সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ
ব্যাংক
থেকে কমিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার অধিক হারে ঋণ নেয়ায় দেশের আর্থিক খাতে বড়
ধরনের সংকটের আশঙ্কা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ‘সরকারি ঋণ পোর্টফোলিও, ব্যয় ও
ঝুঁকি বিশ্লেষণ’ শিরোনামে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার
কথা বলা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকার সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ায়
প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টির পাশাপাশি
ব্যয় বৃদ্ধিসহ ব্যাহত হচ্ছে ঋণ ব্যবস্থাপনার মূলনীতি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত পাঁচ বছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেয়ার হার
বেড়েছে ২২ শতাংশ। একই সময়ে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার হার কমেছে ২২ শতাংশ।
উদ্বেগজনক হল, ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো বকেয়া পরিশোধ করছে সরকার। ফলে
ট্রেজারি সিকিউরিটিজের সেকেন্ডারি মার্কেট উন্নয়ন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত
হচ্ছে। পাশাপাশি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনায় সৃষ্টি
হচ্ছে জটিলতা। এতে দেশের আর্থিক খাত বড় ধরনের সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে।
সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কম ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ সরকার দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণের
পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত স্বল্পমেয়াদি ঋণ অধিক মাত্রায় গ্রহণ করছে, যা মোটেই
কাম্য নয়। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছর সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি
টাকা ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর
পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ হচ্ছে ২৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা।
দেখা যাচ্ছে, এ সময়কালে মোট ঋণের প্রায় ৮০ ভাগই গ্রহণ করা হয়ে গেছে।
আশঙ্কার বিষয় হল, বেশি মাত্রায় ঋণ গ্রহণের ফলে সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধের
ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের ঋণ
পোর্টফোলিওতে ঝুঁকি ও ব্যয় বাড়ছে। বস্তুত পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করেছে
যে, কম সুদ ব্যয়সম্পন্ন ট্রেজারি সিকিউরিটিজের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ না করে
অতিরিক্ত সুদ পরিশোধ করে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। আমরা মনে
করি, এতে সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনার মূলনীতিও ব্যাহত হচ্ছে। অস্বাভাবিক হারে
সঞ্চয়পত্র বিক্রি বৃদ্ধির স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে। সঞ্চয়পত্রের
সুদের হার বেশি হলে আমানতকারীরা ব্যাংকমুখী হবেন না। এতে ব্যাংকের আমানত
কমবে। ফলে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার সক্ষমতা হ্রাস পাবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, এর
বিরূপ প্রভাব পড়বে বেসরকারি খাতের ওপর। বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক ও পুঁজিবাজার
ছেড়ে সঞ্চয়পত্রমুখী হলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে, যা
অনাকাক্সিক্ষত। সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে, এটাই কাম্য।
No comments