কৃষি সহায়তা কার্ড বণ্টন হয়নি-আইলাবিধ্বস্ত দাকোপ লড়ছে খাদ্যের জন্য by আবুল কাশেম,
ঘূর্ণিঝড় আইলায় বিধ্বস্ত খুলনার দাকোপ উপজেলার অধিবাসীরা এখনো খাদ্যের জন্য লড়ছেন। ফলন হবে না জেনেও লবণাক্ত জমিতে আবাদ করছেন ধান। কোনো কোনো জমিতে আধা আধা ধানগাছ আছে, আবার কোথাও ক্ষেতজুড়েই ধানের গোড়া পচে গেছে লবণের কামড়ে। বাঁধ দিয়ে, আইল বেঁধে সমুদ্রের লবণ পানি আটকিয়ে ধান ঘরে তোলার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন সেখানকার কৃষক। দূর থেকে লবণমুক্ত মাটি এনে বসতবাড়ির কোনো এক জায়গায় রেখে তার ওপর সবজি আবাদ করছেন। বিধ্বস্ত এ জনপদে কৃষি সহায়তা কার্ডগুলো এখনো পড়ে আছে জনপ্রতিনিধিদের হাতেই! দুই বছরেও তা কৃষকদের মধ্যে বিলি হয়নি। ফলে সরকারের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।
সম্প্রতি দাকোপ উপজেলার কুমারখোলা ও সুতাখালী ইউনিয়নে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে। খুলনা শহর থেকে রূপসা নদীর পাড় ঘেঁষে দাকোপের দিকে যেতেই দেখা যায়, জমিগুলো ধানে ভরা। কিন্তু বেশির ভাগ ধান ক্ষেতের গাছগুলোর গোড়া যেন মরে পচে গেছে। কোনো ক্ষেতে বেশি আর কোনো ক্ষেতে কম। তবুও কৃষকরা বলছেন, জানি, একবারেই ভালো ধান ফলবে না। জমিতে লবণ দূর হয়ে কয়েক বছর পর অবশ্যই ভালো ধান হবে। সে আশায়ই চিংড়ি চাষ বাদ দিয়ে ধানের আবাদ শুরু করেছেন তাঁরা। সরকার, জাতীয় ও স্থানীয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো কুমারখোলা ও সুতাখালী ইফনিয়নের অধিবাসীদের ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করছে। তবে স্থানীয় কিছু সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদদের কর্মকাণ্ড স্থানীয়দের প্রচেষ্টাকে পিছু ঠেলছে। এখনো কৃষি সহায়তা কার্ড পাননি সেখানকার কৃষকেরা। ঘর করার জন্য সরকারের দেওয়া ২০ হাজার টাকা অনুদানের ১২ হাজার করে পেয়েছেন, বাকি আট হাজার বকেয়াই রয়েছে। কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, ঢাকায় যেখানে ৫০০ টাকায় সোনালী ব্যাংকে হিসাব খুলা যায়, দাকোপের চালনাবাজার শাখায় সেখানে এক হাজার ২০০ টাকা দিয়ে হিসাব খুলতে হয়েছে তাঁদের। এর মধ্যে এক হাজার টাকা হিসাবে জমা হয়েছে, বাকি টাকা ব্যাংক কর্মকর্তাদের বখশিশ!
সমুদ্রের খুব কাছাকাছি কামারখোলা ও সুতাখালী ইউনিয়নের একপাশে সুন্দরবনের গা ঘেঁষেই ভদ্রা নদী। বাঁধ নামের রাস্তা আর ঘর-বাড়ি ছাড়া জমিজুড়েই শুধু পানি আর পানি। তবুও খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। চারপাশে শক্ত, উঁচু করে বাঁধ দিয়ে খনন করা পুকুরের পানিই তাঁদের ভরসা। অ্যাকশন এইড সুতাখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নে দুটি ইকো ভিলেজ তৈরি করে দিয়েছে। সেখানে উঁচু বেড়িবাঁধের ভেতর উঁচু উঁচু গ্রাম তৈরি করে দিয়েছে। দুটি গ্রামে প্রায় দেড় শ পরিবার বসবাস করছে। গ্রামবাসীকে পিপাসা মেটানোর জন্য খনন করা হয়েছে পুকুর। দূরের উপজেলা থেকে ট্রলারে করে লবণাক্তমুক্ত মাটি এনে বাড়ির আঙ্গিনায় ফেলে সেখানে নানা ধরনের সবজি চাষ করছেন তাঁরা। দাকোপের ৩২ নম্বর ফোল্ডারের কৃষকদের ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হয়নি। কারণ, আইলার পর এ বছরই ওখানকার মানুষ প্রথম কৃষিকাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় এনজিওদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে কোনো এনজিও কাউকে আর্থিক সহায়তা করলে তা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমেই করতে হবে। তখন অ্যাকশন এইড ও স্থানীয় উল্লাসী নামের একটি উন্নয়ন সংস্থা সোনালী ব্যাংকের চালনাবাজার শাখায় গেলে প্রথমে ব্যাংক কর্মকর্তারা একসঙ্গে এত কৃষকের হিসাব খুলতেই রাজি হয়নি। পরে এক হাজার টাকা করে জমা দিয়ে ৮৬২ জন কৃষক হিসাব খুলেছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। সেখানেও প্রত্যেক কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক কর্মকর্তারা উৎকোচ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কামারখোলা ইউনিয়নের কৃষি সহায়তা কার্ডগুলো এখনো পড়ে আছে জনপ্রতিনিধিদের হাতেই, তা কৃষকদের মধ্যে বিলি হয়নি। ফলে কৃষকরা সরকারের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সুতাখালী ইউনিয়নের কালাবগী গ্রামের কৃষক জুবায়দুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, কালাবগী গ্রামটি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ার আগেই এখানকার কৃষকদের জন্য ১০০০ কৃষি সহায়তা কার্ড জনপ্রতিনিধিদের হাতে এসেছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে স্থানীয় মেম্বার মারা যাওয়ায় ওইসব কার্ড বিতরণ করা হয়নি। স্থানীয় কৃষি অর্গানাইজার কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা জুবায়দুর জানান, পুরনো জনপ্রতিনিধিরা থানা কৃষি কর্মকর্তার কাছে কার্ডগুলো ফেরত দেওয়ার পর সেখান থেকে তা নবনির্বাচিতদের হাতে দেওয়া হবে। তার পরই কার্ডগুলো বিতরণ করা হবে! অথচ আইলা আঘাত হানে ২০০৯ সালে। কালাবগী গ্রামের কৃষক আফসার ফকির বলেন, আইলার আগে প্রায় ৩০ বছর ধরে তাঁদের গ্রামের জমিতে চিংড়ি চাষ ও লবণ পানির কারণে ধান চাষ হতো না। তারপর এবারই প্রথম জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। ৩০ বছর পর এ বছর তিনি দুই বিঘা জমিতে বিআর-২৩ ধান চাষ করেছেন। কিন্তু লবণ আর পোকায় ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে আগামী দুই-তিন বছর পর জমিতে ভালোভাবে ধানের ফলন হবে বলে আশা করেন তিনি।
কামারখোলা ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের কৃষক কার্তিক বাওয়ালী বলেন, স্থানীয় এনজিও উল্লাসীর সহায়তার অর্থ পেতে তিনি সোনালী ব্যাংকে হিসাব খুলতে গেলে তাঁর কাছ থেকে ব্যাংকের লোকজন এক হাজার ১০০ টাকা নিয়ে এক হাজার টাকার রিসিট দিয়েছেন। একই অভিযোগ করেন সাতঘরিয়া গ্রামের বিশ্বজিৎ রায়। স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা উলাসী শ্রিজনী সংস্থা (ইউএসএস)-এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার আজিজুল হক মনি কালের কণ্ঠকে বলেন, উপজেলার কামারখোলা ও সুতাখালী ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বাস। স্থানীয় কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে লবণ-পানির অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাঁধ তৈরি করছেন। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও চিংড়িচাষিরা নানাভাবে বাঁধ ফুটো করে লবণ-পানি ঢুকিয়ে ধানের আবাদ থেকে কৃষকদের আবারও চিংড়ি চাষে বাধ্য করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের সেই অপচেষ্টা রুখতে কৃষকরা দলবেঁধে পালাক্রমে রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন।
সমুদ্রের খুব কাছাকাছি কামারখোলা ও সুতাখালী ইউনিয়নের একপাশে সুন্দরবনের গা ঘেঁষেই ভদ্রা নদী। বাঁধ নামের রাস্তা আর ঘর-বাড়ি ছাড়া জমিজুড়েই শুধু পানি আর পানি। তবুও খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। চারপাশে শক্ত, উঁচু করে বাঁধ দিয়ে খনন করা পুকুরের পানিই তাঁদের ভরসা। অ্যাকশন এইড সুতাখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নে দুটি ইকো ভিলেজ তৈরি করে দিয়েছে। সেখানে উঁচু বেড়িবাঁধের ভেতর উঁচু উঁচু গ্রাম তৈরি করে দিয়েছে। দুটি গ্রামে প্রায় দেড় শ পরিবার বসবাস করছে। গ্রামবাসীকে পিপাসা মেটানোর জন্য খনন করা হয়েছে পুকুর। দূরের উপজেলা থেকে ট্রলারে করে লবণাক্তমুক্ত মাটি এনে বাড়ির আঙ্গিনায় ফেলে সেখানে নানা ধরনের সবজি চাষ করছেন তাঁরা। দাকোপের ৩২ নম্বর ফোল্ডারের কৃষকদের ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হয়নি। কারণ, আইলার পর এ বছরই ওখানকার মানুষ প্রথম কৃষিকাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় এনজিওদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে কোনো এনজিও কাউকে আর্থিক সহায়তা করলে তা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমেই করতে হবে। তখন অ্যাকশন এইড ও স্থানীয় উল্লাসী নামের একটি উন্নয়ন সংস্থা সোনালী ব্যাংকের চালনাবাজার শাখায় গেলে প্রথমে ব্যাংক কর্মকর্তারা একসঙ্গে এত কৃষকের হিসাব খুলতেই রাজি হয়নি। পরে এক হাজার টাকা করে জমা দিয়ে ৮৬২ জন কৃষক হিসাব খুলেছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। সেখানেও প্রত্যেক কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক কর্মকর্তারা উৎকোচ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কামারখোলা ইউনিয়নের কৃষি সহায়তা কার্ডগুলো এখনো পড়ে আছে জনপ্রতিনিধিদের হাতেই, তা কৃষকদের মধ্যে বিলি হয়নি। ফলে কৃষকরা সরকারের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সুতাখালী ইউনিয়নের কালাবগী গ্রামের কৃষক জুবায়দুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, কালাবগী গ্রামটি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ার আগেই এখানকার কৃষকদের জন্য ১০০০ কৃষি সহায়তা কার্ড জনপ্রতিনিধিদের হাতে এসেছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে স্থানীয় মেম্বার মারা যাওয়ায় ওইসব কার্ড বিতরণ করা হয়নি। স্থানীয় কৃষি অর্গানাইজার কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা জুবায়দুর জানান, পুরনো জনপ্রতিনিধিরা থানা কৃষি কর্মকর্তার কাছে কার্ডগুলো ফেরত দেওয়ার পর সেখান থেকে তা নবনির্বাচিতদের হাতে দেওয়া হবে। তার পরই কার্ডগুলো বিতরণ করা হবে! অথচ আইলা আঘাত হানে ২০০৯ সালে। কালাবগী গ্রামের কৃষক আফসার ফকির বলেন, আইলার আগে প্রায় ৩০ বছর ধরে তাঁদের গ্রামের জমিতে চিংড়ি চাষ ও লবণ পানির কারণে ধান চাষ হতো না। তারপর এবারই প্রথম জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। ৩০ বছর পর এ বছর তিনি দুই বিঘা জমিতে বিআর-২৩ ধান চাষ করেছেন। কিন্তু লবণ আর পোকায় ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে আগামী দুই-তিন বছর পর জমিতে ভালোভাবে ধানের ফলন হবে বলে আশা করেন তিনি।
কামারখোলা ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের কৃষক কার্তিক বাওয়ালী বলেন, স্থানীয় এনজিও উল্লাসীর সহায়তার অর্থ পেতে তিনি সোনালী ব্যাংকে হিসাব খুলতে গেলে তাঁর কাছ থেকে ব্যাংকের লোকজন এক হাজার ১০০ টাকা নিয়ে এক হাজার টাকার রিসিট দিয়েছেন। একই অভিযোগ করেন সাতঘরিয়া গ্রামের বিশ্বজিৎ রায়। স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা উলাসী শ্রিজনী সংস্থা (ইউএসএস)-এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার আজিজুল হক মনি কালের কণ্ঠকে বলেন, উপজেলার কামারখোলা ও সুতাখালী ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বাস। স্থানীয় কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে লবণ-পানির অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাঁধ তৈরি করছেন। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও চিংড়িচাষিরা নানাভাবে বাঁধ ফুটো করে লবণ-পানি ঢুকিয়ে ধানের আবাদ থেকে কৃষকদের আবারও চিংড়ি চাষে বাধ্য করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের সেই অপচেষ্টা রুখতে কৃষকরা দলবেঁধে পালাক্রমে রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন।
No comments