শ্রীলঙ্কায় পুলিশ ও দাঙ্গাকারীদের সংঘর্ষ
শ্রীলঙ্কার
ক্যান্ডিতে চলমান বৌদ্ধ-মুসলিম দাঙ্গা ঠেকাতে দেশজুড়ে জারি করা ১০ দিনের
জরুরি অবস্থার মধ্যেই আবারও দাঙ্গাকারীরা মাঠে নামে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ
করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে। দেশটির এ অবস্থায় যুক্তরাজ্য ও
যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাশেকারা
আজ বুধবার বলেন, ক্যান্ডির শহরতলি ম্যানিকিন্নাতে গতকাল মঙ্গলবার রাতভর এ
সংঘর্ষ চলে। এতে অন্তত তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কারফিউ ভঙ্গ ও
অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির দায়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কলম্বো থেকে
১১৫ মাইল পূর্বে ক্যান্ডির সব স্কুল আজ বন্ধ রাখা হয়েছে। শহরে কারফিউর
পাশাপাশি ভারী অস্ত্রবাহী পুলিশ মোতায়েন থাকবে। মূলত চা-চাষ ও বৌদ্ধ
প্রত্নতত্ত্বের জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় ক্যান্ডি শহর। এ অবস্থায়
যুক্তরাজ্য সরকার শ্রীলঙ্কায় থাকা নিজের দেশের নাগরিকদের প্রতি ভ্রমণ
সতর্কতা জারি করেছে। তাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে, সব ধরনের বিক্ষোভ ও
মিছিল এড়িয়ে চলতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আদেশ মেনে চলতে বলা
হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শ্রীলঙ্কায় থাকা নিজ দেশের
নাগরিকদের পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ থাকতে স্থানীয় গণমাধ্যমে নজর রাখতে
বলেছে। গত দুই দিনের এ দাঙ্গায় ১৫০টির বেশি বাড়ি, দোকান ও যানবাহন পুড়িয়ে
দেওয়া হয়েছে। দুজন নিহত হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহে। ক্যান্ডির
মুসলিম মালিকানাধীন দোকানে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী সিংহলিদের খাবারে গর্ভনিরোধক
কিছু মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে—এ অভিযোগ তুলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ
জনতা স্থানীয় একটি মসজিদেও হামলা চালায়। সরকার এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন
বলে নাকচ করে দেয়। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ
দেয়। এরই মধ্যে ক্যান্ডিতে এক সিংহলি খুন হন। এর জের ধরে গত সোমবার
মুসলমানদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু কারফিউ না মেনে সহিংসতা
চলতে থাকে। জ্বালিয়ে দেওয়া বাড়ি থেকে গতকাল একজন মুসলিমের লাশ উদ্ধার করে
পুলিশ।
এতে সহিংসতা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কারফিউর মেয়াদ বাড়ানোর
পাশাপাশি ভারী অস্ত্রবাহী বিশেষ টাস্কফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ২০
জনের বেশি মানুষকে আটক এবং তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। গতকাল শ্রীলঙ্কার
পার্লামেন্ট মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের
এই দেশের ১০ শতাংশ মুসলিম। এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রী লক্ষ্মণ
কিরেইলা পার্লামেন্টে বলেন, ‘বর্বর এই ঘটনার জন্য আমরা মুসলিম সম্প্রদায়ের
কাছে ক্ষমা চাইছে।’ নগরপরিকল্পনামন্ত্রী রাউফ হাকিম দাঙ্গার এ ঘটনাকে
‘নিরাপত্তার ব্যাপক ঘাটতি’ বলে উল্লেখ করেন এবং এ ঘটনার জন্য দায়ী
ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। সরকারি বাহিনীর সঙ্গে
তামিল বিদ্রোহীদের গৃহযুদ্ধের সময় প্রায় তিন দশক জরুরি অবস্থার মধ্যে ছিল
এই দ্বীপরাষ্ট্র। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। এরপর এই প্রথম শ্রীলঙ্কায়
আবার জরুরি অবস্থা জারি করা হলো। এ জন্য দেশজুড়ে ১০ দিনের জরুরি অবস্থা
ঘোষণা করা হয়েছে। গত নভেম্বরে দাঙ্গায় একজন নিহত এবং বাড়ি-গাড়ি ভাঙচুরের
ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৪ সালে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের দাঙ্গায় চারজন নিহত হয়। এসব
ঘটনার জন্য বৌদ্ধ উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে অভিযুক্ত করে এর কয়েকজন নেতাকে বিচারের
মুখোমুখি করা হয়েছে। সিংহলিরা দেশটির মোট জনসংখ্যার চার-তৃতীয়াংশ এবং
মুসলিমরা মাত্র ১০ শতাংশ।
No comments