ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক করার সময়ই পাচ্ছি না

কাল সকালে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে উপস্থিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল। সামান্য বৃষ্টিতে ভেসে গেছে দুই দিনের খেলা, তাই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই সংক্রান্ত নানা প্রশ্নেরই উত্তর দিতে হলো তাঁকে। তাতে অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন তিনি, দিলেন নানা যুক্তিওপ্রশ্ন : মাঠের অবস্থা দেখে কি নিজেকে বিব্রত মনে হচ্ছে?মোস্তফা কামাল : বিব্রত তো মনে হবেই। এটি সবার জন্য বিব্রতকর।প্রশ্ন : ২০০৬ সালে নির্মিত এই স্টেডিয়ামের ড্রেনেজ সিস্টেমের এখনো এই বেহাল অবস্থা। আপনারা বলছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএনসি) কাজ করেনি। কিন্তু আপনারা কি দায় এড়াতে পারবেন?


মোস্তফা কামাল : আমি ২০০৬ থেকে বলব না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বলব।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপের সময় তো মাঠ সংস্কারে ৬০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন?
মোস্তফা কামাল : সেটি এনএসসি করেছে। আমরা এক টাকাও ব্যয় করিনি। মাঠটি শুধু ব্যবহার করি। বিশ্বকাপের সময় আমরা কাজ হাতে নেইনি। চেয়েছিলাম, বিশ্বকাপের পর মাঠ তৈরির কাজ শুরু করব। সে জন্য সব পিচ তুলে ফেলে পরে আবার নতুন করে বসাতে হবে। কিন্তু বৃষ্টি তো শেষই হচ্ছে না। কাজ শুরু করব কী করে!
প্রশ্ন : কিন্তু আপনাদের হাতে তো আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক ভেন্যু ছিল। সেগুলো ব্যবহার করছেন না কেন?
মোস্তফা কামাল : সাধারণত এ সময় বৃষ্টি হয় না তো। অক্টোবরের মাঝামাঝি এসে এমন বৃষ্টি হবে, তা আমার ধারণা ছিল না।
প্রশ্ন : জলবায়ু কিন্তু অনেক পরিবর্তন হয়েছে...
মোস্তফা কামাল : তা ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের এই ইভেন্টগুলো অনেক আগেই ঠিক হয়ে আছে। আর আপনারা যতটা সহজভাবে বলতে পারেন, আমরা সেভাবে পারি না। চট্টগ্রাম মানুষের দাবি, এখানে যেহেতু বাংলাদেশ ভালো করে, ঢাকার খেলা বাদ দিয়ে হলেও চট্টগ্রামে খেলা হতে হবে। জনগণের এই দাবিটাকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।
প্রশ্ন : নিম্নমানের পিচের কারণে অনেক সময় ভেন্যু বাতিল হয়ে যায়। আপনাদের মাঝে কি সে রকম শঙ্কা আছে যে নিম্নমানের আউটফিল্ডের কারণে এই ভেন্যু বাতিল হয়ে যেতে পারে?
মোস্তফা কামাল : না, তেমনটা কখনো হবে না। আসলে আমরা তো এখানে ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক করার জন্য সময়ই পাচ্ছি না। এপ্রিলে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর সেই যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, বৃষ্টি না থামলে এনএসসি কাজ করবে কিভাবে!
প্রশ্ন : ডিসেম্বরে পাকিস্তানের খেলা এ মাঠে হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?
মোস্তফা কামাল : সেটি হবে। আশা করি, তখন কোনো বৃষ্টি থাকবে না। আর যদি তখনো বৃষ্টি হয়, তাহলে বাংলাদেশে ক্রিকেট থাকবে না।
প্রশ্ন : গত বছর ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ওয়ানডেতে বৃষ্টির কারণে একটি বলও খেলা হতে পারেনি। তাহলে আপনি কিভাবে বলছেন ডিসেম্বরে বৃষ্টি হবে না?
মোস্তফা কামাল : তাহলে আপনারা গিয়ে চট্টগ্রামের সবাইকে বোঝান, আমরা এখানে খেলা করব না। আমি তা পারব না। তাদের দাবির ব্যাপারটা আমার মাথায় রাখতে হবে।
প্রশ্ন : আপনি বলছেন এনএসসির দোষ নেই। তাহলে সমস্যা কোথায়?
মোস্তফা কামাল : সমস্যা বৃষ্টির। বৃষ্টি বন্ধ না হলে কাজ শুরু করা যাবে না। পাকিস্তান সিরিজের পর আগামী বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এখানে কোনো খেলা হবে না। ড্রেনেজের জন্য কমপক্ষে নির্বিঘ্ন ছয় মাস সময়ের প্রয়োজন।
প্রশ্ন : টেস্ট ক্রিকেটে আমরা এ রকম দিন সহজে পাই না। খেলা চালানোর জন্য আপনারা অন্যভাবে, মানে হেলিকপ্টার দিয়ে কি মাঠ শুকানোর ব্যবস্থা করতে পারতেন না?
মোস্তফা কামাল : কোনোভাবেই উপায় ছিল না। সেটি করলেই এই মাঠ এখন খেলার অনুপযোগীই থাকত।
প্রশ্ন : বগুড়ার স্টেডিয়ামে ম্যাচ আয়োজন না করার কারণ কি রাজনৈতিক?
মোস্তফা কামাল : চট্টগ্রামে কি তাহলে সবাই আওয়ামী লীগ করেন? ফতুল্লায় কয়জন আওয়ামী লীগ করেন, কয়জন বিএনপি করেন আমি জানি না। বলুন, কোন সিদ্ধান্ত আমি রাজনৈতিকভাবে নিয়েছি। বাস্তবতা হচ্ছে, বগুড়ায় স্টেডিয়াম থাকলেও অনেক সুবিধা এখনো নেই। সেখানে এখন গেলে জিম্বাবুয়ে যাবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাবে না। অস্ট্রেলিয়া যাবে না।
প্রশ্ন : শ্রীলঙ্কা কিন্তু সেখানে গিয়েছিল...
মোস্তফা কামাল : তারা অনুরোধে গিয়েছিল। অনুরোধ একবার করা যায়। বারবার কী আর করা যায়! করলেও লাভ হবে না।
প্রশ্ন : বগুড়া স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ভেন্যু করা কি তাহলে ভুল ছিল?
মোস্তফা কামাল : ভুল ছিল বলব না। ওখানেও খেলা হবে। সে জন্য আমাদের আরো কিছু প্রয়োজন মেটাতে হবে। প্রথম শর্ত হলো যোগাযোগ। বিমানবন্দর থাকতে হবে। ফোর স্টার মানের হলেও আবাসিক হোটেল থাকতে হবে। এগুলো বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন : ডিসেম্বরে পাকিস্তান সিরিজের ম্যাচ কি তাহলে চট্টগ্রামেই হবে?
মোস্তফা কামাল : বৃষ্টি বন্ধ না হলে আমরা পাকিস্তানের খেলা এখানে না আনলেও পারব। খুলনায় উইকেট প্রস্তুত আছে। কিন্তু চট্টগ্রামের দর্শক রাজি হবে না। তখন রাজনৈতিক একটা চাপ আমার ওপর আসবে। বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচ এখানে ছিল না। আপনারা বিশ্বকাপের সময় দেখেছেন তারা কিভাবে এখানে ম্যাচ নিয়ে এসেছে।
প্রশ্ন : ভবিষ্যতে খুলনা, রাজশাহী, সিলেটে আন্তর্জাতিক ভেন্যু হলে তারাও চাইবে রাজনৈতকিভাবে ম্যাচ নিজেদের স্টেডিয়ামে নেওয়ার। তখন কি তা আপনার জন্য সমস্যা হবে না?
মোস্তফা কামাল : আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর একটিও প্রমাণ দেখাতে পারবেন না, যা রাজনৈতিক চাপে করেছি।
প্রশ্ন : তাহলে আপনি যে বললেন বিশ্বকাপের সময় চট্টগ্রামবাসী ম্যাচ নিয়ে গেছে?
মোস্তফা কামাল : সেটি হয়েছে আমি দায়িত্ব গ্রহণের আগেই। আমি হলে এ ঝুঁকি নিতাম না। আমি আগে দেখব আমার লজিস্টিক সাপোর্ট আছে কি না। থাকলে এরপরই আমি ঝুঁকি নেব।

No comments

Powered by Blogger.