পাল্টে গেছে অভাবী জনপদের দৃশ্যপট by মোন্নাফ আলী,
কুড়িগ্রামের উলিপুরের চরাঞ্চলে এবার মরা কার্তিকের অভাব চোখে পড়ে না। পাল্টে গেছে অভাবী জনপদের দৃশ্যপট। চরবাসীর ঘরে ঘরে চলছে আগাম ধানের নবান্ন উৎসব। প্রতি বছরের আশ্বিন ও কার্তিক মাসে এলাকায় দেখা দিত মঙ্গা। কৃষকের ঘরে ভাত থাকত না। কৃষক-মজুরের কাজ থাকত না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছিল সাধ্যের বাইরে। দেখা দিত অভাব বা মঙ্গা। আর তাই তারা অনাহারে-অর্ধাহারে কচু-ঘেচু, কলার থোর খেয়ে দিনাতিপাত করত। জীবন বাঁচাতে কেউ কেউ কাজের সন্ধানে অন্য এলাকায় চলে যেত।
কার্তিকের এই মঙ্গা তাড়াতে আধুনিক কৃষির নুতন উদ্ভাবিত স্বল্পমেয়াদি আগাম জাতের বিনা-৭, আইআর-২০, ব্রি-৩৩, ব্রি-৩৯ ধান চাষ ও সরকারি-বেসরকারিভাবে দরিদ্র মানুষের অভাব মোচনে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি, কান্ট্রি প্রকল্প, চর উন্নয়ন প্রকল্প (সিএলপি), বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, পঙ্গু ভাতা, গর্ভবতী মা ও শিশু পুষ্টি সম্পূরক খাদ্য প্রকল্পসহ দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা বেষ্টনী ও সর্বোপরি যুব উন্নয়ন কর্তৃক ন্যাশনাল সার্ভিসে বেকারদের চাকরি প্রদানের মাধ্যমে কার্তিকের চিরচেনা অভাব বা মঙ্গা থেকে মুক্তি পেয়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। অভাবের তাড়নায় কোলের সন্তান বিক্রি, না খেয়ে মৃত্যুর মতো দুঃসংবাদগুলো এখন যেন স্বপ্ন। বর্তমানে বরং উল্টো চিত্র দেখা যায়। এখন গ্রামে কাজের মানুষ পাওয়া যায় না। বর্তমানে একজন কৃষি শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি ১৭৫ থেকে ২২০ টাকা। অন্যান্য শ্রমিকের মজুরি ২৫০ থেকে ২৭৫ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা। এর বিপরীতে বাজারে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ২৫ টাকা। ধান ৬৫০ থেকে ৬৭৫ টাকা মণদরে বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের অনেক কৃষক জানিয়েছেন, তাদের গোলার ধান বিক্রি না হওয়ায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বা ইঁদুরে খাচ্ছে। ফলে মজুত ধান নিয়ে কৃষকরা একরকম বিপাকে পড়েছেন। অথচ মৌসুমের শুরুতেই ধানের দাম ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত ছিল। আর এখন সে ধানের ক্রেতা পাওয়া যাছে না। ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের মঙ্গাখ্যাত ইউনিয়ন হাতিয়ার কামারটারী গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত কৃষক হাজি নুরুল ইসলাম ও আবদুস ছামাদ জানান, 'গত ইরি মৌসুমের ধান বিক্রির ক্রেতা পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়ে গত পরশু গ্রামের গরিব মানুষকে ডেকে এনে ১ মণ করে ধান দিয়েছি। সামনের মৌসুমে ১ মণ ধান ফেরত দেবে এই শর্তে।' অনন্তপুর গ্রামের বাঁধবাসী কফিরন বেওয়া, ছফিরন বেওয়া পেশায় ভিক্ষুক। তারা জানান, 'আগের দিনের মঙ্গা (অভাব) আর নাই বাহে। আগত কত না খায়া আছিনো, জীবন বাঁচানো কলা গাছ, কচু, ঘেচু, বাড়ার কুড়া সিদ্ধ করি খায়া। এলা না খায়া থাকা নাগে না। একদিন ভিক্ষা করি পাঁচ দিন বসি খাই, শরীরটাত আরাম দেই।' রামখানা গ্রামের বাঁধবাসী তমিরন, মমিজন ও আছিরন বেওয়া জানান, 'আগত ভিক্ষা করছিনো, এলা আর ভিক্ষা করি না। হাত নারি খাই, কাম করি, তাতে দিন চলে। না খায়া থাকবার হয় না। হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বিএসসি জানান, এখন আর মঙ্গা বা অভাব বলে কিছু নেই। কেউ না খেয়েও থাকে না। সব ধরনের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। অন্যবার আপদকালীন মঙ্গা বা অভাব নামক দানবকে তাড়াতে টিআর, জিআর, কর্মসংস্থান কর্মসূচি, কাবিখা, কাবিটার মতো প্রকল্প এবার চালু হয়নি। প্রয়োজনও নেই বলে তিনি জানান। তবে নদীভাঙন সমস্যা এলাকার বড় সমস্যা। প্রতি বছর নদীভাঙনে মানুষ ভূমিহীন হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দফতর (ত্রাণ) সূত্র জানায়, আগে যেভাবে অভাবে থাকা মানুষের অভিযোগ পাওয়া যেত, সে ধরনের কোনো অভিযোগ এখন আর আসে না। চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও এ ধরনের কোনো প্রতিবেদন দেন না। বাস্তবে এখন মঙ্গা বা অভাব নেই। তাই বদলে গেছে অভাবের দৃশ্যপট। কুড়িগ্রাম এলাকার এনজিও ব্যক্তিত্ব ফিরোজ আলম জানান, অভাব প্রতিরোধে বিভিন্ন সেপ্টিনেট প্রোগ্রাম, সরকারের ন্যাশনাল প্রোগ্রামসহ মানুষের কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি পাওয়ায় দরিদ্র মানুষ ইমপাওয়ার হয়েছে। ফলে মঙ্গা বা অভাব দূর হয়েছে।
ইউএনও শাহীনূর আলম জানান, অভাব বলতে যা বোঝায় তা এখন নেই। নানাভাবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, বেড়েছে কাজের ক্ষেত্র। এখন কোনো মানুষ এ ধরনের অভাব-অভিযোগ নিয়ে আসে না। উপজেলা চেয়ারম্যান এম কফিল জানান, অভাব আর মঙ্গার নির্বাসন হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দফতর (ত্রাণ) সূত্র জানায়, আগে যেভাবে অভাবে থাকা মানুষের অভিযোগ পাওয়া যেত, সে ধরনের কোনো অভিযোগ এখন আর আসে না। চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও এ ধরনের কোনো প্রতিবেদন দেন না। বাস্তবে এখন মঙ্গা বা অভাব নেই। তাই বদলে গেছে অভাবের দৃশ্যপট। কুড়িগ্রাম এলাকার এনজিও ব্যক্তিত্ব ফিরোজ আলম জানান, অভাব প্রতিরোধে বিভিন্ন সেপ্টিনেট প্রোগ্রাম, সরকারের ন্যাশনাল প্রোগ্রামসহ মানুষের কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি পাওয়ায় দরিদ্র মানুষ ইমপাওয়ার হয়েছে। ফলে মঙ্গা বা অভাব দূর হয়েছে।
ইউএনও শাহীনূর আলম জানান, অভাব বলতে যা বোঝায় তা এখন নেই। নানাভাবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, বেড়েছে কাজের ক্ষেত্র। এখন কোনো মানুষ এ ধরনের অভাব-অভিযোগ নিয়ে আসে না। উপজেলা চেয়ারম্যান এম কফিল জানান, অভাব আর মঙ্গার নির্বাসন হয়েছে।
No comments