দণিাঞ্চলে ২ লাখ বেল পাট ব্যবসায়ীদের গুদামে by আনোয়ার হোসেন শাহীন
মাগুরার মহম্মদপুরের বালিদিয়ার এলাকার কৃষক আলতাফ হোসেন মোল্যা নিজের
জমিতে প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক দিয়ে কৃষি জমিতে পাট চাষ
করেন।
বছর শেষে উৎপাদিত পাট বিক্রি করে তিনি হিসাব করে দেখেন তার লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠতে চায় না। সব কৃষকের অবস্থা এ রকমই।
কিন্তু উল্টো চিত্র ব্যবসায়ী-ফড়িয়াদের। চাষির মজুদ ফুরালে বাড়ছে
ধান-পাটসহ কৃষিপণ্যের দাম। মওসুমের শুরুতে প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে ৬০০
থেকে এক হাজার টাকায়। সেই পাট এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬ শ’ থেকে ১৭ শ’ টাকায়।
দণিাঞ্চলের ১০ জেলার ব্যবসায়ী-ফড়িয়াদের গুদামে মজুদ রয়েছে দুই লাখ বেল
পাট। কৃষকদের কাছ থেকে কেনা দরের ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে
প্রতি মণ পাট। এতে কৃষক দাম না পেলেও তাদের পকেটে যাবে লাভের প্রায় ২০
কোটি টাকা।
জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় পাটের দাম পড়তে শুরু করে। অক্টোবরের শেষে এসে দরপতন তলানীতে পৌঁছে। ভরা মওসুমে পাটের দাম মাত্রাতিরিক্ত কমে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা নেমে আসে। প্রতি মণ পাট বিক্রি করেন ৬০০-৮০০ টাকায়। এতে প্রতি মণ পাটে তাদের গচ্চা যায় ৪০০-৬০০ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোর আঞ্চলিক অফিস সূত্র জানা গেছে, গত মওসুমে খুলনা বিভাগের যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, খুলনা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট ও সাতীরা জেলায় প্রায় দুই লাখ হেক্টরে পাট চাষ হয়। প্রতি হেক্টরে ৭০ মণ পাট উৎপাদন হলেও এ অঞ্চলে দুই লাখ ৮০ হাজার বেল (৫ মণ=১ বেল) পাট উৎপাদন হয়েছে।
মওসুম শুরুর সাথে সাথে প্রান্তিক ও ুদ্র চাষিরা দেনা পরিশোধ করার জন্য একযোগে পাট বিক্রি শুরু করেন। এতে পাটের বাজার পড়ে যায়। এই সুযোগ নেয় ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা। কম দামে তারা পাট কিনে গুদামজাত করেন। এখন এ রকম বড় ব্যবসায়ীদের গুদামে বর্তমানে প্রায় দুই লাখ বেল পাট মজুদ রয়েছে। এখন তারা পাট বাজারে ছাড়ছে। চাষির ঘরের মজুদ পাট শেষ হতে থাকে আর বাজার চড়তে থাকে। এতে এখন তাদের বাম্পার লাভ হচ্ছে। এ অঞ্চলের পাটের প্রধান বিক্রয়কেন্দ্র খুলনার দৌলতপুর।
ব্যবসায়ীরা জানান, এসব বাজারে এখন অনেক পাট উঠছে। এসব পাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা সবাই ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া। ভরা মওসুমে যে পাটের প্রতি মণের দাম ৬০০ টাকা ছিল, সে মানের পাট এখন ১২ শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৯০০ টাকার পাট বিক্রি হচ্ছে ১৪ শ’ টাকায়। ১২ শ’ টাকার পাট বিক্রি হচ্ছে ১৭ শ’ টাকায়। মজুদদার পাটব্যবসায়ীদের বাম্পার লাভ হচ্ছে। প্রতি মণে তারা ৭০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন। এতে লাভের ২০ কোটি টাকা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। অথচ পাটের উৎপাদনকারী কৃষক মওসুমের শুরুতে যে দামে পাট বিক্রি করেছেন, তাদের উৎপাদন খরচই ওঠেনি।
কৃষকেরা বলেন, পাট উৎপাদনের জন্য, জমি পরিষ্কার, জমিচাষ, আইল তৈরি, বীজ ক্রয়, বীজতলা তৈরি, চারা উত্তোলন-রোপণ, সেচ, সার, কীটনাশক, কর্তন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণসহ কৃষকের প্রতিটি ধাপে অর্থ ব্যয় করতে হয়। এতে এক কেজি পাট মাঠ থেকে বাড়ি পর্যন্ত আনতে ২০ টাকা খরচই হয়ে যায়। এর সাথে জমির ভাড়া ও কৃষকের নিজের শ্রমের মজুরি ধরলে এ ব্যয় আরো বেড়ে যায়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকতো রয়েছেই। এ ছাড়া সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হলে কৃষকের পাট পচাতে ভোগান্তির শেষ থাকে না।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি উপকরণসহ শ্রমের দাম যে হারে বাড়ছে সে হারে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের দাম বাড়ছে না। এর পেছনে তারা সরকারের অভ্যন্তরীণ বাজারনীতিকে দায়ী করেছেন। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ কৃষকই দরিদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের। তারা ঋণ করে ফসল উৎপাদন করেন। ফসল ওঠার সাথে সাথে বিক্রি করে দেনা শোধ করতে হয়। বাকিটা দিয়ে সারা বছরের খাবার ও পরবর্তী ফসল আবাদের খরচ জোগাতে হয়। মওসুমি ফসল ওঠার সাথে সাথে তারা একযোগে ফসল বিক্রির জন্য বাজারে আনতে বাধ্য হন। সরকারের সঠিক ক্রয়নীতি না থাকায় এ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করে একশ্রেণীর ফড়িয়া ও দালালেরা। কৃষকের গোলা শূন্য হলে কৃষি দ্রব্যের দাম বাড়ে। আর এ দামের সুবিধা পান মধ্যস্বত্বভোগীরা, বঞ্চিত হন কৃষক।
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা গ্রামের পাটচাষি মোসলেম উদ্দিন মোল্যা বলেন, মওসুমের শুরুতে বাজারে পাটের কোনো চাহিদা নেই। পাট বিক্রি করা যাচ্ছে না, ফেলেও দেয়া যাচ্ছে না। পানির দামে বিক্রি করে দেই। আমাদের হাত থেকে পাট ফুরিয়ে যাওয়ার পর পাটের দাম বেড়ে গেছে। তাতে কৃষকের কোনো উপকারে আসবে না বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: শরিফ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, কৃষিপণ্যের নায্য দাম পাওয়ার জন্য বিপণন নীতিমালা করা প্রয়োজন। কৃষক নায্য দাম পেলে কৃষির উন্নয়নে তা সহায়ক হবে।
জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় পাটের দাম পড়তে শুরু করে। অক্টোবরের শেষে এসে দরপতন তলানীতে পৌঁছে। ভরা মওসুমে পাটের দাম মাত্রাতিরিক্ত কমে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা নেমে আসে। প্রতি মণ পাট বিক্রি করেন ৬০০-৮০০ টাকায়। এতে প্রতি মণ পাটে তাদের গচ্চা যায় ৪০০-৬০০ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোর আঞ্চলিক অফিস সূত্র জানা গেছে, গত মওসুমে খুলনা বিভাগের যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, খুলনা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট ও সাতীরা জেলায় প্রায় দুই লাখ হেক্টরে পাট চাষ হয়। প্রতি হেক্টরে ৭০ মণ পাট উৎপাদন হলেও এ অঞ্চলে দুই লাখ ৮০ হাজার বেল (৫ মণ=১ বেল) পাট উৎপাদন হয়েছে।
মওসুম শুরুর সাথে সাথে প্রান্তিক ও ুদ্র চাষিরা দেনা পরিশোধ করার জন্য একযোগে পাট বিক্রি শুরু করেন। এতে পাটের বাজার পড়ে যায়। এই সুযোগ নেয় ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা। কম দামে তারা পাট কিনে গুদামজাত করেন। এখন এ রকম বড় ব্যবসায়ীদের গুদামে বর্তমানে প্রায় দুই লাখ বেল পাট মজুদ রয়েছে। এখন তারা পাট বাজারে ছাড়ছে। চাষির ঘরের মজুদ পাট শেষ হতে থাকে আর বাজার চড়তে থাকে। এতে এখন তাদের বাম্পার লাভ হচ্ছে। এ অঞ্চলের পাটের প্রধান বিক্রয়কেন্দ্র খুলনার দৌলতপুর।
ব্যবসায়ীরা জানান, এসব বাজারে এখন অনেক পাট উঠছে। এসব পাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা সবাই ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া। ভরা মওসুমে যে পাটের প্রতি মণের দাম ৬০০ টাকা ছিল, সে মানের পাট এখন ১২ শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৯০০ টাকার পাট বিক্রি হচ্ছে ১৪ শ’ টাকায়। ১২ শ’ টাকার পাট বিক্রি হচ্ছে ১৭ শ’ টাকায়। মজুদদার পাটব্যবসায়ীদের বাম্পার লাভ হচ্ছে। প্রতি মণে তারা ৭০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন। এতে লাভের ২০ কোটি টাকা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। অথচ পাটের উৎপাদনকারী কৃষক মওসুমের শুরুতে যে দামে পাট বিক্রি করেছেন, তাদের উৎপাদন খরচই ওঠেনি।
কৃষকেরা বলেন, পাট উৎপাদনের জন্য, জমি পরিষ্কার, জমিচাষ, আইল তৈরি, বীজ ক্রয়, বীজতলা তৈরি, চারা উত্তোলন-রোপণ, সেচ, সার, কীটনাশক, কর্তন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণসহ কৃষকের প্রতিটি ধাপে অর্থ ব্যয় করতে হয়। এতে এক কেজি পাট মাঠ থেকে বাড়ি পর্যন্ত আনতে ২০ টাকা খরচই হয়ে যায়। এর সাথে জমির ভাড়া ও কৃষকের নিজের শ্রমের মজুরি ধরলে এ ব্যয় আরো বেড়ে যায়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকতো রয়েছেই। এ ছাড়া সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হলে কৃষকের পাট পচাতে ভোগান্তির শেষ থাকে না।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি উপকরণসহ শ্রমের দাম যে হারে বাড়ছে সে হারে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের দাম বাড়ছে না। এর পেছনে তারা সরকারের অভ্যন্তরীণ বাজারনীতিকে দায়ী করেছেন। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ কৃষকই দরিদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের। তারা ঋণ করে ফসল উৎপাদন করেন। ফসল ওঠার সাথে সাথে বিক্রি করে দেনা শোধ করতে হয়। বাকিটা দিয়ে সারা বছরের খাবার ও পরবর্তী ফসল আবাদের খরচ জোগাতে হয়। মওসুমি ফসল ওঠার সাথে সাথে তারা একযোগে ফসল বিক্রির জন্য বাজারে আনতে বাধ্য হন। সরকারের সঠিক ক্রয়নীতি না থাকায় এ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করে একশ্রেণীর ফড়িয়া ও দালালেরা। কৃষকের গোলা শূন্য হলে কৃষি দ্রব্যের দাম বাড়ে। আর এ দামের সুবিধা পান মধ্যস্বত্বভোগীরা, বঞ্চিত হন কৃষক।
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা গ্রামের পাটচাষি মোসলেম উদ্দিন মোল্যা বলেন, মওসুমের শুরুতে বাজারে পাটের কোনো চাহিদা নেই। পাট বিক্রি করা যাচ্ছে না, ফেলেও দেয়া যাচ্ছে না। পানির দামে বিক্রি করে দেই। আমাদের হাত থেকে পাট ফুরিয়ে যাওয়ার পর পাটের দাম বেড়ে গেছে। তাতে কৃষকের কোনো উপকারে আসবে না বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: শরিফ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, কৃষিপণ্যের নায্য দাম পাওয়ার জন্য বিপণন নীতিমালা করা প্রয়োজন। কৃষক নায্য দাম পেলে কৃষির উন্নয়নে তা সহায়ক হবে।
No comments