খাগড়াছড়িতে ফের কার্ফু
খাগড়াছড়ি শহরে মঙ্গলবারের সহিংস তা-ব ঘটনার পর পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে। অতিরিক্ত সেনা, পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএন সদস্যদের নিয়োগ করে চলছে যৌথ অভিযান।
একদিন আগের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও সর্বত্র বিরাজ করছে ব্যাপক আতঙ্ক। মঙ্গলবার রাতে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। বাঙালীপাড়া অধু্যষিত এলাকাগুলোতে রাতভর থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে জারি করা ১৪৪ ধারা বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো বলবত রয়েছে। অপরদিকে, মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৭টা পর্যনত্ম জারি করা কাফর্ু শেষ হওয়ার পর বুধবার রাত ১০টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যনত্ম আবারও কাফর্ু জারি করা হয়েছে। সহিংস ঘটনায় এ পর্যনত্ম গ্রেফতার হয়েছে ৭৭ জন। শহরে যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। কোন পরে কোন কর্মসূচী না থাকলেও দিনভর জেলার আনত্মঃ ও দূরপালস্নার রম্নটে কোন প্রকার যানবাহন চলাচল করেনি। শহরে আটকা পড়েছে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বহু মানুষ। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বুধবার সকালে প্রথমে বাঘাইছড়ির তিগ্রসত্ম এলাকা এবং দুপুরে খাগড়াছড়ির তিগ্রসত্ম এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মঙ্গলবারের সহিংসতায় নিহত খাগড়াছড়ি পৌরসভার কর্মচারী আনোয়ার হোসেনের লাশ জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।প্রশাসন সূত্র জানায়, শহরের বিভিন্ন স্থানে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতারকৃত ৭৭ জনের মধ্যে ৪৫ জন উপজাতি এবং ৩২ জন বাঙালী। নতুন করে সংঘর্ষের আশঙ্কায় শহরতলির খাগড়াপুর, মিলনপুর, কদমতলী, মধুপুর, কলেজপাড়া, গোলাবাড়িসহ বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছে।
এদিকে, খাগড়াছড়ি ও বাঘাইছড়িতে সহিংস ঘটনায় তিগ্রসত্মদের সরেজমিনে পরিদর্শনকালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, একটি মহল পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশানত্ম করার জন্য চক্রানত্ম করছে। সমতল ভূমির মতো এখানেও জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটানোর পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সরকার তাদের কঠোরহসত্মে দমন করবে। বর্তমান মহাজোট সরকার পার্বত্য শানত্মি চুক্তি বাসত্মবায়নে আনত্মরিক। এ সরকারই পার্বত্য চট্টগ্রামে শানত্মি প্রতিষ্ঠা করবে।
মন্ত্রীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, শরণাথর্ী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুস ছোবাহান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও চট্টগ্রাম পুলিশ রেঞ্জের ডিআইজি। মন্ত্রী বেলা আড়াইটার দিকে খাগড়াছড়ি শহরের শানত্মি নিকেতন, মহাজনপাড়া, সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় আবাসিক এলাকা পরিদর্শন ও হাসপাতালে নিহত আনোয়ারের লাশ দেখতে যান। এ সময় তিগ্রসত্মদের কান্নায় এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় মন্ত্রী বলেন, একটি মহল সারাদেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তিনি তিগ্রসত্মদের সানত্ম্বনা দিয়ে ধর্ম বর্ণ গোত্র ভুলে সকলকে সমপ্রীতি বজায় রেখে বসবাস করতে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি প্রশাসনকে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে তালিকা করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ সমস্যা পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের একার নয়, আমাদেরও । তিনি সবাইকে ধৈর্যের সঙ্গে থাকতে বলেন। এ সময় তিগ্রসত্মরা প্রতিমন্ত্রীকে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বার বার এ ধরনের ঘটনায় আমরা তিগ্রসত্ম হচ্ছি। এ ঘটনা বার বার হতে থাকলে আমরা কি নিয়ে বাঁচব। মন্ত্রীর নিকট এ সময় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য তিগ্রসত্ম পাহাড়ী-বাঙালীদের প থেকে দাবি জানানো হয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিং ও সুধী সমাবেশে তিনি বক্তব্য দেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিগ্রসত্মদের এ কান্না যেন আর শুনতে না হয়। এটা আমাদের শপথ করতে হবে। এলাকায় এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাসত্মবায়নে কাজ করতে সকল নেতাকমর্ীর প্রতি তিনি আহ্বান জানান। এ অঞ্চলের মানুষ যাবে কোথায়? বাংলাদেশেই সকলকে বসবাস করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সম্মিলিতভাবে শানত্মিশৃঙ্খলা রায় উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি দুঃখ করে বলেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সরকার ও প্রশাসনের কর্তারা বেতন ভাতা নিয়েও কেন জনগণের নিরাপত্তা দিতে পারব না। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জবাবদিহি করতে হবে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সোন্দর্যের লীলাভূমি। মানুষ সৌন্দর্য দেখতে আসে, আমাকে আসতে হলো মানুষের আহাজারি শুনতে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে; দেশে শানত্মি প্রতিষ্ঠা করতে। কিনত্মু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করায় আজও শানত্মি প্রতিষ্ঠা পূর্ণতা পায়নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে শানত্মি প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছেন। একটি মহল দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে তৎপর। রাজশাহীতে শিবির নারকীয় তা-ব চালিয়ে মেধাবী ছাত্রদের পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। চট্টগ্রামে তা-ব চালাতে চেয়েছে। সফল না হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে তা শুরম্ন করেছে। আপনাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী যে বার্তা পাঠিয়েছেন তা হলো_ পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ী-বাঙালী একত্রে বসবাস করবে। উন্নয়নের ল্যে শানত্মি চুক্তি করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে শানত্মি চুক্তি করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের হারিয়ে ৪ দলীয় জোট সরকার শানত্মি চুক্তির কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল। এ ধারাবাহিকতা বন্ধ থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। পশু ছাড়া যারা মানুষ তারা এ ধরনের কাজ করতে পারে না। এসব কর্মকা- বরদাশত করা হবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারকে সহযোগিতা করলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শানত্মি ফিরে আসবে। বিগত সরকার দেশে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী সৃষ্টি করে গেছে। জঙ্গীবাদ দমন করে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বাঙালী-পাহাড়ী সকলে ঐ মহলের বিরম্নদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি প্রশাসনকে তিরস্কার করে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রায় পুলিশ, সেনা বাহিনী, আনসার, বিডিআর রয়েছে। কিন্তু কেন এখানে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেল না তা আজ বড় প্রশ্ন। জোর করে জায়গা দখলের মূলোৎপাটন করতে হবে। ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা কাজ শুরম্ন করেছে। তবে দিনে দিনে কিছুই সম্ভব নয়।.... সময় লাগবে। আমি যে পরিস্থিতি দেখেছি তা আমাকে পীড়িত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বাড়িও এভাবে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
No comments