৭ মার্চের সংবাদ পরিবেশক by এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া
আজ
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের
শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মুক্তিকামী মানুষকে
পাকিস্তানি উপনিবেশবাদের অর্গল ভেঙে ‘জেগে ওঠার ডাক’ দেন। রাজধানীর
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দরাজকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও
দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ, এবারের সংগ্রাম মুক্তির
সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা
আসলে এটাই। দৈনিক ইত্তেফাকে খবরটি পরিবেশন করেছিলেন আমির হোসেন। তিনি তখন
দৈনিকটির রিপোর্টার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের বিট
(খবর পরিবেশন) করতেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার নিউজও কভার করতেন তিনি।
এছাড়া
আইয়ুব খানসহ তৎকালীন পাকিস্তানি নেতাদের নানা কর্মসূচির খবরাখবর কভার
করতেন। আওয়ামী লীগ বিট করার সুবাদে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে
তার। গতকাল মঙ্গলবার (৬ মার্চ ২০১৮) ছিল প্রচারবিমুখ, নির্লোভ, নিরহংকার,
অকুতোভয় এই সাংবাদিকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। নীরবেই কেটে গেল দিবসটি।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন তিনি। এ পেশাকে মনেপ্রাণে গ্রহণ
করেছিলেন। জীবনে তেমন কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না তার। পেশা, পদ-পদবি ভাঙিয়ে
বিশেষ কোনো ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্র থেকে ‘ফায়দা’ নেয়া তার চরিত্রে ছিল
না। সর্বশেষ তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক ‘সান’-এর ভারপ্রাপ্ত
সম্পাদক ছিলেন। ২০১৭ সালের ৬ মার্চ, দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত
হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার
কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেনের জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৯
ডিসেম্বর বর্তমান মাদারীপুর জেলার শিবচরের নিভৃত পল্লীতে। রাজনীতিতে
হাতেখড়ি ছাত্রজীবনে। মাদারীপুরে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে নামডাক ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘাতকের হাতে শহীদ হওয়ার
পর অনেকের মতো তিনিও বৈরী পরিবেশে পড়েন। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার
ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমির হোসেন তার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে বিভিন্ন পত্রিকা ও
বার্তা সংস্থায় কাজ করেছেন। বার্তা সংস্থা ‘পিপিএ’-তে যোগ দেয়ার পর ‘দৈনিক
ইত্তেফাক’, ‘বাংলার বাণী’, ‘জয় বাংলা’, ‘বাংলাদেশ টুডে’ এবং বিভিন্ন
সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ডাকে
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। বাংলার দামাল ছেলেরা দেশ স্বাধীন করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে
পড়ে। আমির হোসেন তখন ‘বাংলার বাণী’ (অধুনালুপ্ত) এবং সাপ্তাহিক ‘জয়
বাংলা’র সম্পাদক। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংবাদ পাঠক এবং সংবাদ
বিশ্লেষকের দায়িত্বও পালন করেন। লেখালেখির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য
ভূমিকা রাখেন। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের
সেক্রেটারি ছিলেন আমির হোসেন। তিনি বহু জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখেছেন। লিখেছেন
বেশ কয়েকটি বই, যা ‘রচনাসমগ্র’ হিসেবে বের করা যেতে পারে।
এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া : সাংবাদিক
emdadhb@yahoo.com
এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া : সাংবাদিক
emdadhb@yahoo.com
No comments