পূর্ব ঘৌটায় ওষুধ সরবরাহে বাধা
সিরিয়ার
অবরুদ্ধ ঘৌটার পূর্বাঞ্চলে আন্তর্জাতিক ত্রাণবাহী গাড়িগুলো ঢুকতে পারলেও
নির্ধারিত ত্রাণ ও ওষুধ সরবরাহের কাজ শেষ না করেই ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে।
বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে সিরিয়ার আসাদ বাহিনীর চলমান হামলা ও গোলাগুলির
তীব্রতা কিছুটা কমে এলে কয়েকদিন অপেক্ষার পর সোমবার পূর্ব ঘৌটায় ঢোকে ৪৬টি
ত্রাণবাহী গাড়ি। তবে যুদ্ধের তীব্রতার মুখে ত্রাণ তৎপরতা শেষ না করেই
সোমবার সন্ধ্যায় ফেরা শুরু করে গাড়িগুলো। আসাদ বাহিনী ও রুশ বাহিনী ওষুধ
সরবরাহ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ ও রেডক্রস। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন
করে মঙ্গলবারও মানবিক করিডোরে অব্যাহতভাবে বিমান হামলা চালায় আসাদ বাহিনী।
এদিন নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৭ জন বেসামরিক মানুষ। মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের
মতে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির অনুমোদন ও প্রতিদিন
৫ ঘণ্টা করে রাশিয়ার যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর ঘৌটার বাসিন্দাদের জন্য
মঙ্গলবারই ছিল ‘সবচেয়ে ভয়াবহ দিন’। আলজাজিরা জানায়, গত এক মাসের মধ্যে এই
প্রথমবারের জন্য রেডক্রস, সিরিয়ান আরব রেডক্রিসেন্ট ও জাতিসংঘের ত্রাণবাহী
গাড়িগুলো সরকারি বাহিনী নিয়ন্ত্রিত তল্লাশি চৌকি পার হতে সমর্থ হয়। কিন্তু
এর কয়েক ঘণ্টা পরই বিমান হামলা শুরু হয়। ত্রাণ সহায়তাকর্মীরা জানান, বাশার
আল আসাদের বাহিনী অনেক ত্রাণ বাজেয়াপ্ত করে সরিয়ে নিয়েছে। ত্রাণের
গাড়িগুলোতে চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ও ওষুধ এবং ৫ হাজার ৫০০ ব্যাগ আটা ও খাদ্য
ছিল। এগুলো প্রায় ২৭ হাজার ৫০০ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট হতো।
রেডক্রস ও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, প্রায় ৭০ ভাগ ত্রাণই
সরবরাহ করতে দেয়নি সরকারি বাহিনী। ইউএনএইচসিআরের সিরিয়া প্রতিনিধি সাজ্জাদ
মালিক এক টুইটে বলেন, ‘গোলাগুলির মধ্যেও আমরা যতটা পেরেছি ত্রাণ দিয়েছি।
সেখানকার নাগরিকরা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন।’ তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ত্রাণ সরবরাহ থেকে ৭০
ভাগ জিনিস সরিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে সার্জারির উপকরণ ও মানসিক আঘাত বা ট্রমার
উপশমে ব্যবহৃত চিকিৎসাসামগ্রীও রয়েছে। বিদ্রোহীরা যেন এগুলো ব্যবহার করে
চিকিৎসা নিতে না পারে তার জন্য সিরিয়ার সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে
করেন তারা। গত কয়েকদিনে সিরিয়ার সরকারি ও তাদের মিত্রবাহিনী বিদ্রোহীদের
দখলে থাকা অঞ্চলটির এক-তৃতীয়াংশ দখলে আনতে পেরেছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ান
অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। পূর্ব ঘৌটা ২০১২ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার
পর থেকে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রোববার প্রেসিডেন্ট আসাদ রাষ্ট্রীয়
টেলিভিশনে এক ভাষণে বলেন, ‘জঙ্গিবাদের’ বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি বিচ্ছিন্ন অঞ্চলটিতে মানবিক বিপর্যয়ের খবর ‘হাস্যকর মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে
দেন। এদিকে সিরিয়ার পরিস্থিতি এবং এ অঞ্চলে সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আগামী
এপ্রিলে এক শীর্ষ আলোচনায় বসবে তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়া। তুরস্কের পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় মুখপাত্র হামি আকসয় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তুর্কি
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু আগামী ১২-১৪ মার্চ রাশিয়া সফর করবেন।
এরপর ১৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের
সঙ্গে বৈঠক করবেন।
No comments