পাটগ্রামের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী-যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় তিনি উঠেপড়ে লেগেছেন by শাহেদ চৌধুরী ও মোয়াজ্জেম হোসেন,

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'যুদ্ধাপরাধী, খুনি, রাজাকার ও মানবতাবিরোধীদের রক্ষায় তিনি (খালেদা জিয়া) উঠেপড়ে লেগেছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করে তাদের তিনি জাতীয় সংসদেও বসিয়েছিলেন। কারণ তিনি দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। দেশের কল্যাণেও তার বিশ্বাস নেই। তিনি চান মাথা হেঁট করে চলতে। দুর্নীতি তার নীতি। তিনি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নিয়েই থাকতে চান।'প্ধানমন্ত্রী বুধবার লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সরকারি জসিম উদ্দিন কাজী আবদুল গনি ডিগ্রি কলেজ মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেন।


এর আগে দহগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় ছিটমহলবাসীর সঙ্গে মতবিনিময়, দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন কার্যক্রম, ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও নবনির্মিত দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তিনবিঘা করিডোর পরিদর্শন করেন। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আপনি মানুষের ঘর আগুন দিয়ে কেন ধ্বংস করতে চান? আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ঘরে ঘরে আগুন দেওয়া কেন কারও শান্তিও বিনষ্ট করতে দেওয়া হবে না।' পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণ স্থগিত করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আমলে দুর্নীতির কারণেই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন স্থগিত করেছে। বিএনপির আমলে যোগাযোগমন্ত্রীর দুর্নীতির দুটি কাগজ বিশ্বব্যাংকের কাছে গেছে। তারপরই তারা অর্থায়ন স্থগিত করে।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'তার (খালেদা জিয়া) ছেলেরা যে দুর্নীতি করেছিল, সেটা আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরে প্রমাণিত হয়েছে। কথায় বলে, চোরের মায়ের বড় গলা। ওনার সে বড় গলাই এখন শোনা যাচ্ছে।' শেখ হাসিনার
আগমন উপলক্ষে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহল ছিল আনন্দমুখর। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের ফলে এ দুই জনপদের মানুষ ৬৪ বছর পর বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছে।
সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এই প্রথমবারের মতো দহগ্রামে আসায় ছিটমহলবাসীকে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা যায়। তারা আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান।
পাটগ্রামে জনসভার চিত্রও ছিল অন্যরকম। জনসভাটি মূলত জনসমুদ্রে রূপ নেয়। স্মরণাতীতকালের বৃহত্তম এ জনসভার কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। দুপুরের আগেই জনসভাস্থল কানায় কানায় ভরে যায়। দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতাসহ আশপাশের বিভিন্ন ছিটমহল থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনার জন্য জনসভায় আসেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া লংমার্চ করছেন। কিন্তু এটা লংমার্চ নয়। এটা হলো গাড়ির শোডাউন। উন্নয়নের ধারা স্তব্ধ করতেই বিএনপির এই রোডমার্চ।' খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তিনি ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতি করে কত টাকা কামাই করেছেন তার প্রমাণ আছে। লংমার্চের গাড়ির নম্বরও পাওয়া গেছে। এগুলোর তদন্ত করা হবে।'
শেখ হাসিনা সকালে ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিমানযোগে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখান থেকে তিনি হেলিকপ্টারে সরাসরি লালমনিরহাটের দহগ্রামে আসেন। পরে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি কামাল হোসেন প্রধানের সভাপতিত্বে দহগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক অনুষ্ঠানে ছিটমহলবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী দহগ্রাম থেকে সড়কপথে পাটগ্রামের জনসভাস্থলে আসার সময় তিনবিঘা করিডোর পরিদর্শন করেন। তিনি দহগ্রামের শেষপ্রান্ত (পশ্চিম প্রান্তের গেট) দিয়ে ১৭৮ মিটার তিনবিঘা করিডোর (লিজ নিয়ে ভারতের এ এলাকা ব্যবহার করছে বাংলাদেশ) হেঁটে পাটগ্রামের প্রবেশদ্বার (পূর্বপ্রান্তের গেট) পেরিয়ে পানবাড়ী এলাকায় আসেন।
তিনবিঘা করিডোর
দুপুর পৌনে ১টায় শেখ হাসিনা তিনবিঘা করিডোরে এসে পেঁৗছলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী গোলাম নবী আজাদ ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র প্রসাদ সিং। এ সময় ভারতের উত্তরবঙ্গ বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা রাস্তার দু'পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা নেড়ে এবং ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে। তখন ভারতের জলপাইগুড়ি জেলা থেকে আসা কয়েক নাগরিক উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী তিনবিঘা করিডোরের অভ্যন্তরে ট্রাফিকিং পয়েন্টে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ২০ মিনিট মতবিনিময় এবং উপহার বিনিময় করেন। বিএসএফ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেয়। প্রধানমন্ত্রী তিনবিঘা করিডোর এলাকায় একটি লিচুগাছের চারা রোপণ করেন। পরে তিনি বাংলাদেশের পানবাড়ী সীমান্ত ফাঁড়িতে এসে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তিন বিঘা করিডোর ত্যাগ করার সময় প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় সাংবাদিকদের বলেন, ভারত করিডোরটি খুলে দেওয়ায় দহগ্রামবাসী বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেল। এ জন্য আমরা ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ।
বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরপ্রতীক, ড. গওহর রিজভী, মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এনামুল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ, অ্যাম্বাসেডর অ্যাটলার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, সাংসদ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখরসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার এবং কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হন।
স্থানীয় প্রশাসন চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরির মাধ্যমে জনসভাস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল আওয়ামী লীগের তিন শতাধিক নেতাকর্মীর চৌকস দল। প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে অসংখ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত পোস্টার ও ফেস্টুন শোভা পেয়েছে বিভিন্ন স্থানে। প্রধানমন্ত্রী বিকেলে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'তিনি আমার ধর্ম নিয়ে কথা বলেন। আমি আমার ১৪ পুরুষের নাম বলতে পারব। খালেদা জিয়াকে তার নানার নাম বলতে বললে পারবেন না। তিনি জেনারেল জিয়াউর রহমানের বাবা-মায়ের নাম, এমনকি কোথায় তাদের কবর আছে তাও বলতে পারবেন না। তার দেশের প্রতিও দায়িত্ব ও ভালোবাসা নেই।'
শেখ হাসিনা বলেছেন, 'খালেদা জিয়ার ছেলেরা দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাঠাতে পারছে না। তিনি দুর্নীতি করতে পারছেন না। এটাই তার দুঃখ। মানুষ যখন শান্তিতে থাকেন বিএনপির নেত্রী তখন অশান্তিতে থাকেন।' তিনি আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল করেছে। মানুষ শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। পেট ভরে ভাত খাচ্ছে। এটা খালেদা জিয়ার সহ্য হচ্ছে না। তাই তিনি মানুষের ঘরে ঘরে আগুন জ্বালানোর কথা বলেছেন।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই।' তিনি আরও বলেন, 'ছিটমহলবাসীর ৬৪ বছরের সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। বিএনপি এ সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়ায় বন্দিদশা থেকে এখানকার মানুষ মুক্তি পেয়েছে।' তিস্তা নদীর ভাঙনরোধে কাজ চলছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে উত্তরাঞ্চলে কোনো মঙ্গা থাকে না। বয়স্ক, বিধবা, দুস্থ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়মিত ভাতা দেওয়া হচ্ছে।' লালমনিরহাটে আড়াইশ' প্রাথমিক বিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে উলেল্গখ করে তিনি বলেন, 'লালমনিরহাট সরকারি কলেজে মাস্টার্স কোর্স এবং পাটগ্রাম কলেজে অনার্স কোর্স চালু করা হবে। এ ছাড়া এ জেলায় একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটও স্থাপন করা হবে।'
শেখ হাসিনা লালমনিরহাটের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ ও ছাত্রলীগ নেতা সোহেল হত্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, 'বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মী হত্যা ও নির্যাতনের মামলাগুলো চালু করে তাদের বিচার করা হবে।' ২০০১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে বিএনপি হত্যা ও নির্যাতন করেছে দাবি করে তিনি বলেন, 'আমরা প্রতিশোধ নিতে চাই না। আইন তার আপন গতিতে চলবে।'
তিনি বলেন, 'দেশের প্রতিটি ছিটমহলের সমস্যার সমাধান করা হবে। সীমান্ত পুনর্নির্ধারণের কাজও চলছে।' খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন গঙ্গা ও তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেছে। তিস্তারও ন্যায্য হিস্যা আদায় করা হবে।'
তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'আওয়ামী লীগ দেশের সমস্যার সমাধান করে আর সমস্যা তৈরি করে বিএনপি।' তিনি বর্তমান সরকারের আমলে গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, "আওয়ামী লীগ সরকার চার লাখ মানুষকে সরকারি চাকরি দিয়েছে। বেসরকারি খাতে কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিজনকে এক লাখ টাকা ঋণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। বেশি মূল্যে বিদেশ থেকে চাল কিনে আমরা কম দামে মানুষকে দিচ্ছি। প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনমুখী করতে 'একটি বাড়ি একটি খামার' প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।"
শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা নির্বাচনী ওয়াদায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছিলাম। ইতিমধ্যে ১০ হাজার টাকায় সরকারিভাবে ল্যাপটপ তৈরি করে বাজারজাত শুরু করেছি।' তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে মানুষের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিয়েছে, তেমনি সবার হাতে ল্যাপটপ পেঁৗছে দেওয়া হবে। ইউনিয়ন পরিষদে ওয়েব পোর্টাল খোলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে জেলা ও উপজেলাতে ওয়েব পোর্টাল খোলা হবে। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাই। বিদেশ থেকে ভিক্ষা নয়। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মসম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চাই।'
তিনবিঘায় যা বললেন
শেখ হাসিনা ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও ভারতের গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের বলেন, তিনি তিনবিঘা করিডোরে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টার জন্য তিনবিঘা করিডোর উন্মুক্ত করে দেওয়ায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, '৬৪ বছর পর দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার মানুষ বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছে।' তিনি তিনবিঘা করিডোর উন্মুক্ত করে দেওয়ার ঘটনাকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে অভিহিত করেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ছিটমহল বিনিময় নিয়ে সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে। ইনশাআল্লাহ এ সমস্যার সমাধান হবে। তিস্তার পানি চুক্তিও হবে। ভারতের সঙ্গে বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকলে একদিন সব সমস্যার সমাধান হবে।' ট্রানজিট প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা সবসময়েই কানেক্টিভিটিতে বিশ্বাস করি।'
ঐতিহাসিক কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী : এরশাদ
জনসভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, 'তিনবিঘা চুক্তির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী অসাধ্য সাধন করেছেন। ঐতিহাসিক কাজ করেছেন। দেশের মানুষ তাকে চিরদিন মনে রাখবে।'
'তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন নয়'_ বিরোধী দলের এমন দাবির প্রবল বিরোধিতা করে তিনি বলেন, 'এ ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সংসদ সদস্যের ভোটে। নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তনের বিকল্প নেই। যদি কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবারও ফিরিয়ে আনতে চায় তবে তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়ে সংসদে বিল এনে পরিবর্তন আনতে হবে।'
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে_ এমন অভিযোগ করে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি দেশে সংঘাতের আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, 'দেশের মানুষ শান্তি চায়, সংঘাত চায় না। গণতন্ত্রের জন্য শেখ হাসিনা আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছেন। এ অর্জিত গণতন্ত্র যে কোনো মূল্যে তাকেই রক্ষা করতে হবে।'
পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম নাজুর সভাপতিত্বে সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, রংপুর মহানগর শাখার সভাপতি আবুল মনসুর, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

No comments

Powered by Blogger.