চকবাজারে শিশু গৃহকর্মী হত্যা-গৃহকর্তার মাদকাসক্ত ছেলেকে বাঁচাতে পুলিশ মরিয়া! by ওমর ফারুক,
আকলিমা নামের শিশুটির অপমৃত্যু হয়নি। ধর্ষণ শেষে তাকে হত্যা করা হয়েছে। বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়া-সংক্রান্ত গৃহকর্তার বক্তব্য ধোপে টেকেনি। অভিযোগ উঠেছে, নিজের মাদকাসক্ত ছেলেকে বাঁচাতে গৃহকর্তা এবার আরেক শিশু গৃহকর্মীকে এ ঘটনায় জড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য সঠিক প্রমাণ করতে থানা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাও যেন মরিয়া। এমনকি আটক শিশুটির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায়ে বল প্রয়োগের অভিযোগও উঠেছে।রাজধানীর চকবাজারে জয়নাগ রোডে ২২/খ নম্বরে বরকত মুন্সীর বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করত ৯ বছর বয়সী শিশু আকলিমা। একই বাসায় কাজ করত সুমন নামের ১২ বছরের আরেক শিশু।
গত ৩০ জানুয়ারি রাতে আকলিমা ওই বাসায় খুন হয়। গৃহকর্তা এ ঘটনাকে 'বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু' বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিধি বাম! মৃত্যুর আট মাস পর ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বেরিয়ে আসে, শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। আর সেই হত্যা মামলায় কাজের ছেলে শিশু সুমনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
সুমনের পরিবারের দাবি, বাড়িওয়ালার মাদকাসক্ত ছেলে অনিকে বাঁচাতে পুলিশ অর্থের বিনিময়ে সুমনকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। কেননা ঘটনার এক মাস আগে থেকেই গ্রামের বাড়িতে সুমন বাবা-মায়ের কাছে ছিল।
আকলিমার বাবা জালাল উদ্দিনও কালের কণ্ঠকে জানান, সুমন খুব ভালো ছেলে। তাঁর মেয়েকে হত্যার এক মাস আগেই সুমন বাড়ি ফিরে এসেছে। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার সাব-ইন্সপেক্টর নুরুল ইসলাম এসব কথা মানতে নারাজ। কলের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'
সুমনের বাবা নূর ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, ১৮ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ঢাকা ও ঈশ্বরগঞ্জ থানার একদল পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাঁর অবুঝ শিশুকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায়। শিশুটি বর্তমানে টঙ্গীর শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। কয়েক দিন আগে তিনি টঙ্গীতে গিয়ে ছেলের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। সুমন তাঁকে জানিয়েছে, পুলিশ ধরে এনে নখের ভেতরে পিন ঢুকিয়ে দিয়ে ভয় দেখিয়েছে 'এ ঘটনা সে ঘটিয়েছে' বলার জন্য। একপর্যায়ে তার নাকে-মুখে দিয়ে পানিও দেওয়া হয়েছে। নির্যাতন সইতে না পেরে একপর্যায়ে সে স্বীকার করে, এ ঘটনা সেই ঘটিয়েছে।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উজান চরনওপাড়া গ্রামের সুফিয়া বেগম চকবাজার এলাকায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। দুই বছর আগে তিনি বরকত মুন্সীর বাসায় গৃহকর্র্মী হিসেবে একই গ্রামের শিশু আকলিমাকে এনে দেন। কিছুদিন পর বরকত মুন্সীর কথায় আকলিমাদের বাড়ির পাশের বাড়ির দিনমজুর নূর ইসলামের ছেলে সুমনকে এনে কাজে দেন সুফিয়া। রাতে ছাদের ওপর একটি ঘরে থাকতে দেওয়া হতো সুমনকে। আর রান্নাঘরে ঘুমাত আকলিমা।
সুফিয়া কালের কণ্ঠকে জানান, কাজে দেওয়ার পর সুমন কান্নাকাটি করত বাড়ি যাওয়ার জন্য। এ কারণে বাড়ির মালিক বিরক্ত হয়ে গত বছর ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে সুমনকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। সুমন গ্রামে ফিরে প্রাইমারি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়।
জালাল উদ্দিন জানান, মৃত্যুর কয়েক দিন আগে আকলিমাকে দেখতে ঢাকায় এসেছিলেন। ওই সময় বাবাকে কাছে পেয়ে আকলিমা বলেছিল, 'আমারে তুমি নিয়ে যাও। বাড়িতে আমি না খাইয়া থাকবাম। এই হানে আমার দম বন্ধ হয়ে আয়ে। রাইতে ঘুমাইতে পারি না। সাইবের (গৃহকর্তা) বড় ছেড়াডা (ছেলে) আমারে যন্ত্রণা দেয়। আল্লার দোহাই লাগে আমারে নিয়ে যাও।' কিন্তু দিনমজুর বাবা মেয়ের কথা কান না দিয়ে উল্টো ধমক দিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
জালাল উদ্দিন আরো জানান, এক মাস পার না হতেই খবর আসে তাঁর আদরের মেয়েটি বেঁচে নেই। গৃহকর্তা বরকত মুন্সী জানান, রান্নার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে আকলিমা। তাঁরা ওই দিনই ঢাকায় যান। গভীর রাতে একটি পিকআপ ভ্যানে করে ২০ হাজার টাকা দিয়ে লাশসহ তাঁদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় গৃহকর্তার লোকজন।
আর এ ঘটনায় গৃহকর্তা চকবাজার থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। আট মাস পর ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর চকবাজার থানার সাব-ইন্সপেক্টর শেখ আ. মোতালেব বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামির নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় থানার আরেক সাব-ইন্সপেক্টর নূরুল ইসলামকে। তিনি তদন্তে নেমে ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে সুমনকে গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
তদন্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, 'যেহেতু ছেলেটি ওই বাসায় ছিল তাই সে সাক্ষী বা আসামি হবে_এমন চিন্তা থেকেই তদন্তে নামি। গ্রেপ্তারের পর সে স্বীকার করে, এর আগেও সে একবার শিশুটিকে ধর্ষণ করে। দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করার সময় শিশুটি বাড়িওয়ালাকে বলে দেওয়ার ভয় দেখালে সে তাকে গলাটিপে হত্যা করে।' সুমনের বয়স ১৫ বছর বলে তিনি দাবি করেন।
বরকত মুন্সী বলেন, 'মেয়েটি মারা যাওয়ার চার-পাঁচদিন পর সুমন চার হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন চুরি করে পালিয়ে যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে তার আচরণে বোঝা যায়নি। পরে পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে সে হত্যার সঙ্গে জড়িত।
গৃহকর্মী সুফিয়া কালের কণ্ঠকে জানান, বরকত মুন্সী একজন শিল্পপতি। তাঁর বড় ছেলে অনি এলাকায় মাদকসেবী বলে পরিচিত। তাঁর ধারণা, অনিই মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। মাঝেমধ্যে দেখতে গেলে আকলিমা অনির বিরুদ্ধে অভিযোগ করত বলে সুফিয়া জানান।
সুমনের পরিবারের দাবি, বাড়িওয়ালার মাদকাসক্ত ছেলে অনিকে বাঁচাতে পুলিশ অর্থের বিনিময়ে সুমনকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। কেননা ঘটনার এক মাস আগে থেকেই গ্রামের বাড়িতে সুমন বাবা-মায়ের কাছে ছিল।
আকলিমার বাবা জালাল উদ্দিনও কালের কণ্ঠকে জানান, সুমন খুব ভালো ছেলে। তাঁর মেয়েকে হত্যার এক মাস আগেই সুমন বাড়ি ফিরে এসেছে। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার সাব-ইন্সপেক্টর নুরুল ইসলাম এসব কথা মানতে নারাজ। কলের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'
সুমনের বাবা নূর ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, ১৮ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ঢাকা ও ঈশ্বরগঞ্জ থানার একদল পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাঁর অবুঝ শিশুকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায়। শিশুটি বর্তমানে টঙ্গীর শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। কয়েক দিন আগে তিনি টঙ্গীতে গিয়ে ছেলের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। সুমন তাঁকে জানিয়েছে, পুলিশ ধরে এনে নখের ভেতরে পিন ঢুকিয়ে দিয়ে ভয় দেখিয়েছে 'এ ঘটনা সে ঘটিয়েছে' বলার জন্য। একপর্যায়ে তার নাকে-মুখে দিয়ে পানিও দেওয়া হয়েছে। নির্যাতন সইতে না পেরে একপর্যায়ে সে স্বীকার করে, এ ঘটনা সেই ঘটিয়েছে।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উজান চরনওপাড়া গ্রামের সুফিয়া বেগম চকবাজার এলাকায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। দুই বছর আগে তিনি বরকত মুন্সীর বাসায় গৃহকর্র্মী হিসেবে একই গ্রামের শিশু আকলিমাকে এনে দেন। কিছুদিন পর বরকত মুন্সীর কথায় আকলিমাদের বাড়ির পাশের বাড়ির দিনমজুর নূর ইসলামের ছেলে সুমনকে এনে কাজে দেন সুফিয়া। রাতে ছাদের ওপর একটি ঘরে থাকতে দেওয়া হতো সুমনকে। আর রান্নাঘরে ঘুমাত আকলিমা।
সুফিয়া কালের কণ্ঠকে জানান, কাজে দেওয়ার পর সুমন কান্নাকাটি করত বাড়ি যাওয়ার জন্য। এ কারণে বাড়ির মালিক বিরক্ত হয়ে গত বছর ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে সুমনকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। সুমন গ্রামে ফিরে প্রাইমারি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়।
জালাল উদ্দিন জানান, মৃত্যুর কয়েক দিন আগে আকলিমাকে দেখতে ঢাকায় এসেছিলেন। ওই সময় বাবাকে কাছে পেয়ে আকলিমা বলেছিল, 'আমারে তুমি নিয়ে যাও। বাড়িতে আমি না খাইয়া থাকবাম। এই হানে আমার দম বন্ধ হয়ে আয়ে। রাইতে ঘুমাইতে পারি না। সাইবের (গৃহকর্তা) বড় ছেড়াডা (ছেলে) আমারে যন্ত্রণা দেয়। আল্লার দোহাই লাগে আমারে নিয়ে যাও।' কিন্তু দিনমজুর বাবা মেয়ের কথা কান না দিয়ে উল্টো ধমক দিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
জালাল উদ্দিন আরো জানান, এক মাস পার না হতেই খবর আসে তাঁর আদরের মেয়েটি বেঁচে নেই। গৃহকর্তা বরকত মুন্সী জানান, রান্নার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে আকলিমা। তাঁরা ওই দিনই ঢাকায় যান। গভীর রাতে একটি পিকআপ ভ্যানে করে ২০ হাজার টাকা দিয়ে লাশসহ তাঁদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় গৃহকর্তার লোকজন।
আর এ ঘটনায় গৃহকর্তা চকবাজার থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। আট মাস পর ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর চকবাজার থানার সাব-ইন্সপেক্টর শেখ আ. মোতালেব বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামির নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় থানার আরেক সাব-ইন্সপেক্টর নূরুল ইসলামকে। তিনি তদন্তে নেমে ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে সুমনকে গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
তদন্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, 'যেহেতু ছেলেটি ওই বাসায় ছিল তাই সে সাক্ষী বা আসামি হবে_এমন চিন্তা থেকেই তদন্তে নামি। গ্রেপ্তারের পর সে স্বীকার করে, এর আগেও সে একবার শিশুটিকে ধর্ষণ করে। দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করার সময় শিশুটি বাড়িওয়ালাকে বলে দেওয়ার ভয় দেখালে সে তাকে গলাটিপে হত্যা করে।' সুমনের বয়স ১৫ বছর বলে তিনি দাবি করেন।
বরকত মুন্সী বলেন, 'মেয়েটি মারা যাওয়ার চার-পাঁচদিন পর সুমন চার হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন চুরি করে পালিয়ে যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে তার আচরণে বোঝা যায়নি। পরে পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে সে হত্যার সঙ্গে জড়িত।
গৃহকর্মী সুফিয়া কালের কণ্ঠকে জানান, বরকত মুন্সী একজন শিল্পপতি। তাঁর বড় ছেলে অনি এলাকায় মাদকসেবী বলে পরিচিত। তাঁর ধারণা, অনিই মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। মাঝেমধ্যে দেখতে গেলে আকলিমা অনির বিরুদ্ধে অভিযোগ করত বলে সুফিয়া জানান।
No comments