মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার- আপিলে সমতা আনতে আইন সংশোধন হচ্ছে by জাহাঙ্গীর আলম
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে রাষ্ট্র ও
আসামিপক্ষের মধ্যে আপিল করার ক্ষেত্রে সমতা আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ
(ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বর্তমান আইনে আসামি দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারলেও বাদী অর্থাৎ রাষ্ট্রপক্ষ শুধু খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া শাস্তির মাত্রা বাড়াতে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ নেই। আইন সংশোধন হলে রাষ্ট্রপক্ষ এ সুযোগ পাবে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয়। খুন, ধর্ষণ ও নির্বিচার হত্যার দায়ে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায় ঘোষণার পরপরই তরুণ প্রজন্ম বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাঁরা রায় প্রত্যাখ্যান করে রাস্তায় নেমে আসেন। কাদের মোল্লাসহ মানবতাবিরোধী সব অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে পাঁচ দিন ধরে রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে তারুণ্যের এই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
রায়ের পরপরই রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু পরে জানা যায়, বর্তমান আইনে শুধু যে অভিযোগ থেকে কাদের মোল্লা খালাস পেয়েছেন, একমাত্র তার বিরুদ্ধেই আপিল করতে পারবে সরকার। এ অবস্থায় ‘জামায়াতের সঙ্গে সরকারের সমঝোতার’ গুজব ডালপালা মেলতে থাকে। তবে শুরু থেকেই সরকারের মন্ত্রী, সাংসদেরা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে আসছেন।
আবার একাত্মতা প্রকাশ করতে শাহবাগে গিয়ে কোনো কোনো নেতা নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখিও হয়েছেন।
সর্বশেষ গত শুক্রবার লাখো জনতার মহাসমাবেশে মানবতাবিরোধীদের ফাঁসি দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তরুণেরা। সরকারের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা যায়, কাদের মোল্লার রায়ের পর সারা দেশে সৃষ্ট অসন্তোষ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়। তাঁরা আপিলের সিদ্ধান্ত নিলেও আইনে দণ্ড বাড়ানোর আবেদনের সুযোগ না থাকায় সংশোধনী আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল শনিবারও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার সূত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, আপিলের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের সমান সুযোগ রেখে আইনের সংশোধনী প্রস্তাব সংসদের চলতি অধিবেশনেই তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী শফিক আহমেদ গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনের সংশোধনী আনার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। আজ রোববার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংসদের চলতি অধিবেশনেই এ সংশোধনী আনা হবে।
এর আগে গতকাল দুপুরে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আপিলের সমান সুযোগ আনতে আইনের ২১(২) ধারায় সংশোধনী আনার চিন্তা চলছে। এই সংশোধনী হলে রাষ্ট্রপক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে।
বর্তমান সরকারের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর দুই দফা সংশোধনী আনা হয়। ২০০৯ সালের ৯ জুলাই আনা সংশোধনীতে কেবল খালাসের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ সংযোজন করা হয়। মূল আইনে শুধু আসামিপক্ষের আপিলের বিধান ছিল।
২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফা সংশোধনীতে আপিলের সময়সীমা ৬০ দিন থেকে কমিয়ে ৩০ দিন করা হয়। আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারের বিধানও সংযুক্ত করা হয়। এক ট্রাইব্যুনাল থেকে আরেক ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া যে দিন রায় হবে, সে দিনই রায়ের সত্যায়িত কপি উভয় পক্ষকে বিনা মূল্যে দেওয়ার বিধান করা হয়।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান ও নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে কোনো পক্ষেরই আপিলের সুযোগ ছিল না। সেটি ছিল একটি সামরিক আদালত। তবে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতগুলোতে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে দুই পক্ষেরই আপিল করার সমান সুযোগ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম সংবিধির ৮১ অনুচ্ছেদে খালাস বা দোষী সাব্যস্তকরণ বা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের বিধান রয়েছে। সাবেক যুগোস্লাভিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটিওয়াই) ও রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের (আইসিটিআর) সংবিধিতেও দুই পক্ষের আপিলের সমান সুযোগ রয়েছে। আইসিটিওয়াইয়ের ২৫ অনুচ্ছেদ ও আইসিটিআরের ২৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে আদালত ব্যর্থ হলে বা শাস্তিদানে ভুল করলে রাষ্ট্রপক্ষ বা আসামি আপিল করতে পারবে। এতে বলা হয়, আপিল আদালত ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তকে বহাল রাখতে পারেন, সংশোধন করতে পারেন বা বিপরীত সিদ্ধান্তও দিতে পারেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া শাস্তির মাত্রা বাড়াতে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ নেই। আইন সংশোধন হলে রাষ্ট্রপক্ষ এ সুযোগ পাবে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয়। খুন, ধর্ষণ ও নির্বিচার হত্যার দায়ে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায় ঘোষণার পরপরই তরুণ প্রজন্ম বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাঁরা রায় প্রত্যাখ্যান করে রাস্তায় নেমে আসেন। কাদের মোল্লাসহ মানবতাবিরোধী সব অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে পাঁচ দিন ধরে রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে তারুণ্যের এই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
রায়ের পরপরই রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু পরে জানা যায়, বর্তমান আইনে শুধু যে অভিযোগ থেকে কাদের মোল্লা খালাস পেয়েছেন, একমাত্র তার বিরুদ্ধেই আপিল করতে পারবে সরকার। এ অবস্থায় ‘জামায়াতের সঙ্গে সরকারের সমঝোতার’ গুজব ডালপালা মেলতে থাকে। তবে শুরু থেকেই সরকারের মন্ত্রী, সাংসদেরা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে আসছেন।
আবার একাত্মতা প্রকাশ করতে শাহবাগে গিয়ে কোনো কোনো নেতা নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখিও হয়েছেন।
সর্বশেষ গত শুক্রবার লাখো জনতার মহাসমাবেশে মানবতাবিরোধীদের ফাঁসি দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তরুণেরা। সরকারের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা যায়, কাদের মোল্লার রায়ের পর সারা দেশে সৃষ্ট অসন্তোষ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়। তাঁরা আপিলের সিদ্ধান্ত নিলেও আইনে দণ্ড বাড়ানোর আবেদনের সুযোগ না থাকায় সংশোধনী আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল শনিবারও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার সূত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, আপিলের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের সমান সুযোগ রেখে আইনের সংশোধনী প্রস্তাব সংসদের চলতি অধিবেশনেই তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী শফিক আহমেদ গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনের সংশোধনী আনার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। আজ রোববার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংসদের চলতি অধিবেশনেই এ সংশোধনী আনা হবে।
এর আগে গতকাল দুপুরে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আপিলের সমান সুযোগ আনতে আইনের ২১(২) ধারায় সংশোধনী আনার চিন্তা চলছে। এই সংশোধনী হলে রাষ্ট্রপক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে।
বর্তমান সরকারের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর দুই দফা সংশোধনী আনা হয়। ২০০৯ সালের ৯ জুলাই আনা সংশোধনীতে কেবল খালাসের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ সংযোজন করা হয়। মূল আইনে শুধু আসামিপক্ষের আপিলের বিধান ছিল।
২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফা সংশোধনীতে আপিলের সময়সীমা ৬০ দিন থেকে কমিয়ে ৩০ দিন করা হয়। আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারের বিধানও সংযুক্ত করা হয়। এক ট্রাইব্যুনাল থেকে আরেক ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া যে দিন রায় হবে, সে দিনই রায়ের সত্যায়িত কপি উভয় পক্ষকে বিনা মূল্যে দেওয়ার বিধান করা হয়।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান ও নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে কোনো পক্ষেরই আপিলের সুযোগ ছিল না। সেটি ছিল একটি সামরিক আদালত। তবে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতগুলোতে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে দুই পক্ষেরই আপিল করার সমান সুযোগ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম সংবিধির ৮১ অনুচ্ছেদে খালাস বা দোষী সাব্যস্তকরণ বা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের বিধান রয়েছে। সাবেক যুগোস্লাভিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটিওয়াই) ও রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের (আইসিটিআর) সংবিধিতেও দুই পক্ষের আপিলের সমান সুযোগ রয়েছে। আইসিটিওয়াইয়ের ২৫ অনুচ্ছেদ ও আইসিটিআরের ২৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে আদালত ব্যর্থ হলে বা শাস্তিদানে ভুল করলে রাষ্ট্রপক্ষ বা আসামি আপিল করতে পারবে। এতে বলা হয়, আপিল আদালত ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তকে বহাল রাখতে পারেন, সংশোধন করতে পারেন বা বিপরীত সিদ্ধান্তও দিতে পারেন।
No comments