলে আদালতকে দেখতে হবে। এসব ক্ষেত্রে আদালতকেই নির্বাচন কমিশনের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে হয়। আমরা পাশের দেশে দেখেছি, সেখানে নির্বাচন কমিশন আদালতের সহায়তা পেয়ে থাকে। ধরুন, একজন রিটার্নিং অফিসারকে তাঁর আচরণের জন্য সাসপেন্ড করা হলো কমিশনের আরপিওতে আনা আইন অনুযায়ী। তিন মাস পরে কী হলো সেটা তো নির্বাচন কমিশনের দেখার বিষয় নয়।
কালের কণ্ঠ : আপনাদের কমিশন থেকে বারবার বলা হয়েছিল, একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন করা যতটা সহজ, একটি দলীয় সরকারের অধীনে তত সহজ নয়। এর মানে কি এ রকম যে আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকেই সমর্থন করেছেন?
সাখাওয়াত : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কোনো জবাব নয়। এটা বাংলাদেশের জন্য অনেকে বলেছেন ভালো, কিন্তু আর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এ ব্যবস্থা নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় কতগুলো জিনিস আছে। যেমন ধরুন আমি গেলাম। তিন মাসের জন্য গেলাম এবং এরপর আর আমার জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই। দ্বিতীয়ত. এ ব্যবস্থা রাজনীতিবিদদের জন্য চরম অবমাননাকর। একজন রাজনীতিবিদ পাঁচ বছরের জন্য দেশ পরিচালনা করবেন, অথচ তিন মাসের জন্য তাঁকে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা কেন হবে? এর কারণ হলো দেশে প্রতিটি দল, যারাই এখানে ক্ষমতায় ছিল সামরিক কিংবা বেসামরিক_সবাই প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে। ইলেকশন কমিশন তো এই লোকগুলো দিয়েই কাজ করায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থা তো নিজেই দেখতে পাচ্ছেন। এদের দিয়ে নির্বাচন করতে হয়। দ্বিতীয়ত হলো, দলীয় সরকারের হয়তো ওপরের দিকে মন্ত্রী পর্যায়ে যাঁরা আছেন তাঁদের ঠেকানো গেল। কিন্তু নিচের দিকে যাঁরা ওসিকে হুমকি দেন, ম্যাজিস্ট্রেটকে হুমকি দেন, তাঁদের ঠেকানো কঠিন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যাঁরা আছেন, তাঁরা জানেন যে নির্বাচন কমিশনের হাতে মাত্র এক মাস
আছি। এই যে মনমানসিকতা তৈরি হয়ে গেছে, এর থেকে যত দিন বের হওয়া না যাবে তত দিন অন্তত বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের জন্য
কঠিন। ভারতে সম্ভব হয়েছে, কারণ সেখানে একটি আমলাতান্ত্রিক কালচার গড়ে উঠেছে।
কালের কণ্ঠ : দেশব্যাপী আপনাদের কমিশনের একটি ভাবমূর্তি ছিল, গ্রহণযোগ্যতা ছিল। অথচ কিছু ব্যাপারে আপনাদের ব্যর্থতা দেখা গেছে। যেমন_নির্বাচনে হলফনামার বিষয়ে আপনারা একাধিক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
সাখাওয়াত : ঠিকই বলেছেন। আমরা পারিনি। কারণ আমরা যখন এ-সংক্রান্ত আইন তৈরি করি, তখন আমাদেরই ভুল হয়েছিল। আমি কিন্তু সেটা পয়েন্ট আউট করেছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হবে। তখন আমার বাকি দুজন সহকর্মী বললেন, যেহেতু হলফনামা এফিডেভিট করে দিচ্ছে, সেহেতু আদালতের মাধ্যমে সেটা চ্যালেঞ্জ করা যাবে। আর অল্প সময়ের মধ্যে আমরা হলফনামা সত্য কি মিথ্যা সেটা বের করতে পারব না। তার পরও আমি জোরালোভাবে প্রস্তাব করেছিলাম বিষয়টি আরপিওতে যুক্ত করতে। কিন্তু দুই কমিশনার রাজি হলেন না। আইন শাখা বলল, স্যার এটা দণ্ডনীয় অপরাধের মধ্যেই পড়ে। আমিও আর এগোলাম না। কিন্তু যখন এটা অর্ডিন্যান্স আকারে হলো এবং হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য দু-তিনজন আমাদের সামনে এসে হাজির হলেন_তখন আমরা দেখলাম আইনে কভার করছে না। যদিও দু-একটি আদালতে পাঠানো হয়েছিল, তারা আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছে। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে যে আমরা বাতিল করে দেব তা হয়নি। বাতিল করলে আবার আদালতে গিয়ে আদেশ আনব, তা আমরা পারিনি। সুতরাং এই আলোকে আমরা এবার যে প্রস্তাব পাঠিয়েছি সেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, যদি কোনো মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয় তাহলে তিনি 'নির্বাচিত হইবার এবং থাকিবার যোগ্য হইবেন না।' নির্বাচনের পর অন্য সময়ে যদি মিথ্যা তথ্য প্রকাশ পায়, তাহলে আমরা ৯১ ইএস যোগ করার প্রস্তাব করেছি।
কালের কণ্ঠ : নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে আপনারা সেনাবাহিনী চেয়েও পাননি। শেষ পর্যন্ত নানা রাজনৈতিক কারণে আর জটিলতা বাড়েনি।
সাখাওয়াত : আমরা তখনই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। সিইসি তখনই বলেছিলেন, এটি সরকারের জন্য সংবিধান লঙ্ঘন। তবে একটি প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এমন ঘটনা অতীতেও দেখা গেছে। সাঈদ সাহেবের সময়েও নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী চেয়ে পায়নি। দেখা যায়, সরকার বসে থাকলে সেনাবাহিনী চেয়েও পাওয়া যায় না। কাজেই এটার একটা সুরাহা হওয়া উচিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না যে সেনাবাহিনী দিলে নির্বাচন ভালো হবে। আমার পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সেনাবাহিনী দিলে বাদবাকি ফোর্স কাজ করতে চায় না। দেখা গেছে, আর্মি টহল দিয়ে চলে যাওয়ার পরই ব্যালট ছিনতাই হয়ে গেছে। পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলে বলে, স্যার আর্মি ছিল।
কালের কণ্ঠ : যে প্রক্রিয়ায় নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়া হলো তা কি সঠিক বলে মনে করেন?
সাখাওয়াত : যথেষ্ট নয়। এটি একটি ভালো শুরু হলেও আইনসম্মত নয়। এখন সংবিধানে আছে যে প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেবেন, এটাকে আইনের কয়েকটি ধাপের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়ে কথা হলো, শুনলাম, এই নাম জনগণ বিশেষ জানেই না। তিনি সচিব ছিলেন না কিছু লোক জানে। এ নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি, আলোচনা হয়নি। সময়ও ছিল না। আমরা সরে যাওয়ার এক মাস আগেও যদি আলোচনা হতো, তাহলেও কিছু কাজ হতো। বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হলে আরো স্বচ্ছ হতো।
কালের কণ্ঠ : নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে কী ধরনের বিপত্তি দেখা দিতে পারে?
সাখাওয়াত : আজিজ কমিশন! কী হয়েছিল? তিনি এক কথা বলেছেন, বাকি দুজন অন্য কথা বলেছেন। এমন হলে পুরো গণতান্ত্রিক পরিবেশটাই একটি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে যায়। তাই একটি টিম হিসেবে কাজ করা অপরিহার্য। আমরা তা-ই করেছি।
কালের কণ্ঠ : বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থাকে কিভাবে দেখছেন? এই যে চারদিকে গুম, খুন_
সাখাওয়াত : এটা খুবই মারাত্মক ব্যাপার। শুধু একজন নেতাই নয়, যেকোনো নাগরিকের জানমালের নিশ্চয়তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র যদি সে নিরাপত্তা দিতে না পারে, তাহলে সেটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। এটা মানবাধিকারের প্রশ্নও বটে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেই কিন্তু সরকারের ওপর একটি অভিযোগ আসে। ইলিয়াস আলীর বিষয়টি নিয়ে আমরা রাজনীতি দেখছি। দেশ সংঘাতের দিকে চলে যাচ্ছে। এটি কিন্তু ভালো লক্ষণ নয়। আমরা অতীতেও দেখেছি, যখন সংঘাতের পথে চলে যায়, তখন অস্বাভাবিক কিছু ঘটে। গণতন্ত্রের যাত্রাটি ব্যাহত হয়। আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হয়। এমন পাঁচ বছর, ১০ বছর পর পরই গণতন্ত্র যদি ব্যাহত হয়, তা খুবই দুঃখজনক।
কালের কণ্ঠ : রাষ্ট্রের ব্যর্থতা এবং সরকারের ব্যর্থতার মধ্যে পার্থক্য আছে।
সাখাওয়াত : তা আছে। রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সরকারের মধ্যে আবার একটু তফাত করতে হবে। পুলিশ যদি পুলিশের কাজ না করে, যদি জুডিশিয়ারি কাজ করতে না পারে, তাহলে সেটা রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতাই বলতে হয়। দেখতে হবে সরকার রাষ্ট্রের এসব অঙ্গকে কাজ করতে দিচ্ছে কি না। পার্থক্য সংজ্ঞার ভেতরে আছে। তবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে কিন্তু সরকার। সরকার একটি সক্রিয় সত্তা। দেখতে হবে, তারা কিভাবে কতটা রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে কাজ করতে দিচ্ছে। কিছু জায়গা আছে রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য, আমাদের সেই জায়গাগুলো কিন্তু দুর্বল। এখনো আমরা কোনো কোনো বিষয়ে বলি সিদ্ধান্তটি কোন জায়গা থেকে এসেছে; তখন সবাই চুপ হয়ে যাই। এখন সরকারেরই ব্যর্থতা হোক, রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা হোক, আমরা বাইরের বিশ্বকে কিন্তু বলতে পারছি না যে আমরা কী করছি। এখন উন্নত বিশ্ব মানবাধিকার বিষয়ে খুবই সোচ্চার ও উদ্বিগ্ন। এই যে ভদ্রলোক উধাও হয়ে গেছেন, এ নিয়ে বাদানুবাদ চলছে। কিন্তু সবাই আমরা ভুলে গেছি যে দুটি মানুষের জীবন। আরো একজন ড্রাইভারের বিষয় রয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে আপনাকে রাষ্ট্রের কোনো সংস্থার সামনে যেতে হতে পারে। এখন আসলে একটি অবিশ্বাসের খেলা চলছে। এসব কোনো ভালো স্বাক্ষর রাখছে না।
কালের কণ্ঠ : একের পর এক ঘটনা ঘটছে।
সাখাওয়াত : এটা সরকারের দায়িত্ব নিঃসন্দেহে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রের অঙ্গগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি। আমরা কথায় কথায় স্বৈরশাসনের কথা বলি। কিন্তু ২০ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। আমাদের গণতান্ত্রিক সরকারগুলো যেভাবে রাষ্ট্রের অরগানগুলো ব্যবহার করছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত।
আপনাকে কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.