বইয়ের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার মেলা by ইব্রাহিম নোমান
অমর একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের কাছে একুশে
বইমেলা নামেই পরিচিত। স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে
অন্যতম এই মেলার ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশের মতোই প্রাচীন।
যে মেলা বইপ্রেমী মানুষের প্রাণে দোলা দেয়। ভিড় ঠেলে প্রয়োজনীয় বইটি হাতে
পাওয়ার পর আনন্দে চিক চিক করে ওঠে মুখ। এসবই আমাদের কাছে খুব চেনা এবং জানা
একটি বিষয়। কিন্তু আমরা অনেকেই এই মেলার ইতিহাস জানি না। চলো চট করে জেনে
নেই অমর একুশে গ্রন্থমেলার ইতিহাস।
১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমীর বর্ধমান হাউসের সামনের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার শুরু করেন। এই ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমানে মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশী শরণার্থী লেখকদের লেখা বই। ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমী মহান একুশে মেলা উপলক্ষে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ হ্রাসকৃত মূল্যে একাডেমী প্রকাশিত বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এর পাশাপাশি মুক্তধারা, স্টান্ডার্ড পাবলিশার্স এবং এদের দেখাদেখি আরও কেউ কেউ বাংলা একাডেমীর মাঠে নিজেদের বই বিক্রির ব্যবস্থা করে।
১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমী ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমী তার নিজস্ব প্রকাশিত বই প্রদর্শন ও ম্যুরাল প্রদর্শনীর আয়োজন করে। বই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রফেসর আবু মহাম্মেদ হবীবুল্লাহ। ঐ গণজমায়েতকে সামনে রেখে ঢাকার বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান একাডেমীর পূর্বদিকের দেয়াল বরাবর নিজেদের পছন্দমতো জায়গায় যে যার মতো কিছু স্টল নির্মাণ করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এতে বাংলা একাডেমীর কোন ভূমিকা ছিল না শুধু মাঠের জায়গাটুকু দেয়া ছাড়া।
১৯৭৫ সালে একাডেমী মাঠের কিছু জায়গা চুনের দাগ দিয়ে প্রকাশকদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়। প্রকাশকরা যে যার মতো স্টল তৈরি করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এ অবস্থা চলতে থাকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। এ সময় পর্যন্ত এই আয়োজনের কোন স্বীকৃতি ছিল না। কোন নামও দেয়া হয়নি। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমীর তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমীকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। এই সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ঐ সময় অমর একুশে উপলক্ষে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলা অনুষ্ঠিত হতো। মেলার তখন নাম ছিল একুশে গ্রন্থমেলা।
১৯৮১ সালের একুশে বইমেলার মেয়াদ কমিয়ে ২১ দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন করা হয়। কিন্তু প্রকাশকদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালে মেলার মেয়াদ পুনরায় বৃদ্ধি করে করা হয় ২১ দিন। মেলার উদ্যোক্তা বাংলা একাডেমী। সহযোগিতায় ছিল জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। ১৯৮৩ সালে মেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকে বাদ দেয়া হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে এই মেলা মেলার নতুন নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। আগে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হতো। এরপর ক্রেতা, দর্শক ও বিক্রেতাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৪ সাল থেকে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এই মেলা নিয়মিতভাবে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
মেলায় প্রায় পাঁচ শ’ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সারিবদ্ধ স্টলের মধ্যে একপাশে থাকে শিশু কর্নার। আরেক পাশে সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের স্টল। এই সংখ্যা অবশ্য কোন কোন বছর বাড়ে আবার কমে। জানোই তো, বইমেলা মানে এত্তো এত্তো বই। বইমেলায় যেমন অনেক বই পাওয়া যায় তেমনি অনেক মানুষও দেখা যায়। তাই বড়দের ছাড়া মেলার দিকে পা বাড়িও না। মেলায় গিয়ে ভুলেও বড়দের হাত ছাড়বে না। যদি ভুল করে ছেড়ে দাও, তাহলে সোজা এলাউন্স রুমে গিয়ে হাজির হবে। তারপর মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে বলবে, তোমার নিজের নাম। তারপর বলবে তোমরা যে যেখানেই থাকো, জলদি করে এলাউন্স রুমে চলে আসো।
বইমেলা তো চলবে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে। শুক্রবার একটা গেছে, এই পুরো মাসে আরও তিনটা শুক্রবার পাবে তোমরা। শুক্রবার দিনেরবেলা পুরোটা সময় কিন্তু শুধু তোমাদের। চাইলে অবশ্য তোমরা এই তিনদিন ছাড়া অন্য যে কোন দিনই যেতে পারো। বড়রা যে বই তোমাকে পছন্দ করে কিনে দেবে, তা নেয়ার পর তোমার পছন্দের বইও কিনে নিও।
এবার একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণকে চারজন ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, বরকত ও শফিউরের নামে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়া নজরুল মঞ্চের সামনে শিশু কর্নারে থাকবে শিশু-কিশোর বিষয়ক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। প্রতিবারের মতো এবারেও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে নজরুল মঞ্চে। মেলার প্রচার কার্যক্রমের জন্যে তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে।
এবারের মেলাও তার ব্যতিক্রম হবে না। সুতরাং আর দেরি নয়। সময় পেলেই চলে এসো বইমেলায়।
১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমীর বর্ধমান হাউসের সামনের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার শুরু করেন। এই ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমানে মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশী শরণার্থী লেখকদের লেখা বই। ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমী মহান একুশে মেলা উপলক্ষে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ হ্রাসকৃত মূল্যে একাডেমী প্রকাশিত বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এর পাশাপাশি মুক্তধারা, স্টান্ডার্ড পাবলিশার্স এবং এদের দেখাদেখি আরও কেউ কেউ বাংলা একাডেমীর মাঠে নিজেদের বই বিক্রির ব্যবস্থা করে।
১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমী ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমী তার নিজস্ব প্রকাশিত বই প্রদর্শন ও ম্যুরাল প্রদর্শনীর আয়োজন করে। বই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রফেসর আবু মহাম্মেদ হবীবুল্লাহ। ঐ গণজমায়েতকে সামনে রেখে ঢাকার বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান একাডেমীর পূর্বদিকের দেয়াল বরাবর নিজেদের পছন্দমতো জায়গায় যে যার মতো কিছু স্টল নির্মাণ করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এতে বাংলা একাডেমীর কোন ভূমিকা ছিল না শুধু মাঠের জায়গাটুকু দেয়া ছাড়া।
১৯৭৫ সালে একাডেমী মাঠের কিছু জায়গা চুনের দাগ দিয়ে প্রকাশকদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়। প্রকাশকরা যে যার মতো স্টল তৈরি করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এ অবস্থা চলতে থাকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। এ সময় পর্যন্ত এই আয়োজনের কোন স্বীকৃতি ছিল না। কোন নামও দেয়া হয়নি। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমীর তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমীকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। এই সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ঐ সময় অমর একুশে উপলক্ষে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলা অনুষ্ঠিত হতো। মেলার তখন নাম ছিল একুশে গ্রন্থমেলা।
১৯৮১ সালের একুশে বইমেলার মেয়াদ কমিয়ে ২১ দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন করা হয়। কিন্তু প্রকাশকদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালে মেলার মেয়াদ পুনরায় বৃদ্ধি করে করা হয় ২১ দিন। মেলার উদ্যোক্তা বাংলা একাডেমী। সহযোগিতায় ছিল জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। ১৯৮৩ সালে মেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকে বাদ দেয়া হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে এই মেলা মেলার নতুন নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। আগে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হতো। এরপর ক্রেতা, দর্শক ও বিক্রেতাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৪ সাল থেকে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এই মেলা নিয়মিতভাবে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
মেলায় প্রায় পাঁচ শ’ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সারিবদ্ধ স্টলের মধ্যে একপাশে থাকে শিশু কর্নার। আরেক পাশে সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের স্টল। এই সংখ্যা অবশ্য কোন কোন বছর বাড়ে আবার কমে। জানোই তো, বইমেলা মানে এত্তো এত্তো বই। বইমেলায় যেমন অনেক বই পাওয়া যায় তেমনি অনেক মানুষও দেখা যায়। তাই বড়দের ছাড়া মেলার দিকে পা বাড়িও না। মেলায় গিয়ে ভুলেও বড়দের হাত ছাড়বে না। যদি ভুল করে ছেড়ে দাও, তাহলে সোজা এলাউন্স রুমে গিয়ে হাজির হবে। তারপর মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে বলবে, তোমার নিজের নাম। তারপর বলবে তোমরা যে যেখানেই থাকো, জলদি করে এলাউন্স রুমে চলে আসো।
বইমেলা তো চলবে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে। শুক্রবার একটা গেছে, এই পুরো মাসে আরও তিনটা শুক্রবার পাবে তোমরা। শুক্রবার দিনেরবেলা পুরোটা সময় কিন্তু শুধু তোমাদের। চাইলে অবশ্য তোমরা এই তিনদিন ছাড়া অন্য যে কোন দিনই যেতে পারো। বড়রা যে বই তোমাকে পছন্দ করে কিনে দেবে, তা নেয়ার পর তোমার পছন্দের বইও কিনে নিও।
এবার একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণকে চারজন ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, বরকত ও শফিউরের নামে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়া নজরুল মঞ্চের সামনে শিশু কর্নারে থাকবে শিশু-কিশোর বিষয়ক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। প্রতিবারের মতো এবারেও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে নজরুল মঞ্চে। মেলার প্রচার কার্যক্রমের জন্যে তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে।
এবারের মেলাও তার ব্যতিক্রম হবে না। সুতরাং আর দেরি নয়। সময় পেলেই চলে এসো বইমেলায়।
No comments