বোর্ড সভাপতির নির্দেশেই বাদ আশরাফুল!

দীর্ঘদিনের কানাঘুষা_মোহাম্মদ আশরাফুল কেন দলে, অনুমোদনের জন্য দল হাতে নিয়ে নাকি নির্বাচকদের এ প্রশ্নটাই করে থাকেন বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল। সরকারিভাবে ঘোষণা আসেনি বিধায় এটা এত দিন গুঞ্জনেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার প্রতিক্রিয়ায় মোহাম্মদ আশরাফুল যা বলেছেন, তাতে ওই গুঞ্জনের যোগ আছে। নির্বাচক কিংবা টিম ম্যানেজমেন্ট নয়, বোর্ড সভাপতির নির্দেশেই নাকি টেস্ট দলে জায়গা হয়নি_দাবি আশরাফুলের। যে তথ্য নাকি তিনি জেনেছেন প্রধান নির্বাচক আকরাম খানের কাছ থেকে।


এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের চাকরির কারণে দেশে তাঁর খুব একটা থাকাই হয় না। তবে আমিনুল ইসলাম ছুটি-ছাটায় দেশে এলে এ সাবেক অধিনায়কের কাছে মোহাম্মদ আশরাফুলের ছুটে যাওয়াটা রুটিনই হয়ে গেছে একরকম। প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হলেও ১০ বছরের ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময়ই ব্যাট হাতে দুঃসময় পার করেছেন আশরাফুল এবং সেসব দুঃসময়ে বারবারই গুরুজ্ঞান করে ছুটে গেছেন আমিনুলের কাছে। রানে ফেরার জন্য কত পরামর্শ যে পেয়েছেন! কিন্তু দলের বাইরের চাপে পিষ্ট হতে হতে ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্রণা কি কখনো দেশের প্রথম বিশ্বকাপ অধিনায়কের কাছে চেয়েছিলেন ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান?
এগারো বছর আগে-পরে এঁরা দুজনেই যে সেরকম চাপে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়েছেন। এখানে তাঁদের মধ্যে অদ্ভুত মিল আবিষ্কার করে থাকলে পার্থক্যটাও জেনে নিন। আমিনুল চাপের মুখে পারফরম করেছিলেন আর আশরাফুল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যর্থতায় নিমজ্জিত হয়েছেন। দলের বাইরের চাপ মাথায় নিয়ে ২০০০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে ইতিহাসই গড়ে ফেলেছিলেন আমিনুল। কোনো দেশের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরির মাত্র তৃতীয় নজির স্থাপন করে খেলেছিলেন ১৪৫ রানের এক অনবদ্য ইনিংস। সে ইনিংস খেলার পথে ফিফটি করেই শোনা কথাটা এখনো তাঁর কানে বাজে। উইকেটে তাঁর সঙ্গী বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমানের কথায় ঘোরলাগা ভাব কাটিয়ে বাস্তবে ফিরেছিলেন তিনি, 'আপনাকে একাদশের বাইরে রাখার জন্য যাঁরা চিরকুট পাঠিয়েছিলেন, এ ফিফটি তাঁদের গালে চপেটাঘাত।'
১৫ অক্টোবর মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পারফরম করে সেরকমই এক চপেটাঘাত করতে পারতেন আশরাফুলও। কিন্তু হায়! এ আশরাফুল যে চাপের মুখে ঘুরে দাঁড়াতে জানেন না। জানেন কেবল ভেঙে পড়তেই। ব্যাট হাতে জবাব দেওয়ার বদলে যাঁকে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে অন্যায়ভাবে টেস্ট দল থেকে ছিটকেও যেতে হয়। সেই ম্যাচে দলের বাইরের চাপে তাঁকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়ার কথা স্বীকার করেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল নিজেও। তবে চিরকুট আকারে নয়, টেলিফোন করে তাঁকে একাদশের বাইরে রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছিল বলে কাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন এ ব্যাটসম্যান, 'প্রধান নির্বাচক আকরাম ভাই আমাকে ফোন করে ড্রপ যেতে বলেন।'
তার পরও ওই ম্যাচ খেলার পেছনে আশরাফুলের কঠোর অবস্থানই ভূমিকা রেখেছে বলে দাবি একাধিক সূত্রের। বোর্ড সভাপতি চাইছেন না বলেই তাঁকে বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান আকরাম খান। তখন আশরাফুল অবসরের ঘোষণা দিয়ে সব কিছু প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়াতেই নাকি সেদিন খেলতে পেরেছেন বলে জানিয়েছে কয়েকটি সূত্র। যদিও আশরাফুল বলছেন অন্য রকম, 'নাহ, আমি অবসরের কথা বলিনি। এখন অবসর নিতে চাইব কোন দুঃখে। আমার সামনে আরো কত দিন পড়ে আছে।' অবশ্য তাঁকে একাদশে রাখার বিষয়ে ক্ষমতাধরদের হস্তক্ষেপটা এবার প্রকাশ্যই করে দিয়েছেন আশরাফুল, ''আকরাম ভাই জানান যে বোর্ড সভাপতি নাকি আমাকে দলে চাইছেন না। ওই ম্যাচটা না খেললে আমাকে টেস্ট দলে রাখার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। কিন্তু আমি বলে দিই, 'টেস্ট না খেলালে না খেলাবেন। আমি ওয়ানডেই খেলব।' এরপর তৃতীয় ম্যাচে তো আমাকে রাখাই হলো না।'' যদিও প্রধান নির্বাচক আকরাম এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েই বলছেন, 'এটা মিথ্যা কথা। বোর্ড যদি আশরাফুলকে না-ই চাইত, তাহলে জিম্বাবুয়ে সফর বা এই সিরিজের দলেও সে সুযোগ পেত না। কারণ জিম্বাবুয়েতে যাওয়ার আগেও আশরাফুলের এমন কোনো পারফরম্যান্স ছিল না।' আশরাফুলকে টেলিফোন করা প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, 'দলের সবার সঙ্গেই আমি আলাদা আলাদাভাবে টেলিফোনে কথা বলি, ভালো খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। একই কাজ আশরাফুলের ক্ষেত্রেও করেছিলাম। ওর সঙ্গে টেলিফোনে যেমন কথা হয়েছে, তেমনি সামনা-সামনিও হয়েছে, এখন খারাপ খেলছে বলেই হয়তো এসব বলে বেড়াচ্ছে।'
যে ম্যাচে তিনি গোঁ ধরে থাকায় রাখা হয়েছিল, সেই দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দলের বিপদ আরো ঘনীভূত করে আউট হয়েছেন আশরাফুল। যখন নেমেছিলেন, তখন ১ রানে ওপেনার ইমরুল কায়েসকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ওই স্কোরেই তামিমও আউট হওয়ার পর যখন তাঁর আরো দায়িত্ব নিয়ে খেলার কথা, তখন তিনি বাজে শটে ফিরেছেন সাজঘরে। দলকে ১ রানে ৩ উইকেট হারানো দলে পরিণত করে দিয়ে আসায় তাঁর চাপে ভেঙে পড়াটা প্রমাণিত! তবে রান না করলেই বাদ_ম্যাচের আগে কাউকে বিশেষভাবে এটা বলে দেওয়া মানেই তাঁর ওপর চাপের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া।
ক্রিকেট মনস্তত্ত্বে এমনটাই লেখা আছে।

No comments

Powered by Blogger.