‘মারি অরি পারি যে কৌশলে’ by সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা
রাজনীতিতে
বিস্তর মতপার্থক্য থাকলেও অতীতে রাজনীতিবিদদের পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও
শিষ্টাচার লক্ষ্য করা যেত। তারা ভিন্নমতকে রাজনৈতিক মতপার্থক্য ও
গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবেই বিবেচনা করতেন। কখনো তা ব্যক্তিগত আক্রোশ বা
প্রতিহিংসার পর্যায়ে যেত না। রাজনৈতিক মঞ্চে একে অপরের তুলোধুনো করলেও তা
কারো ব্যক্তিচরিত্র হননের পর্যায়ে যেত না।
হালে সে অবস্থার বড় পরিবর্তন
ঘটেছে। শ্রদ্ধা ও শিষ্টাচারের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে কদর্যতা ও
ক্ষমতালিপ্সা। আমাদের দেশের একশ্রেণীর রাজনীতিক গণতান্ত্রিক পরিসরের মধ্যে
অবস্থান না করে সীমালঙ্ঘনের পথ বেছে নিয়েছেন। রাজনীতিতে সহাবস্থান ও
পারস্পরিক শ্রদ্ধার পরিবর্তে এখন তা সঙ্ঘাতপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনাকাক্সিক্ষত
অবিশ্বাস তাদেরকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফিরছে। প্রতিপক্ষরা হয়ে উঠেছে একেবারে
জান-প্রাণের শত্রু। ‘মারি অরি পারি যে কৌশলে’ হয়েছে আমাদের দেশের রাজনীতির
প্রধান বৈশিষ্ট্য। ফলে দেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি সরল রেখাটা ক্রমেই বক্র
হয়ে যাচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে ততই পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির
যথাযথ চর্চার অভাব, গণতন্ত্র ও মূল্যবোধের প্রতি অশ্রদ্ধার কারণেই আমাদের
দেশের রাজনীতি সমস্যাসঙ্কুল হয়ে উঠেছে। আর আগামী দিনে এ পরিস্থিতিটা আরো
চরমে উঠবে এ কথা বলার যৌক্তিকতাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির চেয়ারপারসন
বেগম খালেদা জিয়াকে সম্প্রতি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ
বছরের সাজা দেয়া হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে
অন্তরীণ রয়েছেন। বিচার ও দণ্ডাদেশ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সঙ্গত ও যৌক্তিক
নয়। যেকোনো বিচারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে
সরকার দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে হয় না। মূলত আইনের ভাষ্যই হচ্ছে
অপরাধী প্রয়োজনীয় সাক্ষী-প্রমাণ ও দলিল-দস্তাবেজের অভাবে ছাড়া পেয়ে গেলে তা
বেআইনি নয়। অর্থাৎ যেকোনো সন্দেহের সুবিধা আসামি পক্ষ পাবেন বলে আইনে
স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে; কিন্তু কোনো অবস্থাতেই যেন নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তির
সম্মুখীন না হন, এ বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি। তাই কোনো বিচারের স্বচ্ছতা
নিয়ে যখন প্রশ্ন ওঠে, সে বিচার প্রক্রিয়ার যথার্থতা প্রমাণের আবশ্যকতা দেখা
দেয়; কিন্তু বেগম জিয়ার বিচারের ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটেছে বলেই মনে
হচ্ছে। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেছে। এমনকি এ
ক্ষেত্রে সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তোলারও সুযোগ করে দিয়েছেন
সরকার সংশ্লিষ্টরাই। তা আইনের শাসনের জন্য কোনো সুখবর নয়। বলা হচ্ছে, এ
সরকারের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার
হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেছে।
সেখানে সরকারপন্থীরা জড়িত থাকার
প্রমাণ থাকলেও তাদেরকে কখনো গ্রেফতার বা বিচারের আওতায় আনা হয়নি। অপর দিকে,
দুই কোটি টাকার মামলায় বেগম জিয়ার সাজা হয়েছে। অথচ সে টাকা এখনো ব্যবহারই
করা হয়নি। আত্মসাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে বিবাদি পক্ষ দাবি করছেন; কিন্তু
এর কোনো সদুত্তর সংশ্লিষ্টরা এখনো দিতে পারেননি। আসলে সরকার যদি মনে করে,
দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের অংশ থেকেই বেগম জিয়ার সাজা হয়েছে, তাহলে সাধারণ
মানুষের কাছে এটা আরো হাস্যকর হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ যে সময়ে এ মামলা
হয়েছে, একই সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও অনেকগুলো মামলা হয়েছিল;
কিন্তু বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো চলমান থাকলেও ক্ষমতায় আসার সুযোগ
প্রধানমন্ত্রীর সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাই প্রতিপক্ষকে দোষী
সাব্যস্ত করে নিজেদের ধোয়া তুলসীপাতা আখ্যা দেয়ার সুযোগ খুব একটা থাকছে না।
বেগম জিয়ার যে মামলায় দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে এ মামলা করা হয়েছিল ১/১১
পরবর্তী জরুরি সরকারের আমলে। সে সময় বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে মামলার
বহরটা মোটেই ছোট ছিল না। এমনকি জরুরি সরকার অনেক বড় বড় মামলা দায়ের করে ছিল
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের
বিরুদ্ধে। হাজার হাজার কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগও ছিল সেসব মামলায়। কিন্তু
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অবশ্য সরকার পক্ষ
দাবি করছে যে, তাদের শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া
হয়নি বরং মামলাগুলো উচ্চ আদালতে কোয়াশড হয়েছে; কিন্তু নৈতিক কারণেই এ
প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার যৌক্তিকতা রয়ে গেছে। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে
দায়েরকৃত মামলাগুলো দুদক যত গুরুত্ব দিয়ে পরিচালনা করেছে, তার প্রতিপক্ষের
বিরুদ্ধে কোয়াশ পিটিশন দায়েরের বিরুদ্ধে দুদক জোরালো ভূমিকা তো দূরের কথা
বরং তারা কোয়াশের বিরোধিতাও করেনি।
এখানেই দুদকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে
প্রশ্ন উঠতে পারে। সচেতন মহল অভিযোগ করছেন যে, দুদক বিরোধীদলীয়
নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে যত গুরুত্ব দেয় সরকারি দলের
নেতাকর্মীদের ব্যাপারে তারা ততটাই উদাসীন। তাই বেগম জিয়ার বিচারের স্বচ্ছতা
ও গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের জন্য এ ধরনের সব মামলারই স্বচ্ছ আইনি নিষ্পত্তি
করা জরুরি। সরকার পক্ষ দাবি করে আসছে বেগম জিয়ার মামলা ও দণ্ডাদেশের বিষয়ে
সরকারের কোনো হাত নেই বরং আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তার দণ্ডাদেশ হয়েছে।
তারা আরো দাবি করছেন, অপরাধী যে-ই হোক না কেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’
এ কথার মধ্যেও শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে বলেই মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে।
কারণ, বিগত জরুরি সরকারের আমলে উভয় বড় দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই অনেক
মামলা হয়েছিল সেসব বিচার এখন সরকার শুরু করতে পারেনি। বরং কথিত ‘রাজনৈতিক’
মামলা বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। নিজেদের দেশে আইনের
শাসনের জন্য মোটেই সহায়ক নয়। বর্তমান সরকারের আমলে অনেক বড় বড় আর্থিক
কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। দেশের শেয়ার মার্কেট লুট, ডেসটিনি, হলমার্ক
কেলেঙ্কারি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ এবং জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও ফারমার্স
ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা
ঘটেছে। এমনকি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের বিরাট অঙ্কের রিজার্ভ চুরির মতো
ন্যক্কারজনক ঘটনাও ঘটেছে এ সরকারের আমলেই। এসব ঘটনার সাথে সরকারি ঘরানার
লোকরাই জড়িত বলে জনগণ মনে করে। কিন্তু সেসব আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনার কোনো
বিচার হয়নি বা হবে বলে দেশের মানুষ আশ্বস্ত হতে পারছে না। তাই একজন সাবেক
প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষের বিচার নিয়ে মাতামাতিকে কেউই
স্বাভাবিক মনে করছেন না। এ প্রসঙ্গে কেউ কেউ মানি লন্ডারিং মামলায় বিএনপির
সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে খালাস দেয়া বিচারক মোতাহার হোসেন ও
সরকারের বিরুদ্ধে রায় প্রদানকারী সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার
সিনহার অনাকাক্সিক্ষত পরিণতির কথাও উল্লেখ করেন। সাধারণ মানুষ মনে করছে,
আগামী নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ময়দানছাড়া করার
জন্যই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে।
বেগম
খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ প্রদানের পরবর্তী পর্যায়ে তার সাথে সরকারের আচরণ
নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দেশের এত ভালো ভালো ও আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন কারাগার
থাকতে তাকে পরিত্যক্ত কারাগারে কেন নেয়া হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা
দিয়েছে। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জেলকোড অনুযায়ী ডিভিশন না দিয়ে কেন
কয়েকদিন সাধারণ বন্দীর মতো রাখা হলো, তা নিয়ে সরকার সমালোচনার মুখে পড়েছে।
রায়ের আগেই নাজিম উদ্দীন রোডের পরিত্যক্ত কারাগার খালেদা জিয়ার জন্য
প্রস্তুত করার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বুদ্ধিজীবীমহল, সুশীলসমাজ,
বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। সরকার বিভিন্ন মহলের এসব যৌক্তিক
সমালোচনাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। বরং ক্ষেত্র বিশেষে অতিপ্রতিক্রিয়া
হাস্যকরও দেখিয়েছে। এটাকে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে গুরুতর লঙ্ঘন
বলেই মনে করা হচ্ছে। কোনো কোনো নেতা এমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন যা কোনো
রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যেই পড়ে না। বেগম জিয়ার দণ্ডাদেশ দেয়ার পর তার দল
জেলকোড অনুযায়ী একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তোলায়
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম সংসদে বলেছেন,
‘গোটা জেলখানাই উনাকে দেয়া হয়েছে। এত সুন্দর একটি বাড়ি, আরাম-আয়েশে আছেন।
আরো বলা হয়, উনাকে ডিভিশন দেয়া হয়নি, অমুক দেয়া হয়নি; তাকে ফাইভ স্টার
হোটেল সোনারগাঁওয়ে রাখা হবে নাকি? চুরি করে টাকা আত্মসাৎ করেছে, তাই কনডেম
সেলে রাখা উচিত। তিনি আরো বলেন, ‘সুযোগ থাকলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড
হামলা-মামলায় খালেদা জিয়াকে এক নম্বর আসামি করা এবং জ্বালাও-পোড়াও করে
মানুষ হত্যার দায়ে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দিয়ে বিচার করা
উচিত’। বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি রুচিহীনভাবে বলেছেন, ‘তোরা গণতন্ত্রকে
হত্যা করে সামরিক শাসক দিয়ে পাঁচ বছর দেশ চালিয়েছিস। বিএনপি কথায় কথায় বলে,
গণতন্ত্র নাই। গণতন্ত্র আছে বলেই তো তোরা কথা বলতেছিস। ওই যে কথা বলতেছিস,
টেলিভিশনে সরকারের বিরুদ্ধে ঘেউ ঘেউ করিস, মিথ্যা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত
করিস’। এই বর্ষীয়ান সংসদ সদস্য। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মন্তব্য
করায় আরো সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। তিনি বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে টাকা
মেরে খাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন; কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। তিনি
তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মন্তব্য করার সময় ‘তুই-তুকারি’ ও ‘ঘেউ ঘেউ’ শব্দ
ব্যবহার করে নিজের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। এটা তার
ব্যক্তিত্ব ও পদমর্যাদার সাথে সঙ্গতিহীন।
মূলত গণমানুষের কল্যাণেই আধুনিক
রাষ্ট্রের ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্র যাতে সুচারু রূপে চলে এবং
নাগরিকদের সব অধিকার নিশ্চিত হয়, সে জন্যই সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন। আর
সরকার পরিচালনার জন্য একদল নিবেদিতপ্রাণ মানুষের প্রয়োজনীয়তা থেকেই
রাজনৈতিক দলের উৎপত্তি। তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যই হচ্ছে- সার্বজনীন
স্বার্থসংরক্ষণ। তাই রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞায়ন করতে গিয়ে এডমান্ড বার্ক বলেন,
‘A body of men united together for promoting by their joint endeavors
the national interest upon some particular principles on which they are
all agreed.’ আমরা বোধহয় সে লক্ষ্য অর্জনে পুরোপুরি সক্ষম হয়নি। দলের
অন্যতম দায়িত্ব হলো দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা।
কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এ ক্ষেত্রে অনেকটাই উদাসীন বলেই মনে
হয়। তারা মুখে গণতন্ত্র ও মূল্যবোধের কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন গৌণ। এ
প্রসঙ্গে অধ্যাপক লিকক (Leacock) বলেন, ‘ Far from being in conflict with
the theory of democratic government, party government is the only thing
which renders it feasible.’ অর্থাৎ রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের বিরোধী হওয়া
তো দূরের কথা, দলীয় সরকার গণতন্ত্রের সফলতা দান করে। গণতন্ত্র ও
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে দেশ
স্বাধীন করলে রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণেই স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনে আমরা
পুরোপুরি সমর্থ হয়নি। মূলত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের দেশের
গণতন্ত্রের ছন্দপতন শুরু হয়েছে এবং এ ধারা এখন অব্যাহত আছে। তাই দেশ ও
জাতিকে আবারো ছন্দে ফিরে আনতে হলে দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের
পুনঃপ্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। আইনের শাসনও প্রতিষ্ঠা করা দরকার।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জান-প্রাণের শত্রু মনে করে যেকোনো পন্থায় নির্মূল
করার অভিপ্রায়ের মধ্যে কোনো কল্যাণ দেখা যায় না বরং এর মাধ্যমে হানাহানিই
বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবেই মোকাবেলা করতে
হবে। অন্যথায় রাজনীতি আগামী দিনে আরো সঙ্ঘাতময় হবে বলে মনে হয়। গণতন্ত্র
সংবিধানের অন্যতম স্তম্ভ হলেও নেচিবাচক রাজনীতির মাধ্যমে বিক্ষত করা হয়েছে এ
পথকে। ভিন্নমতের প্রতি সহিষ্ণুতা গণতন্ত্রে স্বীকৃত হলেও সে আদর্শ খুব
একটা অনুসৃত হতে দেখা যাচ্ছে না। আর এ জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সম্পর্কে
অপর পক্ষের মুখ থেকে অবলীলায় বেরিয়ে আসছে ‘ তোরা কথা বলিস’ ‘ঘেউ ঘেউ করিস’।
No comments