যমুনার চরাঞ্চলে বেড়েই চলছে শিশুশ্রম
জামালপুরের
ইসলামপুরের যমুনার চরাঞ্চল গুলোতে শিশুশ্রমের আদিক্য দিন দিন বেড়েই চলছে।
এতে চরাঞ্চলের হাজার হাজার শিশু অশিক্ষার মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠছে। এসব শিশুর
ভবিষৎ কি তা কেউ জানে না। ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভা নিয়ে ইসলামপুর উপজেলা
গঠিত। দেশের দু’টি জাতীয় নদ-নদী উপজেলাটির বুক চিড়ে প্রবাহিত হয়েছে। একটি
যমুনা নদী অন্যটি ব্রহ্মপুত্র নদ। যে কারণে এটি দেশের দরিদ্রমত উপজেলা
গুলোর মধ্যে অন্যতম উপজেলা। দু’টি নদ-নদী উপজেলাটিকে ত্রি-খন্ডে বিভক্ত করে
রেখেছে। নদী ভাঙন, বন্যা খড়াসহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগের সাথে মোকাবেলা
করে এ উপজেলার মানুষকে বেঁেচ থাকতে হয়। যে কারণে এ অঞ্চলের শিশুদের ঘাড়ে
চেপে বসেছে দারিদ্রতার অভিশাপ। এতে অন্ধকারে ঢাকা পড়ছে তাদের আগামী উজ্ঝল
ভবিষৎ। রাক্ষুসী যমুনা নদী উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নের অধিকাংশ
গ্রাম গ্রাস করেছে। এতে প্রায় ৩০টি দূর্গম চরাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। চর গলোর
মধ্যে মুন্নিয়া, বরুল, জিগাতলা, শিলদহ, বেরকুশা, সিন্দুরতলী, সাপধরী,
কাসারী ডোবা, চর শিশুয়া, কোদাল ধোঁয়া ও বিশরশি গ্রাম অন্যতম। এ সব চরে
শিক্ষার আলো তো দুরের কথা সভ্যতার আলোও সঠিক ভাবে পৌছাঁয়নি। স্থানীয়
পরিসংখ্যান ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, এ সব গ্রামে ২০-২৫ হাজার শিশু রয়েছে
যাদের অধি কাংশই স্কুলে যায় না। শিশুরা হাটতে শিখলেই তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়
রোজগারের পথে। এদের মধ্যে মুন্নিয়া গ্রামের হোটেল শ্রমিক আব্দুল করিম (৮)
এবং ভ্যান গাড়ি চালক আব্বাছ (১১)সহ চরাঞ্চলের শত শত শিশু সকাল হলেই বেড়িয়ে
পড়ে রোজগারের পথে। ফলে যমুনার পাড়ের শিশুরা অশিক্ষার মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠছে।
এসব শিশুর ভবিষৎ কি তা কেউ জানে না। স্থানীয় শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা
যায়,যমুনার চরাঞ্চলের প্রায় ৩০টি গ্রামে ২০-২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি দাখিল মাদরাসাসহ প্রায় ৩০টি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল
মাদরাসাটিতে শিক্ষার পরিবেশ কিছুটা থাকলেও ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
গুলো চলছে নামে মাত্র। এ সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া লেখার কোন বালাই নেই।
এলাকাবাসী জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর বেশির ভাগ শিক্ষক ঢাকা,
ময়মনসিংহ, জামালপুর ও ইসলামপুর উপজেলা সদরে বসবাস করে কোচিং বাণিজ্য
চালচ্ছে। তারা কর্মক্ষেত্রে আসেন কালেভদ্রে। এলাকার কতিপয়
শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতি সামান্য বেতনে প্রক্সি শিক্ষক হিসাবে
কাজ করছেন। কিছু কিছু স্কুল চলছে নৈশপ্রহরী কাম পিয়ন দিয়ে। এরমধ্যে সাপধরী
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম উপজেলা সদরের পাটনি পাড়ায়
বছরের পর বছর ধরে কোচিং চালাচ্ছেন। ওই স্কুলের শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছে
নৈশপ্রহরী। এমনেতেই যমনার চরাঞ্চলের শিশুদের শিক্ষায় আগ্রহ নেই তার মধ্যে
যারাও স্কুলে আশে স্কুল গুলোতে শিক্ষক না আসায় ছাত্রছাত্রীরা হৈহুল্লুড করে
বাড়ি ফিরে যায়। সাপধরী উইপি চেয়ারম্যান ও সাপধরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান
শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, চরাঞ্চলের শিশুদের শিক্ষিত করতে হলে শিশুশ্রম ও
বাল্য বিবাহ বন্ধের পাশাপাশি চরের মানুষের অর্থনৈতিক মক্তি আনতে
হবেএলাবাসীর অভিযোগ, যমুনার চরের স্কুল গুলোতে শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তদের
কোন তদারকি নেই। যে কারণে শিক্ষকরা চাকরি না করে সরকারের লাখ লাখ টাকা
হাতিয়ে নিচ্ছে। এব্যাপরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ
কামারুজ্জাম নয়া দিগন্তকে বলেন, কয়েক জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হয়েছে। এতে শিক্ষর পরিবেশ অনেকটা ফিরে এসেছে। সাপধরী উইপি চেয়ারম্যান ও
সাপধরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, চরাঞ্চলের
শিশুদের শিক্ষিত করতে হলে শিশুশ্রম ও বাল্য বিবাহ বন্ধের পাশাপাশি চরের
মানুষের অর্থনৈতিক মক্তি আনাসহ শিক্ষকদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, যমুনার চরের
স্কুলগুলো অত্যান্ত দূর্গম অঞ্চলে হওয়ার প্রশাসনের অনেকটা নাগালের বাইরে এ
ছাড়া এলাকাবাসীও অতিদরিদ্রতার মধ্যে বসবাস করেন। ফলে এখানে শিশুশ্রম বন্ধ
করতে এবং শিক্ষর পরিবেশ সৃষ্টি করতে সামাজিক সচেনতা বাড়াতে হবে।
No comments