টার্গেট দিল্লির লালকেল্লা
ভারতের
ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রতি হুঙ্কার দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা
ব্যানার্জি বলেছেন, তাদের টার্গেট দিল্লি ও লালকেল্লা দখল নেয়া। বিজেপিকে
প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনে আঞ্চলিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার অঙ্গীকার করে তিনি
জোরের সঙ্গেই বলেন, পশ্চিমবঙ্গ জয়ের চেষ্টায় কখনই সফল হবে না বিজেপি।
ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে দলের বিজয়ের পর বিজেপির সভাপতি আমিত শাহ
বলেন, বিরোধী দলগুলোর হাত থেকে পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা ও কর্নাটক মুক্ত হলেই
বিজেপির স্বর্ণযুগ শুরু হবে। এর জবাবে মমতা বলেন, ‘আগে দিল্লি সামলা, পরে
ভাববি বাংলা’। সোমবার পুরুলিয়ায় এক জনসভায় সেই সুর আরও এক ধাপ চড়িয়ে তিনি
বলেন, ‘ওদের টার্গেট নাকি বাংলা! আর বাংলা বলে, আমাদের টার্গেট দিল্লির
লালকেল্লা।’ এ সময়ে স্লোগানের সুরে তিনি বলেন, ‘চলো চলো দিল্লি চলো। চলো
চলো লালকেল্লা চলো’। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে তার দল তৃলমূল কংগ্রেস বড়
ভূমিকা রাখবে এমন ইঙ্গিত দিয়ে মমতা বলেন, ‘আমরা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর
স্লোগানে বিশ্বাস করি। তাই আগামী দিনে বাংলা দেশ জয় করবে। তার বদলে বাংলা
নিজে কিছু নেবে না। সবার পাশে দাঁড়াবে। সবাইকে নিয়ে লড়াই করবে। সবাইকে নিয়ে
দেখাবে, বাংলা যা পারে, আর কেউ পারে না।’ এনডিটিভি জানায়, উত্তর-পূর্বের
রাজ্যগুলোতে গেরুয়া বিপ্লবের পরে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপিকে রুখতে
নড়েচড়ে বসেছে আঞ্চলিক দলগুলো। তাই দীর্ঘ শত্র“তার অবসান ঘটিয়ে
উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির দিকে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে
দিয়েছে বহুজন সমাজ পার্টি। আঞ্চলিক দলগুলোর এই বিজেপিবিরোধী জোটে মমতাও যে
শামিল হতে চান, তার ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই দিয়েছেন তিনি। রোববারই মমতা ফোনে কথা
বলেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী টিআরএস নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও, ডিএমকে নেতা
এমকে স্টালিনের সঙ্গে। অন্য আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন মমতা।
বিধানসভা নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের ত্রিপুরা
রাজ্য। বিজয়ে উল্লসিত বিজেপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে তাণ্ডব চালানোর
অভিযোগ উঠেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, দক্ষিণ ত্রিপুরায় বিজেপি
সমর্থকরা বুলডোজার দিয়ে লেনিনের একটি মূর্তি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। সিপিএম
সমর্থকদের বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগেরও খবর পাওয়া গেছে। পশ্চিম ত্রিপুরার
পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে, তা সামাল দিতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
তবে বিজেপির দাবি, এসব ঘটনার জন্য তারা দায়ী নয়, এগুলো জনরোষের ফল। এদিকে
ত্রিপুরার নতুন মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের আগেই নতুন করে পৃথক রাজ্যের দাবি
উঠেছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নির্বাচনী
জোটসঙ্গী ইন্ডিজেনাস পিপল’স ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (আইপিএফটি) এ দাবি তুলেছে।
আইপিএফটির দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারকে এ ব্যাপারে অবিলম্বে উচ্চপর্যায়ের কমিটি
গঠন করতে হবে। সব দিক খতিয়ে দেখে সেই কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা
দিতে হবে। সোমবার আনন্দবাজারকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আইপিএফটির সভাপতি
নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা এ দাবির কথা জানান। তবে বিধানসভার নির্বাচনী
প্রচারের শুরু থেকেই বিজেপি বলে আসছে, তারা রাজ্য ভাগের বিরুদ্ধে। নরেন্দ্র
মোদি, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ থেকে শুরু করে দলীয় নেতৃত্ব প্রচারণায় কখনো
উপজাতীয়দের এ দাবিকে মেনে নেননি। এদিকে পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন ন্যাশনাল পিপল’স পার্টির
(এনপিপি) সভাপতি কনরাড সাংমা। মঙ্গলবার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ছিলেন
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। এছাড়াও
ছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনেওয়াল ও আসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত
বিশ্ব শর্মা। এনডিটিভি জানায়, মাত্র দুই আসনে জয় পেয়েও মেঘালয় থেকে
‘কংগ্রেস হটাও’ আন্দোলনে সফল হয়েছে বিজেপি। রাজ্যে কংগ্রেসের ১০ বছরের
শাসনের অবসান ঘটিয়ে মেঘালয়ের মসনদে বসেছে বিজেপির সমর্থন পাওয়া ন্যাশনাল
পিপল’স পার্টি (এনপিপি)। এর মধ্য দিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়ার পরও
কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়ে গেল মেঘালয়ও।
No comments