সিলেটে ছাত্রলীগকর্মী খুন-সংঘর্ষ উত্তেজনা ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
সিলেট মহানগরে ছাত্রলীগকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় ছাত্রদলকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ছুরিকাঘাতে নিহত হন ছাত্রলীগকর্মী আল মামুন শিহাব। এ হত্যাকাণ্ডের জের ধরে ওই রাতেই নগরের বিভিন্ন স্থানে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়। এ সময় অর্ধশতাধিক দোকান ও যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদিকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার রাতে এবং গতকাল দুপুরে ব্যবসায়ীরা অবরোধ, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।
বিকেলে তালতলা এলাকায় ব্যবসায়ী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অন্তত ১৫-১৬টি গুলি করে।
নিহত আল মামুন শিহাব নেত্রকোনা সদর উপজেলার রাউখা গ্রামের আবু জাহেরের ছেলে। তাঁদের পরিবার নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার মেঘনা-বি-১৪ নম্বর বাসার অধিবাসী। শিহাব মদন মোহন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। তিনি ছাত্রলীগের বিধানগ্রুপের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। জিন্দাবাজারের কাজী ম্যানশনে শিহাবের বাবার কাপড়ের দোকান রয়েছে।
শিহাব হত্যার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার রাতেই ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বাসা, অর্ধশতাধিক গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর করে। তারা অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল এবং একটি বাসায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। নগরীর তালতলা, মেডিক্যাল এলাকাসহ আরো কয়েকটি এলাকায় ছাত্রদল ও ছাত্রলীগকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত : গত সোমবার ছাত্রলীগের বিধান গ্রুপের ক্যাডাররা ছাত্রদলের পুরান লেন গ্রুপের কর্মী আজাদ হোসেন ও তিলক চৌধুরীকে অপহরণ করে তাদের আস্তানায় নিয়ে নির্যাতন চালায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার জের ধরে দুই দিন ধরে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। মঙ্গলবার বিকেলে আজাদ ও তিলককে আহত করার প্রতিবাদে ছাত্রদলের পুরান লেন গ্রুপ নগরীতে মিছিল করে। মিছিলের পর রাতে শিহাবের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগকর্মীদের দাবি, ছাত্রদলের পুরান লেন গ্রুপ শিহাবকে খুন করেছে। তবে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও পুরান লেন গ্রুপের নেতা নূরুল আলম সিদ্দিকী খালেদ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ছাত্রদলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, অন্য কেউ এ ঘটনা ঘটাতে পারে।
জানা যায়, রাত ৯টার দিকে শিহাব কাজী ম্যানশনে নিজেদের দোকান থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়াপাড়ার বাসায় ফিরছিলেন। নজরুল একাডেমীর সামনে আসামাত্র সশস্ত্র যুবকরা তাঁর ওপর হামলা চালায়। তারা তাঁকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে চলে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পৌনে ১০টার দিকে শিহাব মারা যান।
ছাত্রলীগকর্মীদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুর : শিহাব নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। রাত ১০টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তাঁরা নানাভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হামলা-ভাঙচুরের আগ মুহূর্তে ছাত্রলীগের ৩০-৪০ জন কর্মী সশস্ত্র অবস্থায় নগরীর জিন্দাবাজার পয়েন্টে এসে ছাত্রদল ক্যাডারদের নাম ধরে গালাগাল করে। একপর্যায়ে তারা সেখানকার বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করে। ভাঙচুরের পর বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে রাস্তার পাশে রাখা ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও ৯টি মোটরসাইকেলে অগি্নসংযোগ করে। এ সময় তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পান ব্যবসায়ীরা। প্রায় আধঘণ্টাব্যাপী ভাঙচুর চালানোর পর ছাত্রলীগকর্মীরা মিছিল করে জিন্দাবাজার পয়েন্ট ত্যাগ করে।
পরে তারা নগরীর তালতলা, দাঁড়িয়াপাড়া, জামতলা, রিকাবিবাজার ও ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকায়ও ব্যাপক ভাঙচুর করে। দাঁড়িয়াপাড়ায় ছাত্রদল নেতা মাধব চৌধুরী ও তালতলাস্থ ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতা মহিবুল হক রাহির বাসায় ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। একই সময়ে দাঁড়িয়াপাড়ার ছাত্রদল নেতা চপলের বাসায় আগুন লাগিয়ে দিলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নেভান।
ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ : জিন্দাবাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক মঙ্গলবার রাতেই ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমে আসেন। তাঁরা জিন্দাবাজার পয়েন্ট অবরোধ করে রাখেন। এ সময় ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত ১২টা পর্যন্ত এ অবস্থা চলে। খবর পেয়ে পুলিশ-র্যাব জিন্দাবাজার এলাকায় পেঁৗছায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে ব্যবসায়ীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।
গতকাল দুপুরে ক্ষতিগ্রস্তসহ জিন্দাবাজারের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা দ্বিতীয় দফা প্রতিবাদ শুরু করেন। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা দোকানপাট বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানান তাঁরা। পরে তাঁরা জিন্দাবাজার পয়েন্টে মানববন্ধন পালন করেন।
জিন্দাবাজার ব্যবসায়ী ফোরাম ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ফিজা অ্যান্ড কোং, লোকমান স্টোর, ন্যাশনাল সুজসহ ১৭টি দোকানে ভাঙচুর করা হয়েছে। লোকমান স্টোরের লক্ষাধিক টাকা লুট করা হয়েছে।
মানববন্ধন চলাকালে সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিলে ব্যবসায়ীরা কর্মসূচি স্থগিত করেন।
বিকেলে নগরীর তালতলা এলাকায় ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ বাধে। এতে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার নওরোজ আহমদসহ বেশ কজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৫-১৬টি গুলি করে। এ সময় পুলিশ একজনকে আটক করে। তবে তার নাম জানা যায়নি।
লাশের দাফন সম্পন্ন : ছাত্রলীগ নেতা শিহাবের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুরে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুপুর দেড়টায় ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁর লাশ দাঁড়িয়াপড়ার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। আসরের নামাজের পর মরহুমের লাশ মানিক পীরের টিলায় দাফন করা হয়।
মামলা ও গ্রেপ্তার : শিহাব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা। পুলিশ এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন রায়নগরের মৃত ইউনুস মিয়ার ছেলে জসিম উদ্দিন (৩৪), শাহী ঈদগাহের মৃত তাহির আলীর ছেলে মিনহাজ উদ্দিন শাহান (২৫), একই এলাকার মৃত আনা মিয়ার ছেলে সাবি্বর আহমদ রাসেল (২৬), রায়নগর রাজবাড়ীর মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে শাহিনূর রহমান সুজন (৩৫) ও উত্তর বারুতখানার সিরাজুল ইসলামের ছেলে জাকির হোসেন সায়মন (২১)।
ছাত্রলীগের শোক মিছিল ও প্রতিবাদ সভা : শিহাব হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে ছাত্রলীগ নগরীতে শোক মিছিল করেছে। রেজিস্ট্রি অফিসের মাঠ থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদার। বক্তব্য দেন আওয়ামী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন শামীম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ খান প্রমুখ।
নগরীতে কড়া নিরাপত্তা : উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নগরীতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সবকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (সদর দপ্তর) রেজাউল করিম জানান, যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ঠেকাতে পুলিশকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
নিহত আল মামুন শিহাব নেত্রকোনা সদর উপজেলার রাউখা গ্রামের আবু জাহেরের ছেলে। তাঁদের পরিবার নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার মেঘনা-বি-১৪ নম্বর বাসার অধিবাসী। শিহাব মদন মোহন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। তিনি ছাত্রলীগের বিধানগ্রুপের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। জিন্দাবাজারের কাজী ম্যানশনে শিহাবের বাবার কাপড়ের দোকান রয়েছে।
শিহাব হত্যার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার রাতেই ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বাসা, অর্ধশতাধিক গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর করে। তারা অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল এবং একটি বাসায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। নগরীর তালতলা, মেডিক্যাল এলাকাসহ আরো কয়েকটি এলাকায় ছাত্রদল ও ছাত্রলীগকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত : গত সোমবার ছাত্রলীগের বিধান গ্রুপের ক্যাডাররা ছাত্রদলের পুরান লেন গ্রুপের কর্মী আজাদ হোসেন ও তিলক চৌধুরীকে অপহরণ করে তাদের আস্তানায় নিয়ে নির্যাতন চালায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার জের ধরে দুই দিন ধরে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। মঙ্গলবার বিকেলে আজাদ ও তিলককে আহত করার প্রতিবাদে ছাত্রদলের পুরান লেন গ্রুপ নগরীতে মিছিল করে। মিছিলের পর রাতে শিহাবের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগকর্মীদের দাবি, ছাত্রদলের পুরান লেন গ্রুপ শিহাবকে খুন করেছে। তবে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও পুরান লেন গ্রুপের নেতা নূরুল আলম সিদ্দিকী খালেদ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ছাত্রদলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, অন্য কেউ এ ঘটনা ঘটাতে পারে।
জানা যায়, রাত ৯টার দিকে শিহাব কাজী ম্যানশনে নিজেদের দোকান থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়াপাড়ার বাসায় ফিরছিলেন। নজরুল একাডেমীর সামনে আসামাত্র সশস্ত্র যুবকরা তাঁর ওপর হামলা চালায়। তারা তাঁকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে চলে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পৌনে ১০টার দিকে শিহাব মারা যান।
ছাত্রলীগকর্মীদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুর : শিহাব নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। রাত ১০টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তাঁরা নানাভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হামলা-ভাঙচুরের আগ মুহূর্তে ছাত্রলীগের ৩০-৪০ জন কর্মী সশস্ত্র অবস্থায় নগরীর জিন্দাবাজার পয়েন্টে এসে ছাত্রদল ক্যাডারদের নাম ধরে গালাগাল করে। একপর্যায়ে তারা সেখানকার বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করে। ভাঙচুরের পর বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে রাস্তার পাশে রাখা ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও ৯টি মোটরসাইকেলে অগি্নসংযোগ করে। এ সময় তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পান ব্যবসায়ীরা। প্রায় আধঘণ্টাব্যাপী ভাঙচুর চালানোর পর ছাত্রলীগকর্মীরা মিছিল করে জিন্দাবাজার পয়েন্ট ত্যাগ করে।
পরে তারা নগরীর তালতলা, দাঁড়িয়াপাড়া, জামতলা, রিকাবিবাজার ও ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকায়ও ব্যাপক ভাঙচুর করে। দাঁড়িয়াপাড়ায় ছাত্রদল নেতা মাধব চৌধুরী ও তালতলাস্থ ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতা মহিবুল হক রাহির বাসায় ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। একই সময়ে দাঁড়িয়াপাড়ার ছাত্রদল নেতা চপলের বাসায় আগুন লাগিয়ে দিলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নেভান।
ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ : জিন্দাবাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক মঙ্গলবার রাতেই ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমে আসেন। তাঁরা জিন্দাবাজার পয়েন্ট অবরোধ করে রাখেন। এ সময় ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত ১২টা পর্যন্ত এ অবস্থা চলে। খবর পেয়ে পুলিশ-র্যাব জিন্দাবাজার এলাকায় পেঁৗছায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে ব্যবসায়ীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।
গতকাল দুপুরে ক্ষতিগ্রস্তসহ জিন্দাবাজারের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা দ্বিতীয় দফা প্রতিবাদ শুরু করেন। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা দোকানপাট বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানান তাঁরা। পরে তাঁরা জিন্দাবাজার পয়েন্টে মানববন্ধন পালন করেন।
জিন্দাবাজার ব্যবসায়ী ফোরাম ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ফিজা অ্যান্ড কোং, লোকমান স্টোর, ন্যাশনাল সুজসহ ১৭টি দোকানে ভাঙচুর করা হয়েছে। লোকমান স্টোরের লক্ষাধিক টাকা লুট করা হয়েছে।
মানববন্ধন চলাকালে সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিলে ব্যবসায়ীরা কর্মসূচি স্থগিত করেন।
বিকেলে নগরীর তালতলা এলাকায় ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ বাধে। এতে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার নওরোজ আহমদসহ বেশ কজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৫-১৬টি গুলি করে। এ সময় পুলিশ একজনকে আটক করে। তবে তার নাম জানা যায়নি।
লাশের দাফন সম্পন্ন : ছাত্রলীগ নেতা শিহাবের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুরে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুপুর দেড়টায় ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁর লাশ দাঁড়িয়াপড়ার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। আসরের নামাজের পর মরহুমের লাশ মানিক পীরের টিলায় দাফন করা হয়।
মামলা ও গ্রেপ্তার : শিহাব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা। পুলিশ এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন রায়নগরের মৃত ইউনুস মিয়ার ছেলে জসিম উদ্দিন (৩৪), শাহী ঈদগাহের মৃত তাহির আলীর ছেলে মিনহাজ উদ্দিন শাহান (২৫), একই এলাকার মৃত আনা মিয়ার ছেলে সাবি্বর আহমদ রাসেল (২৬), রায়নগর রাজবাড়ীর মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে শাহিনূর রহমান সুজন (৩৫) ও উত্তর বারুতখানার সিরাজুল ইসলামের ছেলে জাকির হোসেন সায়মন (২১)।
ছাত্রলীগের শোক মিছিল ও প্রতিবাদ সভা : শিহাব হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে ছাত্রলীগ নগরীতে শোক মিছিল করেছে। রেজিস্ট্রি অফিসের মাঠ থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদার। বক্তব্য দেন আওয়ামী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন শামীম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ খান প্রমুখ।
নগরীতে কড়া নিরাপত্তা : উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নগরীতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সবকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (সদর দপ্তর) রেজাউল করিম জানান, যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ঠেকাতে পুলিশকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
No comments