কৃষকের মাথায় হাত-কবে নির্ধারণ হবে ধানের দাম

সোনারঙা ধান এখন কৃষকের উঠোনে যেতে শুরু করেছে পুরোদমে। আগাম উৎপাদিত ধান ইতিমধ্যে কৃষকের খরচ জোগাতে বিক্রয়ের জন্যও প্রস্তুত। ঐতিহ্যের নবান্নের উৎসব না থাকলেও কৃষকের মুখে হাসি থাকার কথা এই সময়। কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতি তার প্রতিকূলে। পাইকার দাম হাঁকছে অতি সামান্য। উৎপাদন মূল্য থেকেও অনেক কম।


বাজারে বিকোয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা মণ। অথচ উৎপাদন খরচই পড়ে মণপ্রতি ৬২০ টাকা। যার অর্থ দাঁড়ায়, অর্ধেকই লোকসানের খাতায়। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ধান উৎপাদনকারী কৃষকদের হতাশা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। চাতালগুলো এবং চাল ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগেরই যেন অপেক্ষায় আছে। লক্ষণ স্পষ্ট_এবারও ফড়িয়াদেরই দিন আসবে। দামও আরেক দফা কমে যেতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, আর কত কমবে ধানের দাম। মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারাও হাত বাড়িয়ে আছে। কৃষকের অসহায়ত্বকে পুঁজি করতে উদ্যত ওরা। এ মুহূর্তে দেনা শোধ করতে কৃষককে ধান বিক্রি করতেই হবে। এমনটাই এ দেশের কৃষককে করতে হয়। উৎপাদিত ফসলের বড় একটি অংশ তারা বিক্রি করে দেয় জমি থেকে ধান উঠোনে আসার পর পরই। চাতালগুলো কিংবা ফড়িয়াদের নিয়ন্ত্রণ করার কোনো প্রচেষ্টা সরকারের নেই। অন্যদিকে চাল ক্রয়ের মূল্য নির্ধারণ হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। কবে নাগাদ সরকার ধান ক্রয় শুরু করবে, তাও বোঝা যাচ্ছে না। প্রতিবছরই কৃষকের জরুরি সময় সরকার ধান-চাল কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না। কম মূল্যে ফড়িয়া দালালরা ধান কেনে কৃষকের কাছ থেকে। কৃষকের বেচা প্রায় শেষ হলে বাজার মূল্য নির্ধারিত হয়, আর কৃষক বঞ্চিত হয় সেই মূল্য থেকে। সরকারের বিলম্বে নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে কৃষকের ক্ষতি নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি হয়, কিন্তু সরকার তাতে কান দেয় না।
এদিকে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য সেচ সুবিধা নিশ্চিত করাও সম্ভব হয়নি সরকারের পক্ষে। সেচ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সুবিধা পায়নি কৃষক। আনুষঙ্গিক ব্যয়ও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক।
এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেও বাম্পার ফলন ফলাতে পেরেছে কৃষক। এই সাফল্যের ফল তাদের পেতে হবে।
চালকলগুলো ধান কেনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। এবার তারাও এগিয়ে আসতে পারছে না মূলত অর্থাভাবে। ব্যাংকগুলো আগের মতো তাদের টাকা দিচ্ছে না। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেক স্থানে পাহাড়ি ঢল আঘাত করেছে। সাময়িক বাঁধ নির্মাণ করে ফসল রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে সেখানে। এতেও কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে আরো। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের নির্লিপ্ততা মোটেও কাম্য নয়। অতি দ্রুত সরকারি ক্রয়মূল্য নির্ধারণ এবং ধান ক্রয় শুরু করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.