রাজ্জাকের দিনে 'সোহাগ ঝড়'

ক ইনিংসে যে বোলার ৮ উইকেট নিয়েছেন, তাঁর বলেই কিনা ৩ ছক্কা আর ৯ বাউন্ডারি ব্যাটিং দলের এক ব্যাটসম্যানের! দর্শক বিনোদনের পসরাই যেন গতকাল সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে সাজিয়ে বসেছিলেন আবদুর রাজ্জাক এবং সোহাগ গাজী। ৮ উইকেট নিয়েছেন খুলনার রাজ্জাক। আর ৬৭ বলে মৌসুমের দ্রুততম সেঞ্চুরি করে শুধু বরিশালকেই বাঁচাননি, নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যও মেলে ধরেছেন মূলত অফস্পিনার হিসেবে পরিচিত সোহাগ। দুই ঢাকার ম্যাচ বোলারদের নিয়ন্ত্রণে। যে কারণে ঢাকার ১৩২ রানের ইনিংস ছুঁতেই ১০২ রানে ৮ উইকেট খুইয়ে ধুঁকছে ঢাকা মেট্রো।


রাজশাহীর ২০৫ রানের পিছু নিয়ে ওপেনার লিটন সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে ৮৩ রানে ৪ উইকেট হারানো রংপুর। গতকাল শুরু হওয়া জাতীয় লিগের অপর ম্যাচে চট্টগ্রামের সামনে বড় ইনিংস গড়ার সংগ্রাম করছে ৬ উইকেটে ১৯৮ রান তোলা সিলেট।প্রথম ম্যাচে এ মাঠেই প্রথম ইনিংসে চার শ'র বেশি রান করেছিল সিলেট। তবে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ে আবদুর রাজ্জাকের যোগ দেওয়াটা যে প্রতিপক্ষ দলের জন্য কোনো সুখবর নয়, প্রথম ওভারে উইকেট নিয়ে বরিশালকে সেটি বুঝিয়ে দিয়েছেন এ বাঁহাতি স্পিনার। ১১৭ রানে হারানো ৫ উইকেটের তিনটিই রাজ্জাকের। বরিশালের ইনিংসের সমাপ্তিও ঘটে তাঁর বলে। কিন্তু ততক্ষণে নিজের দলকে ব্যাটিং বোনাসের পাশাপাশি লড়াইয়ের পুঁজিও এনে দিয়েছেন সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা সোহাগ। দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি। এরপর চোখের পলকে ফিফটি পেরিয়ে সেঞ্চুরি! এর মধ্যে ৭৮ রানের (১৬ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কা) জন্যই দৌড়াতে হয়নি সোহাগকে! ইসলামুলের সঙ্গে তাঁর অষ্টম উইকেট জুটি ৯০ রানের। এতে ইসলামুলের অবদান মাত্র ২৫ রান। ৪৯ রানের শেষ উইকেট জুটিতে ১ রান করা কামরুল ইসলাম নিশ্চয় উপভোগ করেছেন অপর প্রান্তে সোহাগের নিশ্ছিদ্র কিন্তু বিস্ফোরক ব্যাটিং। ৯৯ বলে ২০ বাউন্ডারি এবং ৩ ছক্কার সে বিস্ফোরণের উত্তাপ তো দূর থেকেও অনুমান করা যায়! দিনশেষে অফস্পিনে খুলনার একটি উইকেট নিয়ে রাজ্জাকের সাফল্যকে আরো একটু ম্লান করে দিয়েছেন সোহাগ।
তবে গতকালের প্রধান আকর্ষণ ছিল রাজশাহীর শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামের ম্যাচ। সে আকর্ষণের মূলে মোহাম্মদ আশরাফুল। যদি টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার প্রত্যুত্তর দেন তিনি! তিন বাউন্ডারিতে ১৪ বলে ১৫ করে আউট হওয়া জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ককে 'জবাব দেওয়া'র জন্য আপাতত পরবর্তী ইনিংসের অপেক্ষাতেই থাকতে হচ্ছে। তবে ম্যাচ পরিস্থিতির কারণে আশরাফুলের সব মনোযোগই সম্ভবত পাচ্ছেন তাঁর দলের শেষ দুই ব্যাটসম্যান। ঘরোয়া ক্রিকেটের কার্যকর অলরাউন্ডার আরাফাত সালাউদ্দিনের ৫ উইকেটপ্রাপ্তিতে ঢাকা বিভাগের প্রথম ইনিংস মাত্র ১৩২ রানে গুটিয়ে ভালো কিছুর স্বপ্নই হয়তো দেখেছিল ঢাকা মেট্রো। শেষ বিকেলে সে স্বপ্ন লুটিয়ে এখন প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়ার আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে আশরাফুলের দলকে। এখন আরাফাত সানি, তারেক আজিজ এবং তালহা জুবায়ের মিলে যদি সে আতঙ্ক দূর করতে পারেন!
বগুড়ার ম্যাচেরও একই হাল। রাজশাহীর দুই শ পেরুনো ইনিংসে দেলোয়ার এবং সাকলাইনের মধ্যকার শেষ উইকেট জুটির অবদানই ৬১ রান! তেমনি পরে ব্যাট করতে নামা রংপুরের ৪ উইকেটে ৮৩ রানের সামান্য স্বস্তির সবটুকুই লিটন কুমারের কল্যাণে। এ ওপেনার ব্যাট করছেন ৫৭ রান নিয়ে। এ অবধি তাঁর যেসব সঙ্গী ব্যাট হাতে নেমেছেন, তাঁদের কেউই দুই অঙ্কে পেঁৗছাতে পারেননি। কিপিং গ্লাভস হাতে পাঁচটি ক্যাচ নেওয়া ধীমান ঘোষ যেন ব্যাট হাতেও সফল হন, রংপুরের প্রার্থনায় এটা নিশ্চিতভাবে যুক্ত আছে। সে তুলনায় প্রথম ম্যাচের মতোই সতর্ক সিলেট। বিকেএসপির ভারী মাঠে ৯২ ওভারে ১৯৮ রান কম নয়। অধিনায়ক অলক কাপালি ফিফটি করেছেন। ৪০ রান নিয়ে গোলাম মাবুদ আছেন আরো বড় কিছুর অপেক্ষায়।

বরিশাল-খুলনা : বরিশাল ১ম ইনিংস ৬৩.৫ ওভার ৩০২/১০ (ফজলে ৩৯, সালমান ৩৬, সোহাগ ১৪০, ডলার ২/৫৭, রাজ্জাক ৮/১২৩)। খুলনা ১ম ইনিংস ২৪ ওভার ৫২/১ (তাপস ঘোষ ব্যাটিং ২১, আনামুল ব্যাটিং ১০, সোহাগ ১/১৩)।
ঢাকা বিভাগ-ঢাকা মেট্রো : ঢাকা বিভাগ ৪৫.৪ ওভার ১৩২/১০ (শরিফ ২৭, নাজমুল অপু ২১, আরাফাত সালাউদ্দিন ৫/২৩, আরাফাত সানি ২/১৭)। ঢাকা মেট্রো ১ম ইনিংস ৩৮ ওভার ১০২/৮ (আসিফ ৩১, আশরাফুল ১৫, আরাফাত সালাউদ্দিন ২১, মাহবুবুল ২/২৩, সাইদ ৩/৩০, মোশারফ ২/১৫)।
রাজশাহী-রংপুর : রাজশাহী ১ম ইনিংস ৫৬.৫ ওভার ২০৫/১০ (ফরহাদ হোসেন ৩৭, দেলোয়ার ৪৫*, সাকলাইন ১৫, শুভাশীষ ৪/৫৪, সাজেদুল ২/২২, আলাউদ্দিন বাবু ২/৫২)। রংপুর ১ম ইনিংস ৩২ ওভার ৮৩/৪ (লিটন ব্যাটিং ৫৭, তারেক ব্যাটিং ৬, সাকলাইন ৩/১৮)।
সিলেট-চট্টগ্রাম : সিলেট ১ম ইনিংস ৯২ ওভার ১৯৮/৬ (অলক ৫০, মাবুদ ব্যাটিং ৪০, তাপস বৈশ্য ব্যাটিং ৩৪, কাজী কামরুল ২/৪২)।

No comments

Powered by Blogger.