কৌশল বদলে ট্রানজিট শুল্ক পাচ্ছে সরকার!-ত্রিপুরায় গেল ১৫৭ টন লোহা by বিশ্বজিৎ পাল বাবু,

কৌশল বদল করে ট্রানজিটের মালামাল ভারতে গেল! অন্যান্য পণ্য রপ্তানির মতোই বাংলাদেশের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে নিয়মিত ট্রানজিটের প্রথম চালান আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় প্রবেশ করেছে। ট্রানজিটের আওতায় গতকাল বুধবার বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট থেকে মোট ৯টি ট্রাকে প্রায় ১৫৭ টন লোহা ত্রিপুরায় যায়।কস্টমস কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখন মুখ খুলেছেন। তাঁরা জানান, নতুন এ প্রক্রিয়ায় পণ্য পরিবহনে সরকার শুল্ক পাচ্ছে। যেহেতু পণ্যগুলো ভারত থেকে এসে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে আবার ভারতে যাচ্ছে পাশাপাশি ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু এটি ট্রানজিটের আওতায় পড়ে।


এত দিন পরীক্ষামূলক মালামাল যাওয়ায় সেগুলো থেকে শুল্ক নেওয়া হয়নি।অন্যদিক ব্যবসায়ীদের মতে, এখন যে প্রক্রিয়ায় পণ্য যাচ্ছে, সেটিকে 'অভ্যন্তরীণ রপ্তানি' বলা যেতে পারে। কেননা ওই পণ্য ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি হয়ে আসে। আবার একই প্রক্রিয়ায় সেগুলো ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। তবে এভাবে পণ্য গেলে আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল ভারতে লোহা নিয়ে প্রবেশ করা ৯টি ট্রাক গত বৃহস্পতিবার আখাউড়া স্থলবন্দরে আসে। প্রক্রিয়া শেষে গত মঙ্গলবার সেগুলো ভারতে যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু কাগজপত্রের জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে সেগুলো আটকে যায়। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট এঙ্সাইজের এক কর্মকর্তা আখাউড়া স্থলবন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, পণ্য সরাসরি না নিয়ে বাংলাদেশের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে নেওয়ার। দায়িত্ব পড়ে প্রীতম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের ওপর। ওই প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্রের মাধ্যমেই ১৫৭ টন লোহা ভারতে পাঠানো হয়। শুল্ক হার গতকাল রপ্তানি হওয়া পণ্যের মোট মূল্য ধরা হয়েছে দুই কোটি ৭৩ লাখ ৫২ হাজার ৪৭১ টাকা। ওই টাকার .৫ শতাংশ কমিশন পাবে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। আর সরকার শুল্ক পাবে প্রায় ১৪ হাজার টাকা। ওই পণ্য ট্রানজিটের বিপরীতে মোট প্রায় ২৭ লাখ টাকা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, যা পণ্য রপ্তানি শেষে তুলে নেওয়া যাবে। যেভাবে প্রক্রিয়া সূত্র জানায়, ট্রানজিটের ৬২১ টন পণ্য এমভি নীলকণ্ঠ নামে একটি জাহাজে করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। খুলনার শেখেরবাড়ী বন্দরে ওই পণ্য রিসিভ করে এম এস কমার্শিয়াল অ্যাসোসিয়েট। ভারতের রপ্তানিকারক ছিল কৃষ্ণ শিপিং অব লসিস্টিক। সপ্তাহখানেক আগে নীলকণ্ঠ জাহাজ আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরে পেঁৗছে। সেখান থেকে বাংলাদেশের ট্রাকে করে পণ্যগুলো ভারতে নেওয়া হয়। একই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের প্রীতম এন্টারপ্রাইজ নামে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ওই পণ্য ভারতের ত্রিপরা ইসপাত নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করে। পণ্য পরিবহনের দায়িত্বে রয়েছে ইন্দো-বাংলা শিপিং লাইনস। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর ব্যবহার করে নৌ-প্রটোকলের আওতায় এ ট্রানজিট শুরু হলো। এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষামূলক ট্রানজিটের আওতায় প্রায় ৭০০ টন মালামাল ভারতে যায়। সেগুলো থেকে কোনো প্রকার শুল্ক আদায় করা হয়নি।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
আখাউড়া স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা সুবাস চন্দ কুন্ডু এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে পণ্যগুলো ভারত থেকে খুলনার শেখবাড়িয়া নৌ-বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসে। একই প্রক্রিয়ায় ওই পণ্যগুলো ভারতে যাচ্ছে। ওই পণ্য যাওয়ার বিপরীতে মোট ১৪ হাজার টাকা পাবে সরকার।'এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আগে ট্রায়াল ছিল বলে শুল্ক নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে পণ্য যাওয়ায় এটা ট্রানজিটের আওতায় পড়ে। আমরা এনবিআরের নির্দেশনা মতো কাজ করছি।'
আখাউড়া স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও প্রীতম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মনির হোসেন বাবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এটা অনেকটা অভ্যন্তরীণ রপ্তানির মতো। তবে ট্রানজিটের প্রথম চালান আমার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে হওয়ায় আমি গর্ববোধ করছি। ট্রানজিটের মাধ্যমে কী কী পণ্য যাবে, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। যদি বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়_এমন পণ্য ট্রানজিটের মাধ্যমে ভারতে চলে যায়, তাহলে আমাদেরকে লোকসান গুনতে হবে।'
প্রসঙ্গত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান সম্প্রতি জানান, মার্চে ভারত ট্রানজিট সুবিধা পেতে যাচ্ছে। ড. মসিউর রহমান জানান, ১৯৪৭ থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত হওয়া নৌ-প্রটোকল অনুযায়ীই বর্তমানে মালামাল যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.