শর্ত পূরণে ব্যর্থ বাদ আশরাফুল!

বাই যখন বাসে চড়ে মাঠে এলেন, তখন হোটেলরুমে নিজের কিটস গোছাচ্ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার ফ্লাইট ধরতে হবে তাকে। সেখানে দু'একদিন বিশ্রাম নিয়েই ফের চলে যাবেন রাজশাহীতে। সেখানেই ২৩ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোর অধিনায়ক হয়ে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে চার দিনের ম্যাচ খেলতে নামবেন আশরাফুল। এভাবে জাতীয় দল থেকে ছিটকে গিয়ে ফের জাতীয় লীগ? ১০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিশ্চয় কষ্টের? 'কষ্ট...। নাহ...। কিসের কষ্ট? আসলে আমি নিজেই এ সিরিজে টেস্ট খেলতে চাইনি।


আমি প্রথমে দুটি ওয়ানডে খেলতে চেয়েছিলাম। সে সুযোগ আমি পেয়েছি।' টেলিফোনের ওপাশ থেকে বাক্যগুলো শোনা গেলেও তার আবেগটা ধরা পড়েনি। তবে গত হারারে টেস্টে ৭৩ রান করা ব্যাটসম্যান পরের টেস্টেই যখন বাদ পড়ে যান, তখন একটু যে কষ্ট হয় না, এটা বোধহয় ঠিক না; কিন্তু ব্যাপারটি তার সঙ্গে এতবার হয়েছে যে, এখন আর দল থেকে বাদ পড়ার ঘটনা খুব একটা নাড়া দেয় না আশরাফুলকে। 'বাদ পড়াটা তো আর আমার নতুন না। বহুবার দল থেকে বাদ পড়েছি। দু'একটা ম্যাচ খারাপ করলেই ছেঁটে ফেলা হয়েছে আমাকে।'
অভিমানটা তখনও বিস্ফোরিত হয়নি আশরাফুলের। তবে অনলাইন বার্তাসংস্থা বাংলানিউজিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দল থেকে বাদ পড়ার জন্য সরাসরি বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালের দিকে আঙুল তুলেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। 'কোচ, অধিনায়ক এবং নির্বাচকরাও চান আমি খেলি। কিন্তু ওপর মহলের কর্মকর্তাদের চাপে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ওয়ানডের আগের রাতে আকরাম ভাই আমাকে বলেন, ওয়ানডে খেললে টেস্ট খেলানো হবে না। বিসিবি প্রেসিডেন্ট চান না আমাকে টেস্ট দলে নেওয়া হোক। আমি আকরাম ভাইকে বলেছি, টেস্ট খেলব না, ওয়ানডেই খেলব। কারণ বাকি দুই ওয়ানডেতে রান পেলে টেস্ট দলে নেওয়া হতো। কিন্তু তিনটা ওয়ানডে তো খেলানো হলো না। আসলে খেলার আগেই যদি বলে দেওয়া হয়, রান না করলে বাদ দিয়ে দেওয়া হবে, তাহলে খেলবে কী করে।' প্রধান নির্বাচক আকরাম খান এ ব্যাপারে বাংলানিউজকে বলেন, 'ভালো না খেললে কোনো খেলোয়াড়ের জায়গা নেই। আমি আশরাফুলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বলেছিলাম, ভালো করে খেলো, তা না হলে দলে রাখতে পারব না।'
ছেঁটে ফেলার পর সহমহিমায় ফিরে আসাটাও তো আশরাফুলের জন্য নতুন কিছু নয়। ২০০৬ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাদ পড়েছিলেন তিনি। এরপর সিরিজ চলাকালেই জাতীয় লীগে চট্টগ্রামের বিপক্ষে ঢাকার হয়ে ২৬৩ রান করেন আশরাফুল। এরপর আর তাকে বাইরে রাখতে পারেননি নির্বাচকরা। এবারও কি জাতীয় লীগে তেমন কিছুর লক্ষ্য ঠিক করেছেন আশরাফুল? প্রশ্নটি শুনেই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। 'না, ক্যারিয়ারের এত বছর পর এসে আর অমন কোনো লক্ষ্য ঠিক করতে পারছি না। এখন শুধু বলতে পারি যেখানেই খেলব, যে ম্যাচই খেলব, সেখানে পারফর্ম করার চেষ্টা করব। রান করার চেষ্টা করব। এখন জাতীয় লীগে ভালো খেলেই জাতীয় দলে ফিরব, এমন কোনো লক্ষ্য নেই।' হতাশাটা লুকাতে চাইলেও যে সব সময় তা পারা যায় না, তা বোধহয় আশরাফুলও জানেন। আর সে কারণেই টেস্টের জন্য মুশফিকের দলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গতকাল ঢাকা ফিরে যান তিনি। 'টি২০ জয়ের পর শেষ ওয়ানডেতেও দারুণ একটি জয় এসেছে আমাদের। আশা করি টেস্টেও ভালো করব আমরা।'
 

No comments

Powered by Blogger.