সবাইকে আচরণবিধি মেনে চলতে হবে-২৭ জানুয়ারির উপনির্বাচন

সম্প্রতি ২৪২টি পৌরসভার যে নির্বাচন হয়ে গেল, সাধারণভাবে তা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হিসেবে সব মহলে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। একটি রাজনৈতিক সরকারের অধীনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি ছিল নির্বাচন কমিশনের কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশন মোটামুটি ভালোভাবেই তা মোকাবিলা করেছে।


কাল ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের দুটি আসনে উপনির্বাচন ও ১২টি পৌরসভায় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আগে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় আমরা আশা করছি, ২৭ জানুয়ারির নির্বাচনও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং সব মহলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
পৌরসভার নির্বাচন আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক নির্বাচন নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যক্ষ সমর্থন থাকলেও প্রার্থীরা নির্দলীয় ভিত্তিতেই নির্বাচন করে থাকেন। এখানে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের সুযোগ নেই। ২৭ জানুয়ারি ১২টি পৌরসভার সঙ্গে সংসদের দুটি আসনের উপনির্বাচনও যেহেতু অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সে কারণে দিনটি সব মহলের বাড়তি মনোযোগ পাচ্ছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে উৎসাহ-উদ্দীপনাও লক্ষ করা যাচ্ছে। উপনির্বাচনের ফলাফল সরকারি দল ও বিরোধী দলের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন ঘটাবে না ঠিকই, কিন্তু এই জয়-পরাজয়ের সঙ্গে মান-সম্মানের বিষয়টি যেমন থাকে, তেমনি থাকে নানা রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ ও বিবেচনা। জাতীয় সংসদের হবিগঞ্জ-১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের উপনির্বাচন দুটি সে কারণেই গুরুত্বপূর্ণ।
পৌরসভার যে নির্বাচনগুলো আগে অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত কিছু স্থানে নির্বাচনের সময় সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। ২৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের বিষয় বিবেচনায় না রেখেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অন্যদিকে, বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের দুটি আসনের উপনির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন আগের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে উপনির্বাচনে সেনা মোতায়েন করবে, সেটাই দলটি প্রত্যাশা করে। সেনা মোতায়েন না করা হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না, সে ব্যাপারে বিএনপি সংশয় প্রকাশ করেছে।
বিষয়টি এখন পরিষ্কার যে, সেনা মোতায়েনের বিষয়টি এ উপনির্বাচনের একটি বড় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সেনা মোতায়েন করে কী লাভ? পৌর নির্বাচনে সেনা মোতায়েন কার্যত কোনো কাজে আসেনি। তিনি জানিয়েছেন, ২৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, কোস্টগার্ড ও র‌্যাব মোতায়েন থাকবে।
সব মিলিয়ে ২৭ জানুয়ারির নির্বাচন তাই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনের জন্যও এটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা মনে করি, নির্বাচনী আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানে থাকলে এই নির্বাচনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেবে। একই সঙ্গে প্রত্যাশা থাকবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, তাঁদের সমর্থক ও দলের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনের আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলে নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করবেন।

No comments

Powered by Blogger.