সেদিন বধ্যভূমির রূপ নিয়েছিল পিলখানা- পিলখানা হত্যাযজ্ঞের কালো দিবস আজ
আজ সেই ভয়াল ও বীভৎস ২৫ ফেব্রম্নয়ারি। বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কিত ভয়ঙ্কর দিন। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের সেই কলঙ্কিত অধ্যায়ের এক বছর পূর্ণ হলো আজ।
কিন্তু এই এক বছরেও কথিত বিদ্রোহের নামে রক্তাক্ত পিলখানার বীভৎস-পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের দুঃসহ স্মৃতি মন থেকে মুছতে পারেনি কেউ-ই। বছর পূর্তির আগেই ভয়ঙ্কর, পৈশাচিক, বর্বরোচিত সেই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে ঘৃণ্য ঘাতকদের বিচার শুরম্ন হয়েছে। কিন্তু গত এক বছরেও জানা যায়নি- বিডিআর বিদ্রোহ শুধু তাদের বঞ্চনার বিরম্নদ্ধে ৰোভের বহিপর্্রকাশ, না পেছনে ছিল সুদূরপ্রসারী কোন ষড়যন্ত্রের কালো হাত। থাকলে সেই নেপথ্যের কুশীলবদের খুঁজে বের করে তাদের মুখোশ জাতির সামনে আদৌ কী প্রকাশ করা হবে? সময়ের বিবর্তনে এ নিয়ে প্রশ্ন এতটুকুও কমেনি।ঠিক এক বছর আগে বিডিআর সদর দফতরে নিষ্ঠুর ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল বিডিআরে মানুষরূপী বিপথগামী কিছু নরপশু। গোলাবারম্নদ আর গ্রেনেডের গর্জনে কেঁপে উঠেছিল রাজধানী। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র দিয়ে একের পর এক নিরস্ত্র মেধাবী, চৌকষ সেনা কর্মকর্তাদের নির্মম-নিষ্ঠুর কায়দায় হত্যা করে পিলখানাকে বধ্যভূমিতে পরিণত করেছিল ঘৃণ্য হনত্মারকরা। ঘাতকদের রক্তের হোলি খেলার নৃশংসতায় সামরিক, বেসামরিক, সাধারণ মানুষ কেউই সেদিন রেহাই পায়নি। নির্দয়ভাবে ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ৰতবিৰত, টেনেহিঁচড়ে ম্যানহলে ফেলে দিয়ে নর্দমায় ভাসিয়ে দেয়া কিংবা মাটি চাপা বা পুড়িয়ে লাশ বিকৃত করার মধ্যযুগীয় পৈশাচিকতা দেখে সত্মম্ভিত হয়েছিল দেশবাসী।
ওইদিনটির বীভৎসতা চিনত্মা করলে এখনও কেঁপে উঠেন সবাই। মানুষ মানুষকে এভাবে নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করতে পারে, মধ্যযুগীয় কায়দায় লাশ নিয়ে এমন বিকৃত-নিষ্ঠুর খেলায় মেতে উঠতে পারে- এক বছর আগে পিলখানায় তা প্রত্যৰ করেছিল বিশ্ববাসী। অজানা শঙ্কায় নিমজ্জিত ছিল দেশের মানুষ। কথিত বিদ্রোহের সুযোগে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে ফায়দা লোটার ষড়যন্ত্রে মাঠে নেমেছিল আরেকটি মহল। উস্কানি ছড়িয়ে, দেশজুড়ে সেনাবাহিনী-বিডিআর-জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে মাত্র দু'মাস বয়সী নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা।
শেষ পর্যনত্ম সেই কুচক্রীদের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর ও কৌশলি অবস্থান বিদ্রোহ দমন করে ফিরিয়ে এনেছিল শানত্মির সুবাতাস। অনিবার্য গৃহযুদ্ধের হাত থেকে রৰা পেয়েছিল বাংলাদেশ। টানা ৩৩ ঘণ্টার শ্বাসরম্নদ্ধ অবস্থার পর বিদ্রোহী ঘাতকরা অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল। শঙ্কামুক্ত হয়েছিল জাতি। এক বছর পূর্ণ হলেও ভয়ঙ্কর ওই স্মৃতি আর রক্তের দাগ ও ৰত এখনও শুকিয়ে যায়নি। নেপথ্যের কুশীলবদের খুঁজে বের করা এখনও সম্ভব না হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার দৃঢ় কণ্ঠেই বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহের উস্কানিদাতারাও রেহাই পাবে না। এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে।
সেই ভয়ঙ্কর ৩৩ ঘণ্টা ॥ বিডিআর সপ্তাহ। তাই পিলখানার সবুজশোভিত বিশাল চত্ব্বর সাজানো হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন করেই। এই সপ্তাহ উপলৰে কুচকাওয়াজসহ অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশ নিতে সেনা কর্মকর্তাদের কমান্ডে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রায় এক মাস কঠোর অনুশীলনও করেছে বিডিআর সদস্যরা। কিন্তু গভীরে যে কী ভয়াল ষড়যন্ত্রের ছক অাঁকা হয়েছিল, তা কেউ ভাবতেই পারেননি। ঠিক একদিন আগেই পিলখানার বিডিআর সদর দফতরে তিন দিনব্যাপী রাইফেলস সপ্তাহের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫ ফেব্রম্নয়ারি ছিল বর্ণাঢ্য ওই আয়োজনের দ্বিতীয় দিন। শেষ হওয়ার কথা কথা ছিল ডিনার আর সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২৬ ফেব্রম্নয়ারি। কিন্তু তার আগেই ২৫ ফেব্রম্নয়ারি ঘটে যায় করম্নণ মর্মানত্মিক হত্যাযজ্ঞ।
সকাল ৯টায় যথারীতি দরবার হলে বসেছিল বার্ষিক দরবার। সারাদেশ থেকে আসা বিডিআরের জওয়ান, জেসিও, এনসিওসহ বিপুলসংখ্যক সদস্যে তখন পরিপূর্ণ দরবার হল। মঞ্চে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমদসহ বিডিআরের উর্ধতন কর্মকর্তারা। সে এক আনন্দমুখর পরিবেশ। কিন্তু সে আনন্দ ঘণ্টাখানেকও স্থায়ী হয়নি। এরই মধ্যে বিপথগামী একদল বিডিআর জওয়ান বিদ্রোহের নামে মেতে ওঠে মধ্যযুগীয় কায়দায় নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে। বিদ্রোহীরা পাখির মতো ব্রাশফায়ার করে সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করতে শুরম্ন করে। নির্বিচারে অত্যাধুনিক অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারান বেসামরিক ও সাধারণ মানুষও। লুটপাট, অগি্নসংযোগ এমনকি ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য ঘটনাও ঘটেছিল সেদিন। এখানেই শেষ নয়, ভয়ঙ্কর রক্তের হোলিখেলায় মেতে ওঠা নরপিশাচরা নিহত সেনা কর্মকর্তাদের লাখ গুম করতে গণকবর দিয়েছিল, ফেলেছিল ম্যানহলে। রক্তের বন্যায় ভেসে যায় দরবারহলসহ পুরো পিলখানার সবুজ চত্বর।
অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে ঘাতক দল পিলখানার অভ্যনত্মরের বিডিআর মহাপরিচালকের বাসায় ঢুকে তাঁর স্ত্রী ও গৃহপরিচারিকাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। তাঁর বাসায় বেড়াতে আসা স্বজনদেরও হত্যা করা হয়। পিলখানার অভ্যনত্মরে যখন নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চলে, ঠিক তখন আরেক ঘাতক গ্রম্নপ সদর দফতরের সকল প্রবেশপথ, উঁচু বিল্ডিংয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয় এবং নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। সেনা কর্মকর্তাদের বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে গণহারে লুণ্ঠন, নির্যাতনে মেতে ওঠে নিষ্ঠুর হনত্মারকরা। পরিকল্পিতভাবে একাত্তরের কায়দায় পুরো পিলখানাকেই বধ্যভূমিতে পরিণত করে নিষ্ঠুর এসব ঘাতক।
২৫ ফেব্রম্নয়ারি পিলখানায় যে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ আর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। নির্বিচারে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পর এক পর্যায়ে লাশের মিছিল ও রক্তগঙ্গা দেখে দিশেহারা হয়ে যায় ঘাতকচক্র। তাই লাশ গুম করতে, বিকৃত করতে একের পর এক গণকবর দেয়া হয়। পিলখানা পরিণত হয় বধ্যভূমিতে। একদিনে গণভবন খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় ৪২টি লাশ। এর মধ্যে দুটি গণকবর থেকেই ৩৮টি লাশ উদ্ধার করা হয়। কিছু লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয়েছিল সু্যয়ারেজ লাইনের স্রোতেও, যা উদ্ধার করা হয় বুড়িগঙ্গা থেকে। বেশ কয়েকটি লাশ আগুনে পুড়িয়ে ফেলারও চেষ্টা করেছে নরপশুরা। বেঁচে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী ২৫ ফেব্রম্নয়ারি সকাল থেকে বিকাল ৩টার মধ্যেই ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে ঘাতকরা হত্যা করেছে।
বিদ্রোহের সূত্রপাতের পর শোনা গিয়েছিল বিডিআর জওয়ানদের নানা অসনত্মোষ আর ৰোভের কথা। এমনও শোনা গিয়েছিল যে, 'ডাল-ভাত' কর্মসূচীতে পরিচালিত ন্যায্য মূল্যের দোকানগুলোতেও যে সৈনিকরা দায়িত্ব পালন করত, তারা লভ্যাংশ না পেয়ে, বাড়তি শ্রমের মূল্য না পেয়ে ৰুব্ধ ছিল ডিজির ওপর। আর বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কারণেই নাকি এ ৰোভের বিস্ফোরণ ঘটেছিল ২৫ ফেব্রম্নয়ারিতে। কিন্তু যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, নিহত সেনা কর্মকর্তাদের উদ্ধারকৃত বিকৃত লাশ ও হত্যার ধরন দেখে বুঝতে কারও বাকি থাকেনি এটা নিছক বিদ্রোহ নয়, সুপরিকল্পিত হত্যাকা-। যার পেছনে ছিল সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। ঘাতকরা '৭১-এর আলবদরদের কায়দায় নৃশংসভাবে হত্যা করে সেনা কর্মকর্তাদের, যাদের মধ্যে অনেকে জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের ৰেত্রে গুরম্নত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর দূরদশর্ী অবস্থান
বিডিআর বিদ্রোহের পর ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যেও দূরদশর্ী সিদ্ধানত্ম নিয়ে দেশকে অনিবার্য গৃহযুদ্ধের হাত থেকে রৰা করতে সৰম হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশবিনাশী এমন ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হয়েও স্থিরচিত্তে প্রজ্ঞা, সাহসিকতা ও সিদ্ধানত্ম দিয়ে নেপথ্যের কুশীলবদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন। দু'মাসও হয়নি তখন মহাজোট সরকারের বয়স। মধুচন্দ্রিমা শুরম্ন না হতেই গভীর ও ভয়ঙ্কর এক ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ২৫ ফেব্রম্নয়ারি বিদ্রোহের নামে নির্বিচারে সেনা অফিসারদের নৃশংস ও পৈশাচিক কায়দায় খুনের ঘটনায় শেখ হাসিনার নতুন সরকার এক গভীর সঙ্কট ও কঠিন পরীৰার মুখে পড়ে যায়। নানা গুজব, আশঙ্কা ও চাপের মুখেও ধৈর্য, বিচৰণতা ও সাহসের চরম পরীৰায় অবতীর্ণ হতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে।
ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত খুনী বিডিআর সদস্যদের দমনে সেনা অভিযান ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এটা নিশ্চিত হয়েই সরকার রাজনৈতিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সিদ্ধানত্ম নেয়। কারণ সেনাবাহিনীর বিডিআর সদর দফতরে অভিযান চালিয়ে বিদ্রোহ দমনের অর্থ হতো আরও হত্যা, বিসত্মৃত ধ্বংসযজ্ঞ ও বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষের মৃতু্য ও ধনসম্পদের ৰয়ৰতি। আর কী হতো, তা কল্পনা করতেই দেশবাসীর বুক তখন কেঁপে উঠেছিল। কিন্তু অত্যনত্ম ধৈর্য ও প্রজ্ঞা নিয়েই প্রধানমন্ত্রী তখন সকল সামরিক অফিসার, গোয়েন্দা সংস্থা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে বিদ্রোহ দমনে আলোচনা চালিয়ে যান, দলীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণে চেষ্টা চালিয়ে যান। পিলখানা হত্যাকা-ের পর প্রধানমন্ত্রী এবং সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে বারবার বৈঠক করেছেন, কথা বলেছেন। পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে রাজনৈতিক সরকার ও সামরিক নেতৃত্ব একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। এতে পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সঙ্কট-উত্তরণ সহজ হয়েছে। কারণ এটাই ছিল সবচেয়ে কার্যকর পথ।
প্রধানমন্ত্রী উচ্ছৃঙ্খল বিডিআর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন, তার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ একাধিক মন্ত্রী-এমপি দফায় দফায় বৈঠক করে বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এরপরও কাজ না হলে ২৬ ফেব্রম্নয়ারি দুপুরে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বিডিআর বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে চরম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বলেন- 'আপনারা অস্ত্র সংবরণ করে ব্যারাকে ফিরে যান। অন্যথায় আমি দেশবাসীর স্বার্থে যেকোনো পদৰেপ নিতে বাধ্য হবো। আমাকে বাধ্য করবেন না।' প্রধানমন্ত্রীর এ কঠোর বক্তব্যে বিডিআরের উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। পরে সেনা অভিযানে নয়, রাজনৈতিক পদৰেপেই বিডিআর সদস্যরা অস্ত্র-সমর্পণ করে, পরবতর্ীতে বিনা রক্তপাতেই বিডিআর দমন করে সরকার। তখন সাবেক বেশিরভাগ সেনা ও বিডিআর প্রধানই মনত্মব্য করেছেন- 'সরকার যে উপায়ে 'বিদ্রোহ' প্রশমনের কৌশল নিয়েছিল, তা সঠিক ছিল।'
এখানেই ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যায়নি। পিলখানার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ৰোভ-উত্তেজনা ছিল। একটি মহল থেকে নানা উস্কানি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী, সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরম্নদ্ধে সেনাবাহিনীকে ৰেপিয়ে তোলার চেষ্টা করে। তারা পুঁজি করতে চেয়েছিল সেনাবাহিনীর সহযোদ্ধা-স্বজনহারানোর বেদনাহত ৰোভকে। এখানেও অত্যনত্ম সাহসী ভূমিকা পালন করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর রাষ্ট্রনায়কোচিত বিচৰণতার কারণেই সেই বিপর্যয় থেকেও দেশের মানুষ রৰা পায়। দলের অনেক সিনিয়র নেতাই ওই অবস্থায় সেনাকুঞ্জে প্রধানমন্ত্রীকে যেতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা কোন বাধাই মানেননি। ছুটে গেছেন নিহতদের স্বজনদের কাছে, সেনাকুঞ্জে গিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন সেনা কর্মকর্তাদের সামনে। স্বজন ও সহযোদ্ধা হারানোর তীব্র বেদনা ও শোকাবেগে আচ্ছন্ন সেনা কর্মকর্তাদের যেভাবে প্রধানমন্ত্রী সানত্ম্বনা দিয়েছেন, যেভাবে শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এটা একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কন্যার পৰেই সম্ভব ছিল। প্রিয়জন হারানোর বেদনা কী দুঃসহ হতে পারে এটা শেখ হাসিনার বেশি কেউ বুঝবে না, কারণ এমনি এক কালরাতে তিনি হারিয়েছেন পিতা-মাতা-ভ্রাতা-ভ্রাতৃবধূ ও নিকটতম আত্মীয়দের। পরবতর্ীতে সেনাকুঞ্জের রম্নদ্ধদ্বার বৈঠকের একটি অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারাবিশ্বে প্রচার করেও ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। শেষ পর্যনত্ম তাও ব্যর্থ হয়েছে। ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে বিদ্রোহ দমন করে দেশে আনতে সৰম হন শানত্মির সুবাতাস।
হনত্মারকদের বিচারপর্ব শুরু ॥ এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের বিরম্নদ্ধে বিচারকাজ শুরম্ন হয়েছে। কিন্তু তদনত্ম শেষ না হওয়ায় এখনও ঘাতক বিডিআর সদস্যদের বিরম্নদ্ধে বিচার শুরম্ন করা যায়নি। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদনত্ম শেষে অভিযোগপত্র তৈরির কাজে ব্যসত্ম সময় কাটাচ্ছে সিআইডি। চার্জশীট দেয়ার পরই শুরম্ন হবে বিচারকাজ। পিলখানা বিদ্রোহে তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া তিনজন বেসামরিক ব্যক্তিসহ নিহত হয়েছেন মোট ৭৩ জন। তাদের মধ্য ৮ জন বিডিআর সদস্যও রয়েছেন। ২৫ ও ২৬ ফেব্রম্নয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সারাদেশে এ পর্যনত্ম ৩ হাজার ৯০৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনও পলাতক রয়েছে ২৩ বিডিআর সদস্য। শুধুমাত্র ঢাকার পিলখানায় গ্রেফতারকৃত ২ হাজার ২০৫ জন। এদের মধ্যে ৫২৩ বিডিআর সদস্য ইতোমধ্যে আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহ শুরম্ন হলেও নিষ্ঠুর ও নৃশংস এই হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয়া বিডিআর সদস্যদের দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মি হবে- এমন প্রত্যাশা নিয়ে দুঃসহ কষ্ট ও বেদনা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন ৫৭ সেনা পরিবারের সদস্যরা।
ফারম্নক খানের স্পষ্ট জবাব
বিডিআর বিদ্রোহ ও নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ নিয়েও রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা কম হয়নি। একটি মহল থেকে উস্কানি দিয়ে সারাদেশে গৃহযুদ্ধ বাধানোরও চেষ্টা চলেছে। সামরিক পদৰেপের বদলে রাজনৈতিকভাবে বিডিআর বিদ্রোহ দমন নিয়েও ওই সময় নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয় প্রধানমন্ত্রীকে। প্রাণে রৰা পাওয়া অনেক সেনা কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যরা স্পষ্টই বলেছেন, বিদ্রোহ শুরম্নর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ৫৭ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। সামরিক অভিযান প্রসঙ্গে বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব) ফারম্নক খান বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ হয়ত সামরিক পন্থায় দমন করা যেত, তবে তাতে দশ থেকে বিশ হাজার মানুষ ও সম্পদের ৰয়ৰতির আশঙ্কা থাকত। সেৰেত্রে অসংখ্য বেসামরিক ব্যক্তি আহত বা নিহত হতেন। তাই সরকার সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অত্যনত্ম দৰতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে এ ঘটনা মোকাবেলা করেছে। অত্যনত্ম কম সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে_ যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। এ ঘটনায় রাজনৈতিক ইন্ধন বা পেছনে অন্য কেউ জড়িত ছিল কিনা তা চিহ্নিত করতে বিসত্মৃত তদনত্ম করা হবে বলে মনত্মব্য করেন তিনি।
কর্মসূচী ॥ পুরো দেশের মানুষ অত্যনত্ম ব্যথাতুর চিত্তে আজ স্মরণ করবে পিলখানা বিদ্রোহে নিহত মেধাবী সেনা কর্মকর্তা ও বেসামরিক সদস্যদের। ৰমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নিহতদের স্মরণে আজ বিকেলে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। বিএনপিও আলোচনাসভার আয়োজন করেছে প্রেসকাবে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং নিহতদের পরিবারের পৰ থেকে নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানাবেন অকালে ঝরে যাওয়া এসব দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের।
No comments