ফারুকের মৃত্যুতে ফুঁসছে এলাকাবাসী ॥ মানিকদীতে শোকের ছায়া
উপকারী মানুষের নির্মম মৃত্যুতে মানিকদি এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। রীতিমতো মর্মাহত স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর দাবি ফারম্নক ভাল মানুষ হিসেবেও সমাজে পরিচিত।
ফারম্নকের মৃত্যুতে ক্ষোভে দুঃখে ফুঁসছে এলাকাবাসী। এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রশিবিরের গোপন তৎপরতা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা কয়েকটি মাদ্রাসার আড়ালে তাদের কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় জঙ্গী ও শিবিররা এলাকায় অবস্থান করে থাকে। এলাকাবাসীর সন্দেহের তীর এখন শিবির ক্যাডারদের দিকেই। এদিকে ফারুক হত্যা মামলায় ৪ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আদর্শ বিদ্যানিকেতনের সেই মাঠেই ফারম্নকের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে স্থানীয় কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। বিকালে ফারম্নকের পিতা বাদী হয়ে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।সরেজমিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আদর্শ বিদ্যানিকেতনের প্রিয় মাঠটিতেই ফারম্নকের মৃতদেহ রাখা হয়েছে। এলাকাজুড়ে সুনসান নীরবতা। দলে দলে মানুষ আসছে। মানুষ যাচ্ছে। যাওয়ার পথে শুধু নীরবে চোখের জল ফেলে আফসোস করতে করতে বাড়ি ফিরছে। ফেরার পথে অনেকেই বলে গেলেন, এমন মানুষের শত্রম্ন থাকতে পারে! তা ভাবাও যায় না। যেকোন সময় বিপদে আপদে আর কাউকে না হলেও ফারম্নককে অনত্মত স্কুলের মাঠে পাওয়া যেত। তাঁকে অনেক সময় ডাকতেও হতো না। নিজের ইচ্ছায় হাজির হতো। স্থানীয়রা এ হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা করেছেন। দোষীদের দ্রম্নত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
স্থানীয় বিএনপির এক সমর্থক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ছেলেটি রাজনীতি করলেও সে খুবই আলাদা প্রকৃতির ছিল। যেকোন সময় অন্যের বিপদে সে এগিয়ে যেত। এটি তার বড় একটি গুণ ছিল, যা এ যুগে মানুষের মধ্যে দেখা যায় না। মানুষকে প্রচুর সম্মানও করত। তিনি বলছিলেন, আমরা পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করি। তার বাড়ি ২৪৬/১ নম্বর মানিকদিতে। ফারম্নকের পিতা হাজী মোবারক উলস্নাহ অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য। তিনিও অত্যনত্ম ভদ্রলোক। ফারম্নক তিতুমীর কলেজ থেকে বিএ পাস করেছেন। তিনি তিতুমীর কলেজের নির্বাচিত এজিএস ছিলেন। ফারম্নক খুব সচ্ছল ঘরের সনত্মান। তাঁদের ঢাকায় দুইটি ৬তলা বাড়ি রয়েছে। ফারম্নকরা ৩ ভাই এক বোন। ফারম্নক সবার বড়। ছোট ভাই লন্ডন প্রবাসী।
ফারম্নকের বন্ধু বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার সুজন জানান, মাদক ব্যবসার সঙ্গে ফারম্নকের জড়িত থাকার বিষয়টি মিথ্যা। খুবই সচ্ছল পরিবারের সনত্মান হওয়ায় ফারম্নকের অবৈধ টাকার প্রতি লোভ ছিল না। সে একটু খেয়ালী প্রকৃতির মানুষ ছিল। ফারম্নকের স্ত্রী না থাকায় সে সারাৰণ বন্ধুবান্ধব নিয়ে হই হুলেস্নাড় করে সময় পার করত। স্কুলের মাঠে নিয়মিত ক্রিকেট, ভলিবল, ফুটবল, ব্যাডমিন্টনসহ নানা ধরনের খেলাধুলায় মেতে থাকত।
স্থানীয়রা জানায়, স্কুলটির সামনের গেট রাত ১১টা পর্যনত্ম খোলা থাকে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গেটের সঙ্গেই স্কুলের ক্যান্টিন। ফারম্নক সব সময় ক্যান্টিনের সামনে পাকা বেঞ্চিতে বসে থাকত। মূল গেটের পূর্বদিকের কোণায় ফারম্নককে হত্যা করা হয়েছে। দেয়ালে, মাটিতে রক্ত লেগে রয়েছে। রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি। ফারম্নকের বুক ও পেট ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি হোসনে আরা বলছিলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৯টি বুলেটের খোসা উদ্ধার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ফারম্নককে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হতে পারে।
এলাকাবাসী জানায়, মানিকদির সঙ্গে রাজধানীর অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব ভাল নয়। এলাকায় নামে বেনামে প্রচুর মাদ্রাসা গড়ে ওঠেছে। মাদ্রাসার আড়ালে মানিকদিতে অনেক আগ থেকেই শিবিরের ঘাঁটি রয়েছে। তবে শিবির প্রকাশ্যে রাজনীতি করত না। কিন্তু তাদের গোপন তৎপরতা ছিল। এছাড়া ওই এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের সহযোগী ও জামায়াতে ইসলামের রোকন এ্যাডভোকেট মনিরম্নল ইসলামের বাড়ি। মনিরম্নল ইসলামের কারণে এলাকায় শিবিরের তৎপরতা রয়েছে।
শনিবার বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ফারম্নকের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একানত্ম সচিব সাইফুজ্জামান শিখর, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত আলী শিকদার, ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনসহ বিভিন্ন সত্মরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ফারম্নক নিহত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মৌলবাদী জঙ্গী গোষ্ঠী জামায়াত-শিবিরের হত্যার শিকার ফারম্নক। পরে বিৰোভ মিছিল শেষে ফারম্নকের খুনীদের দ্রম্নত গ্রেফতার ও দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মির দাবি জানানো হয়। শনিবার বিকালে নিহত ফারম্নকের পিতা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হাজী মোবারক উলস্নাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে স্কুলের নিরাপত্তা কর্মী গোলাপ, স্কুল ক্যান্টিনের মালিক শাহাদত, মানিকদির বাসিন্দা জামায়াতে ইসলামীর রোকন এ্যাডভোকেট মনিরম্নল ইসলাম ও সোহেল নামে চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
No comments