ভোটে নির্ধারিত হবে সৌদি বাদশাহর উত্তরাধিকার!

সৌদি যুবরাজ সুলতানের মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। ক্রম অনুসারে এবার বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স নায়েফের (৭৮) এ দায়িত্ব নেওয়ার কথা। তবে বাদশাহ আবদুল্লাহ পরবর্তী যুবরাজ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভোটাভুটির ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ ভোটাভুটি হবে বিশেষ পরিষদে। সৌদি আরবের মতো রক্ষণশীল দেশের ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্তকে বড় ধরনের পরিবর্তন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।এই প্রথম বাদশাহ আবদুল্লাহ তাঁর অনুগত পরিষদের কাছে নিজের পছন্দের ব্যাপারে অনুমোদন চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজ পরিবারের জটিল উত্তরাধিকার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে ৩৩ সদস্যের এ পরিষদ তিনিই গঠন করেন।


এ পরিষদ হয় বাদশাহর পছন্দের প্রার্থীর ব্যাপারে ভোট দেবে অথবা নিজেদের পছন্দের কথা জানাবে।কয়েক দিনের মধ্যেই এ পরিষদের বৈঠকে বসার কথা। তবে বাদশাহ তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে প্রিন্স নায়েফকে বেছে নিলে এ পরিষদর তাঁর সিদ্ধান্তে বিরোধিতা করবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রিন্স সুলতানের মতো প্রিন্স নায়েফও বাদশাহ আবদুল্লাহর সৎ ভাই। অতি রক্ষণশীল হিসেবে প্রিন্স নায়েফের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। তিনি নারীদের ভোট বা গাড়ি চালানোর অধিকারের ঘোরবিরোধী। প্রতিবেশী বাহরাইনের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন দমনে সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তও তাঁরই ছিল। তাঁর সিংহাসনে আরোহণ সংস্কারপন্থীদের খুব একটা ভালো লাগার কথা নয়। এমিরেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল খালেক আবদুল্লাহ বলেন, 'এটা সৌদি আরব বা এ অঞ্চলের জন্য মোটেই সুখবর নয়।' ১৯৭৫ সাল থেকে প্রিন্স নায়েফ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৯ সালে তাঁকে দ্বিতীয় উপমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। সাধারণত সিংহাসনের তৃতীয় উত্তরসূরিকে এ পদ দেওয়া হয়।
তবে প্রিন্স নায়েফের ব্যাপারে এতটা হতাশ হতে নারাজ অনেক বিশ্লেষক। তাঁরা মনে করেন, ১৯৯৫ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহ যখন দায়িত্ব নেন তখন তিনিও রক্ষণশীল হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। পরে ধীরে ধীরে তাঁর মধ্যে পরিবর্তন আসে। সৌদি আরবের পরিস্থিতি অনুসারে সংস্কারমনস্ক হয়ে ওঠেন তিনি।
৮৭ বছর বয়সী বাদশাহ আবদুল্লাহর শরীর ইদানীং খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। মাত্র এক সপ্তাহ আগে তাঁর মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়েছে। অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন, ক্ষমতার শীর্ষে পরিবর্তন আসন্ন। তবে এ পরিবর্তনের কারণেই বড় ধরনের কোনো সংস্কারের ব্যাপারে আশাবাদী নন তাঁরা। উপসাগরীয় গবেষণা কেন্দ্রের জেদ্দাভিত্তিক বিশ্লেষক মুস্তাফা আলানি দ্য সানডে টেলিগ্রাফকে বলেন, সৌদি আরবে 'সংস্কারের দাবি আছে, তবে চাপ নেই। সৌদি জনগণ দেখছে ইয়েমেন, লিবিয়া বা সিরিয়ায় কী ঘটছে। তারা ওই ধরনের নৈরাজ্য বা রক্তপাত চায় না। তারা বিপ্লব নয়, বিবর্তন চায়। শান্ত ও ধীর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সংস্কার চায় তারা। এটা হয়তো আদর্শ পন্থা নয়, তবে নিরাপদ।'
আগামী মঙ্গলবার যুবরাজ সুলতানের দাফন হবে। সরকারিভাবে তাঁর মৃত্যুর ব্যাপারেও স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। সৌদি সরকারের এক ঘোষণায় জানা যায়, দেশের বাইরে অসুস্থতাজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে কূটনীতিকরা জানান, কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নিউ ইয়র্কে মারা গেছেন তিনি। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ, গার্ডিয়ান

No comments

Powered by Blogger.