লিবিয়া এখন স্বাধীন মুক্ত
লিবিয়ায় ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এনটিসি) গতকাল রোববার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে বেনগাজিতে 'ঐতিহাসিক স্বাধীনতা' ঘোষণা করেছে। লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফির ৪২ বছরের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আট মাসের লড়াই শেষে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে, পতাকা উড়িয়ে লাখো মানুষ এ বিজয় ঘোষণার মাহেন্দ্রক্ষণে যোগ দেয়। বেনগাজির 'কিশ স্কোয়ারে' মুক্তির উল্লাসে উদ্বেলিত লাখো মানুষ এবং যুদ্ধফেরত এনটিসি যোদ্ধারা সমবেত হয়। লিবিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে গাদ্দাফির শাসন থেকে মুক্তির ঘোষণা পাঠ করা হয়।
ব্যানার, ফেস্টুন, পতাকা নিয়ে লাখো মানুষ কিশ স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নতুন লিবিয়ার জন্ম প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় সবাই ছিলেন যেন অনেকটা বাকহারা। অনেকের মনে ছিল স্বজন হারানোর বিচ্ছেদ-ব্যথা। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করার দুর্বিষহ স্মৃতি তাদের মনকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল। লিবিয়ার অন্তর্বর্তী নেতা মুস্তাফা আবদেল জলিল লাখো মানুষের সামনে মুক্তির সনদ পাঠ করে শোনান। লিবিয়ার যুদ্ধাহত ও শহীদ যোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আবদেল রহমান আল কাসিস সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, 'আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি লিবিয়ার
জন্য
আজ এক ঐতিহাসিক দিন হিসেবে বিবেচিত হবে।' তিনি গাদ্দাফিকে উদ্দেশ করে বলেন, 'শতাব্দীর স্বৈরশাসক এখন আঁস্তাকুড়ে এবং জাহান্নামে গেছে। তার ভাগ্য এখন ইতিহাসের পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত। লিবিয়া এখন রক্তচক্ষু শাসকের চাবুক থেকে মুক্ত ও স্বাধীন।'
বেনগাজি যেন এক উৎসবের নগরী। গত বৃহস্পতিবার লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি বিদ্রোহীদের গুলিতে নিহত হন নিজ শহর সিরতেতে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বেনগাজি, ত্রিপোলি, মিসরাতাসহ অন্যান্য শহরেও বিজয়োল্লাস ও মুক্তির আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার থেকেই বেনগাজির রাস্তায় নারী ও শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ বিজয় উৎসবে মেতে ওঠেন। গাড়িতে চড়ে, পায়ে হেঁটে, পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে, গোলাপের সুগন্ধি পানি ছিটিয়ে এবং শূন্যে গুলি ছুড়ে তারা উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বেনগাজি শহর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে গাদ্দাফির ৪২ বছরের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী লড়াই শুরু হয়। যা সমাপ্ত হয় গত বৃহস্পতিবার গাদ্দাফির নিজ শহর সিরতের পতনের মধ্য দিয়ে। গাদ্দাফি এবং তার এক সন্তান মুতাসিম এনটিসি বিদ্রোহীদের গুলিতে শহরের রাস্তায় নিহত হন। পরে পিতা-পুত্রের লাশ মিসরাতার বাজারে একটি হিমঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সিরতের পতনের পর বিদ্রোহী যোদ্ধারা বেনগাজিতে ফিরতে শুরু করেছেন। পিকআপ, কার এবং ট্রাকে করে এসব সশস্ত্র যোদ্ধা বেনগাজিতে ফিরছেন। তাদের ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে, গান গেয়ে, বাদ্য বাজিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন শহরের সাধারণ নাগরিকরা। এদিকে এনটিসির রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী এক মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে এবং আট মাসের মধ্যে 'সাংবিধানিক পরিষদ' গঠনের লক্ষ্যে লিবিয়ার সর্বপ্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী এক বছরের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সেদেশের পার্লামেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘোষণা করবে। হেবা আল নেহয়ুম নামে ১৯ বছরের এক কলেজছাত্রী যুদ্ধফেরত সেনাদের উদ্দেশে চেঁচিয়ে বলতে থাকেন, আপনাদের জন্য আমরা গর্বিত। আপনারা গাদ্দাফিকে হত্যা করেছেন, যা তার প্রাপ্য ছিল। বেনগাজিতে রাস্তায় সবুজ, কালো ও লাল রঙের নতুন জাতীয় পতাকা হাতে মুস্তাফা ইউসুফ নামে এক অধিবাসী বলেন, আমি তাদের (যোদ্ধা) জন্য কতটা আবেগাপ্লুত তা বলে বোঝাতে পারব না। হয়তো তারা বেনগাজি বা মিসরাতা থেকে আসছে। সবার জন্য আমার ভালোবাসা রইল।
ব্রিটেনের নয়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড গতকাল লন্ডনে বলেন, গাদ্দাফিকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তাতে অন্তর্বর্তী কাউন্সিলের সুনামে কিছুটা কলঙ্কের ছাপ লেগেছে। এটা নিশ্চিত, ঘটনাগুলো এভাবে ঘটুক তা আমরা চাইনি। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল বিবিসির 'হার্ডটক' অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি চেয়েছিলাম তিনি (গাদ্দাফি) জীবিত থাকুন। বিচারের সময় তার (গাদ্দাফির) কেঁৗসুলি হিসেবে তাকে জিজ্ঞাসা করতাম, নিজের দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে কেন তিনি এমন নিষ্ঠুর আচরণ করলেন? এনটিসির অন্য নেতা মুস্তাফা আবদেল জলিল বলেন, বেশ কিছু রাষ্ট্র এবং মানবাধিকার সংস্থার প্রশ্নের জবাব দিতে গাদ্দাফির হত্যা নিয়ে তদন্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল আরও জানান, সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে গাদ্দাফির এবং তার ছেলে মুতাসিমের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে এনটিসির এক কর্মকর্তা গতকাল বেনগাজিতে বলেন, গাদ্দাফির বড় ছেলে সাইফ আল ইসলাম এবং লিবিয়ার সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান আবদুল্লাহ আল সানুসি সম্ভবত নাইজারে পালিয়ে গেছেন। নাইজারের রাজধানী নিয়ামেতে সে দেশের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে অনুরূপ খবর জানিয়েছেন। গাদ্দাফির বিধবা পত্নী সাফিয়া তার স্বামীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সিরিয়াভিত্তিক আরাই টিভির খবরে এ কথা বলা হয়।
শহীদ, যুদ্ধাহত ও নিখোঁজদের প্রতি শ্রদ্ধা
এনটিসি নেতৃবৃন্দ আট মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে যারা শহীদ, আহত বা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, লিবিয়াকে স্বৈরশাসনের করায়ত্ত থেকে মুক্ত করতে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের ঋণ জাতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে। একই সঙ্গে যারা আহত ও নিখোঁজ হয়েছেন তাদের অবদানকেও অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।
জন্য
আজ এক ঐতিহাসিক দিন হিসেবে বিবেচিত হবে।' তিনি গাদ্দাফিকে উদ্দেশ করে বলেন, 'শতাব্দীর স্বৈরশাসক এখন আঁস্তাকুড়ে এবং জাহান্নামে গেছে। তার ভাগ্য এখন ইতিহাসের পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত। লিবিয়া এখন রক্তচক্ষু শাসকের চাবুক থেকে মুক্ত ও স্বাধীন।'
বেনগাজি যেন এক উৎসবের নগরী। গত বৃহস্পতিবার লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি বিদ্রোহীদের গুলিতে নিহত হন নিজ শহর সিরতেতে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বেনগাজি, ত্রিপোলি, মিসরাতাসহ অন্যান্য শহরেও বিজয়োল্লাস ও মুক্তির আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার থেকেই বেনগাজির রাস্তায় নারী ও শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ বিজয় উৎসবে মেতে ওঠেন। গাড়িতে চড়ে, পায়ে হেঁটে, পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে, গোলাপের সুগন্ধি পানি ছিটিয়ে এবং শূন্যে গুলি ছুড়ে তারা উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বেনগাজি শহর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে গাদ্দাফির ৪২ বছরের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী লড়াই শুরু হয়। যা সমাপ্ত হয় গত বৃহস্পতিবার গাদ্দাফির নিজ শহর সিরতের পতনের মধ্য দিয়ে। গাদ্দাফি এবং তার এক সন্তান মুতাসিম এনটিসি বিদ্রোহীদের গুলিতে শহরের রাস্তায় নিহত হন। পরে পিতা-পুত্রের লাশ মিসরাতার বাজারে একটি হিমঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সিরতের পতনের পর বিদ্রোহী যোদ্ধারা বেনগাজিতে ফিরতে শুরু করেছেন। পিকআপ, কার এবং ট্রাকে করে এসব সশস্ত্র যোদ্ধা বেনগাজিতে ফিরছেন। তাদের ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে, গান গেয়ে, বাদ্য বাজিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন শহরের সাধারণ নাগরিকরা। এদিকে এনটিসির রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী এক মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে এবং আট মাসের মধ্যে 'সাংবিধানিক পরিষদ' গঠনের লক্ষ্যে লিবিয়ার সর্বপ্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী এক বছরের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সেদেশের পার্লামেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘোষণা করবে। হেবা আল নেহয়ুম নামে ১৯ বছরের এক কলেজছাত্রী যুদ্ধফেরত সেনাদের উদ্দেশে চেঁচিয়ে বলতে থাকেন, আপনাদের জন্য আমরা গর্বিত। আপনারা গাদ্দাফিকে হত্যা করেছেন, যা তার প্রাপ্য ছিল। বেনগাজিতে রাস্তায় সবুজ, কালো ও লাল রঙের নতুন জাতীয় পতাকা হাতে মুস্তাফা ইউসুফ নামে এক অধিবাসী বলেন, আমি তাদের (যোদ্ধা) জন্য কতটা আবেগাপ্লুত তা বলে বোঝাতে পারব না। হয়তো তারা বেনগাজি বা মিসরাতা থেকে আসছে। সবার জন্য আমার ভালোবাসা রইল।
ব্রিটেনের নয়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড গতকাল লন্ডনে বলেন, গাদ্দাফিকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তাতে অন্তর্বর্তী কাউন্সিলের সুনামে কিছুটা কলঙ্কের ছাপ লেগেছে। এটা নিশ্চিত, ঘটনাগুলো এভাবে ঘটুক তা আমরা চাইনি। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল বিবিসির 'হার্ডটক' অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি চেয়েছিলাম তিনি (গাদ্দাফি) জীবিত থাকুন। বিচারের সময় তার (গাদ্দাফির) কেঁৗসুলি হিসেবে তাকে জিজ্ঞাসা করতাম, নিজের দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে কেন তিনি এমন নিষ্ঠুর আচরণ করলেন? এনটিসির অন্য নেতা মুস্তাফা আবদেল জলিল বলেন, বেশ কিছু রাষ্ট্র এবং মানবাধিকার সংস্থার প্রশ্নের জবাব দিতে গাদ্দাফির হত্যা নিয়ে তদন্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল আরও জানান, সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে গাদ্দাফির এবং তার ছেলে মুতাসিমের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে এনটিসির এক কর্মকর্তা গতকাল বেনগাজিতে বলেন, গাদ্দাফির বড় ছেলে সাইফ আল ইসলাম এবং লিবিয়ার সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান আবদুল্লাহ আল সানুসি সম্ভবত নাইজারে পালিয়ে গেছেন। নাইজারের রাজধানী নিয়ামেতে সে দেশের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে অনুরূপ খবর জানিয়েছেন। গাদ্দাফির বিধবা পত্নী সাফিয়া তার স্বামীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সিরিয়াভিত্তিক আরাই টিভির খবরে এ কথা বলা হয়।
শহীদ, যুদ্ধাহত ও নিখোঁজদের প্রতি শ্রদ্ধা
এনটিসি নেতৃবৃন্দ আট মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে যারা শহীদ, আহত বা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, লিবিয়াকে স্বৈরশাসনের করায়ত্ত থেকে মুক্ত করতে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের ঋণ জাতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে। একই সঙ্গে যারা আহত ও নিখোঁজ হয়েছেন তাদের অবদানকেও অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।
No comments