বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: জনগণের সঙ্গে, দলের সঙ্গে নয়
বাংলাদেশ-ভারত
সম্পর্ক ঐতিহাসিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটি দিনে দিনে বাড়ছে।
বন্ধুত্বপূর্ণ এ সম্পর্কের গভীরতা ও বিস্তৃতি ব্যাপক। এটি দুই দেশের জনগণের
সম্পর্ক। ভারত বাংলাদেশের কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর
সঙ্গে সম্পর্কের চেয়ে গোটা দেশের সঙ্গে বিশেষ করে জনগণ পর্যায়ে সম্পর্ককে
আরো নিবিড় করার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। সামপ্রতিক সময়ে দিল্লির তরফে ঢাকার
কাছে এ বার্তাই স্পষ্ট করা হয়েছে। দিল্লি সূত্রে এ-ও বলা হয়েছে- বাংলাদেশ
বিশ্বের কোনো দেশের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক রাখছে বা রাখছে না ভারতের তাতে
মাথাব্যথা নেই। বরং বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিক সম্পর্ক আরো এগিয়ে
নেয়াকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে দিল্লি। সূত্র মতে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি
নিয়ে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে যে অস্বস্তি বা অতৃপ্তি রয়েছে তা নিয়ে দিল্লি
ওয়াকিবহাল। চুক্তিটি দ্রুত সম্পাদনে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আন্তরিকতার
সঙ্গে কাজ করছে। এ নিয়ে শিগগিরই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে বলে আশা
করছে দিল্লির সাউথ ব্লক। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ আগামীকাল ভারত সফরে
যাচ্ছেন। কাছাকাছি সময়ে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে দিল্লি যাবেন আওয়ামী লীগ
সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নির্বাচনী বছরে গুরুত্বপূর্ণ এ
দুই সফর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র আলোচনা রয়েছে। ভারতীয় হাইকমিশনার
এরইমধ্যে বঙ্গভবন এবং শাসক দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ-বৈঠক
করেছেন। হাই প্রোফাইল ওই দুই সফরকে দিল্লি কীভাবে দেখছে? রাজনৈতিকভাবে আসলে
সফর দুটির তাৎপর্যই বা কি- এমন প্রশ্নের জবাবে সূত্র জানায়, একটি
আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে রাষ্ট্রপ্রধান দিল্লি যাচ্ছেন। সম্মেলনের
সাইড লাইনে হোস্ট কান্ট্রির শীর্ষ পর্যায়ে তার বৈঠক-মতবিনিময় হবে। দিল্লি
যাওয়ার পথে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেঘালয় সফর করবেন। সেখানে
মুক্তিযুদ্ধকালীন তার অনেক স্মৃতি রয়েছে। স্মৃতিবিজড়িত এলাকাগুলো পরিদর্শন
করবেন তিনি। সেখানে অনেকের সঙ্গে তার দেখা হবে। স্মৃতিচারণ হবে। সব মিলে
প্রেসিডেন্টের ভারত সফর দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে নতুন মাত্রা
যুক্ত হবে বলে আশা করছে ঢাকা এবং দিল্লি। আর শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক ও
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভারত সফর দু’দেশের রাজনৈতিক দল পর্যায়ে
বন্ধুত্বপূর্ণ সফর হিসেবেই দেখছে দিল্লি। তার সফরটিও গুরুত্বপূর্ণ। সফরকালে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার দেখা হবে। এনডিএ জোটসহ রাজনৈতিক
নেতৃত্বের সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের বৈঠক হবে। নির্বাচনের বছরে
সফরটি হলেও এর সঙ্গে আসন্ন নির্বাচনের বিশেষ সম্পর্ক বা তাৎপর্য রয়েছে বলে
মনে করে না দিল্লি। স্মরণ করা যায় যে, ২০১৩ সালে নির্বাচনী উত্তাপের বছরে
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভারত সফর করেছিলেন। তার সফরের রাজনৈতিক
প্রেক্ষিত ছিল কিন্তু এর সঙ্গে নির্বাচনের যোগসূত্র কতটা ছিল? দিল্লি
সূত্রের বরাতে সমপ্রতি যে বিশ্লেষণ গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে তাতে সদ্য সমাপ্ত
ত্রিপুরার নির্বাচনে বড় ব্যবধানে বিজেপির জয়কে মোদির পাগড়িতে নতুন পালক
সংযোজন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ জয় বাংলাদেশ- ভারতের সম্পর্কে কোনো প্রভাব
ফেলবে কি? এমন প্রশ্ন আসছে। জবাব অবশ্য ত্রিপুরার হবু মুখ্যমন্ত্রীসহ
বিজয়ীদের কথাতেই রয়েছে। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে
ভারতের সম্পর্ককে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার ভাষ্য এমন-
‘এটাই তো ভারতীয় নীতি। কোনো রাজনৈতিক দল কখন কোথায় ক্ষমতায়, সেটা বড় কথা
নয়। বড় কথা হচ্ছে দু’দেশের জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক। এ সম্পর্ক
সামপ্রতিক সময়ে কতটা বেড়েছে? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে অনেকে বাংলাদেশ
থেকে ভারতে ভ্রমণকারীদের হিসাবকে সামনে আনেন। গত এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ
থেকে ভারতে ভ্রমণের হার প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। আগে যেখানে দিনে তিন হাজার
ভিসা বাংলাদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে ইস্যু করা হতো, এখন সেখানে সাত হাজার
ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে ভ্রমণের হার দিন দিন বাড়ছে। একই
সঙ্গে ট্রেনে সীমান্তে কোনো বিরতি ছাড়াই ভ্রমণের আয়োজন রয়েছে। সড়ক পথে বাস
সার্ভিস এবং রুট আগের চেয়ে বেড়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ১০ বিলিয়ন মার্কিন
ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনাও ভারতের রয়েছে বলে জানানো হচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকট ও অন্যান্য প্রসঙ্গ: রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদশ যে উদারতা দেখিয়েছে ভারতসহ বিশ্ব সমপ্রদায় তার ভূয়সী প্রশংসা করছে। কিন্তু রোহিঙ্গা বোঝা লাঘবে ভারতকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে পাশে চায় ঢাকা। ভারত কি সেই দাবি পূরণ করতে পেরেছে? দিল্লি অবশ্য শুরু থেকেই মানবিক সহায়তা দিচ্ছে। সংকটের রাজনৈতিক সমাধানে সহায়তা দেয়ার চেষ্টাও তাদের রয়েছে। দিল্লির ভূমিকা ও সীমাবদ্ধতার বিষয়টি ঢাকাকে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। ঢাকাও এতে খুব যে নাখোশ তা কিন্তু নয়। তবে, সমপ্রতি ভারতীয় সেনা প্রধানের একটি মন্তব্যে ঢাকায় অস্বস্তি চরমে। দিল্লিও বিষয়টি জানে। অবশ্য এটাকে সেনা প্রধানের নিজস্ব মত বলে ঢাকাকে বার্তা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এ মন্তব্য ভারতের বা ভারত সরকারের বক্তব্য হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। বরং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা সহযোগিতা আগের চেয়ে বেড়েছে। আগামী দিনে খুব কাছের বন্ধু এবং ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা সহযোগিতা আরো জোরদার হবে, সন্দেহ নেই। অনুপ্রবেশ বিষয়ে সেনা প্রধানের ওই মন্তব্য ভারত ও চীনের মধ্যে কোনো প্রক্সি যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করছে কি না? এ নিয়ে উদ্বেগ ও জিজ্ঞাসা রয়েছে ঢাকার। জবাবে দিল্লি যা বলার চেষ্টা করে তা হলো- ভারত কোনো প্রক্সি যুদ্ধের ধারণায় বিশ্বাসী নয়। তাছাড়া যেখানে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার বাংলাদেশ। সেখানে তো এমন ধারণার প্রশ্নই আসে না।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রায়শই ২০১৪ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে আসন্ন ১৮’র নির্বাচনকে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হয়। এতে আওয়ামী লীগকে ভারত সরকারের সহযোগিতা করা না করার বিষয়ে মন্তব্য ছাপা হয়। দিল্লি মনে করে গণমাধ্যমে অনেক কিছুই ছাপা হয়। তা একান্তই গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ। এটি সরকার কিংবা ভারতের মত নয়। দক্ষিণ এশিয়াতে ভারত ও চীন প্রতিযোগিতা নিয়ে বরাবরই সরব মিডিয়া। কিন্তু বাস্তবতা কি? চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কি সব সময় বৈরি। না, তা নয়। প্রতিযোগিতার নানা কারণ রয়েছে। তবে দেশ দুটির পারস্পরিক সম্পর্ক, বোঝাপড়াকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ, রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। রাশিয়াই মূলত রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছিল। সেখানে ভারত নতুন কিছু বিষয়ে যুক্ত হয়েছে। ভারতের তরফে কারিগরি সহযোগিতা, বিশেষ করে যেসব ক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা শুধু সেটাই দেবে বাংলাদেশকে।
রোহিঙ্গা সংকট ও অন্যান্য প্রসঙ্গ: রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদশ যে উদারতা দেখিয়েছে ভারতসহ বিশ্ব সমপ্রদায় তার ভূয়সী প্রশংসা করছে। কিন্তু রোহিঙ্গা বোঝা লাঘবে ভারতকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে পাশে চায় ঢাকা। ভারত কি সেই দাবি পূরণ করতে পেরেছে? দিল্লি অবশ্য শুরু থেকেই মানবিক সহায়তা দিচ্ছে। সংকটের রাজনৈতিক সমাধানে সহায়তা দেয়ার চেষ্টাও তাদের রয়েছে। দিল্লির ভূমিকা ও সীমাবদ্ধতার বিষয়টি ঢাকাকে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। ঢাকাও এতে খুব যে নাখোশ তা কিন্তু নয়। তবে, সমপ্রতি ভারতীয় সেনা প্রধানের একটি মন্তব্যে ঢাকায় অস্বস্তি চরমে। দিল্লিও বিষয়টি জানে। অবশ্য এটাকে সেনা প্রধানের নিজস্ব মত বলে ঢাকাকে বার্তা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এ মন্তব্য ভারতের বা ভারত সরকারের বক্তব্য হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। বরং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা সহযোগিতা আগের চেয়ে বেড়েছে। আগামী দিনে খুব কাছের বন্ধু এবং ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা সহযোগিতা আরো জোরদার হবে, সন্দেহ নেই। অনুপ্রবেশ বিষয়ে সেনা প্রধানের ওই মন্তব্য ভারত ও চীনের মধ্যে কোনো প্রক্সি যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করছে কি না? এ নিয়ে উদ্বেগ ও জিজ্ঞাসা রয়েছে ঢাকার। জবাবে দিল্লি যা বলার চেষ্টা করে তা হলো- ভারত কোনো প্রক্সি যুদ্ধের ধারণায় বিশ্বাসী নয়। তাছাড়া যেখানে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার বাংলাদেশ। সেখানে তো এমন ধারণার প্রশ্নই আসে না।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রায়শই ২০১৪ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে আসন্ন ১৮’র নির্বাচনকে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হয়। এতে আওয়ামী লীগকে ভারত সরকারের সহযোগিতা করা না করার বিষয়ে মন্তব্য ছাপা হয়। দিল্লি মনে করে গণমাধ্যমে অনেক কিছুই ছাপা হয়। তা একান্তই গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ। এটি সরকার কিংবা ভারতের মত নয়। দক্ষিণ এশিয়াতে ভারত ও চীন প্রতিযোগিতা নিয়ে বরাবরই সরব মিডিয়া। কিন্তু বাস্তবতা কি? চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কি সব সময় বৈরি। না, তা নয়। প্রতিযোগিতার নানা কারণ রয়েছে। তবে দেশ দুটির পারস্পরিক সম্পর্ক, বোঝাপড়াকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ, রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। রাশিয়াই মূলত রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছিল। সেখানে ভারত নতুন কিছু বিষয়ে যুক্ত হয়েছে। ভারতের তরফে কারিগরি সহযোগিতা, বিশেষ করে যেসব ক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা শুধু সেটাই দেবে বাংলাদেশকে।
No comments