বিশেষ সংস্থা ও লাদেনের সহায়তায় যেভাবে বেড়ে ওঠে দেশে- জঙ্গীর অজানা কাহিনী by গাফফার খান চৌধুরী
বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের বীজ বপন করে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ও একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (আইডিপি) প্রধান শীর্ষ জঙ্গী নেতা মুফতি এসকে আব্দুস সালাম অবশেষে ফাঁস করে দিলেন সেই গোপন তথ্য।
সেই সঙ্গে মুফতি আব্দুস সালাম নিজে জঙ্গী হয়ে ওঠার ও বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ বিসত্মারের অজানা কাহিনীও বর্ণনা করেছেন গোয়েন্দাদের কাছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মাওলানা এসকে আব্দুস সালামের পিতার নাম এসকে মাজহার আলী (মৃত)। তার বাড়ি বগুড়া জেলার ধুনট থানার পানশীবাড়ি গ্রামে। সে বগুড়া জেলার শেরপুর থানাধীন ফাতেমা-তুজ-জোহরা মহিলা মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক ছিল। সে ১৯৭৮ সালে দওরা হাদিস পড়তে পাকিসত্মানের লাহোরের জামিয়া আশরাফিয়া মাদ্রাসায় (কওমী মাদ্রাসা) ভর্তি হয়। পাকিসত্মান থাকাকালীন ১৯৮৬ সালে সে প্রথমবারের মতো আফগান যুদ্ধে অংশ নেয়। যুদ্ধ চলাকালীন সম্মেলনের ডাক দেয় আনত্মর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আফগানিসত্মানে বসবাসরত সবাইকে একত্রিত করতে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আফগান যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী ও অংশগ্রহণে ই"ছুক মুজাহিদদের সংগঠিত করতে ওই সম্মেলন ডাকা হয়। আফগানিসত্মানের খোসত্ম শহরের সেই সম্মেলনে বিদেশী যোদ্ধা হিসেবে এসকে আব্দুস সালাম ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে পরিচিত হবার ও কথা বলার সুযোগ পায়। ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তার প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় কাটে। লাদেনের কথায় বাড়তি মনোবল পেয়ে সাহসী যোদ্ধা হিসেবে আফগান যুদ্ধে অংশ নিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ জন্য আফগানিসত্মানের খোসত্ম শহরের যুদ্ধ প্রশিৰণ ক্যাম্পে ভারি অস্ত্রের ট্রেনিং নিতে ভর্তি হয়। ট্রেনিং ক্যাম্পে একে-৪৭ রাইফেল চালনার পাশাপাশি ভারি ভারি অস্ত্র চালনায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। এরপর পুরোদমে যুদ্ধ ময়দানে নামে। যুদ্ধ ময়দানে বাংলাদেশী সঙ্গী শেখ ইসমাইল, মঞ্জুর হাসান, পাকিসত্মানের করাচীর বাসিন্দা শাহাদৎ হোসেন, আব্দুর রহমান নিহত হন। যুদ্ধ থেকে বাংলাদেশী নাগরিক আব্দুর রহমান ফারম্নকী ও পাকিসত্মানী নাগরিক আলমাস জীবিত ফিরে। পরবর্তীতে আলমাস পাকিসত্মানে শিয়া-সুনি্ন দাঙ্গায় নিহত হয়।১৯৮৭ সালে মুফতি সালাম আফগানিসত্মান থেকে পাকিসত্মানের লাহোরের জামিয়া আশরাফিয়া মাদ্রাসায় (কওমী মাদ্রাসা) চলে যায়। এ মাদ্রাসা থেকেই ১৯৮৮ সালে দওরা হাদিস পাস করে। এরপর ১৯৮৮ সালের নবেম্বর মাসে আবার আফগানিসত্মানে গিয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়। টানা ২/৩ মাস যুদ্ধ করে। যুদ্ধ সমাপ্তির পর ১৯৮৯ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে আবার সে করাচী যায়। ওই বছরই মার্চে সে করাচী থেকে বাংলাদেশে ফেরে। ১৯৮৯ সালে আফগান যুদ্ধ থেকে জীবিত ফিরে আসা যশোরের বাসিন্দা আব্দুর রহমান ফারম্নকী বাংলাদেশে হরকত-উল-জিহাদীর ইসলামী (হুজি) গঠন করে। সে দলের আমির নিযুক্ত হয়। দল গঠন করার পর পরই ১৯৮৯ সালেই সে আবার আফগানিসত্মানে চলে যায়। এ সময় মুফতি আব্দুল হাই দলের ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দায়িত্বরত ছিল। ১৯৯০ সালে আফগানিসত্মানের নজীবুলস্নাহ সরকারের সঙ্গে আফগান মুজাহিদদের এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। আব্দুর রহমান ফারম্নক এ যুদ্ধেও অংশ নেয়। যুদ্ধে সে নিহত হয়। এরপর আফগান ফেরত যোদ্ধা কুমিলস্না জেলার দাউদকান্দি থানার বাসিন্দা মুফতি আব্দুল হাইকে ১৯৯০ সালে হুজির স'ায়ী আমির নিযুক্ত করা হয়। এদিকে আফগানিসত্মানে যুদ্ধ করে ১৯৯২ সালে দেশে ফিরে ১৯৯৩ সালে মুফতি হান্নান হুজিতে যোগদান করে। ১৯৯৩ সালে মুফতি আব্দুস সালামকে হুজির আমির নিযুক্ত করা হয়। ১৯৯৪ সালে আফগান ফেরত যোদ্ধা কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবের বাসিন্দা মুফতি শফিকুর রহমানকে হুজির আমির নিযুক্ত করা হয়। ১৯৯৮ সালে হুজি নেতৃবৃন্দ হুজিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। মূলত সরকারের চোখ ফাঁকি দিতেই হুজিকে ওই সময় বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এ সময় ১৯৯৪ সালে হুজিতে যোগ দেয়া আফগান ফেরত যোদ্ধা মুফতি মাওলানা আব্দুর রউফ হুজি ছেড়ে চলে যায়। পরে মুফতি রউফ তা আমির উদ্দীন নামে একটি নতুন জঙ্গী দল গঠন করে। সে এ দলের আমির নিযুক্ত হয়। দলটি এখনও সক্রিয়। এ ছাড়া চাঁদপুর জেলার হাইমচরের বাসিন্দা আবু জিহাদও ১৯৯৪ সালে হুজিতে যোগ দিয়ে ছিল। আবু জিহাদ মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যে জিহাদের দাওয়াত দেয়া ও জঙ্গীদের অস্ত্র ও গোলাবারম্নদের ট্রেনিং দিত। চট্টগ্রামের নাইৰ্যংছড়ির গহীন জঙ্গলের জঙ্গী প্রশিৰণ ক্যাম্প থেকে ১৯৯৬ সালে যে ৪১ জন জঙ্গী ট্রেনিংরত অবস'ায় গ্রেফতার হয়েছিল আবু জিহাদ তাদের অন্যতম। ২ বছর পর জামিনে কারামুক্ত হয় সে। এরপর নিজের নাম আবু জিহাদ অনুসারে 'ইসলামী জিহাদ আন্দোলন' নামে জঙ্গী দল গঠন করে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় খায়রম্নল কুরম্নন নামে তার একটি নিজস্ব মাদ্রাসা আছে। মাদ্রাসা ছাড়াও খায়রম্নল কুরম্নন ফাউন্ডেশন নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সে। এ মাদ্রাসা থেকেই ইসলামী জিহাদ আন্দোলন ও ফাউন্ডেশনের আড়ালে জঙ্গী কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
No comments