অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন-আরব জাগরণের বিরুদ্ধে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে

ধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী গণ-আন্দোলনকে 'হাত খুলে' প্রশংসা করতে দ্বিধা করেনি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ ইউরোপের অনেক দেশ। তবে অস্ত্রবাণিজ্যের শীর্ষে থাকা এসব দেশের বিক্রীত অস্ত্র কিছু ক্ষেত্রে আন্দোলনকারীদের বিপক্ষেও ব্যবহৃত হয়েছে। গত মঙ্গলবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের নতুন এক প্রতিবেদনে এসব কথা জানিয়েছে।লন্ডনভিত্তিক এ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বাহরাইনের কাছে মার্কিন সরকারের প্রস্তাবিত পাঁচ কোটি ৩০ লাখ ডলারের অস্ত্র বিক্রির প্রক্রিয়ায় বাধা দিতে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি বাহরাইনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের শামিল শিয়াদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন সুনি্ন রাজতন্ত্র খৰহস্ত হয়েছে।


এতে ৩০ জনেরও বেশি আন্দোলনকারী নিহত হয়েছে।অ্যামনেস্টি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য অস্ত্র বিক্রেতা দেশগুলো ওই অঞ্চলের সরকারগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি দীর্ঘদিন উপেক্ষা করে এসেছে। সংস্থাটির মতে, আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো দেশগুলো পশ্চিমাদের কাছ থেকে কেনা অস্ত্রের ব্যবহার ঠিক কোন পন্থায় করছে, তার পরিষ্কার কোনো চিত্র পাওয়া যায় না।
ওয়াশিংটনে অবস্থানরত অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক অ্যাডভোকেসি পরিচালক সঞ্জীব বেরি বলেন, 'পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহ করা অস্ত্র অনেক দেশেই মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলোও এ ক্ষেত্রে দায় এড়াতে পারে না।' অ্যামনেস্টির মতে, অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে আরো বেশি সংযত ও স্বচ্ছ হওয়া দরকার। যেসব দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি রয়েছে, এমন দেশে অস্ত্র বিক্রির ব্যাপারটি এড়িয়ে যাওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি নীতিমালায় নিয়ন্ত্রণ আনা দরকার বলে মনে করে অ্যামনেস্টি।
২০০৫ সাল থেকে অস্ত্র বিক্রি ও অস্ত্র ক্রেতা দেশগুলোর একটি তালিকা প্রণয়ন করেছে অ্যামনেস্টি। এতে দেখা যায়, অস্ত্র ক্রেতা মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া ও বাহরাইনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব দেশে অস্ত্র বিক্রয়কারী দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্র।
বাহরাইনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত অস্ত্র বিক্রি প্রসঙ্গে বেরি বলেন, বাইরাইনের বাদশার কাছে অস্ত্র বিক্রির ব্যাপারটি নিঃসন্দেহে ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের কাছে ভুল বার্তা পেঁৗছাবে। বাহরাইনে নিরাপত্তা বাহিনী ইতিমধ্যে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়েছে। প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মার্ক টোনার মঙ্গলবার বলেন, বাহরাইনকে অস্ত্র দেওয়ার প্রক্রিয়ার অনেক ধাপ এখনো শেষ হয়নি। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র 'বাহ্যিক নিরাপত্তার কাজে' ব্যবহার করবে বাহরাইন সরকার। তবে টোনার স্বীকার করেন, এ ব্যাপারে বেশ কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য ইতিমধ্যে উদ্বেগ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমরা বাহরাইন পরিস্থিতির ব্যাপারে নজর রাখছি। মানবাধিকার পরিস্থিতিও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।'
এদিকে অস্ত্র রপ্তানি নীতিমালায় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে ব্রিটেন। যেসব দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বা স্থিতাবস্থায় হঠাৎ ব্যাপক অবনতি ঘটবে, তাদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করতে পারে ব্রিটেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ এক লিখিত বিবৃতিতে আইন প্রণেতাদের জানিয়েছেন, 'মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার সাম্প্রতিক আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিতে ব্রিটেন সরকার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।' হেগ জানান, লিবিয়া, বাহরাইন, তিউনিসিয়া ও মিসরের সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব আবার বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে এবং কয়েকটি বাতিলও করা হয়েছে। সূত্র : এপি।

No comments

Powered by Blogger.