ছাত্রলীগ-ছাত্রদল পাল্টাপাল্টি অভিযোগ- ককটেল বিস্ফোরণে ফের উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রবেশ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। দুই দিন ধরে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণে আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও ক্যাম্পাসে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছেন। গত সোমবারের ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবারও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। এ সময় একজন আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।সোমবার ১৩টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ছাত্রশিবিরকে নিয়ে মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে ঢুকবেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এমন খবর পাওয়ার পর সোমবার রাত থেকেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। তাঁরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রবেশপথে পাহারা বসান এবং মোটরসাইকেল নিয়ে টহল দিতে থাকেন।
এ অবস্থায় সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলসংলগ্ন পলাশীর মোড়ে সাতটি এবং সকাল পৌনে ১০টার দিকে শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের কাছে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মাহবুব আলম নামে একজনকে আটক করে রমনা থানার পুলিশ। একই সময়ে চাঁনখারপুল এলাকায় বিস্ফোরিত হয় আরও পাঁচটি ককটেল। এ সময় রবিউল ইসলাম (২২) নামে এক রিকশাচালক আহত হন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নীলক্ষেত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মহিদুল হাসানের নেতৃত্বে ছাত্রদলের ১৫-২০ জন মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এফ রহমান হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেলযোগে তাঁদের ধাওয়া করেন। এ সময় ছাত্রলীগের জহুরুল হক হল শাখার আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও বাংলা বিভাগের ছাত্র তানজিল ভূঁইয়া ওরফে তানভীর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। অন্যদিকে মিছিল ছত্রভঙ্গ হওয়ার আগেই ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ছাত্রলীগের কর্মীদের লক্ষ্য করে পাঁচটি ককটেল নিক্ষেপ করেন।
এ সম্পর্কে শাহবাগ থানার টহল পরিদর্শক শহীদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মিছিল শেষে ছাত্রদলের কর্মীরা ছয়টি ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যান। এর মধ্যে পাঁচটি বিস্ফোরিত হয়। একটি অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।
বিস্ফোরণের অভিযোগ অস্বীকার করে মহিদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিন ধরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় ক্যাম্পাসে মহড়া দিচ্ছেন। তাঁরা নিজেরা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছাত্রদলের ওপর দায় চাপাচ্ছেন।
ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে ছাত্রদল পরিকল্পিতভাবে এসব বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে বিভিন্ন মহলের ষড়যন্ত্রের কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
মামলা: গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল দুপুরে শাহবাগ থানায় দুটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী কামাল হোসেন।
শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, মামলায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৪৪ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
No comments