পাবনায় গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৭০ আহত ১৫০ by মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ
বিগত ২০১২ সালে ‘করিমন’ নামে অদ্ভুত বাহনটি ছিল পাবনার মানুষের জন্য সাাৎ ‘যমদূত’। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে পাবনা জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৮ জন নিহত হয়েছেন ও আহত হয়েছেন প্রায় দেড় শ’।
এর মধ্যে করিমন ও ট্রলি দুর্ঘটনাতেই মারা গেছেন ৩২ জন। পাবনা-নগরবাড়ী মহাসড়কের ৫২ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৪০টি গতিরোধক দিয়ে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও ড্রাইভারদের বেপরোয়া যান চলানোর কারণে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। এ ছাড়া ভুয়া লাইসেন্সধারী চালক ও নছিমন-করিমনের আধিক্য, মহাসড়ক দখল করে হাটবাজার বসানো এবং রাস্তার পাশে বিপজ্জনকভাবে সমিল গড়ে তোলার কারণে এ জেলায় দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পাবনা-নগরবাড়ী মহাসড়কসহ জেলার বিভিন্ন সড়কে অসংখ্য গতিরোধক স্থাপন করা হয়েছে। পাবনা- নগরবাড়ী মহাসড়কের ৫২ কিলোমিটার দূরত্বে ৪০টি গতিরোধক স্থাপন করেও দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে। চালকদের অভিযোগ, এ মহাসড়কে ৩৫টি গতিরোধক থাকলেও এগুলো চিহ্নিত করা নেই বা গতিরোধকের দুই পাশে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়নি। ফলে গতিরোধকের স্থানেও দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দিকে পাবনা-নগরবাড়ী মহাসড়কের দুই পাশে অনেক সমিল গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে নগরবাড়ীতে একটি, কাশীনাথপুরে ছয়টি, চব্বিশ মাইলে রাস্তার দুই পাশে একটি, দুলাইবাজারে ছয়টি, বনগ্রামে চারটি, গাঙ্গহাটিতে একটি, মাধপুর, আতাইকুলায় তিনটি, গঙ্গারামপুর বাজার, কুচিয়ামোড়া জহরাবাজ, পুষ্পপাড়ায় একটি করে সমিল বিপজ্জনকভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। সমিলগুলোর কাঠের গুঁড়ি রাস্তার দুই পাশে বিপজ্জনকভাবে রাখা হয়েছে।মহাসড়কটি নিরাপদ করার জন্য জালালপুর, পুষ্পপাড়া, বনগ্রাম, চব্বিশ মাইল, বিরাহিমপুর প্রভৃতি বাজারে রোড ডিভাইড করে স্লো লেন নির্মাণ করা হয়েছিল যেন সেখানে যানবাহনগুলো পার্কিং করে। কিন্তু সে সব স্লো লেন এখন এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীর দখলে। সেখানে রীতিমত বাজার বসে আর প্রভাবশালীরা সে বাজার থেকে খাজনা তোলেন।
এ দিকে উত্তর ও দণিাঞ্চলের সড়ক পথে যোগাযোগের জন্য পদ্মা নদীর ওপর লালনশাহ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই দুই অঞ্চল তথা ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগের জন্য সংযোগস্থল রয়েছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়ায়। এখান থেকে লালনশাহ সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কের দু’টি স্থানে রয়েছে মারণফাঁদ। এর একটি হচ্ছে নতুনহাট মোড়ের গোলচত্বর আর অপরটি রূপপুর। সড়ক বিশেষজ্ঞরা জানান, নতুনহাট মোড়ে ‘ট্রাকিং এরিয়া’ অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি করা হয়েছে। এ কারণেই এ মোড়টিতে তুলনামূলক বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। এখানে এক বছরে ২০ জন মারা গেছেন।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সওজ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ শাহেদ জানান, তাদের জনবলের অভাবের এ বিষয়গুলো তদারকি করা হয়ে ওঠে না। এ সমস্যাগুলো দূর করতে প্রশাসনিক উদ্যোগ আগে দরকার বলে তিনি জানান।
পাবনা জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম জানান, পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে অবৈধ করিমন চলার সুযোগ পাচ্ছে। এতে জনসাধারনের জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, নিহত যাত্রীদের বেশির ভাগই করিমন দুর্ঘটনার শিকার কিন্তু একতরফাভাবে বাস-ট্রাক চালকদের দায়ী করা হয়।
No comments