আফসোসটা আরও বাড়ালেন সানি by উৎপল শুভ্র
মনে করুন, হালকা বৃষ্টি আর মাঠের মান্ধাতা আমলের নিষ্কাশন-ব্যবস্থা মিলিয়ে মাঝের দুই দিনের কেলেঙ্কারিটা হয়নি। চতুর্থ দিন শেষের এই স্কোরটা আসলে দ্বিতীয় দিনের শেষের। একবার ভাবুন তো ব্যাপারটা! টেস্টের তিন দিন বাকি থাকতে ৫ উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০৬ রানে পিছিয়ে। তৃতীয় দিনের খেলা শুরুর সময় টেস্ট ক্রিকেটে চতুর্থ জয়ের স্বপ্নে বিভোর থাকত সারা দেশ। অথচ তৃতীয় দিনটি এখানে টেস্টের শেষ দিন। যে দিন শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে— এই টেস্টে একটি ফলই সম্ভব।
যতই ভাববেন, ততই আফসোস বাড়বে। রাগও হবে। আবহাওয়ার ওপর কারও হাত নেই। ক্রিকেটের আজন্ম শত্রু বৃষ্টি যুগে যুগে এমন দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়েছে অনেক দলের। অনেক দলকে দিয়েছে বেঁচে যাওয়ার স্বস্তি। বৃষ্টি তো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে বৃষ্টি-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি বহুদিনই মানুষের করায়ত্ত। এখানে আফসোসটা ক্ষোভে রূপ নিচ্ছে এ কারণেই। বিশ্বের আর কোনো মাঠে খেলা হলে আগের রাতের হালকা বৃষ্টি রৌদ্রোকরোজ্জ্বল পরের দিনটিতে এমন হাহাকার ছড়িয়ে দিতে পারত না। অথচ এখানে পরপর দুই দিন একই ঘটনা। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নিষ্কাশন-ব্যবস্থাকে আধুনিক রূপ দেওয়ার আগে এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কথা ভাবাই উচিত নয়।
দুই দিনেও টেস্ট ম্যাচে জয়-পরাজয় নিষ্পত্তি হওয়ার ঘটনা আছে। একটি-দুটি নয়, ১৯টি! এর বেশির ভাগই উইকেট উন্মুক্ত রাখার যুগে। উইকেট ঢেকে রাখার যুগে যে চারটি উদাহরণ, সেটির সূচনা এই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দিয়েই। ২০০০ সালে হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের সেই কীর্তির পুনরাবৃত্তি করার ক্ষমতা বাংলাদেশের এই বোলিংয়ের নেই। দুই দিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরই এই টেস্টের ভাগ্যে ড্র লেখা হয়ে গেছে। জয়-পরাজয়ের ব্যাপারটিই নির্ধারিত হয়ে গেলে সেই খেলার আর কী অর্থ থাকে?
তার পরও ‘অর্থহীন’ এই টেস্ট ম্যাচের কিছু অর্থ আছে। কয়েক দিন পরই আরেকটি টেস্ট ম্যাচ। সেই ম্যাচের জন্য আত্মবিশ্বাসের রসদ জোগাড় করার সুযোগ হয়েই এসেছে টেস্টের শেষ দুই দিন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ভান্ডারেই সঞ্চয়টা বেশি। সেই প্রথম দিনের ৪ উইকেটে ২৫৫ রানকে ৯ উইকেটে ৩৫০ করে ইনিংস ঘোষণা করাটাই তো বাংলাদেশের ক্রিকেটে উদ্যাপন করার মতো উপলক্ষ। ৭০তম টেস্টে মাত্র চতুর্থবারের মতো ইনিংস ঘোষণা করার সুযোগ পেলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। অভিষেক টেস্টেই মুশফিকুর রহিম ইনিংস ঘোষণা করার ‘কীর্তি’তে হাবিবুল বাশার ও মোহাম্মদ আশরাফুলের পাশে বসে গেলেন।
বাংলাদেশের ইনিংস ঘোষণা করার প্রথম ঘটনাটি এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই, ২০০৪ সালে বাংলাদেশের তিন সেঞ্চুরিতে বিখ্যাত সেন্ট লুসিয়া টেস্টে। সেই টেস্ট ড্র হয়েছিল। নিজেদের কৃতিত্বে বাংলাদেশের প্রথম ড্র। ইনিংস ঘোষণা করা বাকি দুটি টেস্টের একটিতে জয় (২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে, ইনিংস ঘোষণা দ্বিতীয় ইনিংসে), বৃষ্টিবিঘ্নিত অন্য টেস্টটিও শেষ হয়েছিল ড্রয়ে (২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকায়)।
ইনিংস ঘোষণা করার পর এমন ‘মামুলি’ ব্যাপারও বাংলাদেশ দলের জন্য আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি। প্রথম দিনে আদর্শ টেস্ট ব্যাটিংয়ের পর কাল রান বাড়ানোর ব্যাটিংটাও দেখাল বাংলাদেশ। ৩১.৪ ওভারে ৯৫ রান। অপরাজিত ব্যাটসম্যানের জন্য দুই দিন বসে থাকাটা বড় যন্ত্রণার। মুশফিকুর রহিম সেই যন্ত্রণাতেই কিনা মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই আউট! নাঈম ইসলাম অবশ্য শেষ পর্যন্ত অপরাজিতই থাকলেন। ১৬৯ মিনিটে ১৩১ বল খেলে অপরাজিত ৩৬ প্রমাণ করেছে, টেস্ট ব্যাটিংটা তিনি পারেন। প্রথম দিন রক্তাক্ত হয়ে মাঠ ছাড়া শাহরিয়ার নাফীস আবার ব্যাটিং করতে নেমে ফিদেল এডওয়ার্ডসেরই শিকার। সেটি অবশ্য বাউন্সারে নয়, অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে।
কাল বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে ঝলমলে নাসির হোসেন। এই প্রাণচঞ্চল তরুণ ওয়ানডে অভিষেকেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটাকে তিনি এমন হাতি-ঘোড়া কিছু মনে করেন না। টেস্ট অভিষেকেও সেই নাসিরই। ৪৭ বলে ৩৪ রানের ইনিংসে ৬টি চার—নাসির সত্যিই একঝলক তাজা বাতাস। অফ স্পিন বোলিংটাও খারাপ করলেন না।
দিনের নায়ক অবশ্য নাসির নন। সেটি এই টেস্টে অভিষিক্ত বাংলাদেশের আরেকজন—ইলিয়াস সানি। ব্যাটিংয়ে শূন্য, তবে সেটি তো আর তাঁর আসল কাজ নয়। আসল কাজ বাঁহাতি স্পিন। সেটিতে শুরু থেকেই স্পিনে জুজু দেখা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের নাচিয়ে ছাড়লেন। উইকেট পেয়ে যেতে পারতেন টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর দ্বিতীয় বলেই। পাননি মিড অনে শাহাদাতের দেরিতে ঘুম ভাঙায়।
ব্যাটসম্যানের নাম কার্ক এডওয়ার্ডস, এর আগে যাঁর একটিই টেস্ট ম্যাচ। সেটিতে সেঞ্চুরি করে স্মরণীয় অভিষেক। ইলিয়াস সানির অভিষেকটাকেও স্মরণীয় করে রাখায় অবদান রাখাটাকে সম্ভবত নিজের দায়িত্ব মনে করলেন। সানির তৃতীয় ওভারে আরেকবার ক্যাচ দিলেন, এবার ফেললেন মুশফিকুর। এক বল পর আউট হতে সক্ষম হলেন। ফিল্ডারদের অবস্থা দেখে সানির সম্ভবত মনে হলো, ‘যা করার নিজেকেই করতে হবে।’ এডওয়ার্ডসকে ফেললেন এলবিডব্লুর ফাঁদে। পরে আরও তিনটি উইকেট, স্মরণীয়তম নিঃসন্দেহে শিবনারায়ণ চন্দরপল। খেলছেন ১৩৪তম টেস্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বাকি ১০ জন মিলে তাঁর চেয়ে মাত্র ১৫ টেস্ট বেশি খেলেছেন। স্পিনে জুজু দেখা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যেও ব্যতিক্রম। সানিকে পরপর দুই বলে ছয় মেরে সেটি বুঝিয়েও দিয়েছেন। চন্দরপলের উইকেটটি সানির আনন্দে তাই যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা।
অভিষেকেই ৪ উইকেট হয়ে গেছে। আজ খেলা হলে আরেকটি না পাওয়াই হবে বিস্ময়কর। বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেকে ৫ উইকেট পাওয়ার চতুর্থ কীর্তিটি তাঁর গড়ে ফেলারই কথা (আগের তিনজন নাঈমুর রহমান, মঞ্জুরুল ইসলাম ও মাহমুদউল্লাহ)। এই টেস্টকে অর্থহীন বললে ইলিয়াস সানি তাই রাগ করতেই পারেন।
চতুর্থ দিন শেষে
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৫০/৯ ডি.
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১৪৪/৫
দুই দিনেও টেস্ট ম্যাচে জয়-পরাজয় নিষ্পত্তি হওয়ার ঘটনা আছে। একটি-দুটি নয়, ১৯টি! এর বেশির ভাগই উইকেট উন্মুক্ত রাখার যুগে। উইকেট ঢেকে রাখার যুগে যে চারটি উদাহরণ, সেটির সূচনা এই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দিয়েই। ২০০০ সালে হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের সেই কীর্তির পুনরাবৃত্তি করার ক্ষমতা বাংলাদেশের এই বোলিংয়ের নেই। দুই দিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরই এই টেস্টের ভাগ্যে ড্র লেখা হয়ে গেছে। জয়-পরাজয়ের ব্যাপারটিই নির্ধারিত হয়ে গেলে সেই খেলার আর কী অর্থ থাকে?
তার পরও ‘অর্থহীন’ এই টেস্ট ম্যাচের কিছু অর্থ আছে। কয়েক দিন পরই আরেকটি টেস্ট ম্যাচ। সেই ম্যাচের জন্য আত্মবিশ্বাসের রসদ জোগাড় করার সুযোগ হয়েই এসেছে টেস্টের শেষ দুই দিন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ভান্ডারেই সঞ্চয়টা বেশি। সেই প্রথম দিনের ৪ উইকেটে ২৫৫ রানকে ৯ উইকেটে ৩৫০ করে ইনিংস ঘোষণা করাটাই তো বাংলাদেশের ক্রিকেটে উদ্যাপন করার মতো উপলক্ষ। ৭০তম টেস্টে মাত্র চতুর্থবারের মতো ইনিংস ঘোষণা করার সুযোগ পেলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। অভিষেক টেস্টেই মুশফিকুর রহিম ইনিংস ঘোষণা করার ‘কীর্তি’তে হাবিবুল বাশার ও মোহাম্মদ আশরাফুলের পাশে বসে গেলেন।
বাংলাদেশের ইনিংস ঘোষণা করার প্রথম ঘটনাটি এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই, ২০০৪ সালে বাংলাদেশের তিন সেঞ্চুরিতে বিখ্যাত সেন্ট লুসিয়া টেস্টে। সেই টেস্ট ড্র হয়েছিল। নিজেদের কৃতিত্বে বাংলাদেশের প্রথম ড্র। ইনিংস ঘোষণা করা বাকি দুটি টেস্টের একটিতে জয় (২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে, ইনিংস ঘোষণা দ্বিতীয় ইনিংসে), বৃষ্টিবিঘ্নিত অন্য টেস্টটিও শেষ হয়েছিল ড্রয়ে (২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকায়)।
ইনিংস ঘোষণা করার পর এমন ‘মামুলি’ ব্যাপারও বাংলাদেশ দলের জন্য আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি। প্রথম দিনে আদর্শ টেস্ট ব্যাটিংয়ের পর কাল রান বাড়ানোর ব্যাটিংটাও দেখাল বাংলাদেশ। ৩১.৪ ওভারে ৯৫ রান। অপরাজিত ব্যাটসম্যানের জন্য দুই দিন বসে থাকাটা বড় যন্ত্রণার। মুশফিকুর রহিম সেই যন্ত্রণাতেই কিনা মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই আউট! নাঈম ইসলাম অবশ্য শেষ পর্যন্ত অপরাজিতই থাকলেন। ১৬৯ মিনিটে ১৩১ বল খেলে অপরাজিত ৩৬ প্রমাণ করেছে, টেস্ট ব্যাটিংটা তিনি পারেন। প্রথম দিন রক্তাক্ত হয়ে মাঠ ছাড়া শাহরিয়ার নাফীস আবার ব্যাটিং করতে নেমে ফিদেল এডওয়ার্ডসেরই শিকার। সেটি অবশ্য বাউন্সারে নয়, অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে।
কাল বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে ঝলমলে নাসির হোসেন। এই প্রাণচঞ্চল তরুণ ওয়ানডে অভিষেকেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটাকে তিনি এমন হাতি-ঘোড়া কিছু মনে করেন না। টেস্ট অভিষেকেও সেই নাসিরই। ৪৭ বলে ৩৪ রানের ইনিংসে ৬টি চার—নাসির সত্যিই একঝলক তাজা বাতাস। অফ স্পিন বোলিংটাও খারাপ করলেন না।
দিনের নায়ক অবশ্য নাসির নন। সেটি এই টেস্টে অভিষিক্ত বাংলাদেশের আরেকজন—ইলিয়াস সানি। ব্যাটিংয়ে শূন্য, তবে সেটি তো আর তাঁর আসল কাজ নয়। আসল কাজ বাঁহাতি স্পিন। সেটিতে শুরু থেকেই স্পিনে জুজু দেখা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের নাচিয়ে ছাড়লেন। উইকেট পেয়ে যেতে পারতেন টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর দ্বিতীয় বলেই। পাননি মিড অনে শাহাদাতের দেরিতে ঘুম ভাঙায়।
ব্যাটসম্যানের নাম কার্ক এডওয়ার্ডস, এর আগে যাঁর একটিই টেস্ট ম্যাচ। সেটিতে সেঞ্চুরি করে স্মরণীয় অভিষেক। ইলিয়াস সানির অভিষেকটাকেও স্মরণীয় করে রাখায় অবদান রাখাটাকে সম্ভবত নিজের দায়িত্ব মনে করলেন। সানির তৃতীয় ওভারে আরেকবার ক্যাচ দিলেন, এবার ফেললেন মুশফিকুর। এক বল পর আউট হতে সক্ষম হলেন। ফিল্ডারদের অবস্থা দেখে সানির সম্ভবত মনে হলো, ‘যা করার নিজেকেই করতে হবে।’ এডওয়ার্ডসকে ফেললেন এলবিডব্লুর ফাঁদে। পরে আরও তিনটি উইকেট, স্মরণীয়তম নিঃসন্দেহে শিবনারায়ণ চন্দরপল। খেলছেন ১৩৪তম টেস্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বাকি ১০ জন মিলে তাঁর চেয়ে মাত্র ১৫ টেস্ট বেশি খেলেছেন। স্পিনে জুজু দেখা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যেও ব্যতিক্রম। সানিকে পরপর দুই বলে ছয় মেরে সেটি বুঝিয়েও দিয়েছেন। চন্দরপলের উইকেটটি সানির আনন্দে তাই যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা।
অভিষেকেই ৪ উইকেট হয়ে গেছে। আজ খেলা হলে আরেকটি না পাওয়াই হবে বিস্ময়কর। বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেকে ৫ উইকেট পাওয়ার চতুর্থ কীর্তিটি তাঁর গড়ে ফেলারই কথা (আগের তিনজন নাঈমুর রহমান, মঞ্জুরুল ইসলাম ও মাহমুদউল্লাহ)। এই টেস্টকে অর্থহীন বললে ইলিয়াস সানি তাই রাগ করতেই পারেন।
চতুর্থ দিন শেষে
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৫০/৯ ডি.
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১৪৪/৫
No comments