কোর কমিটি কাল বৈঠকে বসছে : উপনির্বাচনের ফলাফলে উদ্বিগ্ন কংগ্রেস

ভারতের হিসার লোকসভা আসন ও রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভা উপনির্বাচনে কংগ্রেস ও জোটসঙ্গীদের পরাজয়কে মানুষের মধ্যে অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখছেন বিরোধীরা। দেশে কংগ্রেসবিরোধী ক্ষোভ বাড়ছে, তার লক্ষণ প্রতিফলিত হচ্ছে এই রায়ে—এমনই প্রতিক্রিয়া বিরোধীদের। প্রকাশ্যে সোমবারের ফলাফলকে গুরুত্ব না দেয়ার কথা বললেও উদ্বিগ্ন কংগ্রেস নেতৃত্ব শুক্রবার বৈঠকে বসছে। সেখানে উপনির্বাচনের ফলাফল প্রাথমিকভাবে বিশ্লেষণ করা ছাড়াও আসন্ন বিধানসভা ভোটের জন্য সাংগঠনিক রূপরেখা তৈরি করা হবে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অবশ্য দাবি করেছেন, এই ফলাফলের সঙ্গে তার সরকারের কাজের প্রতি আস্থা-অনাস্থার কোনো সম্পর্ক নেই।


কংগ্রেস দলের বিরুদ্ধে সাধারণ মতামতের প্রতিফলনও নয় এই ফলাফল। প্রধানমন্ত্রী এখন দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানেই এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেশের একটি নির্দিষ্ট অংশে একটি উপনির্বাচনকে আমার সরকার সম্পর্কে রায় বলা চলে না। যদিও শুধু একটি রাজ্যে উপনির্বাচন হয়নি। লক্ষণীয়ভাবে, কংগ্রেস ও জোটসঙ্গীরা এমন রাজ্যেও বেশ ভালোভাবেই হেরেছে যেখানে তারা রাজ্যের সরকারে। হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশে কংগ্রেস ও এনসিপি প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। হরিয়ানার হিসারে আন্না হাজারের শিবিরের কংগ্রেসবিরোধী প্রচার বাড়তি মাত্রা যুক্ত করলেও কংগ্রেস যে হারতই তার প্রমাণ সেখানে কংগ্রেসের সাবেক সংসদ সদস্য জয়প্রকাশ তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছেন। তেমনই অন্ধ্র প্রদেশে তেলেঙ্গানা পৃথক রাজ্যের ভাবাবেগ কাজ করেছে। কিন্তু ব্যবধান যথেষ্ট। এমন কোনো কারণ ছাড়াই মহারাষ্ট্রের আসনে এনসিপি প্রার্থী হেরেছে। রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার নিজে ওই নির্বাচনের ব্যাপারে তত্পর হওয়া সত্ত্বেও ভোটে জোটের হার হয়েছে। বিহারেও কংগ্রেস প্রার্থী তৃতীয় হয়েছেন এবং মাত্র ৪ হাজার ভোট পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার তামিলনাডুর তিরুচিরাপল্লী পশ্চিম ও পুদুচেরির ইন্দিরা নগর বিধানসভা উপনির্বাচনের ফল বেরোবে। এই দুটিতেও কংগ্রেস বা জোটসঙ্গী ডিএমকে’র জেতার আশা খুবই কম। কংগ্রেস নেতৃত্বের পক্ষে কোনো এক নির্দিষ্ট রাজ্যের ঘটনা বলে এই উপনির্বাচন পর্বকে ব্যাখ্যা করা বেশ কঠিন। মঙ্গলবার সিপিআই (এম) পলিট ব্যুরো উপনির্বাচনের ফল সম্পর্কে বলেছে, দুর্নীতি এবং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা গোটা দেশেই জনমনে কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করার মনোভাব তৈরি করছে। এই দুটি প্রশ্নই যে জনমনে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে, তা নির্বাচনী প্রচারের সময়েও যথেষ্টই টের পাওয়া গেছে। কংগ্রেসবিরোধী প্রার্থীরা প্রচারে এই দুটি প্রশ্নকেই সামনে এনেছিলেন। বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি মঙ্গলবার এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘ইউপিএর বিদায়ের প্রহর গোনা শুরু হয়ে গেছে।’ এই ফলাফলকে দেয়াল-লিখন বলে পড়ে নিতে কংগ্রেসকে পরামর্শ দিয়েছেন আদভানি। সাংবাদিকরা ‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের’ সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করলে আদভানি বলেন, বিরোধীরা এই সরকারকে ফেলছে না। আর এখন কেন্দ্রের সরকারে কোনো ভিপি সিং-ও নেই। উল্লেখ্য, রাজীব গান্ধীর সরকারের মধ্যে বিদ্রোহ করেছিলেন ভিপি সিং। পরিণতিতে জাতীয় রাজনীতি টালমাটাল চেহারা নিয়েছিল। কংগ্রেসের কোর কমিটি বসছে আগামীকাল শুক্রবার। সোনিয়া গান্ধী নিজেও বৈঠকে থাকবেন। উপনির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ ছাড়াও বিশেষভাবে আলোচনা হবে উত্তর প্রদেশ নির্বাচন নিয়ে। সে রাজ্যে ভোট আগামী বছর। নির্ধারিত সময়ে হলে মে মাসে, ইঙ্গিত আছে ফেব্রুয়ারি-মার্চেই তা হতে পারে। ১৯৮৯-র পর কংগ্রেস উত্তর প্রদেশে নির্বাচনে জেতেনি। এবার কোমর বেঁধে নামায় এরই মধ্যে ১৩৫ আসনের প্রার্থীও চূড়ান্ত করে ফেলেছে। নির্বাচনের জন্য প্রচার ও বিজ্ঞাপনের কাজ বেসরকারি এজেন্সির হাতে দিয়েও দেয়া হয়েছে। উত্তর প্রদেশে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে নির্বাচনে লড়বে কংগ্রেস। দলের রাজ্য নেতাদের এরই মধ্যে বলা হয়েছে, রাহুলের পদ্ধতি অনুকরণ করে গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের বাড়িতে থাকা-খাওয়া করতে হবে। উত্তর প্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত দিগ্বিজয় সিং নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য ১০টি বিশেষ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে আশঙ্কা, কেন্দ্রীয় স্তরে, কেন্দ্রীয় সরকারের স্তরে বড় আকারে কাজের গতি না আনতে পারলে উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাবের মতো রাজ্যে বিধানসভা ভোটে খারাপ ফলই হবে কংগ্রেসের। তার আরেকটি প্রতিক্রিয়া পড়বে ইউপিএ জোটের মধ্যে।
শরিকদের তরফ থেকে কংগ্রেসের ওপর চাপ বাড়বে। লোকসভা ভোটের আগে জোটের মধ্যে অবাঞ্ছিত টানাপড়েন শুরু হবে।

No comments

Powered by Blogger.