'মুক্ত' লিবিয়া, গাদ্দাফির বড় ছেলের প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞা by নূপুর দেব
আনুষ্ঠানিকভাবে 'মুক্তি'র ঘোষণা দিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করল লিবিয়া। গতকাল রবিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) বেনগাজিতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের (এনটিসি) নেতারা এ ঘোষণা দেন। লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে লড়াই শুরুর আট মাস পর এবং তাঁর মৃত্যুর তিন দিন পর এ ঘোষণা দেওয়া হলো। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। এ সময় শত শত মানুষ লিবিয়ার নতুন পতাকা নেড়ে 'মুক্তি' ঘোষণাকে স্বাগত জানায়। এদিকে গাদ্দাফিকে হত্যার বদলা নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন তাঁর বড় ছেলে সাইফ আল-ইসলাম।
গতকাল সিরিয়াভিত্তিক আলরাই টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত এক ভাষণে তিনি বলেন, 'আমি লিবিয়াতেই আছি। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব এবং বাবার হত্যার বদলা নেব।' তবে লিবিয়ার বর্তমান কর্তৃপক্ষ এনটিসির পক্ষ থেকে সাইফকে 'জীবিত ও অক্ষত' অবস্থায় আটক করার দাবি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অবশ্য নিরপেক্ষ সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অন্যদিকে পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গাদ্দাফির লাশ তাঁর স্বজনদের কাছে হস্তান্তরে রাজি হয়েছে এনটিসি কর্তৃপক্ষ। স্বজনরা কোথায় তাঁর লাশ দাফন করতে চান, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানোর পর এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ইতিমধ্যে গাদ্দাফির লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। এতে মাথায় গুলি লেগেই সাবেক এই শাসকের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গত বৃহস্পতিবার জন্মশহর সার্তে এনটিসি যোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়েন গাদ্দাফি ও তাঁর আরেক ছেলে মুতাসিম। এর পর যোদ্ধারা তাঁদের পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।
গাদ্দাফি মারা যাওয়ার পর সার্তসহ অন্যান্য শহরে তাঁর অনুসারী ও এনটিসি যোদ্ধাদের লড়াই থেমে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে গাদ্দাফি অনুসারীদের ফের চাঙ্গা করার জন্য সাইফ আল-ইসলাম গত শনিবার রাতে আলরাই টেলিভিশনে ভাষণ দেন। এতে তিনি বলেন, 'আমরা এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমি লিবিয়াতেই জীবিত ও মুক্ত আছি। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব এবং বদলা (গাদ্দাফি হত্যার) নেব।'
এর আগে গাদ্দাফি সমর্থকদের এক ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রচার করা হয়। এতে বলা হয়, গাদ্দাফির মৃত্যুর পর উত্তরসূরি হিসেবে সাইফ আল-ইসলামকে লিবিয়ার নতুন শাসক ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি সর্বাধিনায়ক হিসেবে কাজ করবেন।
তবে গতকাল সকালে এনটিসির এক মুখপাত্র দাবি করেন, বনি ওয়ালিদের কাছে নেসমা এলাকা থেকে সাইফ আল-ইসলাম এবং গাদ্দাফি সরকারের সাবেক মুখপাত্র মুসা ইব্রাহিমকে আটক করা হয়েছে। গাদ্দাফির লাশ যে শহরে রাখা আছে, সেই মিসরাতায় যাওয়ার সময় তাঁরা 'অসুর আল ওয়াদি' ব্রিগেড যোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়েন।
বিতর্কিত আরেকটি খবরে বলা হয়, শনিবার রাতে ত্রিপোলি থেকে ৯৯ মাইল দূরের গি্লতান এলাকায় আহত সাইফ চিকিৎসা নেওয়ার সময় তাঁকে আটক করা হয়। তবে এনটিসির পক্ষ থেকে সাইফের কোনো ছবি প্রকাশ করা হয়নি।
গাদ্দাফির লাশ তাঁর স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনটিসি। তবে লিবিয়ায় এখন সাবেক ওই শাসকের পরিবারের কোনো সদস্যকে পাওয়া না যাওয়ায় আত্মীয়স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। এনটিসি নেতা আহমেদ জিবরিল বলেন, 'এই মুহূর্তে লিবিয়ায় তাঁর (গাদ্দাফি) পরিবারের কোনো সদস্য নেই। তাই তাঁর দূরসম্পর্কের আত্মীয়দের কাছে লাশ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।' তিনি আরো বলেন, এনটিসি গাদ্দাফির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করছে। গাদ্দাফিকে কোথায় দাফন করা হবে সে সিদ্ধান্ত নেবে পরিবার। তবে কবে লাশ হস্তান্তর করা হবে, সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাননি।
লিবিয়ার প্রধান প্যাথোলজিস্ট ডা. ওথমান আল-জেনতানি জানান, গতকাল মিসরাতা হাসপাতালে গাদ্দাফির লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। মাথায় গুলি লেগেই সাবেক এই শাসক মারা যান বলে প্রমাণ মিলেছে। এর বেশি কিছু জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। জেনতানি বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখন অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তিনি জানান, প্রসিকিউটর দপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তবে বিদেশি বা তৃতীয় পক্ষের কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
ময়নাতদন্তে গাদ্দাফির মৃত্যুর কারণ জানা গেলেও কিভাবে মাথায় গুলি লেগেছে, তা এখনো অজানা। ঘটনার পর বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত দুটি ভিডিওচিত্রে দুই ধরনের পরিস্থিতি প্রকাশ পেয়েছে। একটিতে গাদ্দাফিকে জীবিত এবং অন্যটিকে মৃত দেখা গেছে। মাঝখানে কী ঘটেছিল তা রহস্যাবৃত। এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড নিজ নিজ দেশের পক্ষে এ দাবি জানান। সূত্র : এএফপি, বিবিসি, সিএনএন, ডেইলি মেইল অনলাইন।
No comments