ব্যাংকের ডলার ধারণক্ষমতা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট by আশরাফুল ইসলাম
প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো প্রতিদিন কী পরিমাণ ডলার নিজেদের কাছে
ধারণ করতে পারবে, তার একটি কোটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঠিক করে দেয়া হয়।
ওই
কোটা অনুযায়ী ব্যাংক তার আমদানি বিল পরিশোধ করার জন্য সমপরিমাণ বৈদিশিক
মুদ্রা ধরে রাখতে পারে। সাধারণত ব্যাংক বিদেশ থেকে রফতানি আয় ও
রেমিট্যান্স বাবদ যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পায় তা তাদের নস্ট্রো
অ্যাকাউন্টে (বিদেশে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জন্য ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট)
আগে জমা হয়। পরে ব্যাংকগুলোর নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে জমা ডলারের হিসাব তাদের
প্রধান কার্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রতিটি ব্যাংক তাদের দিনের
লেনদেন শুরুর আগে কী পরিমাণ ডলার তাদের হাতে রয়েছে (নিট ওপেন পজিশন) তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানাতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া কোটার
বেশি ডলার তাদের হাতে থাকলে তা আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের মাধ্যমে অন্য
কোনো ব্যাংক বা গ্রাহকের কাছে বিক্রি করতে হয়। ব্যাংক বা গ্রাহকের কাছে
বিক্রি করতে ব্যর্থ হলে ওই দিনই তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে
বাধ্য হবে। অন্যথায় ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জরিমানা গুনতে
হয়।
বৈদেশিক মুদ্রা ধারণ করার নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক প্রতিদিন কী পরিমাণ ডলার ধারণ করতে পারবে তা ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বকেয়া রফতানি বিল, মোট ঋণ, আমদানি বিল, ডলার ক্রয়-বিক্রয় হার এবং ঋণ আমানতের অনুপাত খতিয়ে দেখা হতো। কোনো ব্যাংকের বকেয়া রফতানি বিল কম থাকলে, ঋণ আমানতের অনুপাত নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী থাকলে তাদের ডলার ধারণক্ষমতা বেশি দেয়া হতো। কোনো ব্যাংকের এসব সূচকগুলো সন্তোষজনক না থাকলে তাদের কোটা কম দেয়া হতো। সাধারণত আগে ব্যাংকগুলোর মোট সম্পদ ডলারে হিসাব করে তার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ ধারণ করতে পারত। ২০০৯ সাল থেকে এ নীতিমালা শিথিল করা হয়। এর পর থেকেই ব্যাংকগুলো তাদের মোট মূলধনের ১৫ শতাংশ সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ধারণ করতে পারছে।
কিন্তু গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কট, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি সব মিলে বিনিয়োগ নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। এর সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে আমদানি ব্যয়ে। অর্থাৎ মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় ব্যাপক হারে কমে গেছে। কিন্তু সামনে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে বেশি। এতে প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই উদ্বৃত্ত বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া সীমার অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা ধরে রাখতে না পারায় ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ডলার কিনে ব্যাংকগুলোকে স্থানীয় মুদ্রা অর্থাৎ টাকা সরবরাহ করত বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে ডলারের বিপরীতে টাকা দিচ্ছে না। এর বিপরীতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক বিল ও বন্ড। বন্ড হলো সরকারের ঋণ নেয়ার একটি উপকরণ। ব্যাংকগুলোর কাছে বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে সরকার ঋণ নিয়ে থাকে।
এখন এ ডলার বিক্রি করে বেকায়দায় পড়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ডলার বিক্রির প্রায় চার হাজার কোটি টাকা আটকে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। বেশি সমস্যায় পড়েছে ইসলামী ব্যাংকগুলো। প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ডলার বিক্রির টাকা এক মাস পরে ফেরত পেলেও ইসলামী ব্যাংকগুলোর টাকা আটকে রাখা হচ্ছে ছয় মাসের জন্য। এ কারণে এসব ব্যাংকের নিট লোকসান বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুক্তি হলো, বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছে, তার বিপরীতে সুবিধাভোগীরা টাকা নিচ্ছেন। এতে মুদ্রা সরবরাহ আরো বেড়ে চলছে। আর মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংকগুলোকে ডলারের বিপরীতে বন্ড দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের গত ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬৬৮ কোটি মার্কিন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে। এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে ইসলামী ব্যাংকগুলোর তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ৯৬৮ কোটি টাকা আটকে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করে তারা বেকায়দায় পড়েছেন। কেননা বাংলাদেশ ব্যাংক ছয় মাস মেয়াদি বন্ড ধরিয়ে দেয়ায় তারা সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। এর কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাচ্ছেন তার সুবিধাভোগীদের স্থানীয় মুদ্রা দেয়া হচ্ছে। এতে ব্যাংকের সংগৃহীত আমানতের অর্থ থেকে রেমিট্যান্সের সুবিধাভোগীদের দেয়া হচ্ছে। আর ১০০ টাকার তহবিল জোগাড় করতে তাদের গড়ে ব্যয় হয় ১০ টাকার ওপরে। কিন্তু ছয় মাস মেয়াদি বন্ডের মেয়াদ শেষে ১০০ টাকার বিপরীতে তিন টাকার নি০চে মুনাফা পাচ্ছেন। এতে তাদের নিট লোকসান হচ্ছে সাত টাকারও ওপরে। আর এ নিট লোকসান সমন্বয় করতে অনেক ব্যাংকই হিমশিম খাচ্ছে। একে তো বিনিয়োগ কমে গেছে। কমে গেছে আমদানি। আমদানি কমে যাওয়ায় এলসি কমিশন থেকে আয়ও কমে গেছে। অপর দিকে পুঁজিবাজারে অনেক ব্যাংক বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু অব্যাহত দরপতনের কারণে নিজস্ব বিনিয়োগ এখন অর্ধেকে নেমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে ডলার বিক্রি করে নিট লোকসান হওয়ায় নিট মুনাফার ওপর চাপ বাড়ছে। অনেক ব্যাংকের মুনাফা এখন নেতিবাচক হয়ে পড়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রা ধারণ করার নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক প্রতিদিন কী পরিমাণ ডলার ধারণ করতে পারবে তা ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বকেয়া রফতানি বিল, মোট ঋণ, আমদানি বিল, ডলার ক্রয়-বিক্রয় হার এবং ঋণ আমানতের অনুপাত খতিয়ে দেখা হতো। কোনো ব্যাংকের বকেয়া রফতানি বিল কম থাকলে, ঋণ আমানতের অনুপাত নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী থাকলে তাদের ডলার ধারণক্ষমতা বেশি দেয়া হতো। কোনো ব্যাংকের এসব সূচকগুলো সন্তোষজনক না থাকলে তাদের কোটা কম দেয়া হতো। সাধারণত আগে ব্যাংকগুলোর মোট সম্পদ ডলারে হিসাব করে তার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ ধারণ করতে পারত। ২০০৯ সাল থেকে এ নীতিমালা শিথিল করা হয়। এর পর থেকেই ব্যাংকগুলো তাদের মোট মূলধনের ১৫ শতাংশ সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ধারণ করতে পারছে।
কিন্তু গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কট, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি সব মিলে বিনিয়োগ নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। এর সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে আমদানি ব্যয়ে। অর্থাৎ মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় ব্যাপক হারে কমে গেছে। কিন্তু সামনে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে বেশি। এতে প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই উদ্বৃত্ত বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া সীমার অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা ধরে রাখতে না পারায় ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ডলার কিনে ব্যাংকগুলোকে স্থানীয় মুদ্রা অর্থাৎ টাকা সরবরাহ করত বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে ডলারের বিপরীতে টাকা দিচ্ছে না। এর বিপরীতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক বিল ও বন্ড। বন্ড হলো সরকারের ঋণ নেয়ার একটি উপকরণ। ব্যাংকগুলোর কাছে বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে সরকার ঋণ নিয়ে থাকে।
এখন এ ডলার বিক্রি করে বেকায়দায় পড়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ডলার বিক্রির প্রায় চার হাজার কোটি টাকা আটকে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। বেশি সমস্যায় পড়েছে ইসলামী ব্যাংকগুলো। প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ডলার বিক্রির টাকা এক মাস পরে ফেরত পেলেও ইসলামী ব্যাংকগুলোর টাকা আটকে রাখা হচ্ছে ছয় মাসের জন্য। এ কারণে এসব ব্যাংকের নিট লোকসান বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুক্তি হলো, বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছে, তার বিপরীতে সুবিধাভোগীরা টাকা নিচ্ছেন। এতে মুদ্রা সরবরাহ আরো বেড়ে চলছে। আর মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংকগুলোকে ডলারের বিপরীতে বন্ড দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের গত ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬৬৮ কোটি মার্কিন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে। এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে ইসলামী ব্যাংকগুলোর তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ৯৬৮ কোটি টাকা আটকে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করে তারা বেকায়দায় পড়েছেন। কেননা বাংলাদেশ ব্যাংক ছয় মাস মেয়াদি বন্ড ধরিয়ে দেয়ায় তারা সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। এর কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাচ্ছেন তার সুবিধাভোগীদের স্থানীয় মুদ্রা দেয়া হচ্ছে। এতে ব্যাংকের সংগৃহীত আমানতের অর্থ থেকে রেমিট্যান্সের সুবিধাভোগীদের দেয়া হচ্ছে। আর ১০০ টাকার তহবিল জোগাড় করতে তাদের গড়ে ব্যয় হয় ১০ টাকার ওপরে। কিন্তু ছয় মাস মেয়াদি বন্ডের মেয়াদ শেষে ১০০ টাকার বিপরীতে তিন টাকার নি০চে মুনাফা পাচ্ছেন। এতে তাদের নিট লোকসান হচ্ছে সাত টাকারও ওপরে। আর এ নিট লোকসান সমন্বয় করতে অনেক ব্যাংকই হিমশিম খাচ্ছে। একে তো বিনিয়োগ কমে গেছে। কমে গেছে আমদানি। আমদানি কমে যাওয়ায় এলসি কমিশন থেকে আয়ও কমে গেছে। অপর দিকে পুঁজিবাজারে অনেক ব্যাংক বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু অব্যাহত দরপতনের কারণে নিজস্ব বিনিয়োগ এখন অর্ধেকে নেমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে ডলার বিক্রি করে নিট লোকসান হওয়ায় নিট মুনাফার ওপর চাপ বাড়ছে। অনেক ব্যাংকের মুনাফা এখন নেতিবাচক হয়ে পড়েছে।
No comments