মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি_ বদলে যাবে বোরোর চেহারা- কিছুটা ক্ষতি হবে আলুর by কাওসার রহমান
মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে মাঠের বোরোর চেহারা বদলে যাবে। কিছুটা তিগ্রস্ত হবে আলু। তবে ঢাকা ও তার আশপাশের অঞ্চলের বাইরে বৃষ্টি না হওয়ায় সবজির তেমন তি হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার মাঘে বৃষ্টি না হলেও ফাল্গুনে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি বোরো ফসলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। তবে ঢাকা অঞ্চলের এ মুষলধারার বৃষ্টি সারাদেশে হলে বোরো ফসলের জন্য খুবই উপকারে আসত। তবে চাষীরা বৃষ্টির ওপর নির্ভর না করে সেচের মাধ্যমে বোরো আবাদে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।জানা যায়, এবার প্রচ- শৈত্যপ্রবাহের কারণে কোল্ড ইনজুরিতে দেশের উত্তর ও দণিাঞ্চলের ৩০ শতাংশ বোরো চারা নষ্ট হয়েছে। চাষীরা সেই নষ্ট চারার তি কাটিয়ে উঠে বোরো আবাদে মাঠে নেমেছে। দেশের মধ্য, পূর্ব ও দণিাঞ্চলে বোরো আবাদ প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এলেও, উত্তরাঞ্চলে পুরোদমে শুরম্ন হয়েছে। আলু তুলে আবাদ করার কারণে এমনিতেই প্রতিবছর উত্তরবঙ্গে সবার শেষে বোরো আবাদ শুরম্ন হয়। তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে কোল্ড ইনজুরিতে চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবার উত্তরাঞ্চলে বোরো আবাদ আরও বিলম্বিত হয়েছে। চাষীরা সবেমাত্র মাঠে বোরো চারা রোপণ করতে শুরম্ন করেছে। ফলে এ বছর বোরো উৎপাদন এক মাস পিছিয়ে যাবে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে বোরো আবাদ গত বছরের মতোই হয়েছে। ঢাকা বিভাগসহ মধ্যাঞ্চলে বোরো আবাদ ভাল হয়েছে। তবে দণিাঞ্চলে বোরো আবাদ তেমন ভাল হয়নি। বিশেষ করে সাতীরা ও আশপাশের এলাকায় আবাদী জমিতে লবণ পানি চলে আসায় বোরো আবাদ ব্যাহত হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে বোরো আবাদ ল্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। বিলম্বে রোপণ কাজ শুরম্ন হলেও উত্তরাঞ্চলে বোরো আবাদ ভাল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার বোরো আবাদের ল্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ বছর হাইব্রিড জাত আবাদের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল দশ লাখ হেক্টর জমিতে। কিন্তু ওই ল্যমাত্রা এবার অর্জিত হচ্ছে না। বীজ কোম্পানিগুলোর হিসাব অনুযায়ী, এবার হাইব্রিড বীজ বিক্রি হয়েছে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টন। যা দিয়ে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমি আবাদ করা সম্ভব। সরকারী পর্যায়ে হাইব্রিড চাষে চাষীদের উৎসাহিত না করার কারণে এবার হাইব্রিড আবাদের ল্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ফলে বোরো আবাদের উৎপাদন ল্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, উত্তরাঞ্চলের চাষীরা কোল্ড ইনজুরির সঙ্কট কাটিয়ে উঠেছে। চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পরই চাষীরা নতুন করে বীজতলা তৈরি করেছে। ওই চারা এখন দ্রম্নত বড় হয়ে উঠছে। ফলে চারার দামও কমে এসেছে। বর্তমানে প্রতি পোন (৮০ আটি) চারা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। কোল্ড ইনজুরির পর যা চার-পাঁচ শ' টাকায় উঠে গিয়েছিল। তিগ্রসত্ম চাষীরা এখন নতুন চারা দিয়েই বোরো আবাদের প্রসত্মুতি নিচ্ছে। তবে পুরনো চারা দিয়ে উত্তরাঞ্চলে এখন পুরোদমে বোরো আবাদ চলছে। প্রতিবছর সাধারণত ফেব্রম্নয়ারি মাসের মধ্যে বোরো আবাদ শেষ হয়ে যায়। কোল্ড ইনজুরির কারণে এবার তা মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে শেষ হবে। ১৫ মার্চের মধ্যে চাষীদের বোরো আবাদ শেষ করতে বলা হয়েছে। ফলে উত্তরবঙ্গে বোরো ধান ওঠা প্রায় এক মাস পিছিয়ে যাবে। এপ্রিলের মাঝামাঝির স্থলে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ওই অঞ্চলে বোরো উঠবে। তবে চলন বিল এলাকায় ইতোমধ্যে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে চলন বিল এলাকার ধান কাটা যথাসময়েই হবে। ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বোরো আবাদে চাষীদের হতাশা কেটে গেছে। তারা এখন গত বছরের মতোই উৎসাহ নিয়ে বোরো আবাদে নেমেছে। গত বছর ধানের দাম ভাল পাওয়ায় বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছিল। কিন্তু বোরো ওঠার পর ধানের দাম কমে যায়। ফলে চাষীদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। গত নবেম্বর থেকে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই হতাশ এখন আর নেই। নেই সেচের জন্য ডিজেল ও সার প্রাপ্তির কোন দুশ্চিনত্মা। ফলে চাষীরা এখন নিশ্চিনত্ম মনেই বোরো আবাদ করছে। শঙ্কা একটাই বিদু্যতের। এই শঙ্কা মাথায় নিয়ে চাষীরা বিদু্যত চালিত সেচযন্ত্রের পাশাপাশি ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্রেরও ব্যবস্থা রাখছে। তবে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি চাষীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় ও রাতে দুই দফায় ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ওই বৃষ্টিতে মাঠের আলু ফসল কিছুটা তিগ্রসত্ম হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে যারা আলু তুলে মাঠে সত্মূপ করে রেখেছিল, ওই আলু বৃষ্টির পানিতে কিছুটা নষ্ট হতে পারে। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টি না হওয়ায় আলুর তেমন একটা তি হবে না বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন। তবে দেশের প্রধান আলু উৎপাদনকারী জেলা মুন্সীগঞ্জে বৃষ্টির কারণে আলুর তি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি বিশেষজ্ঞ ও কৃষি সম্প্রসারণ দফতরের সাবেক মহাপরিচালক ইব্রাহিম খলিল বলেন, মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি বোরো চাষীদের জন্য আলস্নাহর রহমত হয়ে এসেছে। এতে শুধু সেচ খরচই কমে যাবে না, বৃষ্টিতে মাঠের বোরোর চেহারা বদলে যাবে। তবে আলুর জন্য এই বৃষ্টি কিছুটা তির কারণ হতে পারে।
No comments