'এশিয়ান টাইগার'-এর সামনে দুর্দিন

দেশ ও মানুষের স্বার্থে রাজনীতি করা প্রয়োজন বিশ্বমন্দায় গোটা দুনিয়া খাবি খাচ্ছে। ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলোতেও বেকার সমস্যা, অভাব-অনটন তীব্র হয়ে উঠেছে। আর তার মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছিল, বাড়ছিল রপ্তানি আয় ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার, যা দেখে বিস্মিত হচ্ছিল সারা দুনিয়া।


বাংলাদেশ অচিরেই একটি অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে_আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেই এমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। কেউ কেউ চীনের পাশাপাশি বাংলাদেশকে দেখতে শুরু করেছিল। জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের (জেবিআইসি) রিপোর্ট অনুযায়ী বিনিয়োগ সম্ভাবনার দেশ হিসেবে ২০০৯ সালে ২৮তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ ১৩ ধাপ এগিয়ে এখন ১৫তম স্থানে পেঁৗছে গেছে। এর অর্থ হচ্ছে, জাপানসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশকে অনেক বেশি বিনিয়োগবান্ধব মনে করছে। বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ভ্যান ডাবি্লউ মজিনা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের 'এশিয়ান টাইগার' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আন্তর্জাতিক ঋণদান সংস্থা মুডি'স রেটিংয়ে বাংলাদেশ তার পূর্বের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এবারও বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে। এক নম্বরে আছে ভারত। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের চেয়ে এক পয়েন্ট এবং পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে তিন পয়েন্ট কম পেয়ে এই রেটিংয়ে বাংলাদেশের নিচে অবস্থান করছে। অথচ এক দশক আগেও পাকিস্তান আমাদের তুলনায় অনেক এগিয়েছিল। আর এসবই আমাদের জন্য সুসংবাদ বা আশাজাগানিয়া খবর। এসব খবরে বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমাদের বুকটাও গর্বে ভরে যেত, আশা জাগৎ যে পশ্চিমা দুনিয়া আর আমাদের 'ভিক্ষুকের জাতি' বলে অবজ্ঞা করতে পারবে না। কিন্তু সকলই যেন গরলে ভেল। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক হানাহানি, হরতাল, নৈরাজ্য যেন সেই সব আশাবাদেরই মূলে কুঠারাঘাত করছে।
কেন এমন হচ্ছে? বিশেষজ্ঞরা এর যেসব কারণ ব্যাখ্যা করেছেন, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সারা দুনিয়ায় অর্থনীতি রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করলেও বাংলাদেশে রাজনীতি অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে রাজনীতিবিদরা তাঁদের আশু অর্জনকে যতটা গুরুত্ব দেন, অর্থনীতির অর্জনকে ততটা গুরুত্ব দেন না। নিজের স্বার্থকে যতটা গুরুত্ব দেন, দেশের স্বার্থকে ততটা গুরুত্ব দেন না। আবার এমন মতও আছে, আমাদের রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় থাকাকালে এত বেশি দুর্নীতি করেন যে পরবর্তী সরকারের সময় সেগুলোর বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। তৃতীয়ত, গণতান্ত্রিক রাজনীতি করলেও তাদের ভেতরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ খুবই কম। ফলে কেউ কাউকে আস্থায় নিতে পারে না। যারা ক্ষমতায় থাকে, তারা খুব সহজেই দমন-পীড়নের আশ্রয় নেয় এবং যারা বিরোধী দলে থাকে, তারা সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এগুলো দেশের অগ্রগতিকেই শুধু ব্যাহত করবে না, ভাবমূর্তির দিক থেকেও বাংলাদেশ যে সুনাম অর্জন করেছে, তাকেও বিনষ্ট করবে। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় আমাদের রাজনীতিবিদদের এসব অপকৌশল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারকে আরো সক্রিয় হতে হবে। ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে জাতিকে সঠিক ঘটনা জানাতে হবে। আর বিরোধী দলকেও হরতাল দিয়ে অর্থনীতির চাকা অচল করা, গাড়ি ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ, পুড়িয়ে মানুষ মারা বন্ধ করতে হবে। সবার আগে দেশ এবং দেশের মানুষের স্বার্থকে স্থান দিতে হবে। আমাদের রাজনীতিবিদদের প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে এবং পারস্পরিক সহনশীলতা ও আস্থার মনোভাব নিয়ে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.