বিশেষ সাক্ষাৎকার-সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির উল্টো কাজ করছে by এম হাফিজউদ্দিন খান

এম হাফিজউদ্দিন খানের জন্ম ১৯৩৯ সালে সিরাজগঞ্জে। ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেন। ১৯৬০ সালে স্নাতক ও ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি কিছুদিন নীলফামারী কলেজ ও খুলনার বিএল কলেজে অধ্যাপনা করেন।


১৯৬৪ সালে কেন্দ্রীয় সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৯৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন। এখন তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম

প্রথম আলো  আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করেছিল, তারা সরকার গঠন করতে পারলে দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেবে, দুর্নীতি দমনের জন্য আরও অনেক কিছু করবে। তাদের সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের কী অবস্থা দেখছেন?
এম হাফিজউদ্দিন খান  আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে দুই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। একটা হলো, তারা বলেছিল, দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করবে, আরেকটা হলো, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, সাংসদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রকাশ করা হবে। দুই বছর পার হয়ে গেছে, এর মধ্যে তাদের প্রতিশ্রুতির উল্টোটা হয়েছে।
দুদক আইন সংশোধনের এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যে সরকারের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন, এমন কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত বা মামলা করতে হলে দুদককে সরকারের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নিতে হবে। সরকারের একটি কমিটি থেকে যখন প্রথম এই প্রস্তাবটা সুপারিশ করা হয়, তখন সবাই এর প্রতিবাদ করেছিলেন, আমরা টিআইবির পক্ষ থেকে অনেক জোরালো প্রতিবাদ করেছিলাম। চার-পাঁচ লাখ লোকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছিলাম, সারা দেশে এটা নিয়ে জনমত যাচাই করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি, মানববন্ধন করেছি। তখন আমাদের ধারণা হয়েছিল, এই সংশোধনী আনা হবে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, মন্ত্রিসভায় সংশোধনী প্রস্তাবটি অনুমোদন পেয়েছে এবং সংসদের চলতি অধিবেশনে তা পেশ করা হবে; হয়তো পাসও করা হবে। তা যদি করা হয়, তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন একেবারেই অকার্যকর হয়ে যাবে—একটা মৃত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। কারণ, দুর্নীতি দমন কমিশনের আগে যে দুর্নীতি দমন ব্যুরো ছিল, সেটা যে ব্যর্থ একটা প্রতিষ্ঠান ছিল, তার প্রধান কারণই ছিল এই পূর্বানুমতির বিধান। পূর্বানুমতির জন্য যখন কোনো নথি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হতো, সেখানে দিনের পর দিন বিলম্ব হতো, বিভিন্ন রকমের তদবির চলত এবং দুর্নীতির অনেক ঘটনার অভিযোগও শোনা যেত। সেখানে বছরের পর বছর নথি পড়ে থাকত। যখন সরকার মনে করত কাউকে ফাঁসাতে হবে, তখন সেই নথিটা অনুমোদন দেওয়া হতো।
প্রথম আলো  তার মানে, এখন দুদককে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ চলছে?
এম হাফিজউদ্দিন খান  সংশোধনী প্রস্তাবের কথা বাদ দিলেও বর্তমানে যে দুদক রয়েছে বা নির্বাচনের আগেও ছিল, তারও কিছু দুর্বলতা ছিল। যেমন—তার প্রসিকিউশনের সমস্যা ছিল, ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কমিশন থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল, সেগুলো বিবেচনা করা হয়নি। অর্থাৎ দুদককে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হয়নি। মাননীয় অর্থমন্ত্রী নিজের উদ্যোগে করেছেন, প্রধান বিচারপতিও করেছেন। কিন্তু এগুলো পাবলিক ডোমেইনে আসেনি, অর্থাৎ জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। এটা জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত এবং প্রতিবছরই করা উচিত, যেমনটি অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে হয়।
প্রথম আলো  ন্যায়পাল নিয়োগের প্রতিশ্রুতিও বোধ হয় ছিল?
এম হাফিজউদ্দিন খান  কথা ছিল ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে। কিন্তু সেটা তো করা হয়ইনি, বরং ন্যায়পালের নামান্তর একটা কর ন্যায়পাল ছিল, সেটাও তুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও সেই কর ন্যায়পাল কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত না, সেটাকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে বা কেন অকার্যকর প্রতিষ্ঠান ছিল, তা না দেখে সেটাকে সমূলে উৎপাটন করা হয়েছে।
প্রথম আলো  বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদক বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল। আপনার কি মনে হয়, দুদক তখন সত্যিই স্বাধীন ছিল? নাকি নির্বাহী ও বিচার বিভাগ চাচ্ছিল বলে দুদক তথাকথিত রুই-কাতলাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পেরেছিল, অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন...?
এম হাফিজউদ্দিন খান  বর্তমানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কিন্তু স্বীকার করেছেন, দুদক একটা বড় ধরনের ঝাঁকুনি দিয়েছিল। দুর্নীতিবাজেরা সত্যিই ভয় পেয়েছিলেন। দুদক সে সময় স্বাধীনভাবে কাজ করেছে, না তাদের পেছনে যে শক্তি বা ওই সরকারের পেছনে যে শক্তি ছিল, তাদের কারণে দুদক এটা করেছিল—এটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু সত্য হচ্ছে, সে সময় দুদক শক্তিশালী ছিল।
প্রথম আলো  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের দুদক কথাকথিত রুই-কাতলাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে যেসব মামলা করেছিল, পরে সেগুলো হাইকোর্টে গিয়ে বাতিল হয়ে গেছে। রুই-কাতলারা এখন মুক্ত, এমনকি বিশেষ আদালতে দণ্ডিত অনেকের দণ্ডও বাতিল হয়ে গেছে। কেন এ রকম হলো?
এম হাফিজউদ্দিন খান: দুদক যাঁদের দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, তাঁদের অনেকেই যে প্রকৃত দুর্নীতিবাজ ছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ একটা ছোট দেশ, আমরা সবাইকে চিনি। কারা দুর্নীতিবাজ, জনগণও তা জানে। অনেকের শাস্তি হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের প্রত্যেকেরই মামলা হাইকোর্টে গিয়ে বাতিল হয়ে গেছে। মামলার অভিযোগ অমূলক বলে কিন্তু বাতিল হয়নি, বাতিল হয়েছে মামলার পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে। হাইকোর্টে দেখা হয়নি, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সত্য কি না বা তাঁরা প্রকৃতই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন কি না।
প্রথম আলো  এ দেশে শুধু অতীতের দুর্নীতির বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও দেখা গেছে, আগের দুটি সরকারের আমলের দুর্নীতির বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভেতরেও কেউ কেউ দুর্নীতি করছেন কি না, তা দেখা হয়নি। ক্ষমতাসীন অবস্থায় কারও দুর্নীতির বিচার হয় না। এ বিষয়ে আপনি কী বলেন?
এম হাফিজউদ্দিন খান  হ্যাঁ, সব সময় অতীত সরকারের আমলের দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। মামলার হয়তো নিষ্পত্তি হয়নি, কিন্তু মামলা হয়েছে। এরশাদের বিরুদ্ধে খালেদা সরকার, খালেদা সরকারের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকার, হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিএনপি সরকার। এ রকমই চলে আসছে। আসলে এসব কার্যক্রম দুর্নীতি দমনের উদ্দেশ্যে নয়, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করাই মুখ্য উদ্দেশ্য।
প্রথম আলো  ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির বিচার করা, তাদের দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যাবে কীভাবে?
এম হাফিজউদ্দিন খান  শাস্তির ভয় ব্যতিরেকে যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতি করার সুযোগ থাকবে, তত দিন দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যাবে না। আমাদের দেশে সে রকম কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেই। সে জন্য মানুষ দুর্নীতি করছে। দুর্নীতি করলে শাস্তি হয় না, তাই দুর্নীতি করতে মানুষ সাহস পায়। আর যদি শাস্তি হয়, ১০-১৫ বছর পর মামলা হবে। মামলায় এত ফাঁকফোকর থাকে বা আইনের অনেক দুর্বলতা; এত দীর্ঘসূত্রতা ঘটে যে, মানুষ মনে করে তার কিছু হবে না। অর্থাৎ ইমপিউনিটি যত দিন থাকবে, তত দিন দুর্নীতি রোধ করা যাবে না। এটার জন্য আইনি সংস্কার দরকার, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা দূর করার জন্য কিছু সংস্কার দরকার। সেগুলো হচ্ছে না, বরং উল্টোটাই হচ্ছে।
প্রথম আলো  দুর্নীতির মামলাগুলো দুর্বল হয়, আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করা যায় না, মামলা বাতিল হয়ে যায়, পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা বলা হয়। এসব বিষয়ে কিছু বলুন।
এম হাফিজউদ্দিন খান  হাইকোর্টে বলা হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগের নোটিশগুলো দেবে দুর্নীতি দমন কমিশন, একটা সংস্থা হিসেবে, কিন্তু নোটিশ দেওয়া হয়েছে সেক্রেটারিদের পক্ষ থেকে। মামলা বাতিল হওয়ার একটা বড় কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে এটাকে। কারণ সেক্রেটারিদের এ অধিকার নেই। তারপর, মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে যে আইনি পরামর্শের প্রয়োজন হয়, সে জন্য ভালো উকিল দরকার। দুর্নীতির মামলাগুলো পরিচালনা করেন পাবলিক প্রসিকিউটররা (পিপি)। এখন পর্যন্ত পিপি নিয়োগের যে ব্যবস্থা চালু রয়েছে, তাতে দক্ষতা-যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক দলের আনুগত্যকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তার সমর্থকদের পিপি নিয়োগ করা হয়। তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও সততা দেখা হয় না। ফলে মামলাগুলো দুর্বল হয়, আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হয় না।
প্রথম আলো  যুক্তরাজ্য, ভারত বা অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে দুর্নীতি দমনের কাজগুলো কীভাবে করা হয়? ভারতে দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। খোদ প্রধানমন্ত্রীকেও পার্লামেন্টে ডেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। সেসব দেশে কীভাবে এগুলো সম্ভব হয়?
এম হাফিজউদ্দিন খান  এটা সম্ভব হয়, কারণ যে সংস্থার ওপর দুর্নীতি দমনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে। ভারতে অডিটর জেনারেলের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে দেখা গেল, টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর কর্মকাণ্ডে, কিছু লাইসেন্স বিতরণের ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সেটা নিয়ে পার্লামেন্টে হইচই হলো, মন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। তারা এমনকি প্রধানমন্ত্রীকেও পার্লামেন্টে গিয়ে ব্যাখ্যা করার জন্য সমন করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব পালনকারী প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতার ফলে। এই অনুশীলন তো আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি। মুশকিল তো এখানেই।
প্রথম আলো  টিআইবি দুর্নীতি বিষয়ে গবেষণা ও জনমত জরিপ করে, প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরে। পাশাপাশি দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণাও চালায়। এই অ্যাকটিভিজম আপনারা কেন করেন?
এম হাফিজউদ্দিন খান  আমরা গবেষণা, জরিপ ইত্যাদি করি। আন্তর্জাতিকভাবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বার্লিন থেকে চারটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে—দুর্নীতির ধারণা সূচক, গ্লোবাল করাপশন রিপোর্ট, গ্লোবাল করাপশন ব্যারোমিটার, এবং ব্রাইভ পেয়ার্স ইনডেক্স। গ্লোবাল করাপশন ব্যারোমিটারে বাংলাদেশ ছিল না। এবারই প্রথম বাংলাদেশসহ আটটি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর জাতীয়ভাবে বাংলাদেশ থেকে আমরা খানা জরিপের পাশাপাশি করি ডায়াগনস্টিক স্টাডি। এই ডায়াগনস্টিক স্টাডি করা হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে। যেমন—চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, এনবিআর, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি। আমরা অনুসন্ধান-গবেষণা করে জানার চেষ্টা করি দুর্নীতি কেন হয়, কীভাবে হয়, কীভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যায় এবং এর সুপারিশমালাসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করি। এই কাজের সময় আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বারবার সভা-বৈঠক করি, তাদের মতামত নেওয়া হয়। তারপর সংবাদ সম্মেলন করে ডায়াগনস্টিক স্টাডির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। যুবসমাজের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। টিআইবির স্লোগান হলো, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন।
প্রথম আলো  সম্প্রতি আদালত আপনাদের একটি খানা জরিপ সম্পর্কে বললেন যে আপনারা ভুল ধারণার ভিত্তিতে জরিপ করেছেন, এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?
এম হাফিজউদ্দিন খান  আদালত আমাদের জরিপের ফলাফলকে ভিত্তিহীন বলেছেন। আদালত আমাদের কাছে খানা জরিপের প্রশ্নোত্তরগুলো চেয়েছিলেন। আমরা সেগুলো দিয়েছি। জরিপে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন অর্থাৎ উত্তরদাতাদের নামধাম, পরিচয়, ঠিকানা ইত্যাদিও আদালত চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তো তাঁদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে পারি না। কারণ, নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তেই তাঁরা আমাদের প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে সম্মত হয়েছিলেন। আমরা তাঁদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে আমরা তাঁদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করব না। সুতরাং এটা আমরা করতে পারি না। দ্বিতীয়ত, আদালত জানতে চেয়েছিলেন মামলাগুলোর নম্বর, কোন আদালত, কোন বিচারক ইত্যাদি। কিন্তু আমরা তো এগুলো করিনি, আমরা মানুষের পারসেপশন বা ধারণা জরিপ করেছি। আমরা আদালতে জানিয়েছি, আমরা এসব করিনি। আদালত সে জন্য বলেছেন, এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। যা-ই হোক, আমরা আমাদের জরিপের মাধ্যমে দুর্নীতি সম্পর্কে যে সাধারণ চিত্র পেয়েছি, তা-ই তুলে ধরেছি। সাধারণ মানুষ সেটাকে সমর্থন করেছে। আর এ কাজের সুবাদে সবচেয়ে বড় কাজ যেটি হয়েছে, তা হলো মাননীয় প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের দুর্নীতি চিহ্নিত ও তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছেন। এটা একটা বেশ বড় উদ্যোগ। এ রকমই তো আমরা চাই।
প্রথম আলো  আপনাকে ধন্যবাদ।
এম হাফিজউদ্দিন খান  ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.