পবিত্র কোরআনের আলো-বুদ্ধিমানদের জন্য চন্দ্র-সূর্য সৌরমণ্ডলকে সুগঠিত নিদর্শন বানানো হয়েছে
৪. ইলাইহি মারজিউ'কুম জামীআ'-; ওয়া'দাল্লা-হি হাক্কা-; ইন্নাহূ ইয়াবদাউল খালক্বা ছুম্মা ইউঈদুহূ লিইয়াজযিইয়াল্লাযীনা আমানূ ওয়া আ'মিলুস সালিহাতি বিলকি্বছ্তি্ব; ওয়াল্লাযীনা কাফারূ লাহুম শারাবু ম্মিন হামীমিন ওয়া আ'যা-বুন আলীমুম্ বিমা কানূ ইয়াক্ফুরূন।
৫. হুয়াল্লাযী জাআ'লাশ্ শামছা দ্বিইয়া-আন ওয়াল ক্বামারা নূরান ওয়া ক্বাদ্দারাহূ মানা-যিলা লিতা'লামূ আ'দাদাচ্ছিনীনা ওয়াল হিছাবি; মা খালাক্বাল্লাহু যালিকা ইল্লা- বিলহাক্কি; ইউফাস্সিলুল আয়াতি লিক্বাওমিন ইয়্যা'লামূন।
[সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৪-৫]
অনুবাদ : ৪. তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে। (অর্থাৎ তোমরা সবাই রূহানি জগতে ফিরবে) আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সম্পূর্ণ সত্য। তিনিই তাঁর সৃষ্টিকে বাস্তব অস্তিত্ব দান করেন। এরপর তিনিই আবার সবাইকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে নেবেন, যাতে যারা ইমান এনেছে এবং সৎকর্মশীল হয়েছে তাদেরকে তাদের ন্যায্য প্রতিদান দিতে পারেন। আর যারা অবাধ্য হয়েছে, তাদের জন্য (অবাধ্যতার পরিণতি হিসেবে) ফুটন্ত পানীয় ও কঠিন শাস্তি রয়েছে, কেননা তারা তো অবাধ্য হয়ে গিয়েছিল।
৫. তিনিই সেই সত্তা, যিনি সূর্যকে তেজোদ্দীপ্ত করে স্থাপন করেছেন এবং চন্দ্রকে করেছেন জ্যোতির্ময়। অতঃপর এতে (এই সৌরমণ্ডলকে) কিছু মনজিল বা স্তরে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যাতে (এই প্রকৃতির নিয়মে) তোমরা বছরের (যাবতীয় দিন, মাস ও তারিখের) গণনা ও হিসাব রাখতে পার। আল্লাহ এগুলো সুসংহত উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে সৃষ্টি করেননি। যারা জ্ঞান-বুদ্ধি রাখে, তাদের জন্য এসব সৃষ্ট নিদর্শন সুস্পষ্ট সৃজনশীলতায় গ্রন্থিত করেছেন।
ব্যাখ্যা : ৪ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, সব মানুষই যে রুহানি জগৎ থেকে বাস্তব জগতে এসেছে এবং এই বাস্তব জগৎ থেকে সবাইকে আবার রুহানি জগৎ তথা আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। মানুষকে আল্লাহ একবারই সৃষ্টি করেন, মানুষের জীবন একটাই। ইহকাল-পরকাল হলো এর স্তর পরিবর্তনের চক্র। মৃত্যু বা তফাত মানুষকে নিঃশেষ করে না, বরং পরজগতে প্রেরণ করে। মানবজীবনের এই চক্র তাৎপর্যহীন নয়। বাস্তব জীবনে যারা আল্লাহর ওপর ইমান আনে ও সৎকর্মশীল হয়, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান আর যারা অবাধ্য হয় তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
৫ নম্বর আয়াতে সৃষ্টি জগতের অসীম বিশালত্ব, অপার রহস্য ও পরম সৃজনশীল সংহতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সৃষ্টিজগতের এই অপার রহস্য সম্পর্কে মানুষকে পরিপূর্ণ জ্ঞান দেওয়া বা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ শেখানো এখানে আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়। এখানে উদ্দেশ্য এ সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, কৌতূহল জাগানো এবং সত্যোপলব্ধিতে সহায়তা করা। কোরআন মজিদে মহা সৃষ্টিজগতের অপার রহস্যের প্রতি যখন ইঙ্গিত করা হয়, তখন এর দ্বারা দুটি বিষয় সাধারণত বোঝানো উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। এক. মহাবিশ্বের যে মহা বিস্ময়কর ব্যবস্থাপনার অধীনে চন্দ্র-সূর্য, পৃথিবীসহ সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যে অনুপম প্রাকৃতিক শৃঙ্খলায় কাজ করে যাচ্ছে, তা আল্লাহর অসীম কুদরত ও অপার হিকমতের পরিচয় বহন করে। প্রাচীন আরবরাও আল্লাহ বিশ্বাস করত; কিন্তু তাঁর সঙ্গে শরিক বানাত। অথচ এই বিশ্বজগৎকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়, এই মহাবিশ্ব অখণ্ড ও নিয়ন্ত্রণে অনাদি থেকে অনন্তের দিকে চলছে। সদা জাগ্রত পরম জ্ঞানী একক সত্তার তাৎপর্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে যে এই মহাবিশ্ব চলছে, এটা সহজ পর্যবেক্ষণেই বোঝা যায় এবং আধুনিক কালের জ্ঞান-বিজ্ঞান এটা আরো সাবলীল ও অকাট্যভাবে প্রমাণ করছে। সুতরাং এই নিখিল বিশ্বের সুসংহত গতি-প্রকৃতিই আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিচ্ছে। ২. বিশ্বজগৎ উদ্দেশ্যহীন বা খামখেয়ালিভাবে সৃষ্টি করা হয়নি এবং মানুষকেও উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করা হয়নি। বিশ্বপ্রকৃতির কার্যকারণ-রহস্য ও শাশ্বত নিয়মগুলো উদ্ঘাটন করতে পারলে মানুষ তার বাস্তব জীবন ও জগৎকে উৎকর্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে মানুষের জীবনের যে সুদূরপ্রসারী গতিচক্র তথা ইহকাল-পরকাল, সেটাও মানুষের জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য। পরকাল না থাকলে মানুষ জীবনে ইনসাফ লাভ করবে কিভাবে। সৎকর্মের সুফল এবং মন্দ কর্মের ঘৃণ্য পরিণতি মানুষকে তো পেতেই হবে। সুতরাং পরকাল মহাসত্য। মানুষের শুভকর্ম ও অপকর্মের পরিণতি প্রাপ্তিই ইনসাফের শেষ কথা।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
[সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৪-৫]
অনুবাদ : ৪. তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে। (অর্থাৎ তোমরা সবাই রূহানি জগতে ফিরবে) আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সম্পূর্ণ সত্য। তিনিই তাঁর সৃষ্টিকে বাস্তব অস্তিত্ব দান করেন। এরপর তিনিই আবার সবাইকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে নেবেন, যাতে যারা ইমান এনেছে এবং সৎকর্মশীল হয়েছে তাদেরকে তাদের ন্যায্য প্রতিদান দিতে পারেন। আর যারা অবাধ্য হয়েছে, তাদের জন্য (অবাধ্যতার পরিণতি হিসেবে) ফুটন্ত পানীয় ও কঠিন শাস্তি রয়েছে, কেননা তারা তো অবাধ্য হয়ে গিয়েছিল।
৫. তিনিই সেই সত্তা, যিনি সূর্যকে তেজোদ্দীপ্ত করে স্থাপন করেছেন এবং চন্দ্রকে করেছেন জ্যোতির্ময়। অতঃপর এতে (এই সৌরমণ্ডলকে) কিছু মনজিল বা স্তরে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যাতে (এই প্রকৃতির নিয়মে) তোমরা বছরের (যাবতীয় দিন, মাস ও তারিখের) গণনা ও হিসাব রাখতে পার। আল্লাহ এগুলো সুসংহত উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে সৃষ্টি করেননি। যারা জ্ঞান-বুদ্ধি রাখে, তাদের জন্য এসব সৃষ্ট নিদর্শন সুস্পষ্ট সৃজনশীলতায় গ্রন্থিত করেছেন।
ব্যাখ্যা : ৪ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, সব মানুষই যে রুহানি জগৎ থেকে বাস্তব জগতে এসেছে এবং এই বাস্তব জগৎ থেকে সবাইকে আবার রুহানি জগৎ তথা আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। মানুষকে আল্লাহ একবারই সৃষ্টি করেন, মানুষের জীবন একটাই। ইহকাল-পরকাল হলো এর স্তর পরিবর্তনের চক্র। মৃত্যু বা তফাত মানুষকে নিঃশেষ করে না, বরং পরজগতে প্রেরণ করে। মানবজীবনের এই চক্র তাৎপর্যহীন নয়। বাস্তব জীবনে যারা আল্লাহর ওপর ইমান আনে ও সৎকর্মশীল হয়, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান আর যারা অবাধ্য হয় তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
৫ নম্বর আয়াতে সৃষ্টি জগতের অসীম বিশালত্ব, অপার রহস্য ও পরম সৃজনশীল সংহতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সৃষ্টিজগতের এই অপার রহস্য সম্পর্কে মানুষকে পরিপূর্ণ জ্ঞান দেওয়া বা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ শেখানো এখানে আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়। এখানে উদ্দেশ্য এ সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, কৌতূহল জাগানো এবং সত্যোপলব্ধিতে সহায়তা করা। কোরআন মজিদে মহা সৃষ্টিজগতের অপার রহস্যের প্রতি যখন ইঙ্গিত করা হয়, তখন এর দ্বারা দুটি বিষয় সাধারণত বোঝানো উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। এক. মহাবিশ্বের যে মহা বিস্ময়কর ব্যবস্থাপনার অধীনে চন্দ্র-সূর্য, পৃথিবীসহ সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যে অনুপম প্রাকৃতিক শৃঙ্খলায় কাজ করে যাচ্ছে, তা আল্লাহর অসীম কুদরত ও অপার হিকমতের পরিচয় বহন করে। প্রাচীন আরবরাও আল্লাহ বিশ্বাস করত; কিন্তু তাঁর সঙ্গে শরিক বানাত। অথচ এই বিশ্বজগৎকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়, এই মহাবিশ্ব অখণ্ড ও নিয়ন্ত্রণে অনাদি থেকে অনন্তের দিকে চলছে। সদা জাগ্রত পরম জ্ঞানী একক সত্তার তাৎপর্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে যে এই মহাবিশ্ব চলছে, এটা সহজ পর্যবেক্ষণেই বোঝা যায় এবং আধুনিক কালের জ্ঞান-বিজ্ঞান এটা আরো সাবলীল ও অকাট্যভাবে প্রমাণ করছে। সুতরাং এই নিখিল বিশ্বের সুসংহত গতি-প্রকৃতিই আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিচ্ছে। ২. বিশ্বজগৎ উদ্দেশ্যহীন বা খামখেয়ালিভাবে সৃষ্টি করা হয়নি এবং মানুষকেও উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করা হয়নি। বিশ্বপ্রকৃতির কার্যকারণ-রহস্য ও শাশ্বত নিয়মগুলো উদ্ঘাটন করতে পারলে মানুষ তার বাস্তব জীবন ও জগৎকে উৎকর্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে মানুষের জীবনের যে সুদূরপ্রসারী গতিচক্র তথা ইহকাল-পরকাল, সেটাও মানুষের জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য। পরকাল না থাকলে মানুষ জীবনে ইনসাফ লাভ করবে কিভাবে। সৎকর্মের সুফল এবং মন্দ কর্মের ঘৃণ্য পরিণতি মানুষকে তো পেতেই হবে। সুতরাং পরকাল মহাসত্য। মানুষের শুভকর্ম ও অপকর্মের পরিণতি প্রাপ্তিই ইনসাফের শেষ কথা।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments