হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ॥ মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি, বিচারবহির্ভূত হত্যা কমেছে
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে,
গত বছর বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, তবে বিচারবহির্ভূত
হত্যাকা- কমেছে। নিউইয়র্কভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি র্যাবের বিচার
বহির্ভূত হত্যাকা- কমে আসাকে স্বাগত জানালেও তারা বলেছে, এ ধরনের
হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা এখনও অনেক বেশি।
বিশ্বের মানবাধিকার
পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার প্রকাশিত ৬৬৫ পৃষ্ঠার রিপোর্টে ৯০টিরও বেশি দেশের
মানবাধিকার পরিস্থিতির মূল্যায়ন রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের
‘আরব বসন্ত’-পরবর্তী সময়ের একটি বিশ্লেষণও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
সংস্থাটি মনে করছে, বাংলাদেশের জন্য ২০১২ সাল চিহ্নিত হবে ত্রুটিপূর্ণ
বিচার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যার দায়ুমক্তি এবং বেসরকারী
সংস্থা (এনজিও) ও অধিকার কর্মীদের ওপর কড়াকড়ির বছর হিসেবে। প্রতিবেদনে বলা
হয়েছে, ২০১২ সালের অন্যতম ‘প্রতিবন্ধকতামূলক’ প্রবণতা ছিল সুশীল সমাজের ওপর
চাপ ও নজরদারি বৃদ্ধি। মানবাধিকার সংস্থাসহ এনজিওগুলোকে হুমকি, নির্যাতন ও
সন্ত্রস্ত করার খবর বেড়েছে। কোন কোন এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা ও প্রকল্পের
তহবিল স্থগিত করারও খবর পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘সরকার রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কাজের সুযোগ সীমিত করায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতনের ঘটনাকে বিচারের আওতায় না আনায়, হত্যা ও গুমের ঘটনার তদন্ত না হওয়ায় এবং বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলের (এনজিও) ওপর নজরদারি বাড়ানোর ফলে ২০১২ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রসফায়ারের নামে বাংলাদেশে এখনও বিচারবহির্ভূত হত্যা চলছে। বিরোধী দল ও অধিকার কর্মীদের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। একজন শ্রমিক নেতাকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং আরও অনেককে হুমকি দেয়া হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড এডামস বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, মানবাধিকারকর্মী ও সমালোচকদের জন্য উদার পরিবেশ প্রদান ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার অঙ্গীকার করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু সরকার এগুলো পূরণে আদৌ কিছু করছে বলে মনে হচ্ছে না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বাংলাদেশে কঠোর আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন খুবই নগণ্য। এ দেশে ধর্ষণ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন এবং এ্যাসিড নিক্ষেপ, যৌন হয়রানি, ফতোয়ার নামে অন্যায় শাস্তি প্রদানসহ নানা পারিবারিক নির্যাতন অব্যাহত আছে। বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইনের কারণে বহু নারী বিবাহ-বিচ্ছেদ বা তালাকের সময় নানা বিপত্তির সম্মখীন হন।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গত বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে দাবি করা হয়, সরকার দেশের রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের কর্মকাণ্ড সীমিত করে দিয়েছে। আইন লঙ্ঘনের পরও সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে আইনী ব্যবস্থার মুখোমুখি না করে রক্ষা করছে। গুম ও হত্যার তদন্ত করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া সরকার বেসরকারী সংস্থাগুলোকে (এনজিও) তদারকি করার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। আর এসব কারণেই ২০১২ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাটি র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে ‘কুখ্যাত’ উল্লেখ করে বলেছে, গত বছর এই বাহিনীর মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমেছে। বিষয়টিকে সংস্থাটি স্বাগত জানিয়েছে। একই সঙ্গে এটাও বলেছে, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা এখনও বেশি।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সরকারের বিচার প্রক্রিয়াকে ‘ত্রুটিপূর্র্ণ’ আখ্যায়িত করে সংস্থাটি বলেছে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই বিদ্রোহের ঘটনায় আটক জওয়ানদের ওপর নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন, মৃত্যু এমনকি যথাযথ প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে গণবিচারের অভিযোগ উঠলেও তদন্ত না করে এসব অভিযোগ স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে সরকার।
গত বছর জুন মাসে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সাম্প্রায়িক দাঙ্গার পর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দেয়ার কারণেও সরকারের সমালোচনা করেছে সংস্থাটি। তারা বলছে, এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক আইনী বাধ্যবাধকতাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর ব্যাপক গণহত্যা, খুন, ধর্ষণ ও লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভত্তিক সংস্থা এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালকে দেশীয় আদালত হিসেবে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনালের আইন ও কার্যপ্রণালীতেও ‘ত্রুুটি’ রয়েছে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি মামলায় সাক্ষীদের হাজির না করে তাদের লিখিত জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা এবং স্কাইপির মাধ্যমে প্রবাসী এক আইন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের কথিত কথোপকথন এবং তার পদত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ঐ কথোপকথনে বিচার কার্যক্রমের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয়টিও উঠে এসেছে।
ব্র্যাড এডামস বলেছেন, মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে তাদের বিরুদ্ধে এখন যে বিচার চলছে তা নিয়ে গভীর সমস্যা রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারকদের স্বাধীনতা, বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ও ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মানবতাবিরোধীদের বিচার নিয়ে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে হৃদয়বিদারক ঘটনাটি হচ্ছে, যারা গুরুতর অপরাধের জন্য দায়ী তাদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসা হলেও বিচার ব্যবস্থায় গলদ রেখেই বিষয়টির সুরাহা হতে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘সরকার রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কাজের সুযোগ সীমিত করায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতনের ঘটনাকে বিচারের আওতায় না আনায়, হত্যা ও গুমের ঘটনার তদন্ত না হওয়ায় এবং বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলের (এনজিও) ওপর নজরদারি বাড়ানোর ফলে ২০১২ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রসফায়ারের নামে বাংলাদেশে এখনও বিচারবহির্ভূত হত্যা চলছে। বিরোধী দল ও অধিকার কর্মীদের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। একজন শ্রমিক নেতাকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং আরও অনেককে হুমকি দেয়া হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড এডামস বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, মানবাধিকারকর্মী ও সমালোচকদের জন্য উদার পরিবেশ প্রদান ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার অঙ্গীকার করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু সরকার এগুলো পূরণে আদৌ কিছু করছে বলে মনে হচ্ছে না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বাংলাদেশে কঠোর আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন খুবই নগণ্য। এ দেশে ধর্ষণ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন এবং এ্যাসিড নিক্ষেপ, যৌন হয়রানি, ফতোয়ার নামে অন্যায় শাস্তি প্রদানসহ নানা পারিবারিক নির্যাতন অব্যাহত আছে। বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইনের কারণে বহু নারী বিবাহ-বিচ্ছেদ বা তালাকের সময় নানা বিপত্তির সম্মখীন হন।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গত বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে দাবি করা হয়, সরকার দেশের রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের কর্মকাণ্ড সীমিত করে দিয়েছে। আইন লঙ্ঘনের পরও সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে আইনী ব্যবস্থার মুখোমুখি না করে রক্ষা করছে। গুম ও হত্যার তদন্ত করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া সরকার বেসরকারী সংস্থাগুলোকে (এনজিও) তদারকি করার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। আর এসব কারণেই ২০১২ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাটি র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে ‘কুখ্যাত’ উল্লেখ করে বলেছে, গত বছর এই বাহিনীর মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমেছে। বিষয়টিকে সংস্থাটি স্বাগত জানিয়েছে। একই সঙ্গে এটাও বলেছে, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা এখনও বেশি।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সরকারের বিচার প্রক্রিয়াকে ‘ত্রুটিপূর্র্ণ’ আখ্যায়িত করে সংস্থাটি বলেছে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই বিদ্রোহের ঘটনায় আটক জওয়ানদের ওপর নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন, মৃত্যু এমনকি যথাযথ প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে গণবিচারের অভিযোগ উঠলেও তদন্ত না করে এসব অভিযোগ স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে সরকার।
গত বছর জুন মাসে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সাম্প্রায়িক দাঙ্গার পর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দেয়ার কারণেও সরকারের সমালোচনা করেছে সংস্থাটি। তারা বলছে, এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক আইনী বাধ্যবাধকতাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর ব্যাপক গণহত্যা, খুন, ধর্ষণ ও লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভত্তিক সংস্থা এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালকে দেশীয় আদালত হিসেবে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনালের আইন ও কার্যপ্রণালীতেও ‘ত্রুুটি’ রয়েছে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি মামলায় সাক্ষীদের হাজির না করে তাদের লিখিত জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা এবং স্কাইপির মাধ্যমে প্রবাসী এক আইন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের কথিত কথোপকথন এবং তার পদত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ঐ কথোপকথনে বিচার কার্যক্রমের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয়টিও উঠে এসেছে।
ব্র্যাড এডামস বলেছেন, মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে তাদের বিরুদ্ধে এখন যে বিচার চলছে তা নিয়ে গভীর সমস্যা রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারকদের স্বাধীনতা, বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ও ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মানবতাবিরোধীদের বিচার নিয়ে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে হৃদয়বিদারক ঘটনাটি হচ্ছে, যারা গুরুতর অপরাধের জন্য দায়ী তাদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসা হলেও বিচার ব্যবস্থায় গলদ রেখেই বিষয়টির সুরাহা হতে যাচ্ছে।
No comments