গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে শিল্প বিনিয়োগ হুমকির মুখে by আরিফুজ্জামান তুহিন
গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের শিল্প খাতের বিনিয়োগ। পোশাক ও বস্ত্র খাতের কয়েক শ কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না। পাশাপাশি গ্যাসের চাপ কম থাকায় বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে কলকারখানার উৎপাদন কমে গেছে। এ অবস্থায় দ্রুত সংকট নিরসনের দাবি জানিয়েছেন শিল্পোদ্যোক্তারা।জানা যায়, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও বন্দরনগর চট্টগ্রামে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট বেশি। এসব এলাকার শিল্পাঞ্চলগুলোতে আট ঘণ্টার বেশি গ্যাসের চাপ থাকে না।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা ধারণা দিয়েছেন, জ্বালানি সংকটের কারণে বর্তমানে বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এ হিসাবে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১০ কোটি টাকা।আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার আড়াই বছর পার করলেও গ্যাস সংকট সমাধানে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। এ বিষয়ে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে বলেন, আশুগঞ্জে কম্প্রেসর বসিয়ে গ্যাসের চাপ বাড়ানোর কথা বলা হলেও সরকার এখন পর্যন্ত তা করেনি। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ গ্যাস সংকট মোকাবিলায় যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। গ্যাস সমস্যার কোনো সমাধান তারা করতে পারবে না।
বিদ্যুতের অবস্থা : বিদ্যুতের সংকট সমাধানে সরকার একের পর এক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মেরামত না করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেসরকারি খাতের ওপর ভরসা করছে। এতে সংকট আরো বেড়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এ সরকারের আমলে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে নতুন যোগ হয়েছে প্রায় দুই হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বিপরীতে পুরনো কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন কমেছে অন্তত এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এ কারণে নতুন বিদ্যুৎ কোনোভাবেই লোডশোডিং কমাতে পারছে না।
পিডিবির সাবেক মহাপরিচালক বি ডি রহমত উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে উন্নতমানের দীর্ঘস্থায়ী এমন সব কেন্দ্র রয়েছে, যেখান থেকে আরো ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসতে পারে। কিন্তু শুধু মেরামতের অভাবে তা হচ্ছে না।'
সাবেক এই কর্মকর্তা মনে করেন, মাত্র ২০০ কোটি টাকা খরচ করলে এসব কেন্দ্রে কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু দুর্নীতি জিইয়ে রাখার জন্য এটা করা হয় না।
পিডিবি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ৭৭টি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে গড়ে চার হাজার ৮০০ থেকে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় সঞ্চালন লাইনে যোগ হচ্ছে। বর্তমানে ৩৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নানাবিধ সমস্যায় রয়েছে। আর গ্যাস স্বল্পতার কারণে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। যে কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন কমেছে গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে গড়ে ৪০০৫ মেগাওয়াট থেকে ৪০০৭ মেগাওয়াট। আর চাহিদা রয়েছে ৫৪০০ মেগাওয়াট।
জানা যায়, দেশে বিদ্যুতের রেকর্ড উৎপাদন হয় সর্বশেষ গত ২৯ আগস্ট ৫২৪৩ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। কিন্তু এরপর থেকেই আবার কমতে শুরু করে উৎপাদন।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দ্রুত ঠিক করার। কিন্তু কিছু যন্ত্রপাতি আছে, যা নষ্ট হলে বিদেশ থেকে আনতে সময় লাগে। আশা করছি পুরনো কেন্দ্রগুলো দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে।'
গ্যাস পরিস্থিতি : বর্তমান সরকার গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ ২০১২ সালের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে_সাতটি অনুসন্ধান কূপ, ২৪টি উন্নয়ন কূপ ও তিনটি ওয়ার্কওভার কূপ খনন এবং দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুটের সমান এলএনজি (তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি। কিন্তু সময়মতো অর্থ বরাদ্দসহ অন্যান্য সহায়তা না পাওয়ায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা রয়েছে।
রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে দেশে গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৩০ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে দৈনিক গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ হচ্ছে ২০০ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ২৫০ কোটি ঘনফুট। গ্যাস উৎপাদন ও বিতরণে যুক্ত সরকারি সংস্থাগুলোর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গ্যাসের চাহিদা (প্রোজেক্টেড) এ বছরের মধ্যেই ২৮০ কোটি ঘনফুটে দাঁড়াবে। অন্যদিকে, উৎপাদন ২২০ কোটি ঘনফুটের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। এতে করে ঘাটতি থেকে যাবে ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের।
শিল্প খাতে সংকট : গ্যাস সংকটের কারণে দেশের শিল্প খাত অচল হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শুধু চট্টগ্রামে ৮৪টি বড় ও মাঝারি শিল্পকারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না গ্যাসের অভাবে।
এঙ্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে ওঠা চার শতাধিক প্রতিষ্ঠান আড়াই বছর ধরে গ্যাস সংযোগ পাচ্ছে না।
গ্যাস সংকটের বড় প্রভাব পড়েছে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক খাত তৈরি পোশাক শিল্পেও। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এঙ্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সূত্র জানিয়েছে, পোশাক খাতে ৫২টি বড় প্রতিষ্ঠান দুই-আড়াই বছর ধরে বিনিয়োগ করে বসে আছে। এসব প্রতিষ্ঠান গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না। এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণের সুদ গুনছে বলে জানা গেছে।
গ্যাস সংকটে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে দেশের স্টিল, রি-রোলিং বা ইস্পাত শিল্প। এ ছাড়া রয়েছে কম্পোজিট টেঙ্টাইল খাত।
ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও বন্দর নগর চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের চাপ কম থাকায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন।
রাষ্ট্রীয় গ্যাস বিপণন ও বিতরণ প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, এসব শিল্পাঞ্চলে ২০ পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চি) চাপের গ্যাস পাওয়ার কথা। তবে বাস্তবে এসব অঞ্চলে পিক আওয়ারে তিন পিএসআইয়ের নিচে নেমে এসেছে গ্যাসের চাপ। গাজীপুরে এ চাপ এক পিএসআইয়েরও নিচে বলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিতাসের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠের কাছে স্বীকার করেছেন।
পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে তাঁদের ক্রয় আদেশ চলে যেতে পারে ভারত, চীন ও ভিয়েতনামের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে। এ ছাড়া সময়মতো শিপমেন্ট করতে না পারলে কাজও হাতছাড়া হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী সম্প্রতি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থাকে বলেন, 'সেপ্টেম্বর মাসে দেশের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে নেমে এসেছে। চলতি মাসে তা আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছি আমরা।'
সালাম মুর্শেদী আরো বলেন, 'বিদ্যুতের সংকট থাকলে তার প্রভাব উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে গিয়েই পড়ে।' তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে শিল্পে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তাঁরা বলছেন, একপর্যায়ে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। এতে কাজ হারাবে লাখ লাখ মানুষ।
বাংলাদেশ টেঙ্টাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বস্ত্র খাতে প্রায় দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে গ্যাসের অভাবে। অন্তত ২৫টি টেঙ্টাইল মিল দুই বছর ধরে গ্যাসের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিদ্যুতের অবস্থা : বিদ্যুতের সংকট সমাধানে সরকার একের পর এক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মেরামত না করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেসরকারি খাতের ওপর ভরসা করছে। এতে সংকট আরো বেড়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এ সরকারের আমলে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে নতুন যোগ হয়েছে প্রায় দুই হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বিপরীতে পুরনো কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন কমেছে অন্তত এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এ কারণে নতুন বিদ্যুৎ কোনোভাবেই লোডশোডিং কমাতে পারছে না।
পিডিবির সাবেক মহাপরিচালক বি ডি রহমত উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে উন্নতমানের দীর্ঘস্থায়ী এমন সব কেন্দ্র রয়েছে, যেখান থেকে আরো ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসতে পারে। কিন্তু শুধু মেরামতের অভাবে তা হচ্ছে না।'
সাবেক এই কর্মকর্তা মনে করেন, মাত্র ২০০ কোটি টাকা খরচ করলে এসব কেন্দ্রে কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু দুর্নীতি জিইয়ে রাখার জন্য এটা করা হয় না।
পিডিবি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ৭৭টি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে গড়ে চার হাজার ৮০০ থেকে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় সঞ্চালন লাইনে যোগ হচ্ছে। বর্তমানে ৩৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নানাবিধ সমস্যায় রয়েছে। আর গ্যাস স্বল্পতার কারণে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। যে কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন কমেছে গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে গড়ে ৪০০৫ মেগাওয়াট থেকে ৪০০৭ মেগাওয়াট। আর চাহিদা রয়েছে ৫৪০০ মেগাওয়াট।
জানা যায়, দেশে বিদ্যুতের রেকর্ড উৎপাদন হয় সর্বশেষ গত ২৯ আগস্ট ৫২৪৩ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। কিন্তু এরপর থেকেই আবার কমতে শুরু করে উৎপাদন।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দ্রুত ঠিক করার। কিন্তু কিছু যন্ত্রপাতি আছে, যা নষ্ট হলে বিদেশ থেকে আনতে সময় লাগে। আশা করছি পুরনো কেন্দ্রগুলো দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে।'
গ্যাস পরিস্থিতি : বর্তমান সরকার গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ ২০১২ সালের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে_সাতটি অনুসন্ধান কূপ, ২৪টি উন্নয়ন কূপ ও তিনটি ওয়ার্কওভার কূপ খনন এবং দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুটের সমান এলএনজি (তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি। কিন্তু সময়মতো অর্থ বরাদ্দসহ অন্যান্য সহায়তা না পাওয়ায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা রয়েছে।
রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে দেশে গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৩০ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে দৈনিক গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ হচ্ছে ২০০ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ২৫০ কোটি ঘনফুট। গ্যাস উৎপাদন ও বিতরণে যুক্ত সরকারি সংস্থাগুলোর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গ্যাসের চাহিদা (প্রোজেক্টেড) এ বছরের মধ্যেই ২৮০ কোটি ঘনফুটে দাঁড়াবে। অন্যদিকে, উৎপাদন ২২০ কোটি ঘনফুটের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। এতে করে ঘাটতি থেকে যাবে ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের।
শিল্প খাতে সংকট : গ্যাস সংকটের কারণে দেশের শিল্প খাত অচল হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শুধু চট্টগ্রামে ৮৪টি বড় ও মাঝারি শিল্পকারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না গ্যাসের অভাবে।
এঙ্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে ওঠা চার শতাধিক প্রতিষ্ঠান আড়াই বছর ধরে গ্যাস সংযোগ পাচ্ছে না।
গ্যাস সংকটের বড় প্রভাব পড়েছে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক খাত তৈরি পোশাক শিল্পেও। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এঙ্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সূত্র জানিয়েছে, পোশাক খাতে ৫২টি বড় প্রতিষ্ঠান দুই-আড়াই বছর ধরে বিনিয়োগ করে বসে আছে। এসব প্রতিষ্ঠান গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না। এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণের সুদ গুনছে বলে জানা গেছে।
গ্যাস সংকটে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে দেশের স্টিল, রি-রোলিং বা ইস্পাত শিল্প। এ ছাড়া রয়েছে কম্পোজিট টেঙ্টাইল খাত।
ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও বন্দর নগর চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের চাপ কম থাকায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন।
রাষ্ট্রীয় গ্যাস বিপণন ও বিতরণ প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, এসব শিল্পাঞ্চলে ২০ পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চি) চাপের গ্যাস পাওয়ার কথা। তবে বাস্তবে এসব অঞ্চলে পিক আওয়ারে তিন পিএসআইয়ের নিচে নেমে এসেছে গ্যাসের চাপ। গাজীপুরে এ চাপ এক পিএসআইয়েরও নিচে বলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিতাসের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠের কাছে স্বীকার করেছেন।
পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে তাঁদের ক্রয় আদেশ চলে যেতে পারে ভারত, চীন ও ভিয়েতনামের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে। এ ছাড়া সময়মতো শিপমেন্ট করতে না পারলে কাজও হাতছাড়া হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী সম্প্রতি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থাকে বলেন, 'সেপ্টেম্বর মাসে দেশের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে নেমে এসেছে। চলতি মাসে তা আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছি আমরা।'
সালাম মুর্শেদী আরো বলেন, 'বিদ্যুতের সংকট থাকলে তার প্রভাব উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে গিয়েই পড়ে।' তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে শিল্পে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তাঁরা বলছেন, একপর্যায়ে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। এতে কাজ হারাবে লাখ লাখ মানুষ।
বাংলাদেশ টেঙ্টাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বস্ত্র খাতে প্রায় দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে গ্যাসের অভাবে। অন্তত ২৫টি টেঙ্টাইল মিল দুই বছর ধরে গ্যাসের অপেক্ষায় রয়েছে।
No comments