অবকাঠামো অর্থায়নে গঠিত হলো বিআইএফএফ by মজুমদার বাবু

বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অন্যান্য বৃহৎ অবকাঠামো খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিন্যান্স ফান্ড নামে ৩০তম ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে চলতি সপ্তায়ই শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন-১৯৯৩-এর ক্ষমতাবলে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট কম্পানি লিমিটেডসহ (ইডকোল) এ নিয়ে সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানাধীন দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২১ মার্চ কম্পানি আইন ১৯৯৪-এর অধীন একটি সীমিত দায় কম্পানি হিসেবে বিআইএফএফ নিবন্ধিত হয়।


এ কম্পানির প্রাথমিক মূলধন হিসেবে সরকার ২০০৯-১০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) উদ্যোগের আওতায় ইক্যুইটি বিনিয়োগ বাবদ বরাদ্দ করা এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কাজ হবে বিভিন্ন ধরনের বন্ড বা ঋণ ইন্সট্রুমেন্ট ছাড়া, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শেয়ারের মতো অর্থায়নের বিভিন্ন পথ ধরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। সরকার প্রয়োজনবোধে পরবর্তী সময়ে বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ বিআইএফএফের ইক্যুইটি বা শেয়ার হিসেবে বিনিয়োগ করবে। বিআইএফএফের জন্য গত অর্থবছরের বাজেটে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট বক্তৃতায়ই ঘোষণা করেছিলেন। চলতি অর্থবছরে আরো আড়াই হাজার কোটি টাকা এ তহবিলে দেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি। বাজেট বক্তৃতায় বিআইএফএফ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, পিপিপি কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে এবং এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিআইএফএফ গঠন করা হয়েছে। এটিকে ইতিমধ্যেই কম্পানিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে এবং চলতি অর্থবছর থেকে এটি বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, পিপিপির জন্য তহবিল গঠন করতে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বন্ড কিংবা ইক্যুইটি ইস্যু করে প্রতিষ্ঠানটি তহবিল গঠন করবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় বন্ডে ডিভিডেন্ড ইল্ড দেড়-দুই শতাংশ মাত্র। সেদিক থেকে আমাদের দেশের অবস্থান অনেক আশাব্যঞ্জক। যদি ৪ থেকে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে বন্ড ইস্যু করা হয়, তাহলে বিপুল পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। বিদ্যুৎ উৎপাদন, জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, পরিবহন অবকাঠামোর উন্নয়ন ইত্যাদির মতো বৃহৎ ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে আকৃষ্ট করার জন্য সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ (পিপিপি) কাঠামোর ভিত্তিতে বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (বিইপিআইএফ) গঠনের প্রাথমিক প্রক্রিয়াও গ্রহণ করা হয়েছিল।
এসব বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা হয়। আলোচনাকালে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির পাশাপাশি সড়ক ও রেলযোগাযোগ, নৌ-বন্দর, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ইত্যাদি অবকাঠামো খাতেও একইভাবে বিনিয়োগের বিপুল চাহিদা রয়েছে। যার জন্যও বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা প্রয়োজন। তাই বিভিন্ন খাতভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন তহবিল গঠন করলে অনুকূল বরাদ্দ না পাওয়া এবং পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে ভিন্ন ভিন্ন তহবিল গঠন না করে সব বৃহৎ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের জন্য একক তহবিল হিসাবে বিআইএফএফ গঠনের বিষয়ে মতৈক্য হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩১ ডিসেম্বরভিত্তিক তথ্যমতে, ২৯টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১১৪টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে ৫৯টি শাখা ঢাকায়, ২২টি চট্টগ্রামে এবং ৩৪টি অন্যান্য জেলা শহরে। ২৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূলধন ও রিজার্ভের পরিমাণ চার হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদ ও আমানতের পরিমাণ যথাক্রমে ২৫ হাজার ১৫২ কোটি ও ৯ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। বর্তমানে ২৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ১৭ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা।

No comments

Powered by Blogger.