ক্রনিয়ে-হুসেইন তো আর হবেন না মুশফিক-সামি
২০১১ সালের এই অক্টোবরে ফিরে ফিরে আসছে ২০০০ সালের জানুয়ারি। সেবার দল দুটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড, ভেন্যু সেঞ্চুরিয়ন। এবার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, মাঠ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। ওই টেস্টের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ দিন ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। এবার প্রায় অভিন্ন চিত্রনাট্য মেনে চতুর্থ দিন কেবল বাকি। তবে ম্যাচ জিইয়ে রাখার 'স্বার্থে' হ্যান্সি ক্রোনিয়ে-নাসের হুসেইনের মতো 'স্পোর্টিং ডিসিশন'-এর দিকে নিশ্চয়ই যাবেন না মুশফিকুর রহিম-ড্যারেন সামি। বিশেষত সেবারের ইতিহাস যদি মনে থাকে তাঁদের।
সেবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম চার টেস্টের দুটিতে জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা। এক ম্যাচ হাতে রেখেই তাই প্রোটিয়াদের সিরিজ পকেটে পোরা সারা। সেঞ্চুরিয়ন শেষ টেস্ট ছিল কেবলই আনুষ্ঠানিকতার। সেখানে প্রথম দিন ৪৫ ওভারের বেশি খেলা হতে পারেনি। তাতে ৬ উইকেটে ১৫৫ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর নামল ঝুম বৃষ্টি। ক্লান্তিকর, একঘেয়ে, একটানা। যেন আকাশ ফুটো হয়ে গেছে! ম্যাচের দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ দিন একটি বলও গড়াল না মাঠে। শেষ দিন খেলা শুরুর আগে ক্রনিয়ে অবিশ্বাস্য এক প্রস্তাব দিলেন নাসের হুসেইনকে। '৭৩ ওভারে ২৭০ রান করতে পারবে?'_শুরুতে এই প্রস্তাব বুঝতে পারেননি ইংলিশ অধিনায়ক। প্রোটিয়া দলপতি বুঝিয়ে দিলেন, নিজেদের রানটা ওই ২৭০ রানের আশপাশে নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করবেন তাঁরা। এরপর ইংল্যান্ড মাঠে না নেমেই তাদের প্রথম ইনিংস এবং দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করবে। ফলে শেষ ইনিংসে ইংলিশদের জয়ের জন্য প্রয়োজন হবে ২৭০-এর মতো রান। ম্যাড়মেড়ে এক ড্র টেস্টের পরিবর্তে জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলা উপভোগ করতে পারবে দর্শকরা।
বোঝার পরও সে প্রস্তাবে সাড়া দেননি হুসেইন। 'তিন দিন ঢাকা থাকার পর উইকেট প্রথম সেশনে কেমন আচরণ করে, তা বুঝতে চাইছিলাম আগে'_নিজেই বলেছেন পরে। মিনিট চলি্লশেক খেলা হওয়ার পর তিনি বার্তা পাঠালেন ক্রনিয়েকে, 'আমরা আড়াই শ রান তাড়া করলে কেমন হয়?' প্রোটিয়া অধিনায়ক সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দিলেন তথাস্তু। ক্রনিয়ে তখন প্রস্তাব করেন, ৭৬ ওভারে ২৪৫ রান তাড়া করতে হবে ইংল্যান্ডকে। অর্থাৎ পঞ্চম দিন মাঠে প্রবেশের সময় যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এর চেয়ে ২৫ রান কম করতে হবে ইংল্যান্ডকে, আবার ওভারও তারা পেল তিনটি বেশি!
ম্যাচ রেফারির সঙ্গে আলোচনার পর ঠিক এই পথ ধরেই এগোয় সেঞ্চুরিয়ন টেস্ট। ইনিংসের শেষ বলে পল অ্যাডামস বাউন্ডারি মারায় ইংল্যান্ডের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয় ৭৬ ওভারে ২৪৯। ওয়ানডের আমেজে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সেই ম্যাচ মাত্র ৫ বল বাকি থাকতে ইংল্যান্ড জেতে দুই উইকেটে। অধিনায়কদের এমন সিদ্ধান্তে ম্যাচ পাতানোর গন্ধ যাঁরা পেয়েছিলেন, তাঁদের একেবারে ধুয়ে ফেলেন ক্রনিয়ে। কিন্তু মাস কয়েক পরই বেরিয়ে আসে, ম্যাচ পাতানোয় এই প্রোটিয়া অধিনায়কের সংশ্লিষ্টতার কথা। জানা যায়, সেই সেঞ্চুরিয়ন টেস্টটিও ছিল পাতানো। ক্রনিয়ে বাজিকরদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে বৃষ্টিস্নাত সেই ম্যাচ করেছিলেন কলঙ্কিত।
টেস্ট খেলুড়ে দেশের অধিনায়ক হিসেবে এই ইতিহাস নিশ্চয়ই অজানা নয় মুশফিক আর সামির। দর্শকদের রোমাঞ্চের কথা ভেবে ক্রনিয়ে-হুসেইনের পথ অনুসরণের সম্ভাবনা (কিংবা আশঙ্কা) তাই সুদূরপরাহত। তা যদি সত্যি সত্যিও দর্শকদের কথা ভাবেনও তাঁরা। প্রথম দিন ৪ উইকেটে ২৫৫ রান তুলে ফেলা বাংলাদেশ কি এই স্কোরেই ইনিংস ঘোষণা করবে নাকি ব্যাটিং চালিয়ে যাবে আরো কিছুক্ষণ_এ প্রশ্নের জবাবে কাল নিজের অসহায়ত্ব জানিয়েছেন বোলিং কোচ শেন ইয়ুর্গেনসেন, 'কত রান করে ডিক্লেয়ার করা হবে, এ নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। ওটি আমার কার্যপরিধিতে পড়ে না। আমি বোলিং কোচ। ডিক্লেয়ারেশন নিয়ে পরিকল্পনা যে কী, সেটি আমি জানি না।' অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের কথায় অবশ্য স্কোর বোর্ডে আরো কিছু রান জড়ো করার তাগিদ, 'আরো কিছু রান তো করতেই হবে। এরপর দেখা যাক, বোলিং কেমন করি।'
টেস্ট ম্যাচ জেতায় বোলাররা_এই আপ্তবাক্য চিরকালীন। যদি শেষ দুই দিন খেলা হয়ও, তাতে কি শাহাদাত হোসেন, রুবেল হোসেন, সাকিব আল হাসান, ইলিয়াস সানিরা মিলে ক্যারিবীয়দের দুবার অল আউট করতে পারবে? কাজটি নিঃসন্দেহে কঠিন। তবে কাল ঐচ্ছিক অনুশীলন করে হোটেলে ফেরার সময় সেটিকে অসম্ভব মানলেন না মুশফিক, 'ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুবার অল আউট করা যাবে কি না এটি আসলে নির্ভর করছে আমরা কতটা সময় পাব, তার ওপর।' পারুক বা না পারুক, শিষ্যদের ওপর আস্থার পরিকল্পনাটা জানিয়েছেন ইয়ুর্গেনসেন, 'আমাদের নতুন বলে জায়গামতো বোলিং করে ওদের ওপর চাপ তৈরি করতে পারি। শুরুতে পেসাররা যদি কয়েকটি উইকেট তুলে নিতে পারে, তাহলে স্পিনাররা ওদের চেপে ধরতে পারবে। এই জায়গাতেই থাকবে আমাদের মনোযোগ।'
সেঞ্চুরিয়নের পুনরাবৃত্তিতে 'স্পোর্টিং ডিক্লেয়ারেশন' এখানে দেখা যাবে না নিশ্চিতভাবে। তবে বোলিং কোচের পরিকল্পনার বাস্তবায়নে আর অধিনায়কের আস্থার প্রতিদানে এই টেস্টটা ক্রিকেটীয় কারণে স্মরণীয় করে রাখার সুযোগ এখনো আছে স্বাগতিকদের সামনে। ও হ্যাঁ, তার আগে আবহাওয়া মহাশয়ের মতিগতি ঠিক হতে হবে!
বোঝার পরও সে প্রস্তাবে সাড়া দেননি হুসেইন। 'তিন দিন ঢাকা থাকার পর উইকেট প্রথম সেশনে কেমন আচরণ করে, তা বুঝতে চাইছিলাম আগে'_নিজেই বলেছেন পরে। মিনিট চলি্লশেক খেলা হওয়ার পর তিনি বার্তা পাঠালেন ক্রনিয়েকে, 'আমরা আড়াই শ রান তাড়া করলে কেমন হয়?' প্রোটিয়া অধিনায়ক সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দিলেন তথাস্তু। ক্রনিয়ে তখন প্রস্তাব করেন, ৭৬ ওভারে ২৪৫ রান তাড়া করতে হবে ইংল্যান্ডকে। অর্থাৎ পঞ্চম দিন মাঠে প্রবেশের সময় যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এর চেয়ে ২৫ রান কম করতে হবে ইংল্যান্ডকে, আবার ওভারও তারা পেল তিনটি বেশি!
ম্যাচ রেফারির সঙ্গে আলোচনার পর ঠিক এই পথ ধরেই এগোয় সেঞ্চুরিয়ন টেস্ট। ইনিংসের শেষ বলে পল অ্যাডামস বাউন্ডারি মারায় ইংল্যান্ডের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয় ৭৬ ওভারে ২৪৯। ওয়ানডের আমেজে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সেই ম্যাচ মাত্র ৫ বল বাকি থাকতে ইংল্যান্ড জেতে দুই উইকেটে। অধিনায়কদের এমন সিদ্ধান্তে ম্যাচ পাতানোর গন্ধ যাঁরা পেয়েছিলেন, তাঁদের একেবারে ধুয়ে ফেলেন ক্রনিয়ে। কিন্তু মাস কয়েক পরই বেরিয়ে আসে, ম্যাচ পাতানোয় এই প্রোটিয়া অধিনায়কের সংশ্লিষ্টতার কথা। জানা যায়, সেই সেঞ্চুরিয়ন টেস্টটিও ছিল পাতানো। ক্রনিয়ে বাজিকরদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে বৃষ্টিস্নাত সেই ম্যাচ করেছিলেন কলঙ্কিত।
টেস্ট খেলুড়ে দেশের অধিনায়ক হিসেবে এই ইতিহাস নিশ্চয়ই অজানা নয় মুশফিক আর সামির। দর্শকদের রোমাঞ্চের কথা ভেবে ক্রনিয়ে-হুসেইনের পথ অনুসরণের সম্ভাবনা (কিংবা আশঙ্কা) তাই সুদূরপরাহত। তা যদি সত্যি সত্যিও দর্শকদের কথা ভাবেনও তাঁরা। প্রথম দিন ৪ উইকেটে ২৫৫ রান তুলে ফেলা বাংলাদেশ কি এই স্কোরেই ইনিংস ঘোষণা করবে নাকি ব্যাটিং চালিয়ে যাবে আরো কিছুক্ষণ_এ প্রশ্নের জবাবে কাল নিজের অসহায়ত্ব জানিয়েছেন বোলিং কোচ শেন ইয়ুর্গেনসেন, 'কত রান করে ডিক্লেয়ার করা হবে, এ নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। ওটি আমার কার্যপরিধিতে পড়ে না। আমি বোলিং কোচ। ডিক্লেয়ারেশন নিয়ে পরিকল্পনা যে কী, সেটি আমি জানি না।' অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের কথায় অবশ্য স্কোর বোর্ডে আরো কিছু রান জড়ো করার তাগিদ, 'আরো কিছু রান তো করতেই হবে। এরপর দেখা যাক, বোলিং কেমন করি।'
টেস্ট ম্যাচ জেতায় বোলাররা_এই আপ্তবাক্য চিরকালীন। যদি শেষ দুই দিন খেলা হয়ও, তাতে কি শাহাদাত হোসেন, রুবেল হোসেন, সাকিব আল হাসান, ইলিয়াস সানিরা মিলে ক্যারিবীয়দের দুবার অল আউট করতে পারবে? কাজটি নিঃসন্দেহে কঠিন। তবে কাল ঐচ্ছিক অনুশীলন করে হোটেলে ফেরার সময় সেটিকে অসম্ভব মানলেন না মুশফিক, 'ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুবার অল আউট করা যাবে কি না এটি আসলে নির্ভর করছে আমরা কতটা সময় পাব, তার ওপর।' পারুক বা না পারুক, শিষ্যদের ওপর আস্থার পরিকল্পনাটা জানিয়েছেন ইয়ুর্গেনসেন, 'আমাদের নতুন বলে জায়গামতো বোলিং করে ওদের ওপর চাপ তৈরি করতে পারি। শুরুতে পেসাররা যদি কয়েকটি উইকেট তুলে নিতে পারে, তাহলে স্পিনাররা ওদের চেপে ধরতে পারবে। এই জায়গাতেই থাকবে আমাদের মনোযোগ।'
সেঞ্চুরিয়নের পুনরাবৃত্তিতে 'স্পোর্টিং ডিক্লেয়ারেশন' এখানে দেখা যাবে না নিশ্চিতভাবে। তবে বোলিং কোচের পরিকল্পনার বাস্তবায়নে আর অধিনায়কের আস্থার প্রতিদানে এই টেস্টটা ক্রিকেটীয় কারণে স্মরণীয় করে রাখার সুযোগ এখনো আছে স্বাগতিকদের সামনে। ও হ্যাঁ, তার আগে আবহাওয়া মহাশয়ের মতিগতি ঠিক হতে হবে!
No comments