জনস্বাস্থ্যের হুমকি দূর করুন, সুপেয় পানি সহজলভ্য করুন-‘সুপেয়’ পানির নামে কী বিক্রি হচ্ছে?

ওয়াসার পানির সুনাম নেই তার অপ্রতুলতা ও সুপেয় না হওয়ার জন্য। যে পানিতে ময়লা নেই, ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান বা জীবাণু নেই, তা-ই সুপেয়। বাংলাদেশে এই সুপেয় পানির ব্যবসা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে এবং বোতল বা জারে করে সেই পানি সরবরাহও করা হয়। সুপেয় পানির সহজলভ্যতা না থাকাতেই পানি হয়ে উঠছে দামি।


কিন্তু দাম দিয়েও যদি সুপেয় বলে বিজ্ঞাপিত পানির মান যথাযথ না থাকে, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
গত মঙ্গলবারের প্রথম আলো থেকে জানা যাচ্ছে, ভ্রাম্যমাণ আদালত কেবল ঢাকার একটি এলাকাতেই ২৬টি প্রতিষ্ঠানের ২২টিতে ত্রুটি পেয়েছে। অর্থাৎ সেগুলো ‘সুপেয়’ নয়। আরও সঠিক করে বললে, ‘সুপেয়’ বলে আসলে ভেজাল পানি গছানো হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। এটা জনস্বাস্থ্যের বিরুদ্ধে অপরাধ। ভ্রাম্যমাণ আদালত কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করেছেন, এটা সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু পানির মতো মানবস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি প্রয়োজন নিয়ে অনৈতিক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আরও কঠিন শাস্তির বিধান করা দরকার।
গোড়ার প্রশ্নটা এই যে, রাজধানী শহরে ওয়াসা এবং রাজধানীর বাইরের পৌর এলাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই পানের পানি সরবরাহ করার কথা। পানি মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলোর মধ্যেও মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তা-ই নয়, পানি নিয়ে বাণিজ্যও সংবিধানের মৌল চেতনার বিরোধী। অথচ ওয়াসার সরবরাহ অপ্রতুল এবং তাতে দূষণ ও জীবাণু থাকার অভিযোগ রয়েছে। ওয়াসার এই গাফিলতির ফলেই অন্যদের পক্ষে পানিকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করা সহজ হচ্ছে। পাশাপাশি দাম ও মানের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি অতিশয় দুর্বল থাকায়, উভয় ক্ষেত্রেই বিরাজ করছে একধরনের নৈরাজ্যিক অবস্থা।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের তরফে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতেই যদি ২৬টি পানির কোম্পানির ২২টিতেই ত্রুটি মেলে, তাহলে সার্বিক অবস্থার ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতেই হয়। আমরা চাইব, এই উদ্বেগ সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্পর্শ করুক। পাশাপাশি সুপেয় পানির সরকারি-বেসরকারি সব জোগানদাতাকেও ভোক্তা ও ক্রেতাসাধারণের প্রতি আরও ন্যায়নিষ্ঠ হওয়ার আহ্বান জানাই।

No comments

Powered by Blogger.