তারুণ্যের আঙ্গিনা টিএসসি- অনিরুদ্ধ কর
অপরিকল্পনা আর অবহেলায় তিলোত্তমা ঢাকা আজ কংক্রিটের বস্তি। নগরবাসী যখন খুঁজে ফেরে একটু সবুজ-নির্মল আলো-হাওয়া, তখন এই শহরের সবার সামনে যে এলাকা চোখের সামনে ভেসে ওঠে তা _ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
সবুজ এ চত্বরে লাল রঙের টিএসসি (ছাত্র-শিৰক কেন্দ্র) তারম্নণ্যের দুর্গ। এ দুর্গ কথা বলে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-স্বপ-সম্ভাবনা আর প্রগতির। কখনও কখনও এর পথ প্রকম্পিত হয় মিছিল-সেস্নাগানে, কখনও এখানে জমে উঠে সঙ্গীত আর কবিতার মিলনমেলা। নগর জীবনের প্রাত্যহিকতায় অতিষ্ঠ নগরবাসী একটু স্বসত্মির নিঃশ্বাস ফেলতে জায়গা খুঁজে নেয় টিএসসির চত্বর, সড়ক দ্বীপ, রাজু ভাস্কর্যে কিংবা মিলন চত্বরে। ডিসেম্বর থেকে শুরম্ন করে মার্চ-এপ্রিল পর্যনত্ম এ চত্বর মুখরিত থাকে মানুষের কোলাহলে। ঈদ কিংবা জাতীয় দিবস, ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের জয়লাভ, একুশে ফেব্রম্নয়ারি কিংবা পহেলা বৈশাখ সবার গনত্মব্য টিএসসি। কবিতা উৎসব বা বইমেলা, বই কিংবা কবিতাপ্রেমীরা সবাই এসে একটু চাঙ্গা হয় টিএসসির সড়কদ্বীপ বা রাসত্মার পাশের চায়ের দোকানগুলোতে।টিএসসির প্রতিষ্ঠা ১৯৬১ সালে হলেও এর কার্যক্রম শুরু হয় মূূূলত ১৯৬৭-৬৮ থেকে। টিএসসির প্রাণপুরম্নষ প্রথম পরিচালক এ জামান খানের মৃতু্যর (১৯৯০) পর থেকে আলমগীর হোসেন পরিচালক পদে আছেন। প্রতিনিয়ত বিসত্মৃত হচ্ছে এর কার্যক্রম।বর্তমানে প্রায় শতাধিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তালিকাভুক্ত থাকলেও সক্রিয় আছে হাতেগোনা কয়েকটি সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদের সুপারিশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপৰ এসব সংগঠনকে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার জন্য কিছু কৰ বরাদ্দ দিয়ে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের যেমন আয়োজন করা হয় টিএসসির মিলনায়তনে তেমনি বিভিন্ন জাতীয় বা আনত্মর্জাতিক সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয় এ মিলনায়তনে।
টিএসসি পরিনত হয়েছে বাঙালী সংস্কৃতি আর তারম্নণ্যের উচ্ছ্বাসের স্থায়ী ঠিকানা। বিশেষ বিশেষ দিবসে পুরো রাজধানীর গনত্মব্য টিএসসি। বসনত্ম উৎসব, বৈশাখ উৎসব, শীতকালীন পিঠা উৎসব, মিউজিক ডে কিংবা ভ্যালেন্টাইনস ডে'র মতো যে কোন অনুষ্ঠান প্রাণ কেন্দ্র এ মিলনায়তন। এছাড়া বিশ্বকাপ ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলা বড় পর্দায় দেখানোর ব্যবস্থাও করা হয় টিএসসিতে। এগুলো তো গেল টিএসসি কর্তৃপৰের নিজস্ব আয়োজনের কথা, এছাড়া এখানে প্রায় প্রতিদিনই রয়েছে কোন না কোন সংগঠনের নিজস্ব অনুষ্ঠানমালা।
টিএসসির আড্ডা, অনুষ্ঠানমালা শাণিত করে আমাদের প্রগতিকে, উজ্জীবিত করে আমাদের সংস্কৃতিকে, আর স্বপ্ন দেখায় আমাদের নতুন এক ভোরের।টিএসসি তারম্নণ্যের এক উঠান, যে উঠান আমাদের গল্প শোনায় প্রগতি, সম্ভাবনা আর আশার। বাঙালী জাতি যখন হতাশা আর স্বপ্নভঙ্গে আচ্ছন্ন হয় তখন তাকিয়ে থাকে টিএসসির এই উঠানে আশার আলো দেখবে বলে।
No comments