বৃহত্তর জাতিসত্তার জাতীয়তাবাদ বনাম ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জাতীয়তাবাদ by বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর
পার্বত্য চট্টগ্রামে সমাজ পরিবর্তনের
সমস্যাগুলো দেখা দিয়েছে। এ সকল পরিবর্তনকে বিচার করা জরুরী কৃষক
অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে।
সমতল ভূমির
কৃষক অভ্যুত্থান এবং পাহাড়ী জনপদে কৃষক অভ্যুত্থানের চরিত্র এক রকম নয়।
পাহাড়ী এলাকার তিন রাজার ল্যান্ডলর্ড রাষ্ট্র এবং স্বাধীন বাংলাদেশের
বুর্জোয়া রাষ্ট্রের রাষ্ট্রশক্তির জন্য কনটেস্ট করার ধরন ভিন্ন। পাহাড়ী
এলাকার ল্যান্ডলর্ড রাষ্ট্রের বিরম্নদ্ধে কৃষক অভ্যুত্থান হয়নি। কৃষক
অভ্যুত্থান ঘটেছে বুর্জোয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। পাহাড়ী এলাকার সশস্ত্র
সংগ্রামের তিনটি দিক হচ্ছে : একটি সম্ভাব্য রাষ্ট্রশক্তির প্রত্যাশা, এই
প্রত্যাশা গ্রহণের স্ট্র্যাটেজি এবং কর্মসূচী, পরস্পর প্রবিষ্ট প্রতিরোধের
আখ্যানে। অন্যদিকে, পাহাড়ী জনসাধারণের ল্যান্ডলর্ড রাষ্ট্র ছিন্নবিচ্ছিন্ন
করে বুর্জোয়া রাষ্ট্র প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সাহায্যে অগ্রসর হয়েছে এবং
নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের পিছু পিছু অগ্রসর হয়েছে বাঙালী
সেটেলাররা, যাদের প্রশাসন ও সেনাবাহিনী নাগরিক অধিকার প্রদান করেছে। তাহলে
পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসকে কিভাবে দেখব? পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস
কি কলোনিয়াল রাষ্ট্রের ইতিহাস? কিংবা পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস স্বাধীন
বুর্জোয়া রাষ্ট্রের ইতিহাস? এই প্রশ্নের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব, একটা
বৈপরীত্য স্পষ্ট। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালী সেটেলাররা কি বাঙালী-পাহাড়ী
নির্বিশেষে সকল নাগরিকের পৰে কথা বলতে সৰম? অপরপৰে পার্বত্য চট্টগ্রামের
আদি বাসিন্দারা কি পাহাড়ী-বাঙালী নির্বিশেষে সকল নাগরিকের পৰে কথা বলতে
সৰম? মনে হয় একটা 'বিদেশী শক্তি' (প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী) নাগরিকবিহীন
একটা রাষ্ট্রের ওপর শাসন করে চলেছে। সেখানে সাধারণ মানুষের সম্মতি নয়, একটা
ভূখ- 'জয়' করার অধিকার বাসত্মবে কার্যকর আছে। সেজন্য মনে হয়, পার্বত্য
চট্টগ্রামের রাষ্ট্র ব্যবস্থা একটা কনোনিয়াল রাষ্ট্রের ব্যবস্থা, যেখানে
সিভিল সোসাইটি নেই।
এই পরিসরে সেটেলার বাঙালীদের অতীতের সঙ্গে পাহাড়ীদের অতীতের কোন সম্পর্ক নেই। এই সম্পর্কহীনতার মধ্যে রাষ্ট্রের কমান্ডিং ভয়েস থরথর করে উঠছে, যে-ভয়েস ইতিহাসের একটা অতীত পাহাড়ীদের জন্য নমিনেট করে দিচ্ছে। এই নমিনেটেড ইতিহাসের সঙ্গে পাহাড়ীদের কোন সম্পর্ক নেই। সমস্যা হচ্ছে, ইতিহাসের ডিসকোর্স এই চয়েসের ওপর একানত্মভাবে নির্ভরশীল। বাছাই করার অর্থ হচ্ছে অতীতের সঙ্গে (কোন্ অতীত, কার অতীত) সম্পর্ক তৈরি করা সিভিল সোসাইটির অসংখ্য কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলা (নৃবিজ্ঞান এবং ইতিহাসের এৰেত্রে কাজ করা দরকার)। কাজ না হওয়ার দরম্নন রাষ্ট্রের গর্জন কেবল শোনা যায়, নিম্ন কণ্ঠের আওয়াজ হারিয়ে যায়।
এসব প্রশ্ন এখন পাবলিক স্পেসে দেখা দিচ্ছে এবং শোনা যাচ্ছে। এসব প্রশ্ন হেজিমনির প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধরন। ইতিহাসে, রাজনীতিতে এবং নৃবিজ্ঞানের এসব ভেসে উঠছে। ভেসে উঠছে নাগরিক এবং রাষ্ট্রের মিথস্ক্রিয়ার মধ্যে। এ সবের দরম্নন রাষ্ট্রের জন্য (পাহাড়ী এলাকার রাষ্ট্রের জন্য) একটা স্থিতিশীল ভিত্তি খুঁজে পাওয়া দুরূহ হয়ে ওঠে। ইতিহাস কিংবা যে-কোন জ্ঞান চর্চার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ৰেত্রে প্রভুত্ব এবং অধসত্মনতার ক্রিটিক্যাল সম্পর্ক বাদ দিয়ে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয় না। পাহাড়ী জাতীয়তা ও জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালী জাতীয়তা ও জাতীয়তাবাদ এক না। সে জন্য দু'সত্মরের জাতীয়তা এবং জাতীয়তাবাদ সম্পর্কভিত্তিক, এই সম্পর্কিক ভিত্তি উন্মোচন করে ৰমতা এবং এসার্ট করে অধসত্মন অটোনমি। আবার, আমরা কাজ করে চলেছি জাতীয়তাবাদী মতাদর্শ এবং এই মতাদর্শের ক্রিটিকের ৰেত্রে, সেজন্য সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। প্রতিটি ডিসকোর্স জাতীয়তাবাদী ইতিহাসের সীমাবদ্ধতা এবং প্রয়োজন মেলে ধরে, দুই বিরোধী জাতীয়তাবাদের মধ্যে সক্রিয় পাহাড়ী জনসাধারণ এবং বাঙালী জনসাধারণ মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণ করেছে। দুই পৰের জনসাধারণ হয়ে উঠেছে পলিটিক্যাল এ্যাক্টর।
এই মুখোমুখি অবস্থান কিংবা পরস্পরবিরোধী অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াইকে ভিন্ন দ্যোতনা দিচ্ছে। অন্যপৰে, সেটেলার মহিলাদের জাতীয়তা এবং জাতীয়তাবাদ একরঙা, তারা ঘরের মধ্যে থাকে, সমতল ভূমির ঘরসংসারের মতাদর্শ মেনে চলে।
আবার, সমতল ভূমির সেকু্যলার মতাদর্শের বদলে ধর্মীয় মতাদর্শ সেটেলার মুসলমানদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সে ৰেত্রে প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী ধর্মীয় মতাদর্শ সমর্থন করছে। সেজন্য ধর্মভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রয়াস পাহাড়িয়া অঞ্চলের সেটেলার কমিউনিটির মধ্যে পরিলৰিত হচ্ছে। অপরদিকে পাহাড়িয়া কমিউনিটির মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মভিত্তিক সমাজ এবং খ্রীস্টান ধর্মভিত্তিক সমাজ পূর্ব থেকেই শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে। বৃহত্তর জাতিসত্তার জাতীয়তা এবং জাতীয়তাবাদ, বর্তমান মুহূর্তে ৰুদ্র জাতিসত্তার জাতীয়তা এবং জাতীয়তাবাদের মুখোমুখি অবস্থানে আছে। এই অবস্থান থেকে থেকে বৈরিতা তৈরি করে চলেছে।
এই পরিসরে সেটেলার বাঙালীদের অতীতের সঙ্গে পাহাড়ীদের অতীতের কোন সম্পর্ক নেই। এই সম্পর্কহীনতার মধ্যে রাষ্ট্রের কমান্ডিং ভয়েস থরথর করে উঠছে, যে-ভয়েস ইতিহাসের একটা অতীত পাহাড়ীদের জন্য নমিনেট করে দিচ্ছে। এই নমিনেটেড ইতিহাসের সঙ্গে পাহাড়ীদের কোন সম্পর্ক নেই। সমস্যা হচ্ছে, ইতিহাসের ডিসকোর্স এই চয়েসের ওপর একানত্মভাবে নির্ভরশীল। বাছাই করার অর্থ হচ্ছে অতীতের সঙ্গে (কোন্ অতীত, কার অতীত) সম্পর্ক তৈরি করা সিভিল সোসাইটির অসংখ্য কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলা (নৃবিজ্ঞান এবং ইতিহাসের এৰেত্রে কাজ করা দরকার)। কাজ না হওয়ার দরম্নন রাষ্ট্রের গর্জন কেবল শোনা যায়, নিম্ন কণ্ঠের আওয়াজ হারিয়ে যায়।
এসব প্রশ্ন এখন পাবলিক স্পেসে দেখা দিচ্ছে এবং শোনা যাচ্ছে। এসব প্রশ্ন হেজিমনির প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধরন। ইতিহাসে, রাজনীতিতে এবং নৃবিজ্ঞানের এসব ভেসে উঠছে। ভেসে উঠছে নাগরিক এবং রাষ্ট্রের মিথস্ক্রিয়ার মধ্যে। এ সবের দরম্নন রাষ্ট্রের জন্য (পাহাড়ী এলাকার রাষ্ট্রের জন্য) একটা স্থিতিশীল ভিত্তি খুঁজে পাওয়া দুরূহ হয়ে ওঠে। ইতিহাস কিংবা যে-কোন জ্ঞান চর্চার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ৰেত্রে প্রভুত্ব এবং অধসত্মনতার ক্রিটিক্যাল সম্পর্ক বাদ দিয়ে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয় না। পাহাড়ী জাতীয়তা ও জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালী জাতীয়তা ও জাতীয়তাবাদ এক না। সে জন্য দু'সত্মরের জাতীয়তা এবং জাতীয়তাবাদ সম্পর্কভিত্তিক, এই সম্পর্কিক ভিত্তি উন্মোচন করে ৰমতা এবং এসার্ট করে অধসত্মন অটোনমি। আবার, আমরা কাজ করে চলেছি জাতীয়তাবাদী মতাদর্শ এবং এই মতাদর্শের ক্রিটিকের ৰেত্রে, সেজন্য সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। প্রতিটি ডিসকোর্স জাতীয়তাবাদী ইতিহাসের সীমাবদ্ধতা এবং প্রয়োজন মেলে ধরে, দুই বিরোধী জাতীয়তাবাদের মধ্যে সক্রিয় পাহাড়ী জনসাধারণ এবং বাঙালী জনসাধারণ মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণ করেছে। দুই পৰের জনসাধারণ হয়ে উঠেছে পলিটিক্যাল এ্যাক্টর।
এই মুখোমুখি অবস্থান কিংবা পরস্পরবিরোধী অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াইকে ভিন্ন দ্যোতনা দিচ্ছে। অন্যপৰে, সেটেলার মহিলাদের জাতীয়তা এবং জাতীয়তাবাদ একরঙা, তারা ঘরের মধ্যে থাকে, সমতল ভূমির ঘরসংসারের মতাদর্শ মেনে চলে।
আবার, সমতল ভূমির সেকু্যলার মতাদর্শের বদলে ধর্মীয় মতাদর্শ সেটেলার মুসলমানদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সে ৰেত্রে প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী ধর্মীয় মতাদর্শ সমর্থন করছে। সেজন্য ধর্মভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রয়াস পাহাড়িয়া অঞ্চলের সেটেলার কমিউনিটির মধ্যে পরিলৰিত হচ্ছে। অপরদিকে পাহাড়িয়া কমিউনিটির মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মভিত্তিক সমাজ এবং খ্রীস্টান ধর্মভিত্তিক সমাজ পূর্ব থেকেই শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে। বৃহত্তর জাতিসত্তার জাতীয়তা এবং জাতীয়তাবাদ, বর্তমান মুহূর্তে ৰুদ্র জাতিসত্তার জাতীয়তা এবং জাতীয়তাবাদের মুখোমুখি অবস্থানে আছে। এই অবস্থান থেকে থেকে বৈরিতা তৈরি করে চলেছে।
No comments